জ্বলদর্চি

দুঃখ বিলাস /পুলককান্তি কর

চিত্র- শুভম দাস 

দুঃখ বিলাস

পুলককান্তি কর


অনেকক্ষণ ধরেই একটা গোঁগানির আওয়াজ আসছিল খুব ধীর ভাবে, কিন্তু আচমকা একটা শব্দে যেন আমার ভেতরটা কেমন কেঁপে উঠল। চটাস করে একটা চড়ের আওয়াজ আর তার সাথে একটা ভয়ার্ত নারী কন্ঠের চিৎকার। আমার ঠিক মাথার কাছের দেয়ালটার ওপারের রুম থেকেই আসছে শব্দটা। রাত প্রায় একটা বাজে। সেই সাড়ে এগারোটা থেকে শুরু হয়েছে এসব চোটপাট। কাল ভোরে আবার এই হোটেল থেকে চেক আউট করার কথা দিল্লির উদ্দেশ্যে। কাঁহাতক এসব অসভ্যতা ভালো লাগে। পাশের রুমে একটা কাপল আছে তারা আমাদেরই টিমের – সুতরাং চক্ষুলজ্জার খাতিরে এতক্ষণ হজম করছি। কিন্তু না, এবার কিছু একটা করা দরকার। হলই বা স্ত্রী! তাই বলে এত জোরে কেউ মার চড় মারে? নরম সরম মেয়ে হলে তো কানের পর্দা ফেটে যাবে। নির্ঘাত লোকটা মদের ঘোরে আছে। সন্ধ্যায় দেখছিলাম তো – লোকটা আরও কতগুলো অল্পবয়সী ছেলেদের সাথে বসে নীচে ড্রিঙ্ক করছিল। জীবনে এই প্রথমবার বেড়াতে এসে আমাকে এতটা বিড়ম্বনায় পড়তে হল। এর আগেও এই ট্যুর কোম্পানির সাথে বহুবার এদিক ওদিক বেড়াতে গেছি, কোনওবার কোনও সমস্যা হয়নি। এইবার গত তিন রাত ধরে এই দম্পতির দাম্পত্য ক্যালানির ভাগ নিতে হচ্ছে আমায়। কালকেই ট্যুর ম্যানেজারকে বলে রাখতে হবে যেন ওদের পাশের রুমে আগামী দিনগুলোয় আমাকে না রাখে। বিষয়টা শুধু যে ঘুম না হওয়ার – তা কিন্তু নয়। একটা অসহায়তা, কিছু করতে না পারার ক্রোধটাও মনে হয় বিরক্তিটকে আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। একটা টি-শার্ট গায়ে দিয়ে ভাবলাম যাই একটু কড়কে দিয়ে আসি – তারপর নিজেরই আর এক সত্ত্বা আমাকে ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় করে দিতে লাগলো। আরও দিন দশেক ওদের সাথে থাকা। আজকে অপ্রিয় কিছু বলে দিলে পুরো ট্যুরটার বারো বেজে যাবে। নিজের মনে মনে অভিসন্ধি করলাম আর একবার মারুক, তখন না হয় কিছু বলতে যাবো। ঈশ্বর বোধহয় আমাকে করুণার চোখে দেখেন, তাই আমাকে আর অপ্রিয় কাজে উদ্যোগ নেবার অবসরই দিলেন না বাকী রাত। অ্যালার্মের শব্দে যখন ঘুম ভাঙলো, তখন ভোর পাঁচটা। জানলার পর্দাটা সরিয়ে দেখলাম চারপাশে এখনও অন্ধকার। বাথরুমে গিজারটা চালিয়ে হঠাৎ শুনলাম দরজায় কেউ টোকা দিচ্ছে সন্তর্পনে। নিশ্চয়ই ট্যুর কোম্পানির লোক। ভোরে বেড়ানো হলে ওরা রুমে রুমে গিয়ে ঘুম থেকে তুলে দিয়ে যায়। খুবই ক্যাজুয়েল ভাবে দরজাটা খুলে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। পাশের রুমের ভদ্রমহিলা। নাইটির ওপর একটা হাউস কোট জড়ানো। উষ্কো খুষ্কো চুল – এদিকে আমি স্রেফ বারমুডা আর স্যান্ডো গেঞ্জি পরে মূর্তিমান দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। এত ভোরে মহিলাকে ভেতরে আসতেও বলা যায় না বা নিজেকে একটু ভদ্রস্ত করে পেশ করার অবসরও নেই। খানিকটা কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে ভাবছি কী করব, তখন উনিই বললেন, ‘শুনেছি আপনি ডাক্তার, আমাকে একটু ওষুধ দিতে পারেন?’ 

নির্ঘাত কাল মার খেয়ে গাল ব্যথা হয়ে গিয়ে থাকবে। তবে মুখে খানিকটা নির্বিকার টাইপের মুখোশ এঁটে বললাম, ‘কী সমস্যা হয়েছে বলুন?’

– আমার মনে হয় ইউরিন এর সাথে ব্লাড যাচ্ছে। একেবারে লাল রঙের ইউরিন।

🍂

বড় সমস্যায় পড়া গেল। ক্লিনিকে এসে কেউ এ ধরনের সমস্যার কথা বলছে মানা যায়, তাকে সেই সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নও করা যায়। কিন্তু এত ভোরে, দরজার বাইরে দাঁড়ানো ভদ্রমহিলার সাথে এই বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করতেও কিন্তু কিন্তু ঠেকলো। ভদ্রলোককে নিয়ে উনি এলে সমস্যা ছিল না। বললাম, ‘দাদা কোথায়? ওঁকে নিয়ে আসুন, ওষুধ লিখে দিচ্ছি।’

– প্লিজ ডাক্তারবাবু, ও এখন ঘুমোচ্ছে। আমার তৈরী হয়ে ওকে ডাকার কথা। আর তাছাড়া ওকে বলার দরকার নেই। জানলেই অনর্থ করবে। 

গতকাল রাতের কথাগুলো মনে পড়ল। সত্যি, স্বামী যদি এমন পিশাচ হয় তবে তার সাথে সংসার করা ভারী মুশকিল। মনে মনে মায়া হল ভদ্রমহিলার উপর। নিজের শারীরিক সমস্যার কথাও যদি স্বামীকে না বলা যায়, তবে জীবন কাটাবে কী করে? আমার ভাবনাকে ছিন্ন করে ভদ্রমহিলা বললেন, ‘কিছু একটা ওষুধ দিন ডাক্তার বাবু, যাতে এক্ষুনি কমে যায়, নইলে বেড়ানো মাথায় তুলবে ও।’

– ইউরিন করার সময় কি জ্বালা করছে?

– না।

আচার্য হলাম। ‘বারবার পাচ্ছে?’ 

– তেমন বুঝছি না। পাচ্ছে বোধ হয়। 

– জ্বর আসছে? 

– না। 

কিছুটা ঢোক গিলে বললাম, ‘এ মাসে পিরিয়ড হয়েছে? 

– হ্যাঁ। গত সপ্তাহেই ওষুধ খেয়ে হয়েছে। 

– মানে? 

– এই তো বেড়াতে আসবো বলে কিছুদিন আগে থেকে ওষুধ খেয়ে পিরিয়ড এগিয়ে নিয়ে এসেছিলাম। 

– আপনি একা একা ওষুধ খেয়ে নিয়েছিলেন? 

– না, না। ও সঙ্গে করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। ডাক্তারের কথা মতো ওষুধ খেয়েছি। 

আমি আর কথা বাড়ালাম না। আমার ওষুধ বাক্স থেকে দুটো ওষুধ এনে বললাম, ‘এখন একটা করে খেয়ে নিন। না কমলে পরে জানাবেন, ওষুধ দিয়ে দেব।’ 

– আমার স্বামীকে কিছু বলবেন না প্লিজ ।

– আমি বলবো না ঠিক আছে। কিন্তু আপনার বলা দরকার। একটা ইউরিনের টেস্ট করাতে হবে। ইউ.এস.জিও করানো জরুরী।

– এই তেরো দিনের মতো কিছু একটা ওষুধ ব্যবস্থা করে দিন ডাক্তারবাবু। কলকাতায় ফিরে না হয় ওসব ব্যবস্থা করব। 

– ঠিক আছে। আমি ওষুধ লিখে দিচ্ছি, আপনি সময় সুযোগ মতো ওষুধগুলো কিনে নেবেন। আপাতত খান ওগুলো। 

– ধন্যবাদ ডাক্তার বাবু। আপনি লিখে রাখুন। আমি পথে কোন এক ফাঁকে আপনার থেকে নিয়ে নেব। 

ভদ্রমহিলা খুব সন্তর্পনে ফিরে গেলেন নিজের রুমে। আচ্ছা ঝামেলায় পড়া গেল। কে এখন ওষুধের নাম চিরকূটে লিখে ঘুরবে? চোরের মতো এভাবে লেখা চালান করা যায়? সারা জীবন কখনও এমন কাজ করিনি। ভেতরটা কেমন তেতো হয়ে গেল। তবু ভদ্রমহিলার মুখটা মনে পড়তে ততখানি রাগ হল না। বড় মায়াদার মুখ। নিজেকে মনে মনে দুটো খিস্তি দিয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়লাম। 

একটু পরে বেড-টি দিয়ে গেল রুমে। চা খেতে খেতে ছোট একটা প্যাডে ওষুধগুলোর নাম লিখে বুক পকেটে রেখে দিলাম যাতে সুযোগ বুঝে দিয়ে দেওয়া যায়। একবার শেষবারের মতো মালপত্র গুলোয় চোখ বুলিয়ে যখন হোটেল ছাড়লাম তখন প্রায় সাড়ে ছটা বেজে গেছে। নীচে বাসে উঠে দেখি ভদ্রমহিলা আমার সিটের থেকে তিনটে রো পেছনে বসেছেন। ওঁর পতিদেবতাটি এখনও বাসে উঠতে পারেনি। এক ঝলক চোখাচোখি হল বটে তবে উনি আমায় বিশেষ চেনার চেষ্টা করলেন না। ওষুধটা দিয়েছি। এক দেড় ঘন্টা হয়ে গেল ওষুধটায় কাজ করল কিনা জানার ইচ্ছে হচ্ছে ষোল আনা, তবু কৌতুহল চেপে বসে রইলাম। জানলার পাশেই আমার সিট। মুখটা বাড়িয়ে দেখলাম ট্যুর ম্যানেজার হন্তদন্ত হয়ে যে যে লোক বাসে ওঠেনি তাদের লিস্ট বানিয়ে হোটেলের ছেলেটিকে দিয়ে ডাকতে পাঠাচ্ছে। এইসব হোটেলের সাথে ট্যুর কোম্পানিগুলোর একটা হৃদ্যতা হয়ে যায়। বছরে কতবার আসে তার ইয়ত্তা নেই। খানিকক্ষণ পর সব লোকজন জোগাড় করে যখন বাস ছাড়ল তখন প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট লেট। বড় বিরক্ত লাগে এমন সব মানুষের জন্য। জীবনে কোনও কিছুতেই এদের সিরিয়াসনেস নেই। এতগুলো লোক ওদের দেরী করে তৈরী হওয়ার জন্য বসে আছে নিজেদের সময় নষ্ট করে – সে সম্পের্ক কোনও অনুতাপ কারও হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। আসলে এসব অনুভূতি এদের নেই বললেই এ ধরনের ইতরামি করে। সকালের মুডটাই খারাপ হয়ে গেল। আমার পাশে এক ষাট পঁয়ষট্টি বছরের ভদ্রলোক বসে আছেন। নিরঞ্জন বাবু। সরকারি আবগারি দপ্তরের অফিসার ছিলেন। কিছুদিন রিটায়ার্ড লাইফ লিড করছেন। অকৃতদার ভদ্রলোক। ট্যুর নিয়েই মেতে থাকেন সারা বছর। তিনি একটু মুচকি হেসে বললেন, ‘সব ট্যুরেই এমনধারা লোক থাকে বারীন বাবু। মেজাজ খারাপ না করে প্রকৃতির দৃশ্য দেখুন। এখান থেকে দিল্লি যাবার রাস্তার দু’পাশটা বড় চমৎকার। আর তাছাড়া ফাল্গুন মাস। সুন্দর হাওয়া বইছে। আপনি ডাক্তার মানুষ, হাওয়া খাওয়াটা স্বাস্থ্যকর কিনা বিচার করবেন, তবে এটা যে মন উচাটন করে – সেটা আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকেই বলতে পারি। 

– উচাটন করে মানে? ছোটবেলা থেকে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে পড়ে আমার বাংলাটা বেশ দুর্বল। সেই লজ্জা থেকেই জিজ্ঞেস করলাম।

নিরঞ্জন বাবু বেশ হতাশ গলায় বললেন, ‘উচাটন মানে বোঝেন না? আপনারা ডাক্তাররা সত্যি বেশ নিরস।’

– এটা ডাক্তার প্রজাতির দোষ নয় নিরঞ্জনদা, আমার বাংলা জ্ঞানের অভাব।

– ‘উচাটন’ মানে হল মনটা পাগল পাগল করা। এটা বোঝেন তো, নাকি তাও বোঝেন না? 

ব্যাপারটা বুঝি না তা নয়, আবার বুঝিও – তেমন অনুভব মাথায় এল না। একটু ছেঁদো হাসি দিয়ে বললাম – ‘হ্যাঁ হ্যাঁ। ওই তো হেমন্তর গান আছে না, ‘এসেছে ফাগুন মাস, দারুণ এ সময়, লেগেছে বিষম চোট কী জানি কী হয়…’

– এইতো ঠিক বুঝেছেন একেবারে। তবে শুনি আপনারা বলেন – এই হাওয়ায় নাকি পক্স এর জার্ম ঘোরে?

– ছাড়ুন ওসব কথা। জার্ম তো সব সময় ঘুরছে; যার হওয়ার, তার হবে।

– আপনি এই সময় বেড়াতে এলেন কী করে? আপনি তো হাসপাতালে চাকরী করেন বলেছিলেন। 

– আমি আমার ই.এল গুলো বছরের শুরুর দিকে নিয়ে নিই। আগে থেকে প্ল্যান করা থাকে তো, অসুবিধা হয় না।

– প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন না? 

– তেমন না। এক জায়গায় বসি, সপ্তাহে দুদিন। 

– মাত্র? বেশি বসেন না কেন?

– প্রথম কথা সময় পাই না। দ্বিতীয় কথা এত টাকা নিয়ে কী করব? আমার কোনও আগু-পিছু টান নেই। সরকার এখন যা মাইনে দেয় তা আমি ফেলে ছড়িয়েও শেষ করতে পারি না। 

– বিয়ে থা করবেন না? 

– আপাতত ইচ্ছে নেই। বয়সও নেই। 

– কত আর বয়স আপনার? পঞ্চাশ তো পেরোয়নি মনে হয়। 

– ফিফটি টু। 

– তো? এটা বিয়ে না করার বয়স নয়। চাইলে করতেই পারেন। 

– দেখি, ষাট পঁয়ষট্টিতে ইচ্ছা হলে ভেবে দেখব একবার। একটু শব্দ করে হাসলাম আমি। নিরঞ্জন বাবু অট্টহাসি দিলেন। কথায় কথায় একসময় একটা ধাবায় এসে বাসটা দাঁড়ালো। চা টা খেয়ে টয়লেট যেতে গিয়ে ভদ্রমহিলার সাথে দেখা। ডাক্তারি পেশায় এসে বহু কষ্টে একটা জিনিস আমি রপ্ত করেছি – আগ বাড়িয়ে আমার কোনও রোগীকে হঠাৎ দেখা হলে জিজ্ঞাসা করি না সে কেমন আছে। এই সংক্রান্ত বহু তিক্ত অভিজ্ঞতাও আছে আমার। কিন্তু কেন জানিনা সেই সংযম কাজ করল না এখন। বললাম, ‘কী, কেমন আছেন এখন?’ 

– ভালো আছি অনেকটা। 

– এখন আর লাল হচ্ছে না তো ইউরিনটা? 

– না। এই তো ঘুরে এলাম। পরিষ্কারই হচ্ছে। তবে তলপেটটায় একটু ব্যথা হচ্ছে। 

– ঠিক আছে; আপনি ওষুধগুলো খান। বলেই পকেট থেকে চিরকুটটা বের করলাম আমি। ভদ্রমহিলা এদিক ওদিক দেখে আমার হাত থেকে কাগজটা ধরে নিলেন। 

– কিন্তু এখানে এগুলো পাবো কোথায়? রাস্তায় নেমে ওষুধ কিনতে গেলে ও তো বুঝে যাবে?

– আপনি আপনার স্বামীকে বলুন না আপনার সমস্যাটা! 

– আচ্ছা। 

বুঝলাম কথা না বাড়ানোর জন্যই উনি সম্মতি দিলেন। বললাম, ‘ঠিক আছে, আমি কিনে রাখছি না হয়। আপনি সুযোগ মত নিয়ে নেবেন আমার থেকে।’ 

– না ডাক্তারবাবু। আমি ওকে বলব কিনে দিতে। 

– সেই ভালো। 

বললাম বটে, কিন্তু মনটা ঠিক সায় দিল না। ভদ্রমহিলা স্বামীকে বলতে চাইছিলেন না মানে নিশ্চয় কোনও ব্যাপার আছে। কিন্তু এখন আবার সেই লোকটার কাছেই চাইতে হবে ওনাকে – ভাবতেই নিজেরই কেমন অসহায় মনে হতে লাগলো। বললাম ‘এক কাজ করুন, সকালে যে ওষুধটা দিয়েছিলাম, সেটাই আপাতত পাঁচদিন খান। আমার হ্যান্ড ব্যাগে আছে। আপনি একটুক্ষণ এখানে দাঁড়ান, আমি নিয়ে আসছি।’ বলেই ওনাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই হাঁটা লাগালাম আমি। সঙ্গে একটা অ্যালকালাইজার কিছু দিতে পারলে ভালো হত। সিরাপ বলে সঙ্গে ক্যারি করিনি এবার। যা হোক কয়েকটা ট্যাবলেট নিয়ে যখন আবার টয়লেটের কাছে পৌঁছালাম, দেখি উনি দাঁড়িয়ে আছেন। এদিক ওদিক লক্ষ্য করে ট্যাবলেট গুলো দিয়ে দিলাম ওনার হাতে। উনি বললেন, ‘এবার যাই? নইলে খোঁজ করবে আবার।’

– আসুন। বাই দা বাই, আপনার নামটা জানতে পারি? 

– তূর্ণি। 

– তূর্ণি? মানে কী? 

– তূর্ণি মানে চতুর, বুদ্ধিমান। যদিও আমি আমার নামের উপযুক্ত নই। ঠিক আছে, আসি? 

– আসুন। 

দিল্লিতে আমাদের পাঁচ দিন থাকা। গত দু’দিন ধরে দিল্লির বিভিন্ন মনুমেন্ট, অক্ষরধাম মন্দির, রাষ্ট্রপতি ভবন, মিউজিয়াম ইত্যাদি দেখতে দেখতে কেটে গেছে। এবার ম্যানেজারকে বলাই ছিল, তুর্ণিদের পাশের রুমে আমার বেড দেয়নি। গত দুদিন কয়েকবার চোখাচোখি হয়েছে যদিও, কথাবার্তা তেমন হয় নি। আজ সকালে ফতেপুর সিক্রি হয়ে বিকেলে তাজমহল যাওয়ার কথা। ফতেপুর সিক্রির মধ্যে একটা বিখ্যাত দরগা আছে, সেলিম চিস্তির। বেশ ভিড় ছিল ওখানে। ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ পিঠে একটা খোঁচা অনুভব করে ফিরে দেখলাম তূর্ণি। সুন্দর একটা চুড়িদারের ওপর এক কচি কলাপাতা রঙের দোপাট্টা হিজাবের মতো করে মাথায় আটকানো। আমাকে দেখে একগাল হেসে বলল, ‘ধাগা বেঁধেছেন?’ 

– কিসের ধাগা? 

– এই যে এখানে। ধাগা বেঁধে দিন। খুবই জাগ্রত পীর ইনি। লোকে বলে চল্লিশ দিনের মধ্যে নাকি মনস্কামনা পূর্ণ হয়। 

– আমার কামনা অনেক। 

– তিনখানা তার মধ্যে পূর্ণ করতে পারেন। 

– আসলে ফাঁকা বাসে উঠলে দেখবেন খুব সমস্যা হয়। কোন সিটে বসব বুঝে উঠতে পারি না। অথচ বাসে ভিড় থাকলে মনে হয় একটা সিট পেছনে হলেও যদি হত তো ভালো হত। ঠাকুরের কাছে কিছু চাইতে গেলে আমারও এমনটাই মনে হয়। কোনটুকু চাই? এই করে আর চাওয়া হয় না।

– ডাক্তার বাবু, ভেতরটা যদি ঘোরা হয়ে গিয়ে থাকে তবে বাইরে চলুন – ওপাশে মসজিদের দিকটায় – এখানে বড় ভিড়।

– আপনার স্বামীকে দেখছি না। 

– ও ফতেপুর দেখবে না বলল। হোটেলে গিয়ে ঘুমোচ্ছে। 

– দেখবেন না কেন? 

– সব ফোর্টই নাকি তার এক রকম লাগে। এসব মনুমেন্টে সে কোনও আনন্দ পায় না। একেবারেই বেরসিক ।

– কী করেন ভদ্রলোক ?

– ব্যবসাদার। পাক্কা বিসনেস ম্যান। 

– কিসের ব্যবসা ?

– মেডিসিনের হোলসেল। এছাড়াও প্লাস্টিক গুডসের কী সব রয়েছে। 

– কী সব রয়েছে মানে? আপনি জানেন না? 

– ওসব আমি বোঝার চেষ্টাও করি না।

– বোঝা তো উচিৎ। ওঁর সম্পত্তি ইত্যাদি সম্পর্কে জেনে রাখা আপনার ভবিষ্যতের জন্য ভালো। 

– ভবিষ্যৎ? হাসলেন, আমি এখনই কী প্রার্থনা করে ধাগা বেঁধে এসেছি জানেন? 

– প্রার্থনার কথা অন্যকে বলতে নেই। তাহলে মনস্কামনা পূর্ণ হয় না। 

– অতশত জানি না। লোকে বলে এই দারগায় চাইলে নাকি চাওয়া বিফলে যায় না। এর জন্য আমি একদম এক্সট্রিম চেয়েছি। হয় এসপার নয় ওসপার।

– মানে?

– মানে বুঝলেন না? পীর কে বললাম এই চল্লিশ দিনের মধ্যে যেন আমার স্বামীর মৃত্যু হয়, নয় আমার। 

ছি ছি! এভাবে কেউ ঈশ্বরের কাছে বলতে পারে? মানুষ ডিভোর্স চাইতে পারে বা তার আগে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে পারে – যেন সংসারে শান্তি ফিরে আসে, ওর স্বামীর সাথে যেন ওর সদ্ভাব ফিরে আসে – তা নয়। একেবারে মৃত্যু কামনা! তবে কি ওর স্বামী এতটাই ওকে কষ্ট দেয় যে তার মৃত্যু কামনাটাই এখন শেষে ঠেকেছে? কেমন একটা অসহায় বিরক্তির বোধ ছাপ ফেলল আমার মুখে।

– আমাকে খুব খারাপ মনে হচ্ছে, না ডাক্তারবাবু? সব কথা তো বোঝানো যায় না। সিম্পলি এখন আমার মনে হয় আমি নরক যন্ত্রণা ভোগ করছি। 

– আপনি যদি ঈশ্বর বিশ্বাস করেন তো ঈশ্বরকে এমন প্রার্থনাও তো করতে পারতেন – যাতে আপনার সমস্যা দূর হয়, আপনার স্বামী আপনাকে ভালবাসেন, মদ খাওয়া ছেড়ে দেন বা এই জাতীয়?

– জানেন তো ডাক্তারবাবু, আমাদের প্রার্থনাগুলোও বেশ আমাদের মতো মধ্যবিত্ত। ধরুন আমি যদি প্রার্থনা করতাম ‘হে পীর আমাকে সুখী করে দাও।’ তাহলে চল্লিশ দিনের মধ্যে আমি কী দেখতাম? সুখ? পীর বলতেন, তোকে তো সুখী করে দিয়েছি। আগের তুলনায় মেপে দ্যাখ। আমার কোনও কসুর নেই। আসলে সবই থিওরি অফ রিলেটিভিটি।

– তাই বলে মৃত্যু? এত যখন সমস্যা, ডিভোর্স করে নিতে পারেন তো। 

– প্রেম করে বিয়ে ডাক্তারবাবু। বাবা মার কাছে কী বলে মুখ দেখাবো? 

– নিজের জীবনের থেকে কি বাবা-মাকে মুখ দেখানো বড়? সেরকম হলে আলাদা থাকবেন। 

– তাও সম্ভব নয়। আমি কিছু করি না। খাবো কী? থাকবো কোথায়? 

– মৃত্যু হলে সে সমস্যা হবে না? 

– আমি মরলে তো ল্যাটা চুকে গেল। আর ওর মৃত্যু হলে স্ত্রী হিসাবে কিছু তো আমি পাবো! 

– আপনাদের বিয়ে ক বছর হয়েছে? 

– পাঁচ বছর। 

– ছেলে মেয়ে? 

– ভাগ্যিস হয়নি ডাক্তার বাবু। এর উপর বাচ্চা থাকলে কী যে হত, কে জানে! 

– কারো কোনও সমস্যা আছে কি, এই সংক্রান্ত?

– না। আমি এতশত খোঁজও রাখি না। 

– এ নিয়ে ডাক্তার দেখানো হয়েছে? 

– দু একবার দেখানো হয়েছে। 

– যেভাবে বলছেন, তাতে মনে হয় বিষয়টা নিয়ে আপনি বেশী আগ্রহী নন। আপনি ঠিকমতো নিয়ম-কানুন মেনে না চললে চিকিৎসায় সাফল্য আসবে কী করে? 

– ডাক্তারবাবু একটা কথা আপনি ঠিকই বলেছেন। ইদানিং ব্যাপারটা থেকে আমার আগ্রহ একেবারে চলে গেছে। এখন মনে হয়, না হলেই ভালো। এখনকার মত জীবন চললে বাচ্চার গঠন ঠিকমতো হতো না। ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তো।

– আপনার স্বামীর নাম কি? 

– দেবদুলাল। দেবদুলাল চক্রবর্তী। 

– উনি আপনাকে ঠিক কী রকম ভাবে নির্যাতন করেন আমি জানিনা – এটা ঠিক, তবে লক্ষ্‌নৌ এর তিনরাত পাশের ঘরে থেকে যতটা অনুভব করেছি তা রীতিমত ভয়াবহ। এভাবে সম্পর্ক থাকলে বাচ্চা না হওয়াই উচিৎ।

– আপনি ডাক্তার মানুষ বলেই না বুঝলেন! আমার বাবা মাকে বলারই উপায় নেই। বলতে গেলেই আমার দোষ ধরে। বলে নাকি বাচ্চা এলে এসব ঠিক হয়ে যাবে। বলুন তো বাচ্চা এলে দেব মদ খাওয়া ছেড়ে দেবে? বাচ্চা হলে সে আমার গায়ে হাত তুলবে না?

– বলা ভারি মুশকিল তূর্ণি। 

– বলুন তো! বাবা আজকাল কিছু বলে না। মা রাগ করে ফোন করাই বন্ধ করে দিয়েছে। আর ফোন করলেও কান্নাকাটি, ঝগড়াঝাঁটি। আমার এত সব ভালো লাগে না। 

– আপনারা দুজন কি একসাথে পড়তেন? 

– বি.এস.সি একসাথে পড়েছি। তারপর দেব পড়া ছেড়ে দেয়। আমি এম.এস.সি করেছি। 

– কিসে? 

– ফিজিক্স এ। 

– দেবদুলাল বাবু ছাড়লেন কেন?

– প্রথম কথা নম্বর কম ছিল, চান্স পায়নি। দ্বিতীয় কথা, বাড়ীর বড় ব্যবসা। টাকা পয়সা দিয়ে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি থেকে করার কথা সমীচিন মনে করে নি। 

– ডিগ্রীর পার্থক্যটা কি আপনার কাছে ওনাকে হীনমন্য করে তোলে? 

– না বলেই তো মনে হয়। তবে মন বড় জটিল জিনিস। হয়তো পৌরুষ দেখিয়ে সেটাকে মেটাতে চায় সে।

– আপনি সেরকম হলে দেবদুলাল বাবুকে নিয়ে কোনও ম্যারেজ কাউন্সিলারের কাছে যান না! তাতে কাজ হলেও তো হতে পারে। 

– ও কিছু কাজ হবে না ডাক্তারবাবু। ও বড় বোদ্ধা। ম্যারেজ কাউন্সিলারের এমন কাউন্সিলিং করে দেবে সে, যে ওর বিয়েটাই টেকানো সমস্যা হয়ে যাবে পরে। হাসলো তূর্ণি। ওর কথার রেশ ধরে আমিও হাসলাম। কিন্তু মনে কোথাও হাসিটা তেমন করে বাজলো না। একটু চুপ করে থেকে তুর্ণি বলল, ‘একটা কথা বলবো ডাক্তারবাবু? যদি কিছু মনে না করেন?’

– বলুন।

– লোকে বলে অন্যের জন্য প্রার্থনা করলে ঈশ্বর তার কথা শোনেন। আপনার নিজের তো কোনো চাহিদা নেই। আপনি এই দরগায় আমার জন্য একটা ধাগা বেঁধে দেবেন? 

তূর্ণির দিকে চেয়ে বড় মায়া হল। এমন করুণ স্বরে এতটা আন্তরিকভাবে বলল যে, না করা যায় না। তবুও মুখে একটা কাঠিন্য এনে বললাম, ‘আমরা ডাক্তারেরা কখনও কারও মৃত্যু কামনা করি না। এটা আমার অন্তত নীতিবিরুদ্ধ। আর তাছাড়া আমি ওসবে বিশ্বাসও করি না। যদি আমার চাওয়ার কিছুমাত্র দাম থাকে তথাকথিত ঈশ্বরের কাছে, তবে আমি নিশ্চিতভাবে চাইবো যাতে আপনার জীবনে শান্তি আসে। আপনি যাতে দিনের পর দিন মুখ বুজে মার খেয়ে বেঁচে না থাকেন – এ কামনা নিশ্চিতভাবে করবো আমি। 

হঠাৎ তূর্ণি ওর দুহাত নিজের বুকের কাছে জোড়ো করে প্রণাম করার ভঙ্গি করল। একটু পরে বড় এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমার দুটো হাত ধরে বলল, ‘আমার এটুকুতেই হবে। এই কামনাটা করবেন আমার কথা মনে পড়লে।’

আগ্রাতে দু’দিন একরাত থাকার প্ল্যান। ফতেপুর সিক্রি থেকে ফেরার পথে দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করে একবারে তাজমহল। দেখলাম তাজমহলে এসে দেবদুলালবাবু যোগ দিয়েছেন। তাজমহলের সামনের বিখ্যাত বেঞ্চটায় তূর্ণির সাথে কয়েক দফা ছবিও তুললেন তিনি বেশ নানান কায়দায়। আমার সাথে ভদ্রলোকের এই কদিনে চোখাচোখি হলে দাঁত বের করা ছাড়া অন্য কোনও অভিব্যক্তি ছিল না। তূর্ণিকে ওই রাতে মারার পর থেকে তো ওঁকে দেখলেই আমার কেমন একটা ক্রোধ হত। বহু কষ্টে রাগ সংবরণ করে কেঠো হাসি দিতাম। আমার আবার এক সমস্যা। জোর করে হাসতে গেলে এমন বিকট দেখায় আমাকে, যে কেউ বোঝে ওটা কপট হাসি। তাজমহলের মাঝে যমুনা নদীকে দেখে আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল। এই সেই যমুনা নদী? রাধাকৃষ্ণের অভিসারের স্রোত? দিল্লিতে নানান কাজে বহুবার এসেছি আগে। যমুনার উপর দিয়ে ট্রেনেও গেছি। তবে আজ বড় খারাপ লাগল এত কাছ থেকে দেখে। নদীর প্রতি আমার খুব দুর্বলতা। মজে যাওয়া, শুকিয়ে যাওয়া নদী দেখলে আমার খুব কষ্ট হয়। মনে হয় এই বিগত যৌবনারা এখনও শুধু টিকে আছে টিকে থাকতে হবে বলেই। এখন আর নৌকো চলে না, বর্ষায় বান ডাকে না। দুপাশের পাড়ে গিয়ে আছড়ে পড়ার মতোও জল নেই। কেবল শ্যাওলা আর প্লাস্টিকের বড় বড় চাকলা এদিক ওদিক স্হানু করে রেখেছে সবকিছু। 

আগ্রার হোটেলটা ভারী চমৎকার। আসলে বিদেশীরা আসে বলে বোধ হয় এরা ডলারের লোভে নিজেদের উৎকর্ষতাটুকু মেনটেন করে। রাতে ঘুম যতটা ভালো হওয়া উচিৎ, ততটা হল না। মাঝে মাঝেই দেবদুলালের তু্র্ণিকে জড়িয়ে ধরে ফটো তোলার দৃশ্যগুলো মনে ভেসে আসতে লাগলো। যেখানে প্রেম নেই সেখানে এতটা দেখনদারি কী করে আসে – মনে মনে তাই ভাবছিলাম। তূর্ণিকে দেখে কি মনে হচ্ছিল, ঘন্টা কয়েক আগে সে এই লোকটির মৃত্যু কামনা করে এসেছে? জীবন কি মানুষকে এতখানি অভিনয় করতে শেখায়? রাতে আবার একটা স্বপ্নও দেখলাম। মস্ত যমুনা নদী, এপার ওপারে চোখ যায় না তার – এতখানি বিস্তার। উপরে কোথায় বান ডেকেছে যমুনায়, জল টইটুম্বুর। সমুদ্রের মতো ঢেউ উঠছে সেখানে। তূর্ণি তাজমহল দেখতে দেখতে কিভাবে যেন যমুনায় পড়ে গেছে। ঢেউ এর দোলায় সে হাঁকুপাঁকু করে ডুবে যাচ্ছে ক্রমশ আর তার বর পেছনের চাতালটায় বসে মদ খাচ্ছে। আমাকে দেখতে পেয়ে বলছে ‘ডাক্তারবাবু দেখুন না, আমার বউ নদীতে পড়ে গেছে। আপনি তো সাঁতার জানেন শুনেছি। দেখুন না চেষ্টা চিত্তির করে, যদি বাঁচানো যায়!’ যে ক্যামেরাওয়ালা ওদের ছবি তুলছিল – দেখি সে ব্যাটাও মদ খাচ্ছে। আমাকে দেখে একগাল হেসে বলল, ‘ঝাঁপ মারোগে তো দাদা বোলনা! লাইভ ভিডিও খিঁচনা হ্যায়।’ যমুনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম – ঢেউ থেমে গেছে, কোথাও তূর্ণি নেই। স্বপ্নটা দেখে ঘুমটা ভেঙে গেল আর এল না। উঠে দেখলাম সবে রাত তিনটা। এখন একটা ঘুমের বড়ি খাওয়া ঠিক হবে না। সকালে উঠে বেরোনো আছে। সৎসঙ্গের আশ্রম দেখে এতমতদৌল্লার মকবরা যাব। সেখান থেকে ফের দিল্লি।

ভোরে উঠে স্নান টান গুলো সেরে নিলাম তাড়াতাড়ি। আবার কবে এখানে বেড়াতে আসা হবে ঠিক নেই। একটু হাঁটতে বেরোলাম এদিক ওদিক। ফিরে এসে দেখি মোটামুটি সবাই বেরোবার জন্য তৈরী। দেবদুলালবাবু আজ আগে ভাগেই তৈরী। তূর্ণির সঙ্গে দাঁড়িয়ে খোশ গল্প করছেন। আমাকে দেখে হঠাৎ করে তূর্ণি যেন মনে মনে অস্বস্তি অনুভব করল, বোঝা গেল। হঠাৎ করে গতকাল রাতের স্বপ্নের কথা মনে পড়তে নিজেকে বেশ গাড়োল মনে হল। আমার এক সাহিত্যপ্রেমী ক্লাসমেট ছিল ডাক্তারী পড়ার সময়ের। ও এরকম পরিস্থিতিতে বলতো ‘কপালকুণ্ডলার নবকুমারের মত মুরগী হতে যাস না। এ যুগে নবকুমারের কোনও মূল্য নেই।’ লোকজন আমাকে যাই ভাবে ভাবুক, আমার অবচেতন যে আমাকে যমুনায় ঝাঁপ দেওয়াতে নিয়ে যাচ্ছিল – এই ভেবেই নিজেকে এক পায়ে দাঁড়ানো মুরগী মনে হতে লাগলো। আমি ফটাফট ঘরে গিয়ে লাগেজটা নিয়ে বেরিয়ে এলাম। গোছানো ছিল সবই। সৎসঙ্গের মন্দিরটা দেখে যখন এতমতদৌল্লার মকবরায় এসে পৌছালাম তখন প্রায় এগারোটা বাজে। কী চমৎকার শৈলী, না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। আমার তো তাজমহলের থেকেও ভালো লেগে গেল সৌধটি। সম্রাট জাহাঙ্গীর নুরজাহানের বাবা এতমতদৌল্লার স্মৃতিতে এই সৌধটি বানিয়েছিলেন। তাজমহলের মত দেখনদারি নেই কোথাও, এত ভিড়ও নেই। তবু আপন সৌন্দর্য নিয়ে নিরিবিলি যমুনার তীরে দাঁড়িয়ে রয়েছে এটি – কালের সাক্ষী হয়ে। এর সবচেয়ে সুন্দর জায়গাটি হল যমুনার পাশে বাঁধানো ঘাটটি। বসলে মনে হবে যেন নৌকায় বসে আছি নদীর বুকে। একমনে ওখানে বসে যমুনা দেখছিলাম অনেকক্ষণ ধরে। আমাদের দলের লোকজন এই জায়গাটিকে তেমন দর্শনীয় মনে না করে অন্যত্র ঘুরে বেড়াচ্ছেন। হঠাৎ খেয়াল হল আমার পাশে এসে সন্তর্পনে দাঁড়িয়ে আছেন দেবদুলাল বাবু। দেখে মনে হল কিছু বলতে চান। আমি আমার বিরক্তি যথাসম্ভব চেপে বললাম, ‘কিছু বলবেন?’ 

– না মানে ভাবছি আপনি বেড়াতে এসেছেন, আপনাকে এভাবে পথে-ঘাটে বলা উচিৎ কিনা। 

– ডিসিশন যখন নিতে পারেননি অথচ এসে পড়েছেন, তখন বলেই ফেলুন। 

– ম্যানেজার বাবুর মুখ থেকে শুনেছি আপনি ডাক্তার। তাই? 

– হ্যাঁ।

– দয়া করে বলবেন আপনার স্পেশালিটিটা? 

একটু বিরক্ত হলাম, তবু বললাম ‘গাইনোকলজি।’ 

– আসলে আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে যারপরনাই বিব্রত এবং বিপর্যস্ত। আমি আপনার সাথে একটু পরামর্শ করতে চাই। 

বলে কী লোকটা? যে কিনা স্ত্রীর ব্যাপারে এতটাই উদাসীন যে স্ত্রী তাকে নিজের রোগটুকু বলতে দ্বিধা করে – সেই কিনা নিজেকে বিপর্যস্ত বলে দাবী করে? মুখে বললাম ‘বলুন না সমস্যাটা কি? গাইনোকোলজিক্যাল সমস্যা হলে সাহায্য করতে পারবো।’ 

– সে সমস্যা তো আছেই। আমাদের সন্তান হচ্ছে না – আজ প্রায় পাঁচ-ছ বছর বিয়ে হয়ে গেল। তবে সে সমস্যার জন্য এইভাবে রাস্তা-ঘাটে আপনাকে বিব্রত করব না। দরকার হলে আপনার চেম্বারে গিয়ে কথা বলব। এখন যেটা প্রধান সমস্যা, সেটা হল মানসিক। আমার বোধহয় একজন সাইকিয়াট্রিস্টের সাথে কথা বলার দরকার। দু একজনকে দেখিয়েছি। আমি আসলে মেডিসিনের হোলসেল বিজনেস করি। ব্যবসার সুবাদে অনেক ডাক্তারবাবুদের সাথে যোগাযোগও আছে। কিন্তু বিষয়টা এত পার্সোনাল যে, সবার সঙ্গে কথা বলাও যায় না। আপনি যদি এই বিষয়ে কোনও হেল্প করতেন তো ভালো হত। 

– কী ধরনের হেল্প চান বলুন। আমার বন্ধুদের মধ্যে যারা ভালো সাইকিয়াট্রিস্ট, তাদের নম্বর দেব?

– ব্যাপারটা যে ঠিক কাকে দেখানো উচিৎ – তাই তো বুঝতে পারছিনা। 

মনে মনে বললাম – আগে নিজেকে দেখাও শালা। মাল খাওয়া কমিয়ে বউ এর সামনে ভদ্রভাবে পেশ হও, তবেই রোগ কমবে। 

মুখে বললাম, ‘মানসিক সমস্যা বলছেন যখন, তখন সাইকিয়াট্রিস্ট দেখানো উচিৎ।’

– আসলে এখানে সাইকিয়াট্রিস্ট নাকি কাউন্সিলার বেশী উপযুক্ত হবে, তাই ঠিক করতে পারছি না।

– সেটা সাইকিয়াট্রিস্টকে দেখালে তিনি বলে দেবেন কাউন্সিলিং দরকার কিনা। 

– ডাক্তারবাবু, দয়া করে একটু শুনবেন সমস্যাটা? আদৌ কি এটা রোগ নাকি আমারই কোথাও ভুল হচ্ছে – এই নিয়েই দোটানায় পড়েছি। প্রেমের বিয়ে। অথচ প্রতিদিন এমন প্রেমহীনতায় দিন কাটছে যে আমি আপনাকে বলে বোঝাতে পারবো না। সারাদিন ব্যবসার চাপ সামলে যদি দেখি বাড়ীতেও গুমোট – তখন আর মাথার ঠিক থাকে না। 

– কী ধরনের সমস্যা ওনার? 

– ভীষণ ধরনের অ্যাটেনশন সিকিং। সব সময় ও সবাইকে এভাবেই কনভিনস করার চেষ্টা করে যে ওর থেকে দুঃখী আর কেউ নেই। ওর বাবা মা কে ফোন করে বলে আমি নাকি ওকে মারি, সব সময় বকি। আমার বন্ধু বান্ধবের স্ত্রীদের সাথে গল্প করতে গিয়ে নিজের নানান কথা বলে যার অধিকাংশই সত্যি নয়। এমন নাটক করে নিজের দুঃখ কষ্ট বর্ণনা করে যে আপনি শুনলে সত্যি সত্যি মায়া করবেন। 

– কিন্তু আপনি যে ওনার গায়ে হাত তোলেন, এটা তো সত্যি কথা। লখ্‌নৌর হোটেলে পরপর তিন রাত আমি ওনার গায়ে হাত তুলতে শুনেছি। 

– ডাক্তার বাবু আপনি বাইরের থেকে হয়তো আমাকে এজন্য খারাপ ভেবেছেন। কিন্তু আমি নিশ্চিত আমার জায়গায় পৃথিবীর শান্ততম লোক থাকলেও সেদিন একই কাজ করতো। 

– কী এমন উনি করেছিলেন? যতটা জোরে আপনি চড় মেরেছিলেন, বিদেশ হলে আপনাকে এতদিনে পুলিশের ঘানি টানতে হতো। সর্বোপরি মদ খেয়ে কোনও ঘটনার বিচার করা উচিৎ নয়।

– মদ আমি খেয়েছিলাম আপনি জানলেন কী করে? তূর্ণি আপনাকে কিছু বলেছে?

– না। আমি বিকেলে বারে আপনাকে মদ খেতে দেখেছি। 

– দেখুন ডাক্তারবাবু, আমি কোনও কিছু জাস্টিফাই করতে চাই না। মদ সাধারণত আমি খাই না। কোন অকেশানে বাইরে ঘুরতে টুরতে গেলে খাই। না হলে আমার মদ-বিড়ি-সিগারেট – কোনও নেশাই নেই। তবে সেদিন মদ জেনে বুঝেই খেয়েছিলাম। আমার সেদিন মনের অবস্থা ভালো ছিল না।

– কী এমন ঘটনা ঘটেছিল শুনি?

– আপনাকে একটু আগেই বললাম, আমাদের ছেলেপুলে নেই – সেই জন্য চিকিৎসা করাচ্ছি বছর দুই হল। একে তো নিয়ম মেনে ওষুধ খায় না। আপনি বলুন, সারাদিন বাইরে বাইরে থাকি। দিনে দুবেলা ওষুধ মনে করিয়ে দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব? মাসের ওষুধ পাঠাবার সময় বুঝি, ও ওষুধ ঠিকমতো খায় না। এর মাঝে আসার আগে ও ওষুধ খেয়ে পিরিয়ড করিয়ে নিয়েছে বেড়াতে আসবে বলে। হতেই তো পারতো – এ মাসে কনসিভ করে ছিল ও!

– আপনি জানতেন না উনি পিরিয়ড করার ওষুধ খেয়েছেন? 

– না।

– নিজে নিজে ওষুধ খেয়ে নিয়েছেন? নাকি ডাক্তার দেখিয়ে?

– নিজে নিজে। পেপারে বিভিন্ন ওষুধের বিজ্ঞাপন বেরোয় না – ‘এই ওষুধ খেলে গর্ভপাত হতে পারে’। সেই জাতীয় কোনও ওষুধ এনে খেয়েছে।

– আপনি জানলেন কী করে? উনি বলেছেন?

– না না। লুকিয়ে রেখেছিল। সেদিন ও বাথরুমে গিয়ে আমায় বোধহয় সেফটিপিন চাইছিল। বলল ওর ব্যাগ এর মাঝের পকেটে আছে। ওটা খুঁজতে গিয়ে আবিষ্কার করি ওই ওষুধের প্যাকেট। প্রথমে তো মানতেই চাইছিল না। এটা ওর বন্ধুর – তার মাসির মেয়ের – এরকম নানান কথা। আমি তো বুঝেছি, ও মিথ্যে বলছে। দু চার ঘা দিতে স্বীকার করল সত্যি কথা।

– এর জন্য তিন দিন মারপিট করতে হল? 

– প্রথম দু রাত এটা জানতেই কেটে গেছিল। তৃতীয় রাতের মারপিটের কারণ আরও সাংঘাতিক। 

– কী রকম? 

– সেদিনটা নানা কারণে এমনিই আমার মন ভালো ছিল না। বিকেলে অনুপদের সাথে বসে মদ খাচ্ছিলাম, হঠাৎ ওর বাবার ফোন। আমি ভাবলাম, হঠাৎ কী ব্যাপার! ফোন করে প্রথম কথা, ‘আমার মেয়ে যে সারাদিন জলটুকু খায় নি, সে খবর আছে? 

বললাম, ‘জলটুকু খায়নি, মানে?’ 

– মানে আর কি! দুদিন ধরে এমন ঠেঙ্গিয়েছ যে মেয়ে অনশন করতে বাধ্য হচ্ছে। তুমি বাড়ী ফেরো, তোমার নামে ফোর নাইনটি এইট দেব। 

– সে দ্যান গিয়ে। কিন্তু খায়নি কেন?

– তুমি বেড়াতে গেছ; সারাদিন তোমার বউ খেয়েছে কি খায়নি – সে খবরটুকু নেই তোমার কাছে? 

– দু’দিন মনোমালিন্য হয়েছে আমাদের মধ্যে, এটা ঠিক। এজন্যই আমি ওকে নিচে খেতে যাওয়ার সময় ডাকতাম না। ও যে যায়নি সেটা জানতাম না।

– দেখ দেবদুলাল, ঝগড়াঝাঁটি আমাদেরও হত। কিন্তু সেই সময় কথা না বলাবলি হলেও আড় চোখে খেয়াল রাখতাম তূর্ণির মা খেল কিনা। অন্য সময় সে তো খায়ই। খেয়ালটা তখনই রাখা উচিৎ, যখন না খাওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে। এই তোমাদের ভালোবাসা?

একটুক্ষণ চুপ করে দেবদুলাল বলল, ‘দেখুন ডাক্তারবাবু, সব মানুষ একরকমের হয় না। শ্বশুর মশাই আমাকে দায়ী করলেন বটে, তবে আমি তূর্ণিকে ভালোবাসি না এমন নয়। বা ও খায়নি জানলে খাওয়ানোর চেষ্টা করতাম না – এটা ভাবা ভুল।’

– আপনি শ্বশুর মশাইকে বললেন অশান্তির কারণ? 

– কী বলবো ডাক্তারবাবু? কোন বাবা মা মানতে চাইবে তার মেয়ে মানসিকভাবে অসুস্থ? আবার বিষয়টা যখন এতখানি ট্রানজিশনাল – আমি নিজেও বুঝে উঠতে পারি না – এটা রোগ নাকি স্বভাব! মেরেছি যখন, শ্বশুরমশাই দু কথা বললে শুনে নিতে হবে। 

– আপনি তারপর কী করলেন? 

– আমার তো মাথায় আগুন জ্বলতে লাগলো ডাক্তারবাবু। তারপর ফোর নাইনটি এইটের ভয় তো আছেই। আমি উপরে রুমে এসে দেখলাম তূর্ণি শুয়ে আছে। আমি বললাম ‘তুমি নাকি আজ খাওনি?’ 

– কে বলল? ট্যুর ম্যানেজার? 

– না। 

– তবে কে বলল? 

– সেটাই তো আমি জিজ্ঞাসা করছি।

– আমি জানি না। 

– ফের মিথ্যে কথা? আমি নাকি মেরে তোমায় তক্তা করে দিয়েছি সেজন্য তুমি অনশন করছ – এসব কথা তুমি বলোনি কাউকে? 

– না। সেভাবে কাউকে বলিনি। 

– কীভাবে বলেছো? তুমি জানো ফোর নাইনটি এইট কাকে বলে? 

– না। 

– নন বেলেবল কেস। বধু নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করলে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারী হয়। তোমার বাবা এখন আমাকে ফোর নাইনটি এইটের হুমকি দিয়েছে। 

– কেন? 

– ন্যাকা পোনা করো না। এমন করে লাগিয়েছো যে তোমার বাবা পুলিশে কেস করবে বলেছে। সে কেস করলে করুক। তুমি কি বলেছ, তুমি কী অপরাধ করেছ?

– আমি কোন অপরাধ করিনি। 

– তুমি আমাকে লুকিয়ে পিরিয়ডের ওষুধ খেয়েছ, তুমি অপরাধ করো নি? তুমি বাচ্চা-কাচ্চা চাও না? 

– না। 

– সেটা আগে বললেই তো হ’ত। এত চিকিৎসা করানোর প্রয়োজন হত না। 

– ঠিক আছে এখন বললাম। আর ওষুধ-পত্র এনো না।

– বেশ যাও; গিয়ে খেয়ে নাও। নইলে রাতে আবার তোমার বাপের ফোন এসে যাবে – একটু হাতে করে খাইয়ে দিতে পারো না? আমি তো তোমার শাশুড়িকে খাইয়ে দিতাম। 

– বাবা জানবে কী করে? 

– তোমার বাবা তো জ্যোতিষ নয়। মেয়ে জানালে জানবে। 

– আমি আগ বাড়িয়ে কাউকে বলতে যাইনি। বিকেলে ফোন করেছিল। কথা বলতে বলতে বমি পেল। তখনই জিজ্ঞাসা করল, ‘কী খেয়েছিস?’ তাই বলতে হল। 

– ঠিক আছে, খাও গিয়ে এখন। 

আমি জিজ্ঞাসা করলাম ‘এসব তো সন্ধে বা রাতের খবর। মাঝ রাতে চড় মারার কী হল?’

– আমি যথারীতি আগে খেতে চলে গেছি। ওকে বলে গেলাম নীচে যেতে। খেয়ে টেয়ে এসে দেখি তখনও যায়নি। জোর করে পাঠালাম। এসে বলল খেয়ে এসেছে। ও বাবা, রাতে দেখি ফের বমি। শুধু ওয়াক পাড়ছে। পেটে কোনও খাবার নেই। ডি-হাইড্রেশন হয়ে গেছে। ও.আর.এস বানিয়ে বিস্কুট জলে ভিজিয়ে খাওয়াতে গেলাম, নানা রকম ধানাই পানাই শুরু করল। ওমনি গেল মাথাটা গরম হয়ে।

– ব্যাপারটা তো অভিমানও হতে পারে। হাত তুলে দিলেই কি সমস্যার সমাধান হয়? 

– ডাক্তারবাবু আপনার মনে হচ্ছে আমি বুঝি সারাদিন বউ পেটাই। আমি জীবনে হাতে গোনা কয়েকবারই ওর গায়ে হাত তুলেছি। আমি জানি এটা কোন সমাধান নয় বা পৌরুষ দেখাবার জায়গাও নয়। কিন্তু ও এমন কিছু করে – আপনি মাথা ঠিক রাখতে পারবেন না। এতদিন সঙ্গে থেকে বুঝেছি, পুরো ব্যাপারটাই ওর একটা অ্যাটেনশন আদায় করার ফিকির।

‌– আপনি একটু অ্যাটেনশন দিলে তো পারেন। 

– ব্যাপারটা আমার অ্যাটেনশনের নয়। ও কতখানি খারাপ আছে, কতটা নিপীড়িত – এটা লোককে বোঝানোটাই ওর প্রধান আকর্ষণ। আমার এই কথা কেউ মানবে না জানি ডাক্তারবাবু, সবাই বলবে লোকটাই বজ্জাত। কিন্তু আমি জানি এটা ওর একটা বিকার।

মনে মনে জানি এটা একটা পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার। হিষ্টিরিওনিক পার্সোনালিটির মানুষজন, বিশেষ করে স্ত্রীলোকের এই সমস্যা হয়। তবু মুখে কিছু বললাম না। হঠাৎ দেখলাম ম্যানেজারবাবু আমাদের খুঁজতে এসেছেন। যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। দেবদুলালের মুখ দেখে মায়া হল। থমথমে মুখ, হয়তো ভয়ও পেয়েছেন কিছুটা। চলে যেতে যেতে অসহায় মুখে বললেন ‘আমি কি ভুল, ডাক্তারবাবু? আমি ওর কাঁধ ধরে ঝাঁকিয়ে বললাম ‘চলুন, বাস ছেড়ে দেবে।’

Post a Comment

0 Comments