শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ সঙ্গীতামৃত
সু দ র্শ ন ন ন্দী
১৮৮২, ২৮শে অক্টোবর। ঠাকুর সিঁথির ব্রাহ্মসমাজের ষাণ্মাসিক মহোৎসবে নিমন্ত্রিত হয়ে এসেছেন। ভক্তিতত্ব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে ভক্তদের সাথে। কথায় কথায় বললেন, ভক্তির তমঃ যার হয়, তার বিশ্বাস জ্বলন্ত। ঈশ্বরের কাছে সেরূপ ভক্ত জোর করে। যেন ডাকাতি করে ধন কেড়ে লওয়া। “মারো কাটো বাঁধো!” এইরূপ ডাকাত-পড়া ভাব।
এবার ঠাকুর উপর পানে তাকালেন, তাঁর প্রেমরসাভিসিক্ত কন্ঠে গাইতে শুরু করলেন:
গয়া গঙ্গা প্রভাসাদি কাশী কাঞ্চী কেবা চায় ৷
কালী কালী কালী বলে আমার অজপা যদি ফুরায় ৷৷
এই গানটির রচয়িতা মদন।
গানটি আট বার গেয়েছেন এবং একবার আলোচনা করেছেন তার উল্লেখ পাই কথামৃতে।এর পরে তিনি গাইলেন পূর্ব উল্লেখিত
আমি দুর্গা দুর্গা বলে মা যদি মরি... গানটি।
এইদিন মহোৎসবে আরেকটি গান গাইলেন ঠাকুর। শিবনাথ শাস্ত্রীর সাথে ইশ্বরকথা চলছে। গয়না চুরির ব্যাপারে বললেন, আমি সেজোবাবুকে বললাম, “ও তোমার কি বুদ্ধি! স্বয়ং লক্ষ্মী যাঁর দাসী, পদসেবা করেন, তাঁর কি ঐশ্বর্যের অভাব! এ গয়না তোমার পক্ষেই ভারী একটা জিনিস, কিন্তু ঈশ্বরের পক্ষে কতকগুলো মাটির ড্যালা!...ঈশ্বরের মাধুর্যরসে ডুবে যাও! তাঁর অনন্ত সৃষ্টি, অনন্ত ঐশ্বর্য! অত খবরে আমাদের কাজ কি।
এই বলে আবার গান শুরু করলেন:
“ডুব্ ডুব্ ডুব্ রূপসাগরে আমার মন ৷
তলাতল পাতাল খুঁজলে পাবি রে প্রেম রত্নধন......
গানটির রচয়িতা কুবীর। আটবার উল্লেখ পাই গানটির।সাতবার সম্পূর্ণ, একবার অসম্পূর্ণ।
পরের গানের উল্লেখ পাই ১৫ই নভেম্বর ১৮৮২। ঠাকুর বলরামের বাড়িতে এসেছেন।সঙ্গে রাখাল, মাস্টার ও দু একজন ভক্ত।
শ্রীরামকৃষ্ণ সংসারী বদ্ধজীবের কথা বলছেন। তারা যেন গুটিপোকা, মনে করলে কেটে বেরিয়ে আসতে পারে; কিন্তু অনেক যত্ন করে গুটি তৈয়ার করেছে, ছেড়ে আসতে পারে না; তাতেই মৃত্যু হয়। আবার যেন ঘুনির মধ্যে মাছ; যে-পথে ঢুকেছে, সেই পথ দিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে, কিন্তু জলের মিষ্ট শব্দ আর অন্য অন্য মাছের সঙ্গে ক্রীড়া, তাই ভুলে থাকে, বেরিয়ে আসবার চেষ্টা করে না। ছেলেমেয়ের আধ-আধ কথাবার্তা যেন জলকল্লোলের মধুর শব্দ। মাছ অর্থাৎ জীব, পরিবারবর্গ। তবে দু-একটা দৌড়ে পালায়, তাদের বলে মুক্তজীব।
এই বলে ঠাকুর গান ধরলেন:
এমনি মহামায়ার মায়া রেখেছ কি কুহক করে।
ব্রহ্মা বিষ্ণু অচৈতন্য জীবে কি জানিতে পারে ......
গানে ঠাকুর তাঁর বক্তব্যই ভক্তদের বোঝালেন। গানটির রচয়িতা কুমার নরচন্দ্র। গানটি ঠাকুর আরেকবার জয়গোপাল সেনের বাড়িতেও গেয়েছিলেন ( ২৮শে নভেম্বর,১৮৮৩)
ঠাকুর আবার বলছেন, “জীব যেন ডাল, জাঁতার ভিতর পড়েছে; পিষে যাবে। তবে যে কটি ডাল খুঁটি ধরে থাকে, তারা পিষে যায় না। তাই খুঁটি অর্থাৎ ঈশ্বরের শরণাগত হতে হয়। তাঁকে ডাক, তাঁর নাম কর তবে মুক্তি। তা না হলে কালরূপ জাঁতায় পিষে যাবে।”
একথা বলে ঠাকুর আবার গান গাইলেন:
পড়িয়ে ভবসাগরে ডুবে মা তনুর তরী।
মায়া-ঝড় মোহ-তুফান ক্রমে বাড়ে গো শঙ্করী......
ঠাকুর গানটির মাধ্যমে ঈশ্বরের শরণাগতির কথাই বললেন। গানটির রচয়িতা রঘুনাথ রায়। গানটি ঠাকুরের কণ্ঠে আরেকবার শুনি দক্ষিণেশ্বরে(২৭শে মে ১৮৮৩)।
__________________________________________
প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে এই ধারাবাহিক।
www.jaladarchi.com
2 Comments
উদ্দীপক ---চলতে থাকুক।
ReplyDeleteউদ্দীপক ---চলতে থাকুক।
ReplyDelete