জ্বলদর্চি

হাত কয়েক ছাদ /বনশ্রী রায় দাস


   ফোটোগ্রাফি- সৈয়দ স্নেহাংশু   
        
হাত কয়েক ছাদ

ব ন শ্রী  রা য়  দা স

ছাদের ওপর নীল পৃষ্ঠায় মোড়া ঋতুচিহ্ন
কয়েক খণ্ড অসংলগ্ন চিত্র নাভিতলে।
মনতাপ বয়ে যায় কালিদাসের মেঘদূতের 
অবয়বে 
কখনো হাঁসের সাদা পালক
আবার সেই ঘন জামবর্ণ এলোকেশী ,
এই শামিয়ানায় লুকিয়ে আমার ছায়ামোহ
কিভাবে একটি দেশ টুকরো করে 
একটি সংসার পাতা যায় 
বেশ বুঝে গেছি 
অঙ্কের ক্লাসে লাস্ট বেঞ্চ হলেও
ভগ্নাংশ বেশ রপ্ত করতে শিখেছি 
হিসেব বুঝতে গিয়ে বাবা মা ভাই বোন 
সমস্ত তীর্থ ভুলেছি
এখন এই ছাদখানি অবশিষ্ট ।
সুনীলদা বললেন আমরা এখন মুঠো ভর্তি 
মেইল আইডি, ইনবক্স , হোয়াট্সআপ।
আমি আওতা ধানিজমির মতো পড়ে থাকলাম 
হোয়াট্সআপ থেকে মেলে কিভাবে 
সেতুবন্ধ হতে হয় ?
ঋত্বিক বললেন কপি পেস্ট করুণ সেই থেকে 
নিজেই নিজের সাঁকো।

যখন চন্দ্র সূর্য নেই আহ্নিক গতির মুখোমুখি 
ঋতুচক্র গুঁড়ো গুঁড়ো 
বোবা হৃদয়ের আইসবেরি গলে গলে
অশ্রু হয়ে খসে পড়ছে বর্ষা ,
প্রহসনের আল পেরিয়ে কেউ দেখছে
ফসলের দুধ কুরে খাওয়া পঙ্গপাল ,
অভ্যর্থনা জোয়ারে মানুষ নিজেদের ভাবমূর্তি 
জাহির করতে ঈশ্বরের ঘর আলগা করে 
যেন ভাবহীন ভাবের গহ্বরে হাবুডুবু ।
জগৎ সত্য আর সকলই মায়া 
আত্মার আত্মীয় হতে কেবলই 
হলদেটে পৃষ্ঠা উলটে যায় একা একাই 
সারাৎসার শ্রীমদ্ভাগবত - - -
আমি'র অহঙ্কারে আলো পিছলে যায় 
অন্ধকারের হাড় মজ্জায় ।

নিউক্লিয়ার অস্ত্রে কেটে কেটে 
কুয়াশার ভিতর মুখ 
নিজেকে নিরাপদ ভাবছি বেশ কয়েক দশক 
হৃদিজলে পুষে রাখা শখের মাছের 
সন্ধান করতে করতে উপস্থিত 
কালো বিড়াল 
দেবতা একটি ছাঁইজাল দিয়ে দোর দিয়েছেন।
আমি রোজদিনই ছাদে সন্ধ্যে ডাকি
পাতা নিভিয়ে ঘুমোতে চায় ঝুনঝুনিগাছ।
পা টিপে টিপে একটি বাদুড়  ঝুলন্ত সার্কাস 
পশ্চিম পাড়ে হুগহুগ শব্দে বসলো পেঁচা 
'পরিযায়ী ' শব্দটি আগে সহস্র ব্যবহার হয়নি!
ঝড়ের মতো ঢুকে পড়েছে স্রোত কিংবা বিদ্যুতের 
দেয়ালে ধাক্কা কলজে পাঠিয়ে রক্ত ।
নিভুনিভু নভতল ভেঙে একঝাঁক উড়ে গেলেই
কম্প দেয় মোচড় 
বিষাদ গেঁথে ধরা পাঁজরে 
কে আনবে আরামের মলম ?
কোন পরম স্পর্শ  ?
সে তো বহুকাল আগেই নির্বাসনে দিয়েছি
আর এখন চাইলে ও ছুঁয়ে দেখতে পারিনা 
প্রিয় পরম।
মৌমাছির নৃত্য স্থলপদ্মের পরাগ 
দমকা হাওয়া এসে দেয়ালে পিঠ ঘষে
আমি ভেসে যাওয়ার আগে মরিয়া হয়ে উঠি
সাঁই তোমার সুরে প্রাণ খুঁজি
মরতে মরতে বেঁচে নিই আকাশ ভরা সূর্য তারায় ।

ফোটোগ্রাফি- সৈয়দ স্নেহাংশু   


Post a Comment

2 Comments

  1. খুব ভালো হয়েছে। আত্মযাপনের নিবিড় মুহূর্তগুলি খুব স্বয়ংক্রিয়ভাবে উঠে এসেছে। বোধের মোভিং ইমেজগুলি এক দার্শনিক অন্বেষার ভেতর প্রস্ফুটিত হতে চেয়েছে।

    ReplyDelete