সম্পর্ক
চ ন্দ ন মা ই তি
বেশি দিন হয়নি, এই তো ক'দিন আগেই ১৪১৪(২০০৭)বঙ্গাব্দের ঘটনা। মেসে থাকি কয়েকজন মিলে, কলেজে পড়ি। আমার রুমমেট তুহিন ব্যানার্জী। মাঝে মধ্যে 'বামুন' বলে ডাকতাম। বন্ধুত্বের বন্ধনে কাছের হলেও মতের মিলে সবসময় বিপরীত মেরুতে বিরাজমান। হ্যাঁ সেই মেসে থাকার সময়ের ঘটনাই বলব..।
আমি রুমের যেদিকে থাকতাম বেডের ঠিক মাথার দিকে আমার আবেগ, ভালোলাগা, ভালোবাসায় মোড়া রবি ঠাকুরের একটি ছবি থাকত। তুহিনের মাথার কাছে কালী ঠাকুরের ছবি। ও মেসে থাকলে প্রায় সবদিন পূজা করত।
২২শে শ্রাবণের দিন। বাজারে গিয়ে একটা রজনীগন্ধার মালা কিনে আনলাম, স্নান করে ধূপ জালিয়ে প্রণাম করে আমার ঠাকুরের ছবিতে পরিয়ে দিলাম। এই ঘটনায় তুহিন তাচ্ছিল্যের সুরে আমাকে ব্যঙ্গ্য করতে লাগল সেই সঙ্গে যা নয় তাই রবি ঠাকুরের সম্পর্কে ঝেড়ে দিল। কিছু বলিনি অন্য সময় অনেক যুক্তি খাড়া করলেও কেন জানিনা, কোনো কথা বেরোয়নি আমার মুখ থেকে। মেসের অনেকেই বিষয়টি নিয়ে চর্চাও করেছিল ক'দিন।
এরপর কেটে গেছে কয়েকটা বছর। মেস থেকে পড়াশোনা শেষে বেরিয়ে যাই। চাকরি নিয়ে দুজনেই ব্যস্ত। যোগাযোগ কমে গেছে।একদিন পড়ন্ত বিকেলে স্টেশনের বাইরে দেখা ...কি রে তুহিন? অনেকদিন খবর নেই যে তোর। মাঝে শুনলাম তুই চাকরি পেয়েছিস জানাসনি পর্যন্ত, লোকের মুখে শুনতে হচ্ছে। যাই হোক ভালো আছিস তো??বলল ..হ্যাঁ ভালো আছি। তুহিন বলল তোর রবিগুরুর কি খবর ??আমি বললাম ঠিক করে বল কবিগুরু। ও হঠাৎ বলল আর বলিস না তোর কবিগুরু আমাকে চাকরির ইন্টারভিউটায় বাঁচিয়ে দিয়েছিল ভাই! না হলে কি যে হত কে জানে! কেন রে..? 'ইন্টারভিউ বোর্ডে স্যার তো আমাকে আমার সাবজেক্ট জিয়োগ্রাফি নিয়ে প্রশ্নই করেননি শুধু রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে প্রশ্ন করেই যাচ্ছেন, পারিনি বলতে ...জানিস তখন শুধু তোর কথাই মনে পড়ছিল। আর বারবার মনে হচ্ছিল আমার গালে কেউ যেন চড় মারছে। 'শেষে স্যার বললেন,আচ্ছা একটা রবিঠাকুরের কবিতা আবৃত্তি করে শোনাও অন্তত... ছোটবেলায় স্কুলের অনুষ্ঠানে জোর করে মুখস্ত করানো কবিতা...
" মনে করো যেন বিদেশ ঘুরে
মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে।".....ওই যে 'বীরপুরুষ' কবিতা টা -রে।
জানিস পেয়ে গেলাম তখনই চাকরিটা ।ওয়েটিং এ ছিল তবে হয়ে গেল।
আর বলিনি কিছু, জানি আমার ঠাকুর তোকে সঠিক সময় সঠিক শিক্ষা ঠিক দিতে পেরেছে। তোর পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এর থেকে ভালো শিক্ষা আর কিছু হতে পারে না।
2 Comments
দারুণ হয়েছে দাদা ।
ReplyDeleteধন্যবাদ ভাই।
ReplyDelete