জ্বলদর্চি

অনুসন্ধানী র ডায়েরি -২ (শিব সমাদ্দার, আই এ এস)/ সন্তু জানা





অনুসন্ধানী র ডায়েরি 

সন্তু জানা 

অখণ্ড মেদিনীপুর পর্ব : ২

শিব সমাদ্দার, আই এ এস

১৯৬৪ সাল। দেশ স্বাধীন হয়েছে মাত্র ১৭ বছর। প্রাক স্বাধীনতাকালের অখণ্ড মেদিনীপুর জেলার প্রতাপশালী ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটদের কথা ও কাহিনী তখন ইতিহাসের পাতায় সামিল হয়েছে। স্বাধীন  মেদিনীপুরের জেলাশাসকগণ নতুন ভাবে প্রিয় জেলাকে সাজিয়ে তোলার কথা ভাবছেন। দিকে দিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গ্রন্থাগার গড়ে উঠছে। কিন্তু, তা বলে ব্যায়ামাগার! তা বলে এত বৃহৎ ব্যায়ামাগার ! 

হ্যাঁ, ১৯৬৪ সালে খোদ মেদিনীপুরের প্রাণকেন্দ্র কলেজমাঠ পার্শ্ববতী স্থানে সুউচ্চ প্রাচীর বিশিষ্ট বিশাল ব্যায়ামাগার তৈরি হল। দেশের খ্যাতনামা জাতীয়তাবাদী ব্যারিস্টার 'দেশপ্রিয়' যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তকে উৎসর্গ করে নাম দেওয়া হল 'দেশপ্রিয় ব্যায়ামাগার'। তবে কেবল শিক্ষা নয়, চাই সুস্বাস্থ্য। তাই বোধ হয় মনের কোণে উঁকি দিয়েছিল বিবেক-বাণী
 "গীতা পাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলা ভালো"। কিন্তু এত বৃহৎ প্রাঙ্গণ, তৎকালীন সময়ের বিচারে অকল্পনীয় সব শরীরচর্চার সরঞ্জাম, রঙিন উদ্যান-এত সব আয়োজন সম্পন্ন করার পেছনে কার অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি? কে ছিলেন সেই স্বপ্নের রূপকার?

তিনি মেদিনীপুরের তৎকালীন জেলাশাসক। তিনি সংস্কৃতিপ্রেমী একজন বুদ্ধিজীবী। কিন্তু চিরকাল থেকে গিয়েছেন আলোর উল্টো পিঠে। তিনি শ্রী শিব সমাদ্দার,আই এ এস।

১৯৬২ সাল থেকে জেলাশাসক পদে আসীন হওয়ার পর থেকেই তিনি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নতির কথা ভাবেন। ১৯৬২ সালে জেলার দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত দাঁতন হাইস্কুলের বাৎসরিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এসে দীর্ঘ বক্তৃতা দেন। স্কুলের উন্নতি প্রকল্পে বেশ কিছু অর্থ সাহায্য তুলে দেন। দাঁতন হাইস্কুলের তৎকালীন প্রধানশিক্ষক নরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস এই বিষয়ে তাঁর ডায়েরির পাতায় অনেক তথ্য লিপিবদ্ধ করে গেছেন। জেলা জুড়ে বিভিন্ন বিষয়ে পরিকাঠামোর উন্নতি রচনায় শ্রী শিব সমাদ্দার গভীর স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন। এমনকি সরকারি প্রচেষ্টায় নির্মিত খোদ মেদিনীপুর শহরের প্রথম সাধারণ উদ্যান বা পার্ক তৈরি করার স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনিই। যেমন ভাবা তেমন কাজ। অবশেষে ওই বছরই মে মাসের ২৭ তারিখ তিনি প্রস্তাবিত
 'বিষ্ণুপ্রিয়া পার্ক' ও পার্ক মধ্যস্থ 'দেশপ্রিয় ব্যায়ামাগার' এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পার্কটির শুভ উদ্বোধন ঘটে বছরের শেষে শীতের মিষ্টি রোদ্দুর বেলায়। মাস খানেক পরে ১৯৬৪ সালের জুন মাসেই তাঁর কার্যকালের সমাপ্তি ঘটে। 
মেদিনীপুরবাসী আজকে ভুলে গেছে তাঁর নাম। কিন্তু এখনও শহরের প্রাণকেন্দ্র কলেজমাঠ থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরত্বে একটি ভগ্নপ্রায় প্রস্তরফলকে চিরস্মরণীয় হয়ে রয়ে গেছেন শ্রী শিব সমাদ্দার, মহামান্য আই এ এস তথা মেদিনীপুরের প্রিয় জেলাশাসক।

আরও পড়ুন 

Post a Comment

1 Comments