মেঘপুরুষ
মেঘবালিকার কবিতা লেখা হলো অনেক
আজ লিখি সেই
ঘনমেঘের কাজল কালো
মেঘপুরুষের কথা —
যার ডানায় ঝুলে থাকে দূরের বিদ্যুৎ,
তবু চোখের কোণে লুকিয়ে থাকে শিশুবৃষ্টি।
বুকের ভিতর জমা রাখা হাজার অশ্রুধারা
ভার বয়ে তবু হালকা দাঁড়ে আকাশ জুড়ে ভাসা
আর ভালোবাসার ছোঁয়া পেলেই কেবল ঝরে পড়া।
গোঁফ পাকিয়ে বুক ফুলিয়ে রুদ্রবেশে আসলে, জাগে মনে সংশয়,
কিন্তু চোখ যদি হয় ভালোবাসার
সে শুধু ঝড়ের মুখোশপরা এক নরম মেঘপাহারাদার।
তার শরীরের কালচে ব্যাপ্তিতে
ঢেকে যায় সমগ্র আকাশ
কিন্তু অন্ধকারের অন্তরালেই তৈরি হয়
একটা নতুন আলো-জন্মের প্রস্তুতি।
তার কঠিন বজ্রসুরে
আমি আবিষ্কার করি এক পুরোনো একতারা —
যার তারে বাজতে থাকে
কৃষ্ণ-প্রেমের কাঁপা-কাঁপা সুর।
সে রুদ্র, সে অভিমানী,
সে কখনও কারও কাছে ধরা দেয় না —
তবু তার আগমনেই মনময়ূরী মেলে ধরে পাখনা।
কালো মেঘের মতোই তার বাহির —
ভয়ংকর, অভিমানী, বিদ্যুৎগর্ভ
আর ভিতরে লুকিয়ে থাকে
নীলপদ্মের মত এক চুপচাপ কোমল হৃদয়,
যেটা কেবল নিজের মানুষটাকেই
অদৃশ্য বৃষ্টিতে ভিজিয়ে দিতে জানে।
আমি তাকিয়ে থাকি সেই মেঘপুরুষের দিকে,
ভাবি— যদি হঠাৎ সে ভাঙা বজ্রের মতো ডেকে বলে
“চলো, একসাথে বৃষ্টি হই,”
তাহলে আমি সমস্ত ময়লা-ধুলোর পৃথিবীর উপর
নিজের পেখম ছড়িয়ে দেব
আর সবার অলক্ষ্যে শুধু তারই হৃদয়ে
এক টুকরো নরম মেঘ হয়ে মিশে যাব।
অহেতুক
সব কিছু বড় অহেতুক মনে হয়,
মন খারাপটাই যেন একমাত্র সত্যি।
বুকের ভিতর ঢেউ ওঠা সাগর
আবেগের নোনা জল গলায় জমে
কন্ঠ রোধ করতে চায়।
আমি কিছুতেই তা হতে দেব না!
ওরা ঠোঁট ছুলে অভিব্যক্তি হয়ে ফুঁটবে,
স্বর কাঁপবে, টান টান হবে চিবুক,
তরঙ্গ উঠবে চোখে,
আমার ভেতরের নদী ফুঁড়ে বেরোতে চাইবে,
আর আমি ধরা পড়ে যাব।
আমাকে ঢাকতে হবে,
ভালোবাসার আসামীকে, মনকে,
কারণ অপরাধী ধরা পড়লে
তুমি যে কষ্ট পাবে।
তাই আমি নিজেকে সামলে নিই।
যখন কান্না বন্ধ হৃদয়ের জানলা
ধাক্কা মেরে, ধাক্কা মেরে,
ভেঙে ফেলতে চায়
তখনও শাড়ির আঁচলের মত এলোমেলো আমি
তাকে গুছিয়ে বলি:
“ঠিক আছি”—
সবচেয়ে বড় মিথ্যা।
অহেতুক কেন যে এত মনখারাপ হয়,
কে জানে
হয়তো হৃদয় তার নিজের আকাশ বানিয়ে নিয়েছে,
যেখানে মেঘ আসে
শুধু বৃষ্টি ছাড়াই কাঁদতে।
🍂
ভয়ংকর সুন্দর
আকাশটা আজ যেন এক বিশাল ল্যাভেন্ডার ফুলের বাগান,
নির্জন বিকেলের নরম গেল-গেল
ছোঁয়ার মুহূর্তে
অজানা এক শয়তানের মতো কালো মেঘ এসে
দূর থেকে ছুঁড়ে দিল
বিদ্যুতের নীলচে বর্শা।
সবাই দৌড়াল,
গাছগুলো ভয়ে জড়সড়
দিগন্ত জুড়ে কেবল পালিয়ে যাওয়ার হাহাকার।
কিন্তু রাজকুমারী দাঁড়িয়ে রইল ছাদের কোণে,
খোলা চুলে জড়িয়ে ধরল বাতাসের সবুজ গন্ধ।
তার চোখে সে দেখল—
এ শয়তান নয়,
এ তো চিরসুন্দর চিরপ্রেমিক,
তার ল্যাভেন্ডার বাগানের বুকে
অন্ধকারের মূর্ত রূপে ফিরে আসা।
তোমরা কি জানো কীভাবে মেঘের বুক ভেঙে
এক পশলা বৃষ্টি নামে!
ঠিক তেমনই আজ আমার বুক ভেসে যেতে চায়
তার গভীর ধূসরতার মধ্যে,
যেখানে বজ্রপাতও হয়ে ওঠে
দুই হৃদয়ের মিলনের দীপ্ত আতশবাজি।
বলো,
আজ কি আমায় নিজের ঘূর্ণির মধ্যে
টেনে নিবে?
বাতাসের কানে কানে শুধুই তোমার নাম,
ভেজা টানেলের ভেতর দিয়ে
আমরা দুজন বৃষ্টি-রথে উঠে
নেমে যাব লুটিয়ে থাকা পদ্ম পুকুরের দিকে।
তখন এই আঁধার হয়ে উঠবে
একটা বিশাল নীলচে জ্যামিতি,
আর আমরা দুজন,
হব দুইটি দুরন্ত জ্যামিতিক বিন্দু,
যাদের মাঝে প্রেমের সমীকরণ খুঁজে পাবে
আকাশ নিজে।
যদি আজ তুমি আসলেই সেই মেঘের রূপ ধরে
তবে চলো,
আমরা দুজন হারিয়ে যাই
অন্ধকারের সেই নীলচে ঘূর্ণির মধ্যে,
যেখানে কোনো শব্দ নেই, কোনো রূপ নেই
তবু শুধু একটা ভয়ংকর সুন্দর আলো
নিঃশ্বাসের মতো ধীরে ধীরে ফোটে।
অসমাপ্ত আবেগ
প্রতিদিন অসমাপ্ত আবেগ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি,
রাতের অন্ধকারে তারা নিঃশব্দে হাঁটতে হাঁটতে
কোন অচেনা দূরত্বে মিলিয়ে যায়…
প্রতিটি সকালে উঠে সেই আবেগকে খুঁজি,
কিন্তু বুকমার্কের মতো আর কোনো চিহ্ন থাকে না
পাতাগুলো যেন হাওয়ায় ভেসে যায়।
আবার নতুন করে শুরু হয় দিন,
নানা কাজের নীরব, আলতো ছোঁয়ায়
ধীরে ধীরে জন্ম নিতে থাকে নতুন ভাবের কুঁড়ি।
দিনের গভীরে, সন্ধ্যার নরম আলোয়
সেগুলো নিভৃতে ফুটে ওঠে।
আমি কাঁপা চোখের পাতায় তুলে নিই সেই ফুলেদের,
স্বপ্নের মালা গেঁথে
পরিয়ে দিই নিজের ক্লান্ত মনকে
যেন সন্ধ্যার আমিটা
দিনের আমিকে এক ছোট্ট উপহার দেয়।
ভালো করেই জানি
রাত হলে আবার তারা হারিয়ে যাবে…
3 Comments
অপূর্ব সুন্দর লেখা। খুব ভাল লেখনী তোমার ❤️💐
ReplyDeleteখুব সুন্দর লেখা তোমার
ReplyDeleteদিদি
মন দিয়ে পড়লাম। পড়ার শেষে অনুভব করলাম, হৃদয়ের গভীরে আঁকা হয়ে গেল যেন।
ReplyDelete