জ্বলদর্চি

অন্যধারার শর্টফিল্ম -৫/ নিসর্গ নির্যাস মাহাতো


অন্যধারার শর্ট ফিল্ম: পর্ব- ৫

নিসর্গ নির্যাস মাহাতো

ডিরেক্টরকে হয়ে উঠতে হবে কর্মী

অন্য ধারার শর্ট ফিল্ম নিয়ে আলোচনা করতে গেলে অবশ্যই আসে ডিরেকশন প্রসঙ্গ। আর মেদিনীপুরে এই প্রজন্মে প্রতিভাবান ডিরেক্টর কম নেই। সকলেই কাজ করছেন। প্রত্যেকের চোখেই স্বপ্ন। 

ভালো মাপের কাজ হলেও কলকাতা বাদে অন্যান্য জেলা তে থেকেই যায় প্রডিউসারের সমস্যা। আর কলকাতার প্রোডিউসাররা কোথাও একটা কলকাতা তেই সীমাবদ্ধ। আবার অনেক ক্ষেত্রেই এইসব প্রোডিউসারদের সঙ্গে জেলার ডিরেক্টরদের যোগাযোগ হয়ে ওঠে না। অর্থনৈতিক সমস্যা না থাকলে আরও আরও ভালো প্রজেক্ট দেখতে পেতেন দর্শকরা। 
জেলাজুড়ে পরপর যাঁরা কাজ করে চলেছেন তাঁদের কথা বললে প্রথমেই উঠে আসে বেশ কয়েকজনের নাম। কর্মক্ষেত্রে নিজেদের দায়িত্ব পালন করেও দর্শকদের ভালো ভালো প্রোজেক্ট উপহার দিয়ে চলেছেন এঁরা। আবার কেউ কেউ শর্টফিল্ম-মিউজিক ভিডিও-ডকুমেন্টরিকেই করে নিয়েছে তাঁদের নেশা ও পেশা। মেদিনীপুরে প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন পার্থসারথি। দীর্ঘ বছর শারীরিক অবস্থার মধ্যেও তিনি তৈরি করে চলেছেন শর্ট ফিল্ম। শুধু তাই নয় চলচ্চিত্র ও কবিতা নিয়ে 'চিত্রকাব্য' বলে একটি লিটল ম্যাগাজিন-ও তিনি প্রকাশ করেন। 
সুমন্ত সাহা, মনোরঞ্জন ঘোষ, অভিনন্দন মুখোপাধ্যায়, সৌমেন্দু দে, সুপ্রিয় মাইতি, সুমন রোম, দেবনাথ মাইতি, বিশ্বেশ্বর সরকার, দিগন্ত চক্রবর্তী, অচিন্ত্য মারিক, সুলগ্না চক্রবর্তী, দেবরাজ দাস, সোমদত্তা, সৌম্যায়ন, নেহাল, অনির্বাণ মিশ্র, সুদীপ্ত মিত্র, দেবাঞ্জনা চ্যাটার্জি সহ অনেকের নামই উঠে আসে ডিরেকশন বললেই। তবে একথা স্বীকার করতেই হয় আগের প্রজন্মের চেয়ে এই প্রজন্মে ডকুমেন্টারি তৈরি ক্রমশ কমছে। অথচ ফিল্মের একটি স্তম্ভ তথ্যচিত্র। এই দিকে অবশ্যই পরিচালকদের বিশেষ নজর দেওয়া উচিত।  একইসঙ্গে বলার, জেলা থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও থ্রিলার চোখে পড়েনি। পরবর্তীকালে এই নিয়ে কাজ হলে ভালো লাগবে। সমৃদ্ধ হবে জেলা। তবে ফটোস্টোরি নিয়ে পরপর বেশ ভালো কাজ হচ্ছে। যা নিঃসন্দেহে গর্বের।
এখনও পর্যন্ত জেলা থেকে কোনও অ্যাড ফিল্ম চোখে পড়েনি। অ্যাড ফিল্ম এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যেটা দরকার তা 'হিউমার'। অত্যন্ত কম সময়ে চমক দিয়ে বিজ্ঞাপনের বিষয় তুলে ধরাই এখানে 'ট্যালেন্ট'। 

একই সঙ্গে বলার, সমাজের বিভিন্ন কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িক মানসিকতা, উগ্রতা, অবৈজ্ঞানিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অন্যতম হাতিয়ার 'অ্যাওয়ারনেস ফিল্ম'। জেলা থেকে চোখে পড়েনি এরকম বেশি কাজ। 

মানুষ ভুগছে। ব্যধি তো রয়েইছে। রয়েছে আধি-ও। প্রেসার, ফাস্ট্রেশন সব মিলিয়ে কম-বেশি হাসতে ভুলে যাচ্ছে সকলেই। এমনকি পরিস্থিতি এমন জায়গায় যাচ্ছে স্যুইসাইড পর্যন্ত হচ্ছে। এই দিক থেকে পরিচালকদের  'কমেডি ফিল্ম' নিয়ে ভাবা উচিত। এই ধরনের কাজ দেখতে উন্মুখ দর্শক। তবে কমেডি ফিল্ম অবশ্যই শালীনতা বজায় রেখে 'হিউমার' ধরে হওয়া উচিত। দর্শক কিন্তু নিখাদ হাসির খোঁজে থাকে। জোর করে হাসাতে চাওয়ানোটা বড্ড বোকা বোকা।

মিউজিক ভিডিও নিয়ে এই মুহূর্তে প্রচুর কাজ হচ্ছে তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গানের লাইন ধরে দৃশ্যায়ন করা হয়। যা অত্যন্ত একঘেয়ে লাগে। মনে রাখতে হবে মিউজিক ভিডিও মানে ভাবার্থ। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী কাজ উপহার দিয়েছেন সুমন্ত সাহা।
ডিরেক্টরকে যেহেতু ফিল্ম-এর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নজর  রাখতে হয়, তাই ডিরেক্টরকে শিল্পের বিভিন্ন দিক সম্বন্ধেই ওয়াকিবহাল থাকতে হয়। পরিচালকের কাজ অর্ডার করা নয়, পুরো বিষয়টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পরিশ্রমী কর্মী হয়ে ওঠা। প্রতিটি শিল্পীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা। একজন ডিরেক্টর-এর সাফল্যের পেছনে অবদান রয়েছে প্রতিটি শিল্পীর। আবার এও ঠিক পরিচালকের মধ্যে সকলকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়ার দক্ষতা থাকতে হবে। থাকতে হবে, সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলার মানসিকতা। গতানুগতিক ধারার বাইরে বেরিয়ে কাজ না করতে পারলে, দর্শক কেন তাঁর শিল্পকে, তাঁকে মনে রাখবে? 

শর্ট ফিল্ম বা মিউজিক ভিডিও-কে আসলে সময়ের দলিল হয়ে উঠতে হবে। যা সমাজের সমস্যা, দাবি, প্রতিকার তুলে ধরবে। শিল্পের মাধ্যমে 'সময়'কে ধরাটা একান্ত প্রয়োজন। না হলে পরবর্তীকালে যখন শর্ট ফিল্ম বা মিউজিক ভিডিও নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে তখন কী করে এই সময় নিয়ে সঠিক ধারণা পাওয়া যাবে? 

যা কিছু দৃশ্যায়ন করা হয়, তাই হয়ে উঠতে পারে চলচ্চিত্র। স্বল্প সময়ের হলেই তা হয়ে ওঠে শর্ট ফিল্ম। এদিক থেকে মিউজিক ভিডিওকে বলাই যায় শর্ট ফিল্ম। কারণ পুরো বিষয়টি ফুটে ওঠে স্টোরিলাইন ও অভিনয়ের মাধ্যমে। প্রত্যেক ডিরেক্টরকে মনে রাখতে হবে তাঁর কাজে যেন নিজস্বতা থাকে, অনুকরণ নয়। অনুসরণ করা যেতে পারে তবে আসতে আসতে নিজেদেরকেই গড়ে নিতে হবে নতুনত্বের স্তম্ভ হিসেবে। 

প্রত্যেকটি প্রোজেক্ট-এর মার্কশিট যেহেতু দর্শক। তাই সমালোচনা শোনার জন্য নিজেকে প্রস্তুত থাকতে হবে। কারণ দর্শকই একমাত্র উন্নতির সিঁড়ি। একজন পরিচালকের সব সময় শেখার মানসিকতা নিয়ে চলা উচিত।

(ডিরেকশন নিয়ে লিখতে গিয়ে সযত্নে সরিয়ে রাখলাম নিজের নাম। প্রতিমুহূর্তে শেখার চেষ্টা করছি মাত্র।)

আরও পড়ুন

একদিকে যেমন ধারা চলছে কমার্শিয়াল, অন্যদিকে তেমন কেউ কেউ খুঁজে চলেছে আর্ট। অবশ্য এখন সবকিছুতেই মিশেল দেখা যায়। যা অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে আমাদের ঠিকঠাক অনুপাতটা জানতে হবে।

Post a Comment

0 Comments