জ্বলদর্চি

২০২১ নতুন বছর নতুন লেখা (গুচ্ছ কবিতা)/মহুয়া ব্যানার্জী

২০২১ নতুন বছর নতুন লেখা 
গুচ্ছ কবিতা
মহুয়া ব্যানার্জী

মেয়েবেলা 

ওই বাড়িটাই বন্দি আছে আমার সে সব ছোট্টবেলা,
দুপুরবেলা স্কুলের পরে রান্নাবাটি পুতুলখেলা। 
নিঃসঙ্গ, নিঝুম দুপুর এত ভিড়েও বড্ড একা,
পড়ছে মনে সেসব স্মৃতি দেখছি আমার মেয়েবেলা।
বড্ড সোজা, সরল জীবন কল্পনার ওই ছোট্টবেলা,
সাদা-কালোর বোকা বাক্সে রবিবারের সকালবেলা।
 চুঁ-কিতকিত,কুমীরডাঙা, ছোঁয়াছুঁয়ি আর লুকোচুরি,
দাদুর কাছে গল্প শোনা চরকা কাটা চাঁদের বুড়ি।
মায়ের বকা,বাবার শাসন দুষ্টুমির ওই ছোট্টবেলা,
নাচে, গানে, রঙ তুলিতে রঙিন সে সব বিকেলবেলা। 
যত্নে রাখা মধুর স্মৃতি রয়েছে মনের মণিকোঠায়,
চোখ বুজলেই হৃদমাঝারে আজও তারা ডাক দিয়ে যায়। 
মুহূর্তরা ধরছে ঘিরে, দেখছি চোখে ছোট্টবেলা,
ওই বাড়িটাই আজও আছে আমার প্রিয় মেয়েবেলা।


ভালোবাসা 

ভালোবাসা তুমি নীরব বড় থাকো অন্তরালে,
অনুভূতিগুলো বুকের পাঁজরে ডুকরিয়ে কেঁদে মরে। 
কখনও বা তুমি লেলীহান শিখা, কখনো বা দাবানল,
আবার কখনো শক্ত বরফের হিমালয় অবিচল। 
কখনও বা তুমি শান্ত ধারায় বয়ে চলো সমতলে,
কখনো আবার পাথুরে জমিতে বহমান খরস্রোতে।
ভালোবাসা তুমি কখনো আবার সাতরঙা রামধনু,
ক্ষনিকের তরে রাঙিয়ে দিয়ে ঝরাও অশ্রুবিন্দু।
কখনো বা তুমি মেঘের আড়ালে চমকানো বিদ্যুৎ,
বয়ে চলো বুকে গতি অবিরাম তবু থাকো নিশ্চুপ। 
আবার কখনো শান্ত ভোরের শীতল শিশির হয়ে,
টুপ্ করে বুকে ঝরে পড়ো তুমি উষ্ণতা টুকু পেলে। 
ভালোবাসা তুমি নীরব-নিঠুর সহজে দাওনা ধরা,
জীবনপাত্র তবু যেন হয় ভালোবাসাতেই ভরা। 


বিদ্যাসাগর 

জন্ম নিলে মেদনীপুরের গরীব পরিবারে,
গরীব হয়েও রাজা ছিলে মনের দরবারে।
লেখাপড়ায় চরম মতি,মনেও অপার মায়া,
সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে হতে বটের ছায়া। 
দরিদ্র-আর্ত-পীড়িতের তুমি  ছিলে ত্রাতা,
নিজের অর্থ সংকটেও হতে কর্ণ দাতা। 
বজ্র কঠিন চরিত্র আর মাতা পিতায় ভক্তি,
নারীশিক্ষা সাম্প্রসারের  তুমি ছিলে শক্তি। 
গড়েছিলে ভারতে প্রথম বালিকা বিদ্যালয়,
বলেছিলে স্ত্রী-শিক্ষা ব্যতিত উন্নত সমাজ নয়। 
বাল্য বিবাহ,বহু বিবাহ করতে দূরীকরণ,
এনেছিলে সংগ্রামে বাংলার নবজাগরণ।
তৎকালীন সমাজের হয়ে সংস্কারক,
বিধবা বিবাহ আইন পাশের তুমিই ধারক-বাহক। 
বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতে রাখতে অগাধ জ্ঞান,
তাইতো তুমি জিতেছিলে বিদ্যাসাগর নাম। 
বর্ণপরিচয়,কথামালা কিংবা বোধোদয়,
তোমার নামে,তোমার দানে,বাংলা গর্বময়।
জ্ঞানের সাগর,দয়ার সাগর, বিদ্যাসাগর তুমি,
তোমায় পেয়ে ধন্য মোরা ধন্য ভারত ভূমি। 


শিশু-দিবস 

সহজ,সরল আবেগ প্রবণ ছোট্ট শিশুর দল,
এরা হ'ল দেশের গর্ব, ভবিষ্যতের বল।
শিষ্টাচারের হাতটি ধরে উঠুক তারা বেড়ে,
ভালো মানুষ হতেই হবে জানুক ছোট থেকে।
পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়ম মেনে খেলা,
আনন্দে আর মজায় ভরুক তাদের ছেলেবেলা। 
বড় হয়ে কি হতে চাও? থাক না এসব কথা,
খোলা হাওয়া লাগিয়ে পালে শুরু হোক পথচলা।
তুলোর মত নরম শরীর,ফুলের মত মন,
যত্ন করে আগলে রাখার ভীষণ প্রয়োজন। 
নয়তো সে ফুল ফুটবে না আর আপন পাপড়ি মেলে,
জীবনধারা বয়ে চলুক ইচ্ছেনদীর স্রোতে।


নিউ ইয়ার 

উঠুক রবি, ছড়াক কিরণ, নতুন ভোরের বেলায়,
দেখবো মোরা নতুন আকাশ নতুন প্রাণের আশায়।
হোক না বিষাদ থাক না মৃত্যু থাকুক অবসাদ,
কালের নিয়মে আসবে নতুন, হয়ে পুরানোর অবসান। 
মুছে দিয়ে সব মৃত্যুমিছিল উঠবে নতুন করে,
আশার আলোর সঞ্চার হবে নববর্ষের ভোরে। 
রবির কিরণ ঘুচিয়ে দেবে সকল জ্বরা-গ্লানি,
ফিরবে জীবন পুরোনো ছন্দে বিজয়ের জয়ধ্বনি।
বন্ধ হবে ধর্ম-যুদ্ধ, বন্ধ হবে লড়াই,
জাতের নামের বজ্জাতি আর মৌলবাদের বড়াই। 
প্রাণের আলো উদিত হবে নববর্ষের ভোরে,
মহামারী যাবে অস্তাচলে বাঁচবো নতুন করে। 
'২১ আনুক সবার জীবনে নতুন গানের সুর,
প্রতিষেধকের টিকা পেয়ে ভাইরাস হোক দূর। 
নববর্ষের সূচনায় থাক এ সবার কামনা,
পৃথিবী সাজবে নতুন সাজে শুভ হোক চেতনা। 

জ্বলদর্চি পেজ- এ লাইক দিন👇

আরও পড়ুন 


Post a Comment

0 Comments