জ্বলদর্চি

২০২১ নতুন বছর নতুন লেখা (গুচ্ছ কবিতা) /গৌতম বাড়ই

২০২১ নতুন বছর নতুন লেখা 
গুচ্ছ কবিতা 
গৌতম বাড়ই 


বিবর্ণ মধুমাস বিবর্ণ সন্ধ্যা

রাত হলে উড়ে চলে আগুনে পাখি
শব্দে-শব্দে পাখির ডানায় আলোর ফুটকি
নিচে চাকার জীবনে অবিরাম ঘর্ষণ
ঘর্ষণে গতির জীবন পায়
রাতের আকাশে ঠিক গোল নয়
তবুও যেন গোল-গোলাকার চাঁদ
আকাশের উজ্জ্বলতা ধার করা শেখায়
মাটির মূর্তিও অনেক বাঁধা পড়ে
ধরা বাঁধা কিস্তিতে।

পবিত্রতা কোন মানবিক শৃঙ্খল নয়
বহমানতা অবসাদ বড়
পারুলের বনে শতাধিক কাঙ্খিত হিমেল
ডানা ঝাপটানো চিল
শরবনে রাতের ধ্রুবতারা নেমে আসে স্থির
অস্থির কাঁপে পদ্মবনের পাতায় গোধূলি-বেলা
একটা সাঁকো দাও 
একটা বাঁও দাও 
নিধুবনে ঘোমটা টেঙ্গেছে বারাঙ্গনা নারী।

আমাদের প্রসূতি সন্ধ্যা ক্রমাগত ভিড় করে আসে
আমাদের মনিকর্ণিকা- ঘাট সন্ধ্যাবাতি জ্বালে
আমরা গালে হাত দিয়ে আর-পার দেখি শুধু


মীন-চক্ষু হোক

রোদ-চশমা তোমার চোখের ভেতর চোখ 
দেখব বলে, ফুটুক আমার দুই-চোখ
তোর হবে,  ঠিক হবে। একটু নৃশংস হোক!

তোমার চক্ষুহীন সব এলোপাথাড়ি
জানতে যদি, কোনটা নিজের বাড়ি?
তোর হবে, কী হবে? বেসামাল যে গাড়ি।

নিটোল দিঘি চাঁদ পড়ে জ্বলজ্বল
সেই দিঘি তখন সে যৌবন ছলছল
তোর শ্বাসে,শ্বাস নেয়। জনান্তিক কল্লোল।

তোর ঘামগায়ে কামাগ্নি, ফোটে জোনাকি
দেহের ভেতর শরীর। দেখতে পাস না কি?
ওরা দেহে- দেহে তাপ খোঁজে। এটা মস্ত চালাকি।

রোদ-চশমা তোমার চোখের ভেতর চোখ
দেখব না, এখন দুই-চোখেতে অনন্ত শোক
এখন আমার নদী। আমার মীন-চক্ষু হোক।


সনির্বন্ধ তৃষ্ণা

এক একটা দীর্ঘশ্বাস যখন কবিতা হয়ে ওঠে
আমাদের ধমনীর ভেতর 
বরফকল আর গুচ্ছের গোলাপ
সন্ধ্যার বাহান্নয় ফোটে একটি-দুটি করে
দুঃখের বিন্দু। মহাশূন্যের চাদরে
তখন উবু হয় চিৎ হয় ছিয়াত্তর 
কবিতার সঙ্গে সঙ্গোপনে মুছোমুছি চলে

ময়ূর আর হাঁসের দুরন্ত সহবাসে
নেমে আসে গোপন বৃষ্টি
চৌষট্টি যোগিনী-কলার
পারাবত প্রিয়া রাগিণী শেখাবে
সোনালী সমুন্দর অফুরান গান

দুঃখের ফোঁটা-ফোঁটা বিন্দু বৃষ্টি হয়ে ঝরে
অনন্ত আমিষ শয্যায় পিতামহ 
মুখ হা করে সনির্বন্ধ তৃষ্ণা নিবারণে


জপে এবং সাধনায়

খণ্ডহর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছি বাবুবাগানে
এ বাগান পোকামাকড় পোড়াঝাড় 
পোড়োবাড়িটির তবুও কিছু হৃদয় ছিল
থামে এবং বিপজ্জনক সিঁড়িতে আত্মার ওঠা-পড়া
কালোঘোড়াদের আস্তাবলে
ভাদুড়ে চাঁদ আর নক্ষত্রশুন্য আকাশ থেকে
আদিম কিছু কান্না এসে জমা হয়
ফ্রকের লড়কি টুকরো লাঠিতে দড়ির ওপর খেল
শূন্যতা রেখে একটি পাখি ধাবমান
মেঘের আড়ালে মিলিয়ে যাচ্ছে
বাজীকর চারশো-চল্লিশ ভোল্টে ডিগবাজি খাচ্ছে
চারিদিকে সাবাশ! সাবাশ!
আস্তাবলের অন্ধকারে যীশু আখ চিবোচ্ছিলেন
এক ছটাক আলো আর পনের ছটাক কালো
কামধেনু চুরি হয়ে গিয়েছে কবে
প্রোটিন আর ইমিউনিটি বাগাড়ম্বর কথা-মালা

এখানে নিত্য-জপে
হরি ওম হরি! হরি ওম হরি!
কী বুভুক্ষু কী চণ্ডালে।


একটি খোলা মেসেজ হাওয়ার কাছে----

একটি খোলা মেসেজ হাওয়ার কাছে--  আলোর কাছে--  তাপ ও উত্তাপ সূর্যের কাছে---  এক খোলাবুক নদীর কাছে। খোলা মেসেজ চার দিগন্ত দশদিক ছুঁয়েই এসেছে। খোলা দিগন্তে আঁধারের অবিমিশ্র দাগ। খোলা সমুদ্রের গভীরে যখন নাইতে যাও, অবিন্যস্ত ঢেউয়ে বেসামাল আমি, তুমি খোলাবুকে জড়িয়ে ধরে আমায় মৃত্যুর চিৎ সাঁতার শেখাচ্ছিলে। খোলা একহাত মৃত্যু একদিকে আর একদিকে বদ্ধ জীবন। খোলামনে হাত বাড়িয়েছি একহাত মৃত্যুর দিকে, অমনি খেলে গেল বিদ্যুৎ রমণের বিতত বিতংস খেলায়। খোলা চাঁদ বলে আমায় তুমি কোনদিন মেসেজ দাওনি, কেন? খোলা আকাশ একমাত্র জানে চাঁদের কৃত্রিম উপগ্রহ সৌন্দর্য। একটি খোলা মেসেজ তাই হাওয়া----  তোমার কাছে পরকীয়াতে দিলাম। খোলামনে খোলামকুচি মনে কর। খোলামনের ইতি আমি দশ মেগা- বাইটের শব্দস্তূপ।

পুনশ্চ:  নতুন বছর যেন প্রাণখোলা এবং বিশুদ্ধ বাতাসে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।

জ্বলদর্চি পেজ- এ লাইক দিন👇

আরও পড়ুন

Post a Comment

4 Comments

  1. ভালো লাগল কবিতাগুলো

    ReplyDelete
  2. ভালো লাগল কবিতাগুলো

    ReplyDelete
  3. ভালো লাগল কবিতাগুলো

    ReplyDelete
  4. ভালো লাগলো। সবচেয়ে ভালো লাগলো 'জপে এবং সাধনায়'

    ReplyDelete