ছোটোবেলা || সপ্তম সংখ্যা
প্রকাশিত হল 'ছোটোবেলা'-র সপ্তম সংখ্যা। এ সংখ্যায়
আমন্ত্রিত লেখক হিসাবে পেয়েছি মঙ্গলপ্রসাদ মাইতি ও ভবেশ মাহাতো-কে। স্বনামধন্য ফোটোগ্রাফার রাকেশ সিংহ দেব এ সংখ্যায় উপহার দিয়েছেন তাঁর সাম্প্রতিক তোলা ফোটোগ্রাফ। যেখানে ধরা পড়েছে দেওয়ালির প্রস্তুতিতে শিশুকিশোরকিশোরীর সযত্ন প্রয়াস।
নবীন প্রবীণের লেখা পেতে চাই। কেবলমাত্র মেল (jaladarchi@yahoo.in) মাধ্যমে।
ডমরুলালের প্রায়শ্চিত্ত
অভীক গুচ্ছাইৎ (শ্রেণি - সপ্তম)
"উফ্ কী গরম রে! যা তো হুলো জলদি গ্লুকনডির বোতলটা নিয়ে আয়, সাইকেলের কেরিয়ারে আছে| ঐটে এখন আর না খেলে আর নয়|" আমি বোতলটা আনতে যাব, তক্ষুনি আমি আর বুরুদা একসাথে চেঁচিয়ে উঠলাম| বুরুদা পাড়াকাঁপানো হুঙ্কার ছাড়ল, " এই শয়তান ডমরুলাল, আমি গরমে খাব বলে গ্লুকনডিটা গুলে এনেছিলাম আর তুই সেইটা মেরে নিলি! দাঁড়া আজ তোর একদিন কী আমার একদিন।" ঠিক সেই মুহূর্তেই ডমরুলাল দাঁত বের করে মিচকে হেসে সেইখান থেকে হাওয়া হয়ে গেল| বুরুদা ওর পিছনে ছুটে যাচ্ছিল আর তক্ষুনি পিছন থেকে বিল্টে এসে বিজ্ঞের মত বলল, " বুরুদা মাথা গরম কোরো না, ঠান্ডা মাথায় কাজ নাও, ঐ বিটকেল ডমরুলালকে জব্বর একটা ফন্দি এঁটেই ফাঁসানো যাবে"। বুরুদা বিল্টের কাছে এসে ওর পিঠ চাপড়ে বলল, " ঠিক বলেছিস, এমন একটা ফন্দি আঁটব না ও ব্যাটা জব্দ হয়ে যাবে!" বুরুদা ধপ করে মাঠের উপর বসে পড়ল| পনেরো কুড়ি মিনিট ভাবনা চিন্তার পর লাফিয়ে উঠে বলল, " মার দিয়া কেল্লা, পেয়েছি, তুই শুধু দ্যাখ হুলো,এমন ফন্দি এঁটেছি না"। বুরুদা শয়তানি হাসি হাসল| আরেকটু জমিয়ে বসে বলল," শোন্, ও আমাদের গ্লুকনডি মেরেছে, গ্লুকনডি দিয়েই ওর সায়েস্তা করব| পেঁচাদার দোকান থেকে দশ প্যাকেট এক্সপায়ারড্ গ্লুকনডি আর ক্যান্টিনের দুবছর পুরোনো এক প্যাকেট গোলমরিচ গুঁড়ো আর এক প্যাকেট শাহি গরমমশলা নিয়ে আসব, সবকটা একসাথে মিশিয়ে একটা খোরাপাতি গ্লুকনডি তৈরি করব, ঐটা খেয়ে ওর যা হবে না, দৃশ্যটা একেবারে দর্শনীয় হবে"। তারপর বুরুদাকে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম," আচ্ছা এসব বিতিকিচ্ছিরি জিনিস খেয়ে ওর শরীর খারাপ হবে না তো?"
বুরুদা একটু ভেবেচিন্তে বলল, " তা হলে হবে, ও তো জীবনে কত পাপ করেছে, ধরেই নে না ঐ পাপগুলোর এটা একটা শাস্তি|" পরেরদিন সকালটা উত্তেজনায় কাটল, বিকেল হতে না হতেই আমি বেরিয়ে পড়লাম বুরুদার ঘরের দিকে| একবার বেল বাজাতেই বুরুদা উপর থেকে হাঁকল, " দাঁড়া, যাচ্ছি যাচ্ছি, এইসব বড় বড় কাজের জন্য তৈরি হতে তো একটু সময় লাগেই।" বুরুদা হনুমানের মত লাফিয়ে নেমে এসে বলল, " এই দ্যাখ সেই বিদঘুটে বিচ্ছিরি গ্লুকনডি, আমি এক ছিপি চেখে দেখেছি তাতেই বমি করার জো, ঐ ডমরুলালটা তো এক নম্বরের লোভী, ও ঢকঢক করে খেলে যে কী হবে তা স্বয়ং ভগবানও জানেন না।" আমি আর বুরুদা এই অভিযানের জন্য বেরিয়ে পড়লাম, কিন্তু মাঠে গিয়ে দেখি ডমরুলালের পাত্তা নেই, ঘন্টাখানেক খেলার পর হঠাৎ ডমরুলালের হাঁকডাক শুনতে পেলাম| ঠিক সেই মুহূর্তেই আমরা খেলাধুলো ছেড়ে আমাদের সাইকেলের দিকে গেলাম| বুরুদা আগে নিজের সাইকেলটা রাস্তার ধারে রেখে দিল, আর আমার সাইকেলটা এমন ভাবে রাখল যাতে ডমরুলালের সবথেকে আগে কেরিয়ারে রাখা গ্লুকনডিটাই চোখে পড়ে| কিছুক্ষন বাদেই ডমরুলাল এসে দাঁড়াল আর আমাদের হৃদস্পন্দনও বাড়তে লাগল| ডমরুলাল কাছে আসতেই বুরুদা হেসে ওর কাছে গিয়ে বলল, " ক্যায়া ভাই ডমরুলাল, ক্যায়সে হো, আজ তুমকো ম্যায়নে মাফ কর দিয়া।" ডমরুলাল কোন উত্তর না দিয়ে শুধু মাথা নাড়ল| বুরুদা তক্ষুনি সাইকেলের পিছনে রাখা গ্লুকনডিটা নিয়ে ডমরুলালের হাতে ধরিয়ে বলল, " ইয়ে লো ডমরুলাল গ্লুকনডি পিয়ো, তুমহারা পসন্দিদা।" ডমরুলাল এই কথাতেই আনন্দে নেচে উঠল আর গ্লুকনডিটা বুরুদার হাত থেকে লুফে নিল| এই ফাঁকে আমি আর বুরুদা সাইকেল নিয়ে গলির মুখের দিকে চম্পট দিলাম|
আর দূর থেকে দেখতে পেলাম যে ডমরুলাল লোভে ঢকঢক করে গ্লুকনডি গিলে নেওয়া মাত্রই রাস্তার উপর ভকভক করে বমি করল। আর বুরুদা আমোদের হাসি হাসল। কিন্তু আমাদের আর মাসখানেক এই চত্বরে আসা যাবে না, আমাদের দুজনকে এ চত্বরে দেখলেই ডমরুলালের বাবা ভোঁপুলাল আমাদের চরম ধোলাই দেবে|
সময়
সায়নদীপ পান্ডা (তৃতীয় শ্রেণি)
সময় তুমি কার?
আমাদের সবার।
থামো না কোনোদিন,
কোনো দিন থাকো না বসে।
হৃৎপিন্ডের মতো,
হয়ে গেল বছর শত শত।
আমরা থাকি বসে,
তুমি কখনোই থাকো না বসে ।
তোমার কাছে যাই যত,
দেখি চলে যাচ্ছ অনবরত।
কেউ দেয় না গুরুত্ব,
চলে যায় কত মুহুর্ত।
সবাই ঘুমিয়ে পড়ে কত রাত কত দিন,
তুমি তো ঘুমোতে যাও না কোনো দিন
শীতকাল এল
অর্ণা দাশ (শ্রেণি- সপ্তম)
শীতকাল এল
কুঁড়ি ভরে গেল
গোলাপের ডালে ডালে।
বাগানেতে দেখি
কুন্দবীথি ও ভরে গেছে ফুলে ফুলে।
কত ধরণের সবজি যেমন
বাঁধাকপি বরবটি।
পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানি
নিয়ে নানা শাক আঁটি।
শীতের দিনেও
জিভে জল আনে
পিঠেপুলি গুড় রুটি।
স্কুলের ভেতর
পড়ুয়ারা সব
পেয়েছে এখন ছুটি।
এবছর ধরে শুধুই শঙ্কা
করোনা ভাইরাস
ওগো দয়াময় রক্ষা করো
দূর করো এই ত্রাস।
সমৃদ্ধ মণ্ডল(দশম শ্রেণি)
ছড়া
খাটের উপর বিড়াল বসে
ডাকছে শুধু মেঁউ
আমরা সবাই বসে আছি
শুনছে নাতো কেউ
এবারের বিষয় : বিজ্ঞান।
জ্বলদর্চি কুইজ -১৪
ক্লিক করে উত্তর দেখে নিন।
নির্মাণ - ঋতরূপ ত্রিপাঠী (অষ্টম শ্রেণি)
আ ম ন্ত্রি ত লে খা
ভবেশ মাহাতো-র দুটি ছড়া
পাশে দাঁড়ানো
অবাধ্য এক দুষ্টু ছেলে একগুঁয়ে আর জেদি
নিত্য নতুন বায়না ধরে; উল্টো যে তার দিদি,
বর্ষা এলে গাছ লাগাবেই কে তাকে আর ঠেকায়
পাড়ার যত বন্ধু ছিল সবাইকে পথ দেখায়,
টিফিন খরচ বাঁচিয়ে রেখে কিনতে হবে চারা
এটাই ছিল শপথ তাদের দুষ্টু ছিল যারা,
জলের অভাব জানান দিল বিদ্যলয়ের স্যারও
সেদিন থেকে শপথ তাদের গাছ লাগাবে আরও,
এই নিয়ে খুব বাদ-প্রতিবাদ বাবা এবং মা-এর
এই নেশাটা কাছে দাঁড়ানো ভাই এর পাশে ভাই এর।
ঝাড়ুদার পাখি
দাঁড় কাকের এক কাকার সাথে মুচি পাড়ার মেয়ের
খবর খানা রটেছিল এই দুজনারই বিয়ের,
বরযাত্রী সেজে যারা বসেছিল বাইরে
খাবার কথা কেউ কখনো বললো না তো হায়রে,
যাচাই করে বোঝা গেল- বলা-ই ছিল আগে
সবাই খেয়ে যা বেশি হয় ওটাই কাকের ভাগে।
সেই থেকে তো মানুষ শুধু নোংরা করে, আর
কাকের নামে জুটলো তারিফ নামটি 'ঝাড়ুদার'।
মঙ্গলপ্রসাদ মাইতি-র দুটি ছড়া
আমরা শিশুরা
আমরা হলাম ছোট্ট শিশু
ফুলের মতো হাসি
তোমাদেরই ভালোবাসায়
খুশির ভেলায় ভাসি।
বড়ো আমরা হতেই পারি
যত্ন-আদর পেলে
এগিয়ে যাব অনেক দূর
সকল বাধা ঠেলে।
নেহেরু চাচার জন্মদিনে
আনন্দেতে মাতি
ধনী-গরিব সকল শিশু
সবাই সবার সাথি।
বাংলা আমার
বাংলা আমার পাখির কূজন
শিশির ভেজা ধান
বাংলা আমার প্রাণের বাতাস
নদীর কলতান।
বাংলা আমার মিষ্টি সকাল
গাছের সবুজ ঢল
বাংলা আমার পদ্মপাতায়
জলের টলমল।
বাংলা আমার সুনীল আকাশ
উজল সন্ধাতারা
বাংলা আমার চাঁদের হাসি
স্বপন তন্দ্রাহারা।
বাংলা আমার পল্লিবালার
সাঁঝের প্রদীপ জ্বালা
বাংলা আমার চাষির মুখে
গরম ভাতের থালা।
বাংলা আমার সুখের প্লাবন
দীপ্ত চোখের ভাষা
বাংলা আমার জনম–মরণ
আমার কাঁদা-হাসা।
........................
আরও পড়ুন
জ্বলদর্চি পেজ-এ লাইক দিন।👇
0 Comments