জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা অষ্টম সংখ্যা

ছোটোবেলা || অষ্টম সংখ্যা 

এবারের সংখ্যায় আমাদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে লেখা দিয়েছেন বিদ্যুৎ পাল, অপর্ণা দেওঘরিয়া, সন্দীপ দত্ত ও ধৃতি বিশ্বাস। সবাইকে সম্মান জানাই। সাহিত্য মন্ডল তরুণ সম্ভাবনাময় ফোটোগ্রাফার। তাঁর এই ফোটোগ্রাফি প্রমাণ করে তিনি ভবিষ্যতে স্বনামখ্যাত হবেনই। তাঁকে শুভেচ্ছা। 

অভিভাবকদের কাছে আবেদন, তাঁরা যেন তাঁদের পরিবারের শিশুকিশোরকিশোরীদের একটু উৎসাহ দেন, লেখা ও আঁকার বিষয়ে। লেখা ও ছবি মেল (jaladarchi@yahoo.in)মাধ্যমে পাওয়ার অপেক্ষায় থাকলাম। 

জল

সায়নদীপ পান্ডা (তৃতীয় শ্রেণি)

ও জল ,ও জল
তুমি আমাদের জীবন। 
তুমি না থাকলে, 
বাঁচব না আমরা, 
চলে যাব  মৃত্যুর মুখে;
তাই তুমি আমাদের জীবন। 
তুমি আশ্রয় দাও
নানা প্রাণীকে
তুমি না থাকলে
বাচবে না প্রাণ। 
তুমি না থাকলে, 
হবে না চাষ;
তুমি হলে উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রাণ।


আয়রে আয় পায়রা

পরমার্থ দে (সপ্তম শ্রেণি)

আয়রে আয় পায়রা
দেনা আমায় ধরা।
বক্ বক্ বক্ বকম ডাকিস
লুকিয়ে যেন কোথায় থাকিস?

সুখের পায়রা তুইরে 
আমার কাছে আয়রে।
শুনবো অনেক বায়না
জলদি উড়ে আয়না।

আমার কাছে আসবি যখন
চাল কড়াই দেবো তখন।
গল্প নাকি ভালোবাসিস? 
তবেই আমার কাছে থাকিস।

নীল আকাশের ডাকে
কখন সে কোন ফাঁকে।
মন যদি তোর কাঁদে 
তখন রাখবো না আর বেঁধে।।

আ ম ন্ত্রি ত  লে খা 

আইনের ফাঁক

বিদ্যুৎ পাল

ডাক এবং তার, হয় যদি ডাক্তার
তবু কেন এত রুগী, খুব দেখি হাঁক তাঁর। 
রোগে ভোগে, রেগে বলে
মোক্তার--
ও হে ডাক্তার, তুমি কি
ডাক-তার? 
ডাক্তার বলে রেগে-আইনে
ফাঁক তার
আমি নৈ ডাক্তার
পোস্ট এন্ড টেলিগ্রাফে
কাজ ভার
রুগী মারা পাশ করে হয়েছি যে
ডাক-তার।


হারিয়ে যাওয়া আনন্দ

সন্দীপ দত্ত

অফিস থেকে আজ তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরে এল বাবা। এক একদিন যেমন ফেরে। দুপুরের রোদ্দুরের তাপ যায়না, রান্নাঘরে এটোঁ বাসন ধুতে ব্যস্ত থাকে মা, ইস্কুল ছুটি থাকলে মায়ের বকুনিতে চুপটি করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে গোগোল।
     আজও গোগোলের স্কুল ছুটি। মা রান্নাঘরে। ভাত খেয়ে কী মনে হল, পড়ার টেবিলে বসেছিল গোগোল। অফিস থেকে এসেই বাবা বলল, " পার্কে যাবি গোগোল? চ, আনন্দকে সঙ্গে নিয়ে আজ একটু  ঘুরে আসি।"
বাবার কথা শুনে খুশিতে লাফিয়ে ওঠে গোগোল। এর আগে বহুবার পার্কে যাওয়ার জন্য মায়ের কাছে কত বায়না করেছে সে। বাবা অনুমতি দেয়নি। " পার্কে কেন যেতে হবে? বাড়ির উঠোন কি কম? বাড়িতে খেল। অতো গাড়ি ঘোড়া ডিঙিয়ে তোমার মা পার্কে নিয়ে যেতে পরবেনা। বাইরে বের হলেই খুব দুষ্টুমি কর তুমি।"
কথাটা আর একবার বাবার মুখ থেকে শুনতে চাইল গোগোল। " কোথায় নিয়ে যাবে বাবা?"
" কেন পার্কে! যাবিনা?"
" আনন্দকেও নিয়ে যাব?"
" হ্যাঁ, নিবি! ওরও তো ঘুরতে ইচ্ছে করে।"
কাল থেকেই বাবা আনন্দের ওপর খুব বিরক্ত। ক'দিন ধরেই আনন্দকে বাবা সহ্য করতে পারছেনা। সুখ মারা যাওয়ার পর আনন্দ যেন দু'চোখের বিষ। " সারা ঘরময় এত নোংরা করে এটা! কেন যে পুষেছিল। বিচ্ছিরি! তোমাদের আর কী! অফিসের নানান কাগজটাগজ এখান সেখান ছড়িয়ে থাকে। ছুটে বেড়ায় তো চারদিক।"
আনন্দ গোগোলের পোষা খরগোশ। মেটে রঙ। শরীর থেকে বুনো গন্ধ ওঠে। গজালের মতো দাঁত। তবু গোগোল পুষবে। প্রতিদিন নিজে হাতে খাওয়াবে গাজর, সবুজ শাকপাতা। সুখটাও ছিল একইরকম। দেওয়ার সময় বাড়ির আগের ঠিকে ঝি রঞ্জার মা বলেছিল, " ওরা দু'ভাই।" নাম রাখা হয়েছিল তাই সুখ আর আনন্দ। সুখটাকে খেল একদিন রাস্তার কুকুরে। আনন্দ হয়ে গেল একা। বেঁচে রইল একাকী। গোগোলের বন্ধু হয়ে। সারা ঘরময় ঘুরে ঘুরে।
     গোগোলের মন কানায় কানায় ভরে উঠল খুশিতে। পড়ে রইল বইখাতা। সে এখন বাবার সঙ্গে পার্কে যাবে। সঙ্গে যাবে আনন্দ।

ঘন্টাখানেক বাদে রোদ একটু কমতেই গাড়ি বের করল বাবা। মাস ছয় আগে কেনা চোদ্দ লাখের টয়েটো। চালকের আসনে বসল বাবা। উঠল গোগোল। গোগোলের কোলে উঠল আনন্দ। মা গেলনা।
      
পার্কে হাঁটতে হাঁটতে বাবা গোগোলকে বলে, " দে, আনন্দকে আমি একটু ধরি। অনেকক্ষণ তুই নিয়ে আছিস।"
" তুমি পারবে?" গোগোল বাবার দিকে তাকায়।
" কেন পারবনা? তুই দে না!"
কোনোদিন কখ্খনো কোলে না নেওয়া আনন্দের দিকে হাত বাড়ায় বাবা। ধরতে গিয়ে ফসকে যায়। আসলে ফসকে দেয়। ছোট্ট গোগোল যা বুঝতে পারেনা।
     তারপর খোঁজ খোঁজ খোঁজ। কিন্তু  তাকে কি আর পাওয়া যায়? পার্ক'টা এমনিতেই এখনও অগোছালো। কাজ চলছে। একদিকের প্রাচীর মাটি থেকে মাত্র সামান্য একটু উঁচু । পেরোলেই অসংখ্য গাছ। সবুজে সবুজ। কোথায় খুঁজবে তাকে? বাবার চোখের তারায় যখন গোগোলের অলক্ষ্য সফলতার আলো মুক্ত হয়ে ঝকমক করছে, গোগোলের তখন কান্না পাচ্ছে খুব। হারিয়ে গেল আনন্দ! 
    মনখারাপ'টা অনেকদিন রয়ে গেল গোগোলের। অনেকগুলো বছর।
অপর্ণা দেওঘরিয়া
রবীন্দ্রনাথ


রুদ্রবীণার ঝংকারেতে তোমায় ডাকি
রঙিন আলোর রামধনু রঙ আয়রে পাখি।

উদাস দুপুর সংগোপনে মুক্ত আকাশ
গানের সুধায় সৃষ্টি ছড়ায় খুশির বাতাস।

মাটির কাদায় ঘুমভাঙ্গা মেঘ  স্বপ্ন আঁকে,
স্বচ্ছ শীতল নদীর মতন বাউল থাকে।

 সবুজবরণ দৃষ্টি দাঁড়ায় শান্তি সুখে,
কোন হৃদয়ে  মন  ভরে যায়  আলোর বুকে।

ভালোবাসার বাজায় মাদল উল্লাসে কে?
গাছের ছায়ায় ভ্রমর আসে কোথার থেকে? 

শব্দ আসে ঝপাং ঝপাং ডিঙির  টানে,
রবীন্দ্রনাথ জড়িয়ে থাকেন সকল প্রানে।

দেশ

জীবন আমার রঙিন আলো
জীবন আমার রঙিন মাটি।
হৃদয় বাঁধা বারন্ডা আর 
হাওযায় পাতা শীতল পাটি।

মাথায় আঁকা দেশের  আকাশ
শিমুল দোলে ফুলের টানে,
পাহাড় পাড়ের শীতল বাতাস 
অচিন গাঁয়ের সুবাস আনে। 

আমার মানুষ, আমার ভাষা।
মধুর ধারায় দেশের ছবি,
জ্যোৎস্না দিল  চাঁদের হাসি,
শৌর্য দিল অতুল রবি।

নদীর ধারায় পথ হেঁটে যাই
এক জীবনের  মুগ্ধতাতে,
দেশ আমাকে জাগিয়ে রাখে
ডাল ঢেলে দেয় শুদ্ধ ভাতে।


জীবনের বাঁক
ধৃতি বিশ্বাস 

কিশোরী বাবু মেদিনীপুর শহরের বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠ বিদ্যালয়ের বাংলা শিক্ষক। ব্যাকরণে অমন পাণ্ডিত্য কম শিক্ষকেরই রয়েছে। সমাস, ছন্দের মতো জটিল বিষয়গুলো ইনি সহজে ছাত্রদের বুঝিয়ে দেন। কিন্তু সমস্যা হল কিশোরীবাবুর  উচ্চতা। ওনার হাইট খুবই কম। মাত্র চার ফুট আট ইঞ্চি। উচ্চতায়  খাটো হওয়ার জন্য ওনাকে সবাই গ্যাঁড়া কিশোরী বলে ডাকে।                             

হয়তো তিনি কারক শেখাচ্ছেন কে বা কারা থাকলে কর্তৃকারক অমনি পিছন থেকে কোন ছাত্র বলে উঠলো গ্যাঁড়া কিশোরী কি কর্তৃ কারক হবে! অমনি সারা ক্লাস হো হো করে হেসে ওঠে। অপমানে কিশোরী বাবুর  মুখ লাল হয়ে যায়। তবু তিনি না থেমে পড়িয়ে যান। ছাত্রীরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করে দেখ স্যারের জামা, প্যান্ট, জুতো,ব্যাগ সবই কেমন ছোট ছোট হা হা হা।                            

এই কিশোরীবাবুই হঠাৎ পরপর ১০ দিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। ছাত্ররা হেডস্যারের কাছে জানতে গেল কেন কিশোরী বাবু আসছেন না? হেড স্যার বললেন-'উনি কলেজে অধ্যাপনার চাকুরীতে জয়েন করেছেন আর আসবেন না তোমাদের জন্য ১০০০০ টাকা উনি দিয়ে গেছেন একদিন মাংস ভাত খাইয়ে দেয়া হবে। 

ছাত্রদের চোখে জল এলো। তারা বুঝতে পারল স্যারের হাইট কম হলেও মনটা খুবই বড় ছিল। ছিলেন খুব পণ্ডিতও। হয়তো, গোপন কিছু মনখারাপ সঙ্গে নিয়ে গেলেন! ক্ষমা চাইবার সুযোগ কবে আসবে, সেই চিন্তায় মগ্ন হল ছাত্রছাত্রীরা।

জ্বলদর্চি পেজ- এ লাইক দিন👇


আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments