জ্বলদর্চি

ভোট- বাজারের কল্পতরু এবং নারীশক্তি/গৌতম বাড়ই

ভোট- বাজারের কল্পতরু এবং নারীশক্তি

গৌতম বাড়ই

এই রোববারের বাজারে দিনুদার সাথে দেখা হল না। দিনুদা শুনলাম দীঘা কিংবা পুরী গিয়েছে। একলা মানুষ, পায়ে বেড়ি নেই। যেদিন মনে হয়, দূরপানে ডাকলেই বেড়িয়ে পড়েন। দিনুদা নেই তো আমার রোববারের বাজারে কিছু একটা ঘাটতি থেকেই যায়। আসলে মানুষের সারাক্ষণের সম্পদ তো ঐ মন। খিদে হল শারীরিক চাহিদা স্বল্প সময়ের জন্য, আর মন সে নিত্য চলে আমার সাথে দিনমানে চব্বিশঘন্টা। কথায়- কথায় বাউল হই আর কী! ভোটরঙ্গ দেখছি আর ভাবছি কতই কথা---

" তোমার মনের কথা বল, অপালে!"
" মানবভূমি ছেড়ে অ- মানবভূমিতে কখনো যাব না।"
"অ- মানবভূমি, পঞ্চাল জনপদ?"
" হ্যাঁ, যে দেশে নারীর স্বাধীনতা নেই------ সে দেশে মনুষ্যত্বের মূল্য নেই।"
" তোমার সঙ্গে আমি একমত।"

রাহুল সাংকৃত্যায়নের "ভোলগা থেকে গঙ্গা"- র একটি অংশ উদ্ধৃত করলাম। আর করলাম ভোটবাজারের দোকানীদের রঙ্গঢঙ্গ দেখে। রাজনৈতিক নেতারা কি তাড়াতাড়ি সব কথা ভুলে যায় বা যান? এই যে এখন প্রতিটি দলের নেতাদের মুখে নারীদের নিয়ে এত প্রতিশ্রুতির বন্যা আর নারীশক্তির মন্ত্রণা কেন? জানেন ভালমতন আপনিও। ঐ যে ভোটারদের শতকরা অর্দ্ধেক যে মহিলা। আমাদের বিধাতা বলতে গেলে প্রায় সমানুপাতে এই মানুষ সৃষ্টি করতে গিয়ে এত সুন্দর একটি কাজ করেছেন। ভোটপর্ব মিটে গিয়ে যেই ক্ষমতা দখল করে মসনদ- পর্ব আসবে, দেখবেন কেমন বেমালুম ভুলে যাবেন সবকথা! 

কিন্তু আমাদের তো মনে পড়ে উত্তরপ্রদেশের হাটরাসের কথা, কামদুনির কথা, যে মেয়েটি ন্যায্য চাকরির দাবিতে চরমশূন্য মহানগরীর পথে ধর্ণায় বসেছিল আর গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যু হয়েছিল- তার কথা, যে ক্ষমতায়ন শুধু পেশীর জোরে মহিলাদের ইজ্জত্ সম্ভ্রম কেড়ে নিতে তাদের প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেবার ঘেরা বন্দোবস্ত ভাঙচুর করে দেয়-- মনে আমাদের খুব পড়ে। ঐ যে বললাম মন আর মনটাই সবকিছু। একটা মেয়েকে জ্বালানী তরল দিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়-- জ্বলন্ত নারী ছুটছে রাজপথের নির্জনতায় ---- এও আমার ভারতবর্ষ! অথচ একটি নারীদেহ থেকে পৃথিবীর আলো পায়  পরম মমতায় আমাদের পুরুষতান্ত্রিক বা ক্ষমতার রাজদম্ভ। ভোটের আগে ফুলঝুরি, আর ভোট ফুরোলেই মিথ্যে কলঙ্কিত করে তিলে- তিলে মারি ওদের। যেখানে একটি মাত্র প্রশ্ন- ও বড় প্রশ্নচিহ্ন হয়ে দেখা দেয়। অবাক পৃথিবী অবাক করলে আমাদের!
 অপালে এইসময়ে এইসব দেখে কী বলতেন? যেইদেশ কী অ- মানবভূমি হতে এখনও বাকি বা মনুষ্যত্ব প্রতিমুহূর্তে ধূলি- ধূসরিত নয়? মানুষের জন্যই তো দেশগড়া। তবে দেশ কাদের জন্য? খবরের কাগজের একটি প্রতিবেদন এখানে চোখে পড়ল। আপনারা অনেকে পড়ে থাকতে পারেন, তবুও জানাচ্ছি---

হেডিং:--- ধনকুবের বৃদ্ধির হারে বিশ্বকে ছাপাবে ভারত। সমীক্ষায় পূর্বাভাস।

আগামী পাঁচবছরে ধনকুবের বা অতি বিত্তবানের সংখ্যা প্রায় ৬৩% বাড়বে। ৬৭% নিয়ে প্রথম স্থান দখল করা ইন্দোনেশিয়ার পরেই। তো ক্ষতি কী? প্রশ্ন করতেই পারেন অনেকে। না, আছে--  দেশটা যারা শুধু ভাবে আপামর জনসাধারণের জন্য তাদের চিন্তার উদ্রেক করে অক্সফ্যামের সমীক্ষার ভেতরের কথায়। যে সমীক্ষা দেখিয়েছিল, অতিমারি বহু মানুষের জীবন- জীবিকা- সঞ্চয়ে এমন ক্ষতি করেছে যে, তার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতেই দশক গড়িয়ে যাবে তাঁদের। করোনার জেরে শুধু দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে দারিদ্র বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব ব্যাঙ্কও। আমাদের দেশ ভারতবর্ষ তো এই অঞ্চলেই। তাই না ? ধনকুবের বাড়ছে বাড়ুক, সে অতিমারি বা স্বল্পমারি হলেও কিছু যায় আসে না। তবে যায় আসে ঐ আম- জনতার, ঐ প্রজাতন্ত্রের যারা ভোট দিয়ে দেশ‌ গড়েন আর কাজকর্ম ছোটোখাটো ব্যাবসা- বাণিজ্য সব হারিয়ে বাড়ির কড়িকাঠ বেছে নেন, সপরিবারে বিষখেয়ে আত্মহত্যা করেন। সেই মানুষ গণদেবতা হয়ে উঠেন, একমাত্র ভোটের সময়ে।

গিন্নী অনেকক্ষণ পর্যবেক্ষণ করেছেন আমাকে। অবশ্য সবার- ই গিন্নী করেন। চুপিচুপি বলি-- কেউ একজন বলেছিলেন না, এক- একটা গোয়েন্দা মারা গিয়ে পরজন্মে নারী থুড়ি জায়া হয়ে আসেন! এবারে স্বরগমে নি তুলে বললেন-- সকালে সাত তাড়াতাড়ি বাজার সেরে এসে কী এক ঘাড় গুঁজে লিখে চলেছো? বলি কটা বাজে জান তো?

আমি আমতা আমতা করে বলে উঠি--- তা কত হলো? সময়। লিখছি বটে একটা দুঃখের- ই পথের পাঁচালী। আমাদের সাধারণের জীবনের ঐ দুঃখ কথাই থাকে আদিতে কী অন্তে!

গিন্নী বলেন-- কী যে বল ছাই বুঝলাম না।
আমি বলে উঠি-- সিম্পল! তোমাদের কথাই।

পেজ-এ লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments