গুচ্ছ কবিতা
অভিজিৎ হালদার
ধ্বংসের ঠিকানা
এই শহরে প্রতিটি মানুষ
নিজের ভাঙা ঘরটাকে ঠিকানা বলে জানে,
যেখানে দরজার বদলে অভ্যাস
আর জানালার বদলে অনুশোচনা ঝোলে।
আমরা ঠিকানাবিহীন হয়ে পড়েছি অনেক আগেই,
তাই একে অন্যের ভেতরে আশ্রয় খুঁজতে গিয়ে
আরও বেশি ভেঙেছি।
ডাকপিয়নরা এখন চিঠি নয়,
শুধু বিল আর খবর পৌঁছে দেয়—
ভালোবাসার কোনো খাম নেই,
কারণ ঠিকানাগুলো আর বিশ্বাসযোগ্য নয়।
এই শহরে
ধ্বংসই একমাত্র স্থায়ী বাসিন্দা।
ক্ষতনগর
এখানে রাস্তার নাম নেই,
আছে শুধু পুরোনো ক্ষতের নম্বর।
এই মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিল একটি স্বপ্ন,
ওখানে চাপা পড়েছিল একটি চুমু,
আর সেই ফ্লাইওভারের নিচে
একজন মানুষ শেষবার নিজেকে চিনেছিল।
হাসপাতালগুলো জানে—
এই শহরের বেশিরভাগ আঘাত
শরীরের নয়,
অথচ রক্তপাত থামে না।
ক্ষতগুলো শুকোয় না,
কারণ শহর প্রতিদিন
নিজেরই ওপর দিয়ে হেঁটে যায়।
🍂
ভগ্নস্বদেশ
আমরা দেশ ছাড়িনি,
দেশ আমাদের ছেড়ে দিয়েছে
ধীরে, নীরবে, কাগজপত্র ছাড়াই।
জাতীয় পতাকা উড়ে যায় মিছিলের মাথায়,
কিন্তু মানুষের ঘরে
ঝোলে শুধু অনিশ্চয়তার ক্যালেন্ডার।
এখানে দেশপ্রেম মানে
ভুল প্রশ্ন না করা,
আর মানবতা মানে
চুপ করে সহ্য করা।
আমি দেশকে ভালোবাসতে চেয়েছিলাম,
কিন্তু দেশ তখন
শুধু নিজের ক্ষমতা ভালোবাসছিল।
প্রেমোত্তর শহর
প্রেমের পরে যে শহর থাকে
তা আর শহর নয়—
একটি দীর্ঘ আফটারম্যাথ।
ক্যাফেগুলো ভরা থাকে শব্দে,
কিন্তু কোনো টেবিলে
পুরোনো হাসি ফিরে আসে না।
আমরা আলাদা হয়ে গেছি বলে নয়,
শহরটাই এমন জায়গা
যেখানে একসাথে থাকলেও
সবাই আলাদা হয়ে যায়।
প্রেম শেষ হলে
শহর বাঁচে,
মানুষ নয়।
শেষ আলো
একদিন এই শহরেও
শেষ আলো জ্বলবে—
বিজ্ঞাপনের নয়,
মানুষের চোখে।
সেদিন যুদ্ধ আর রোমান্টিক থাকবে না,
বিরহ হবে না গর্বের বিষয়,
আর প্রেম হবে
আবার সাধারণ।
সেদিন মানুষ বুঝবে—
বাঁচার জন্য
আগুন হওয়া জরুরি নয়,
আলো হলেই যথেষ্ট।
কিন্তু তার আগে
এই শহরকে
1 Comments
ভালো লেগেছে কবিতাগুলো।
ReplyDelete