ফটোগ্রাফি- সৈয়দ স্নেহাংশু
খিদে
কু মা রে শ তে ও য়া রী
এই যে আমার বাড়ি, একান্ত আপন
স্তরে স্তরে স্তরীভূত ইমনকল্যান
ছালচামড়া উঠে গিয়ে হয়তো বা কিছুটা কিম্ভুত
তা হোক তা হোক তবু দীপাবলি এলে
আলোর রোশনাই মেখে যখন মাধবী সাজে
বড়ো ভালো লাগে, মনে হয় ছ্যাতলা পড়া শরীরে তার
এঁকে দিই সহস্র চুম্বন
এখানেই একদিন মা, হাঁসঘরের থেকে
ধবধবে ডিম বের করে নিতে নিতে
বলেছিল, এই তো ব্রহ্মাণ্ড, এখানেই সৃষ্টির প্রতুল
বাবা, ধানখেত থেকে মুঠের সম্ভ্রম ধরে আনত মাথায়
বলেছিল, খিদে আসলে আগুন থেকে আসে
তারপর কতকাল আগুন চিনেছি বারবার
খিদে নিয়ে থাকি আর ভুলে যাই মন্দিরের চূড়া
খিদে তো আসলে এক আশ্চর্য বিলাপ
জন্মকুণ্ডলীতে তার অনন্ত বসত
খিদের তাড়না পেলে মানুষেরা
যে কোনো শেকল ছিঁড়ে দিতে চায়
অমিল রূদ্ররাগের মতো খিদে
জলস্তম্ভ ভেঙে ফেলে, ঘোড়াদের খুরে
তুমুল তাড়না হয়ে
টপকে টপকে যায় ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ
বাড়িতে বাড়িতে কত খিদে ওড়ে
আগুন জ্বালিয়ে তার কত দাপাদাপি
ক্যালেণ্ডারে তারিখের সে কী উজ্জ্বলতা
অনন্তের পরমায়ু নিয়ে যেন বসেছে অক্ষরে বেবাক শরীর থেকে ক্রমাগত ক্ষয়ে যেতে থাকে
ক্যালরির সীমিত সম্ভার
দেয়ালের টিকটিকি এসে দেখে যায়
খিদে-রাক্ষসের ভয়ে অসহায় কত মানুষেরা
পাখিটি বেবাক ওড়ে, বর্ণময়
জানালার ফ্রিলে শুধু লেগে থাকে যন্ত্রণার গান
তবুও মানুষ, সে তো রক্তবীজ আজ
একেকটি মৃত্যু থেকে উঠে আসে শত-সহস্র প্রাণ
খিদের কী সাধ্য বলো বধ করে মনুর সন্তান?
খিদের ভেতরে জেগে থাকে হাজারো সংসার
তবু কারা বলে সংসার অসার
তারা কেউ ব্যাকরণ জানেনা তেমন
মুক্তদল নিয়ে খেলেতে খেলতে ভুলে যায়
রুদ্ধদলেরও কত সোহাগ রয়েছে
ঘরের দেয়ালে যে কোমল আলো
সেখানে কখনও তারা বোলায় না হাত
পরিবর্তে আয়নায় নিজের সৌন্দর্য দেখে
টেরি কাটে আর পাউডার লাগিয়ে ফুরফুরে হয়
তারা তো দেখেনা আয়না গোপনে
প্রতিবার গিলে ফেলে আয়ুষ্কাল,মোম গলে যায়
গলে যায় আত্মরতি নিজেরই ভেতর
সংসার অসার বলে যারা বৈরাগ্যের ভেতরে নামে
তারা তো লাটিম ছাড়া আর কিছু নয়
নিজেকেই প্রদক্ষিণ করতে করতে দেখে
কখন যে গতর ভেঙেছে
দরজাগুলো সব বন্ধ হয়ে আসছে দ্রুত
ডাকবে কীভাবে তাদের তো স্বরনালি ভাঙা
ঘড়ঘড় ঘড়ঘড় শব্দ ওঠে শুধু
মাঝেমাঝে আমারও ভেতরে জাগে অমন প্রণয়
যেখানে আখড়া আছে নিজস্ব বৈভবে
সেইখানে প্রতিদিন যাই, নরম বৈরাগ্য মাখি
তবু পিছুটান বলে কিছু থাকে তাই
বারবার দেখে নিই পকেটে চিরুনি
এভাবেই ঘরবার করি
আলতা রাঙানো মা‘র পদচ্ছাপে মাথা নুইয়ে বলি—
এই তো গেলাম, ফিরে আসবো ঠিক
চৌকাঠের জল শুকোনোর আগে
ফিরে এসে দেখি, বাজারের থলিটিতে
সেলাইয়ের ফোঁড় দিয়ে হাতল শক্ত করছে নারী
পাশে বসে তার কিছু আলাপন রাখি
এই আলাপনে কতটা গ্রহণ থাকে?কতটা বর্জন?
দুটি কল্পতরু মুখোমুখি, আদিগন্ত কথা বলাবলি
সময় গর্জন তুলে বয়ে যায় অসীমসন্ধ্যায়
এক জিরাফের গলা ক্রমে নিচু হয়ে আসে
কথোপকথন শোনে, দুটি মানুষ-মানুষী
সময়ের তন্বীষ্ট গর্ভের থেকে বের হয়ে এসে আলাপনরত
ছায়া ছায়া মূর্তিগুলি গড়ে উঠে ভেঙে ভেঙে যায়
ফের গড়ে ওঠে
ভ্রূক্ষেপবিহীন দুটি আলগ্নশরীর পুনর্জন্ম নিয়ে
বালির উপর থেকে তুলে নিতে থাকে পুদিনার পাতা
বাইরে তখন বৃষ্টি নামে ঝমঝম
অশান্ত বৃষ্টিতে ভিজে চলে জ্বলন্ত উনুন
ভিজে মাথায় বউ উনুনকে রান্নাঘরে ফিরিয়ে আনার পরেও
দেখি, তীব্র আঁচ নিয়ে জেগে আছে আমাদের খিদে
এমনই তো হয় সমুদ্রের জলও এসে
নেভাতে পারেনা আমাদের খিদের বহর
নারীর নরম হাত গোল গোল রুটি সেঁকে দিলে
নুনের সোহাগ মেশা তরকারিতে রুটি
চুবিয়ে চুবিয়ে মেপে নিতে থাকি খিদে
বাইরে তখন বজ্রপাতে ঝলসে ওঠে মন্দিরের চুড়ো
2 Comments
ভালো লাগলো
ReplyDeleteভালো
ReplyDelete