জ্বলদর্চি

অন্যধারার শর্টফিল্ম -১০/ নিসর্গ নির্যাস মাহাতো

অন্য ধারার শর্ট ফিল্ম
পর্ব: ১০

নিসর্গ নির্যাস মাহাতো

বিষয়: অভিনয়

প্রথমেই মনে রাখতে হবে মঞ্চাভিনয় আর ফিল্মে অভিনয় এক নয়। দু'টো সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। তাই রিহার্সালের আগে থেকেই এই বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন থাকা প্রয়োজন।

মঞ্চে অভিনয় করতে গেলে মূলত অভিনেতা কে সরাসরি মুখোমুখি হতে হয় দর্শকের। ফিল্ম-এর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আলাদা। সেক্ষেত্রে বারবার টেক নেওয়া হয়। তারপর বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে নেওয়া শট জোড়া হয়। তাই সরাসরি দর্শকের সামনে আসার ব্যাপার নেই।  এই দিকে লক্ষ্য রেখেই শর্ট নেওয়া হয় সামনে, পেছনে-ধার বা ওপর-নীচ থেকে। আমাদের আলোচনার বিষয় ফিল্ম নিয়েই।

ফিল্ম তৈরিতে যেহেতু দূর থেকে-কাছ থেকে দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করতে হয় তাই এখানে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হয় এক্সপ্রেশন-এর দিকে। অভিনেতা/অভিনেত্রীকে বারবার দিতে হয় একই এক্সপ্রেশন। শুধু এটুকুই নয়, এক্ষেত্রে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হয় জায়গা সম্বন্ধেও। যেই জায়গা থেকে প্রথম দৃশ্য শ্যুট করা হয়, সেই সময় বোঝাতে অন্য অ্যাঙ্গেল থেকে শুট করলেও অভিনেতা/অভিনেত্রীকে জায়গা পরিবর্তন করা চলবে না।

সব সময় মনে রাখতে হবে অভিনয় কখনোই যেন না অতিনাটকীয়তা হয়ে যায়। কোনও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তার ভেতরে কোথাও একজন সহজ-সরল-নিখাদ শিশু বোঝাতে নিশ্চয়ই তাঁকে মানসিক ভারসাম্যহীনের অভিনয় করতে হবে না। আবার মানসিক ভারসাম্যহীন বোঝিতে সবসময় হাত-পা ছুঁড়ে অট্ট হাসি হাসতেই হবে বা জিনিসপত্র ভাঙতে হবে তার কোনো মানে নেই।  তা যথেষ্ট দৃষ্টিকটূ লাগে। পুরোটাই হবে পরিস্থিতি যতটুকু ডিমান্ড করে তার ওপরে। সেই পরিস্থিতির ডিমান্ড'কে বুঝতে হবে। মানে অভিনয় আসলে চূড়ান্ত বাস্তব। সেই কারণেই পরিস্থিতি উপলব্ধি করে অভিনয় করাটাই বাঞ্ছনীয়। সবার আগে বিষয়টি বুঝে তা উপলব্ধি করা প্রয়োজন। অভিনয় অবশ্যই নির্ভর করে নির্দেশনার ওপরে। তাই টেক নেওয়ার সময় সেই বিষয়টি মনে রাখতে হবে সকলকেই। 

কিছু কিছু ধারাবাহিক বারবার সমালোচিত হয়। এক্ষেত্রে গুণগত মানের জন্য সকলেই দোষ দেয় অভিনেতা/ অভিনেত্রী, স্ক্রিপ্ট রাইটার, পরিচালককে। কিন্তু মনে রাখতে হবে সমস্ত ধারাবাহিকই বাণিজ্যের জন্য। বিপুল সংখ্যক দর্শক অতি নাটকীয়তা দেখতে পছন্দ করে বলেই এইসব ধারাবাহিকের টিআরপি বাড়তে থাকে হু হু করে। তারমানেই বাণিজ্যিক সাফল্য। তাই দর্শকদের ডিমান্ড অনুযায়ী অতি নাটকীয়তা ঢুকেই যায়। বলা ভালো, বাধ্য হয়। দর্শকদের বিপুল অংশ এইসব না দেখলে অতি নাটকীয়তার বালাই থাকবেই না। তাই অভিনয় প্রসঙ্গে পরোক্ষভাবে দর্শকদের গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেই আসে কোথাও না কোথাও। যে কোনও বিষয়ে আমরা অতিরঞ্জিত করে দেখতে ভালোবাসি। তাই স্ক্রিপ্ট রাইটার, ডিরেক্টর বা অ্যাক্টর অ্যাক্ট্রেস কে দাগিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। কারণ শিল্পের প্রতি ভালোবাসা যেমন থাকে তেমন মনে রাখতে হবে শিল্পীদের এটাই উপার্জনের পথ।
শর্ট ফিল্মে যেহেতু সময় কম অভিনয় হয়ে থাকে আরও কম্প্যাক্ট। কম সময়েই বুঝিয়ে দিতে হয় অনেক কিছু। শুনতে শট লাগলেও আসলে বৃহৎ, তা সে পরিশ্রমই হোক বা ডেডিকেশন।

আবার বাস্তবের ওপর ভিত্তি করে অভিনয় তুলে আনতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় চিত্রগ্রাহক ও পরিচালককে। যেমন, একজন ভিখিরির জীবন নিয়ে শর্ট ফিল্ম করব কিন্তু আমি চাইছি না কোনও অভিনেতা বা অভিনেত্রী তাতে অভিনয় করুক। চাওয়া হচ্ছে, একজন ভিখিরিই অভিনয়টা করুক। তাতে বাস্তব অনেক বেশি থাকে। কিন্তু আমরা শর্টফিল্ম করতে চাইছি, ডকুমেন্টরি নয়। সেক্ষেত্রে ওই ভিক্ষুক অভিনয়ে অভ্যস্ত নয়। তাই তিনি যত টুকু অভিনয় করবেন, সেটাই পারফেক্ট হবে এমন নয়। এইজন্যেই বারবার দীর্ঘক্ষণ ধরে টেক নিতে হয়। ফিল্ম নির্মাতারা যেটা চাইছেন তাহলে সেটা অবশ্যই পাবেন। আবার অভিনয় জানেন না এমন কাউকে দিয়ে অভিনয় করিয়ে নেওয়াটাও আর করাটাও একটা চ্যালেঞ্জ। এক্ষেত্রে উঠে আসে পরিচালক হিসেবে বিশেষভাবে উঠে আসে সৌম্যায়ন (অয়ন), সুমন্ত, দয়াময়ময় মহান্তি, সুমনদীপ পাণ্ডে -র নাম। আবার অভিনেতা-অভিনেত্রী হিসেবে উঠে আসে অজিত, আকাশ, অসিত, স্বাতী, স্বাগতা, দেবরাজ, স্বপ্নজা, দেবলীনা চ্যাটার্জি, নবনীতা, শম্পা, সুলগ্না, দেবলীনা দাস, শ্রেয়সী,  দেবাশীষ, রিয়াজ (সুমন)- অনেকের নামই। আবার মঞ্চ বা ফিল্মে সমান স্বচ্ছন্দ পার্থ, পিনাকী, সোমা (মিষ্টি), শায়েরীদের মতো অনেক শিল্পীই। আসলে সব ছাড়িয়ে ভালোবাসা আর চেষ্টাটাই শেষ কথা বলে।

জ্বলদর্চি পেজ- এ লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments