Spoken language of the fishing community of East-Medinipur district / Bimal Mondal
পূর্বমেদিনীপুর জেলার মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের কথ্যভাষা
বি ম ল ম ণ্ড ল
পর্ব-৪ (দ্বিতীয় অধ্যায়)
ধ্বনিতত্ত্ব
পূর্ব-মেদিনীপুর জেলার সমুদ্র উপকূলবর্তী মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের কথ্যভাষা সমূহ অর্থাৎ রামনগর-১, রামনগর-২, কাঁথি-১, কাথি-২, খেজুরী-২, নন্দীগ্রাম-১, হলদিয়া, সুতাহাটা, মহিষাদল ব্লকের বিভিন্ন এলাকা জুড়ে যে মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন তাঁদের মধ্যে নারী, পুরুষ বয়সভেদে শিক্ষিত -অশিক্ষিত মানুষের কথ্যভাষায় যে ধ্বনিতাত্ত্বিক পার্থক্য আছে। সেগুলো এই সম্প্রদায়ের কথ্যভাষায় উচ্চারণের প্রকৃতির দিক থেকে ও এলাকার উপভাষার স্বরধ্বনি, ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ স্থান, উচ্চারণের প্রকৃতি অনুযায়ী কয়েকটি উপ-অধ্যায়ে আলোচনা করছি। যেমন-
১.
বিভাজ্য ধ্বনির আলোচনা
এই জেলার সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের কথ্যভাষায় স্বর ও ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময় উঠে আসে।এই স্বর ও ব্যঞ্জনধ্বনি কথা বলার সময় আলাদা আলাদা ভাবে উচ্চারণ করে না।তাই এই সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে প্রত্যেকটি ধ্বনির উচ্চারণ বৈশিষ্ট্যের তা স্বাতন্ত্র্য বজায় থাকে। এমন কি ইতরভাষা বা অশালীন ভাষারও শব্দের অর্থ উৎপত্তি প্রয়োগ বৈয়াকরণিকের কাছে আকর্ষণীয় বিষয়। তাই মৌখিক কথ্যভাষায় স্বরধ্বনির ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়।
যেমন-
১ ১. স্বরধ্বনি
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সমুদ্রউপকূলবর্তী এলাকায় মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের কথ্যভাষায় চলিত শিষ্ট বাংলাভাষার মূল স্বরধ্বনিগুলি যথাযথ ভাবে বজায় আছে। তবে এই জেলার স্বরধ্বনির কয়েকটি উপভোগ এই সম্প্রদায়ের কথ্যভাষাতে প্রায়শই দেখা যায়। সেই অনুযায়ী স্বরধ্বনির তালিকা গুলি হলো-
----------------------------------------------------------------
সম্মুখ কেন্দ্রীয় পশ্চাৎ
উচ্চ/সংবৃত- ই উ
উচ্চ-মধ্য/অর্ধ-সংবৃত- এ ও
নিম্ন-মধ্য/অর্ধ-বিবৃত-অ্যা /এ্যা অ
নিম্ন /বিবৃত - আ
পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের কথ্যভাষার মধ্যে বয়সভেদে, শিক্ষিত- অশিক্ষিত, হিন্দু-মুসলমান মিলেমিশে একজায়গায় বসবাস কালীন একে অপরের সাথে কথপোকথনের ফলে উচ্চারণগত ভাবে স্বরধ্বনির এমনই উচ্চারণ লক্ষ্য করা যায়।
১.২. মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের কথ্যভাষায় স্বরধ্বনির অবস্থান
স্বরধ্বনি -
/ই/ - /এ/,,/অ্যা/,/আ/,/ অ/, /উ/, /ও/ এই স্বরধ্বনি সমূহ রূপিমের চলিত শিষ্ট বাংলার মতো রূপিমের আদিতে, মধ্যে ও অন্ত্যে ব্যবহার হয়। তবে এই সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষেরা যে ভাবে ধ্বনিগুলো উচ্চারণ করে তা হলো-
/ই/- স্বরধ্বনির উচ্চারণ
আদিতে - ইঁদুর, ইনকাম, ইটা, ইসতিরি, ইনচি,ইসকাপন, ইলিশ, ইনকিলাব ইত্যাদি
মধ্যে- আইলা, আইলো, খাইয়া, মাইরি, আঁড়িয়া,আইন, আইনা, আঁইশ, আঁঁইশ, ইত্যাদি
অন্ত্যে - আই, জালতি, বালতি, উথলি, ওউঠি,
জালি, ডাই, কড়াই, বিলাই, ইত্যাদি
/এ/ - স্বরধ্বনির উচ্চচারণ
আদিতে- একটা, এখুনি,এত্তো,এবড়ো , এলাকা,এব্ব্বং, এগোন, এমোন ইত্যাদি
মধ্যে- কানে, বুলেটে, খাটেটে, মোনে, ডিজেল,
ঝিঙে, ইত্যাদি।
অন্ত্যে- তারমানে, জেলে, ঢেলে, ন্যাড়ে, দাড়িয়ে,গোঠে,চাটে, বেটে,গাঙে ইত্যাদি।
/অ্যা/- স্বরধ্বনির উচ্চারণ
আদিতে- অ্যাইস, অ্যাই, অ্যাকলা, অ্যাকলা,
অ্যায়,অ্যাকড়া, অ্যাকজন ইত্যাদি।
মধ্যে- ধ্যানি,ব্যাস, ক্যাতলা,প্যাকেঠ,
ক্যাকড়া,পট্যাসপুর, দ্যাসি, ত্যাক, খ্যাব্যার, ব্যায়ু, ছ্যানি ইত্যাদি।
অন্ত্যে- আলত্যা,আইঠ্যা,আগড়্যা, কুুইল্যা,কাউর্যা, কেঁচুয়্যা ইত্যাদি।
/আ/-স্বরধ্বনির উচ্চারণ
আদিতে- আউখ,আনিজ, আউরাল, আলগা, আই, আজা, আড়া, আন্না, আধাভদ্রা, আঁউট, ইত্যাদি।
মধ্যে -উধার, অসার, উজান, বস্তা,কাল্লা,চাউ, চঙ্গা,কিড়া,ঘাইট, ডিবা, টবা ইত্যাদি।
অন্ত্যে- পাখিয়া, গেড়িয়া, ডাবুয়া গুড়া,ডেমরা, ধারুয়া,দোগড়িয়া, নিমুয়া, ধাবড়া ইত্যাদি।
/অ/- স্বরধ্বনির উচ্চারণ
আদিতে- অবড়া- খবড়া, অঘা, অঁপড়া, অসড়, অতটা, অটা,অবোসর, অপোমান ইত্যাদি।
মধ্যে - কাদো,ত্যাঁদড়, ছপর-খাট, কুঁচকে, ধরম-বাপ, ইত্যাদি।
অন্ত্যে- কোঁচড়,হাইরোল, হ্যাঁচকাঁন, সঁকর-সঁকর ইত্যাদি।
/উ/ স্বরধ্বনির উচ্চারণ
আদিতে- উঠাঁন, উঁকুন, উসকিদুয়া, উঘলা মাথা , উতরা মুয়া, উখড়া ইত্যাদি।
মধ্যে- কেঁড়ুয়া, আঘুয়াচিরা,আছুড়া, গাঁতুয়া,, কাকুড়, টাউট, দাউলি, তারুয়া গুড়, ইত্যাদি।
অন্ত্যে- ছামু, টুকু, ভেঁঁড়ু, সোডু, সাজু, দিলু,আউ,
শুঞুঠু, শুইথুলু, পুটলু ইত্যাদি।
/ও/ স্বরধ্বনির উচ্চারণ
আদিতে- ওউটা, ওউঠি, ওল, ওঁঠ, ওউঠিনু, ওরমনে (ওরা) ওলট, ওসি, ওঠা ওলাওঠা ইত্যাদি।
মধ্যে- কাদো, গোঠুয়া, টুমোর কড়ি, ডুমোর ফুল, কিরোন, কলোফ, কইথোলো, খাবো, খোরগোস, খেচোড় ইত্যাদি।
অন্ত্যে - কইতলো, খাইথলো, সুকলোপক্ষ, মাইসোর, হুড়কো, কইলো, পাইলো ইত্যাদি।
১.৩. স্বরধ্বনির উচ্চারণ -প্রকৃতি
এই পূর্বমেদিনীপুর জেলার সমুদ্রউপকূলবর্তী মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের যে কথ্যভাষা প্রচলিত, তা চলিত শিষ্ট বাংলা ভাষার মতো প্রতিটি মৌলিক স্বরধ্বনির উচ্চারণ- প্রকৃতি এবং তার থেকে যে ধারাবাহিক ভাবে পরিবর্তন হয়েছে তা আমার আলোচ্য বিষয় -
ক.মৌলিক স্বরধ্বনিগুলির উচ্চারণগত পরিবর্তন -
/ই/- /উ/-
এই জেলার মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের কথ্যভাষায় 'ই'ও 'উ' (i, u)মৌলিক স্বরধ্বনি দুটি উচ্চারণ কালে মুখবিবরে সংবৃত সংকুচিত ভাবে উচ্চারিত হয়। তাই এই দুটি ধ্বনি এই সম্প্রদায়ের মানুষের কথ্যভাষায় উচ্চারণে বেশ প্রভাব পড়ে। এখানে এই ধ্বনির পরিবর্তন গুলি নিম্নরূপ-
/ই/-
ই>অ- স্থির>অস্থির, কলিকাতা>কলকাতা,
ই>এ- পিসি>পেসি,উঠি>উঠে, তিরাশি>তেরাশি, মাটি>মেটে, মেলি>মেলে
ই>ও- রাঢ়ি>রাড়ো, ছাড়ি>ছাড়ো,
ই>আ- পিড়ি>পিড়া, গেঁড়ি>গেঁড়া, ঢিল>ঢিলা, গেলি>গেলা, ফেলি>ফেলা,
ই>উ- খেলছিস>খেলুটু, যাচ্ছিস>যাউটু,
করছিস>করুটু
/উ/-
উ>ও- শাউড়িয়া>শাওড়িয়া,দুটি>দুটো, সুতি>সুতো, মুছি>মুছো,
উ>আ-উঠি>উঠা, ভক্তি>ভক্তা
উ>অ্যা- ডিবা>ড্যাব্যা, পড়ি>পড়িয়্যা,
/এ/-
এই স্বরধ্বনিটি সাধারণত উচ্চ-মধ্য সম্মুখ ও অর্ধসংবৃত স্বরধ্বনি 'এ' মৌলিক ’e' ও '£' -এর মাঝামাঝি অবস্থান সামান্য কেন্দ্রীয় টানে, এই স্বরধ্বনির পরিবর্তন নিম্নরূপ -
এ>অ্যা—
বেশ>ব্যাস, মেঘ>ম্যাগ, খেলা>খ্যালা, দেশি>দ্যাসি,চিংড়ি>চ্যাংড়ি, কেরোসিন >ক্যারোসিন, বেলা>ব্যালা, মেলা>ম্যালা, লেস>ল্যাস, লেজ>ল্যাজ, গেঁওখালি> গ্যাঁওখালি, একটি>এ্যাকটা, পেট>প্যাট,এবং>এ্যাবং
এ>আ-
খেজুরী >খাজুরী, বিকেল>বিকাল,
নাচে>নাচা, গেঁওখালি>গাওখালী,মেয়ে>মাইঝি
এ>অ-
এমনি>অমনি, যাবে>যাব, এখন>অখন, এখুনি>অখুনি, এতো>অতো,
/অ্যা/-
এই জেলার মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের কথ্যভাষায় 'অ্যা' মৌলিক স্বরধ্বনি '£'ও 'a' - মুখের মধ্যে প্রায়শই নিম্ন-মধ্য সম্মুখ স্বর ও অর্ধ বিবৃত স্বরধ্বনি মাঝামাঝি অবস্থানের সামান্য পশ্চাৎভাগে উচ্চারিত হয়। 'অ্যা' ধ্বনির উচ্চারণ প্রবণতা এই সম্প্রদায়ের কথ্যভাষার উপভাষার একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। 'অ্যা' স্বরধ্বনির পরিবর্তন এই নিম্নরূপ-
অ>অ্যা -
অন্ত>অ্যান্ত, কেবল>কাব্যাল,
আ>অ্যা- সাথে>স্যাথে,পাটে>প্যাটে, মাঠে>ম্যাটে, লাট>ল্যাঠ,হাঁস>হ্যাস
ই> অ্যা- খাইথিলি >খাইথ্যালি, খন্তি>খন্ত্যা,
ও> অ্যা-
হাঁটো>হ্যাঁটা, পুজো>পুজ্যা, লেখো>লেখ্যা
এ>অ্যা- মেঘ> ম্যাগ,তেল>ত্যাল, কেন>ক্যান, যেন>য্যান, গেড়িয়া>গ্যাড়িয়া, খেলি>খ্যালি, গেলি>গ্যালি
/আ/-
'আ' মৌলিক স্বরধ্বনিটি বিবৃত স্বরধ্বনি। এই ধ্বনিটি এই জেলার কথ্যভাষায় উচ্চারিত হয় মুখগহ্বরের ঠিক নীচে। এই ধ্বনি চলিত বাংলার অনুরূপ উচ্চারিত হয়। এই ধ্বনির রূপান্তরিত রূপ হলো-
আ> অ্যা-
ঢালু>ঢ্যালু, চাকু>চ্যাকু, আনারস>অ্যানারস, চালতা>চ্যালতা, বস্তা>বস্ত্যা,আঙ্গুল>অ্যাঙ্গুল, কাঁচি>ক্যাচি,
আ>ই-
চিংড়া>চিংড়ি, থালা>থালি, ধরা>ধরি, গেঁড়া>গেঁড়ি, ডাঁটা>ডাঁটি
আ>উ-তামাক>তামুখ, লেখা>লিখু
আ>ও- মানা>মোনা, শোনা>শোনো, ফেলা>ফেলো,
/অ/-
পূর্বমেদিনীপুর জেলার সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় যে সব মৎস্যজীবী সম্প্রদায় বসবাস করে তাঁদের কথ্যভাষায় 'অ'এই মৌলিক স্বরধ্বনিটি নিম্ন-মধ্য পশ্চাৎ স্বর হিসেবে 'a'ও 'O' উচ্চারণ করবার সময় মুখগহ্বরে জিহ্বা প্রায়শই পেছনের দিকে গুটিয়ে যায় এবং মাঝামাঝি অবস্থানে উচ্চারিত হয়। 'অ' ধ্বনির পরিবর্তিত রূপগুলি হলো-
অ>ও -
খড়>খোড়,জমি>জোমিন, কচুরিপানা>কোচুরিপানা, কমলা>কোমলা, যখন>যোখন, জলাশয়>জোলাশয়, বিপদ>বিপোদ, গলদা>গোলদা, রসুলপুর>রোসুলপুর, ঘটা>ঘোটা, রবিবার>রোবিবার, আশদতলা>আশোদতোলা , পড়ি>পোড়ি।
অ>উ-
সবুজ>সুবুজ, আমল>আমুল, মারন>মারুন, উঠ>উঠু, কাঁদ>কাঁন্দু
অ>অ্যা-
অলস>অ্যালসে, অতটুকু>অ্যাত্তটুকু, কলা>ক্যালা, ভলা>ভ্যালা, কল্লা>ক্যাল্যা, অসার>অ্যাসাড়, অপরিছন্ন>অ্যাপরিচ্ছন্ন
অ>ঐ-
কই> কৈ, চতুর>চৈতুর, পত্র>পৈত্র, বসো> বৈসো,
অ>এ-
অসুর>এসুর, অবসর >এবেসর, অতো >এতো, মোচ্ছব>মোচ্ছেব, ঊনত্রিশ>ঊনেত্রিশ, কলা>কেলা, তখন>তেখন,
/ও/-
'ও' একটি মৌলিক স্বরধ্বনি। এই স্বরধ্বনিটি উচ্চ মধ্য পশ্চাৎ ও অর্ধ-সংবৃত স্বরধ্বনি হিসেবে এই জেলার মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের কথ্যভাষায় মুখগহ্বরের ঠিক মাঝামাঝি অবস্থানে উচ্চারিত হয়। 'ও' স্বরধ্বনিটি এই জেলার কথ্যভাষায় যে বিভিন্নরূপে উচ্চারিত হয় তা হলো-
ও>অ-
ওটা>অটা, ওয়েল>অয়েল, সোমবার>সমবার, ওজন>অজন, ওপর>অপোর, ঠোঁট>ঠঁট, নোটিশ>নটিশ, নোটন>নটন
ও>উ-
বোতাম>বুতাম, গোয়াল>গুয়াল, ওঠে>উঠে, চুনোপুঁটি>চুনুপুঁঠি, ওধার>উধার, ওলট>উলুট, দোয়া>দুয়া,মোয়া>মুয়া,
ও>আ-
ভালো>ভালা, কালো>কালা,গেলো>গেলা, চিনলো>চিনলা, আইলো>আইলা, গুলো>গুলা, শুনো>শুনা,
ও>ই-
পড়ো>পড়ি, ছুটো>ছুটি, হওয়া>হইয়া, ওধার>ইধার, ছাওয়া>ছাইরায়
/উ/-
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের কথ্যভাষায় 'উ' স্বরধ্বনির উচ্চারণের প্রকাশ দেখা যায়, এই 'উ' ধ্বনিটি হলো মৌলিক স্বর, এটি মুখগহ্বরে 'u' ও 'O' এর মাঝামাঝি জিহ্বা সামান্য সামনের দিকে টেনে উচ্চারিত হয়। 'উ' সাধারণত উচ্চ পশ্চাৎ ও সংবৃত স্বরধ্বনি। এই স্বরধ্বনির উচ্চারণ ভিন্নতা হলো-
উ>ও-
উচ্ছে>ওচ্ছে, উল্লুক>ওল্লুক, উদ্ধৃত>ওদ্ধৃত, উহারা>ওহারা, উপর>ওপর, মাদুর>মাদোর, উজান>ওজান, উল্লেখ>ওল্লেখ, মারুতি>মারোতি, বাউল>বাওল
উ>অ্যা-
আয়ু> অ্যায়ু, উনুন>উন্ন্যান, হলদিয়া>হলদ্যায়া, মামু>ম্যামা,
উ>অ-
তুলা>তলা, মুখ>মখ, ঠাকুমা>ঠাক্করমা, কাঠুরিয়া>কাঠরিয়া, শুকতারা>সখতারা,
উ>এ- রাখুন>রাখেন, মাখুন>মাখেন
দ্বি-স্বরধ্বনি :
পূর্বমেদিনীপুর জেলার সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের মানুষদের কথ্যভাষায় প্রায়শই 'ঐ'এবং' ঔ' -এই দুটি যৌগিক স্বরধ্বনির ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। তাঁদের কথ্যভাষায় 'ঐ' উচ্চারিত হয় দু'রকমভাবে। যেমন -অ+ই =ঐ, এবং ও +ই =ঐ।
এছাড়া 'ঔ' এর ব্যবহারও দুইভাবে প্রকাশ্যে আসে। যেমন-ও+উ=ঔ, অ+উ=ঔ ।
এই দুটি স্বরধ্বনি এই এলাকার মানুষজনের কথ্যভাষায় বিশেষভাবে উচ্চারিত হয়। এই দ্বি-স্বরের রূপান্তরিত রূপ হলো-
ঐ = অ+ই :
কৈশোর> কইশোর, ঐক্য >অইক্ক, ঐটা>অইটা, ঐপাশ>অইপাশ, ঐগুলা>অইগুলা,
ঐ=ও+ই :
ঐধার>ওইধার, কৈলাশ>কোইলাস,বৌদি>বইদি
ঔ=অ+উ :
ঔষধ>অউশুধ, ওজন>অউজন,পৌর>পউরো কৌটো>কউটা, চৌদ্দ>চউদ্দ, চৌকো>চউকা, নৌকা>নউকা, বলুক>কউ,
ঔ=ও+উ :
ওইটা>ওউঠা, ঔধারে >ওউপাশে, এখানে>ওউঠি, ওরাই>ওউরিনে, বলছিস>কোউঠু, বধূ>বোউড়ি,
ঔ=আ+উ :
যাচ্ছিস>যাউঠু, খাচ্ছিস>খাউঠু, মেসো>মাউসা, আলু>আউ,
----------------------
আরও পড়ুন।
পূর্বমেদিনীপুর জেলার মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের কথ্যভাষা
বিমল মণ্ডল
1 Comments
বাঃ খুউব ভাল লাগল।এখনও মানুষ কত গভীরে ভাবতে পারে তারই নিদর্শন এই প্রবন্ধ। বিমলবাবুকে ধন্যবাদ জানাই।
ReplyDelete