জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা -২১


সম্পাদকীয়,
বসন্ত পঞ্চমীতে কচিকাচারা বাসন্তী শাড়ি, হলুদ পাঞ্জাবী পরে বিদ্যালয়ে আসবে না তা আবার হয় নাকি! অথচ সেটাই তো সত্যি হল। সেই মনখারাপে এবারের ছোটোবেলা সংখ্যার প্রচ্ছদ ঋপণ আর্যের ক্যামেরায় তোলা কচিকাচাদের সাদা-কালো ছবি দিয়ে সাজালাম। এ বছর কিন্তু করোনার বিধি নিষেধ মেনে ঘরে ঘরে মা সরস্বতীর আরাধনা হয়েছে। ছোট্ট বন্ধুরা, তোমাদের বাড়িতে বাড়িতে তোমরা মায়ের পাশে বসে পুজোর আগে আলপনা এঁকেছ তো? জানতাম আঁকবে। ও হ্যাঁ, আলপনার কথায় মনে পড়ে গেল, এবারের ছোটোবেলা সংখ্যায় গল্পকার, কবি, অনুবাদক তৃষ্ণা বসাক তোমাদের জন্য এক বিশেষ ধরনের আলপনা যা আঁকা হয় মান্ডালা চিত্রকলাকে নির্ভর করে তা নিয়ে প্র‍য়োজনীয় কিছু তথ্য দিয়েছেন। আর খুশির কথা তোমাদের বন্ধু সৌতি, শ্রীপর্ণা আর তুলি তোমাদের জন্য ছয়টি মান্ডালা চিত্রকলা এঁকে পাঠিয়েছে। শুধু কি তাই! তোমাদের মিষ্টি মিষ্টি লেখায় পরিপূর্ণ ছোটোবেলা সংখ্যাগুলি পড়ে যারা তোমাদের আরো উৎসাহ দিতে প্রতি সপ্তাহে পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখে পাঠায় তাদের মধ্যে থেকে একটি প্রতিক্রিয়া এবার আমরা প্রকাশ করলাম এই সংখ্যায়। সুতরাং তোমরা আরো ছড়িয়ে দাও ছোটোবেলা সংখ্যার খবর। এবারের সংখ্যার প্রচ্ছদের চিত্রগ্রাহক ঋপণ আর্যের প্রতি আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা। তোমাদের চেনা আঁকার জগতে অজানার খোঁজ দেবার জন্য তৃষ্ণা বসাকের প্রতিও আমরা কৃতজ্ঞ রইলাম। শ্রদ্ধা জানাই শীতে ভুতেদের কাহিল অবস্থা নিয়ে লেখা ছড়া  শোনানোর জন্য কবি বিপ্লব চক্রবর্তী মহাশয়কে। ভালোবাসা জানাই পাখি হতে চাওয়ার ইচ্ছা নিয়ে ছড়া লেখার জন্য বানীয়া সাহাকে এবং ছোটো ছেলে পাপুনের গল্প লেখার জন্য স্বাগতা ভট্টাচার্যকে নিরন্তর ভালোবাসা। সবশেষে ছোটোবন্ধু সৌতি, শ্রীপর্ণা, তুলি, প্রীতি আর অনন্যাকে আরো আরো নতুন নতুন প্রভাত উপহার হিসেবে পাঠালাম।৷  - মৌসুমী ঘোষ।


মান্ডালা চিত্রকলা

তৃষ্ণা বসাক
 
মান্ডালা শব্দটি এসেছে ‘মণ্ডল’ থেকে, যার মানে বৃত্ত। এই চিত্রকলায় সত্যি সত্যি বৃত্তাকার জ্যামিতিক নকশার প্রাধান্য। বৌদ্ধ ধর্মের সঙ্গে এর উদ্ভাবনের নিবিড় যোগ। সবচেয়ে সরল রূপটি হল একটি চতুষ্কোণের মধ্যে একটি বৃত্ত, যার চারপাশে ছোট ছোট অংশ, আর প্রতিটি অংশই একটি কেন্দ্রবিন্দুর সাপেক্ষে আঁকা। একে আমরা একরকমের আলপনা বলতে পারি, যা মহাজাগতিক জীবনের সঙ্গে আমাদের ক্ষুদ্র মানবজীবনকে এক ছন্দে মিলিয়ে দ্যায়, আমাদের অস্থির মনকে ধ্যানে বসতে সাহায্য করে। দুঃখ এবং যন্ত্রণার নিত্যতা থেকে সন্ধান দ্যায় অনন্ত আনন্দের।
   বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা একসময় বাণিজ্যের সিল্ক রুট দিয়ে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েন, বুদ্ধের বাণী ছাড়াও তাঁরা মাণ্ডালা আর্টও বহন করে নিয়ে যান চিন, জাপান প্রভৃতি দেশে।  এগুলি নানারকম হয়। যেমন শিক্ষণ মান্ডালা, নিরাময় মান্ডালা, বালি মান্ডালা।
   এই চিত্রকলায় নানা রকম প্রতীক ব্যবহার হয়। যেমন আটটি দণ্ড বিশিষ্ট চাকা, যা এই মহাবিশ্বের প্রতীক, পদ্মফুল, যা সামঞ্জস্য এবং জ্ঞানের প্রতীক, ঊর্ধবমুখী ত্রিভুজ- শক্তির প্রতীক, নিম্নমুখী ত্রিভুজ- সৃজনশীলতার প্রতীক।
  আধুনিক জীবনের দুশ্চিন্তা ও উদবেগের মধ্যে অনেকেই মান্ডালা আর্টের মাধ্যমে মনের শান্তি খুঁজে পাচ্ছেন।
পাপুনের বন্ধু
স্বাগতা ভট্টাচার্য্য

'আজ হোমটাস্ক এতো ভুল করেছ কেন পাপুন? ' মায়ের এই গম্ভীর গলাকে বড়ো ভয় পাপুনের। আজ তো মন দিয়েই ম্যাথস করছিল তবে ভুল হল কেন! ঢোক গেলে পাপুন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে গোপনে। স্কুলের জামা আর টাই পরে ফোনে সেই কবে নতুন ক্লাস শুরু হয়েছিলl সেই ভাবেই চলছে। বন্ধুদের ছাড়া, ক্লাসরুম, স্কুল ব্যাগ, ওয়াটার বটল, এসব বাদ রেখে, মন্টু দাদার গাড়িতে হৈ হৈ ছাড়া এই ফোনের ক্লাস আর একদম ভালো লাগছে না ওর। দম বন্ধ হয়ে আসছে। এখন বাবা আর মাও বের হয় । শুধু পাপুনকে বেরুতে দেয় না। ছাদে উঠে আকাশ দেখতে আজকাল ভালো লাগছে না। মাস্ক, গ্লাভস, সব পরে ও বাবা মায়ের মতো বের হতে চায় ।
স্কুলে যেতে চায়। বাবা বলছিল সেদিন কত মানুষের চাকরি চলে গেছে লক ডাউনে । স্কুলের সামনে ওই যে ঠ্যালাগাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত হারুকাকু কতরকম আচার, লজেন্স, হজমি, আলুকাবলী নিয়ে, কেমন আছে ওরা? হারুকাকুর ছেলে আনন্দের সাথে পাপুনের ভারী বন্ধুত্ব। এখন তো স্কুল বন্ধ হারুকাকুর দোকানও বন্ধ তবে! আশঙ্কা হয় পাপুনের ছোট্ট বুকে। লক ডাউনে ওরা ভালো আছে তো!
 গাড়ি আসতে দেরি হলে পাপুন আর আনন্দ কত গল্প করত। আনন্দ সাবানের ফেনায় ফুঁ দিয়ে বেলুন ওড়ান শিখিয়েছে। ফড়িং ধরা, ঘুড়ি ওড়ান আরো কত কিছু দুজনে দুজনার কাছে শিখেছে। আনন্দের জন্যই ভারি মন খারাপ হচ্ছে। কতদিন সে আনন্দকে দেখে নি ।
'কি হল পাপুন কি হয়েছে বল? অঙ্ক ভুল হচ্ছে কেন?'
মা দেখেন পাপুন কাঁদছে।
মায়ের ও মন খারাপ হয়। ছেলেটা কতদিন ঘরবন্দী। গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই পাপুন আরো বেশী বেশী কাঁদে।
অনেক আদর করে মা জানতে পারে আনন্দের কথা। চকলেট দিয়ে ও কান্না থামাতে পারে না মা। 
পরদিন সকালেই মা চুপিসারে খুঁজতে যায় আনন্দকে। ফাঁকা স্কুল বিল্ডিং। মায়ের নিজেরই মন খারাপ হয় ফাঁকা এই স্কুল দেখে। বাচ্চাদের হৈ চৈ নেই কি এক নিঃশব্দ অন্যরকম স্কুল বিল্ডিং। দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন যে স্কুল বন্ধ তাই রোজগার-পাতি একদম বন্ধ বলে হারু কিভাবে সংসার চালাবে তা বুঝতেই পারছিল না। সেসময় একটা কী কাজ পেয়ে অন্য কোথাও চলে গেছে সপরিবারে। পাপুনের জন্য ভারী মন খারাপ হয় মায়ের। বিষণ্ণ হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে ভোকাট্টা হয়ে যাওয়া ঘুড়ির হারিয়ে যাওয়া । 
নিজের ছোটোবেলার বন্ধু 'টুলুকে' কত খুঁজেছে সেও -তাই তো আনন্দকে পাপুনের কাছে সে ঠিক ফিরিয়ে দেবে। আনন্দদের ছেড়ে যাওয়া বস্তির দিকে পা বাড়ায় পাপুনের মা।


শীতের ক্যাঁথা 
বিপ্লব চক্রবর্তী

শীতকাতুরে তিনভুতেতে মগডালেতে শুয়ে
জড়িয়ে ধরে এক একজনা না পড়ে যায় ভুঁয়ে
বললে ভুতু ভুতার কানে শোন ওরে বিটকেল
ভুতি বেটি বড্ড বেশী ওই ছুঁড়িকে ফেল।

ভুতির ছিল কানটি খাঁড়া কি বলে দুই ভাই
বেদম হিমে হয়ে কাবু তিনজনই লুতপুত
একটা ক্যাঁথা সেটাও ছেঁড়া একজন যে বাড়তি
শুনতে পেরে কষায় ভুতি ভুতুর পেটে লাথ্থি।

ব্যথায় কাবু কঁকিয়ে ভুতু পড়তে পড়তে শেষে
ধরল কিনা ভুতির চুলটা আচ্ছা রকম কষে
যা হবার তা সেটাই হল দুটোই পড়ল নীচে
একটা ক্যাঁথায় একাই ভুতা শীতের থেকে বাঁচে।

ভাবছো এটা বানিয়ে তোমায় বলছি বুঝি ভরকাতে
দেখবে কাহিল অনেক ভুতই শুয়ে আছে ফুটপাতে।
ভাল্ লাগেনা

বানীয়া সাহা

ভীষণ ভারী ব্যাগটা যে আজ
যায়না রাখা কাঁধে, 
বাকি যেনো থাকেনা কাজ
বলে কী মা সাধে!

ভুল হলে ম্যাথ গুনে গুনে
দশখানা কান মোলা,
শাস্তি পেতে হবে শুনে
হচ্ছে দুচোখ ঘোলা।

ওই দূরেতে ওদের সাথে
মেলে দিয়ে ডানা,
গা ভাসাতে আকাশটাতে
করবে কী কেউ মানা?

কী যে করি বুঝিনা ছাই!
ভাল্ লাগেনা কিছু, 
হচ্ছে মনে পালিয়ে যাই
পাখিগুলোর পিছু।



সাঁতরাইচেঙ্গার রহস্যময় সাতকাহন
পর্ব- ১১

গৌতম বাড়ই

বাবা তড়িঘড়ি বিডিও- র ডাক পেয়ে বেরিয়ে গেলেন আর তেমন ভাবেই হন্তদন্ত হয়ে ফিরলেন। এসেই মায়ের কাছে রান্নাঘরে একটা পিড়িঁর ওপর বসে কথা বলতে শুরু করলে। আমরা ভাই- বোনেরাও ছুটে এসেছি বাবার প্রায় সাথে সাথে পেছনেই। বাবা বলছেন মাকে--

কী হচ্ছে বলতো দেখি! দেওয়ানির বাড়ি দিব্যি আছে তাদের জায়গাতেই। এত যে কাণ্ড রাতের বেলায় ওদের নাকের ডগায় ঘটলো সারা গ্রাম, পাশের গ্রামগুলো জানে, আর ওদের বাড়ির কেউ কিচ্ছুটি জানে না! এও কি সম্ভব? এ তো যাদু! ম্যাজিক! 

মা সব শুনে বললেন-- ওদের ক্লোরোফর্ম দিয়ে অজ্ঞান করে রাখেনি তো কেউ ঐ রাতভর?

বাবা বললেন-- ক্ষেপেছ! রাতে যে দেখে এলাম দেওয়ানি- বাড়ি একদম অদৃশ্য। এক বিরাট গহ্বর ওখানে! নিজের চোখে, আর আমি শুধু একা না।  তবে? আর এর সঙ্গে আরও একটি বাজে খবরও আছে। দেওয়ানিকে পাওয়া যাচ্ছে না। ওর বাড়ির কেউ বলতেও পারছে না সে গেল কোথায়? বিডিও আর পুলিশ সকাল থেকে হন্যে হয়ে দেওয়ানিকে খুঁজেছে কিন্তু  পায়নি। বড় রহস্যময় ঘটনা সব ঘটে যাচ্ছে আমাদের সাঁতরাইচেঙ্গায়। 

ভাই আর দিদি ভয়ার্ত চোখ মেলে সব কথা গিলছে। আমি ওদের পাশ কাটিয়ে নিজের ঘরে ফিরে এলাম। কারণ আমি তো জানি কী কী ঘটবে ওখানে। 

এবার এক নিস্তব্ধতায় ভরে গেল ঘর। মা বাবা সবাই গভীর ভাবে ভাবছে, কারো মুখে কোন কথা নেই। সবাই  চুপচাপ।

তারপর ধীরে- ধীরে বেলা গড়িয়ে এলো। শুনতে পেলাম বানজারাদের দলকে পাততাড়ি গুটিয়ে এখান থেকে চলে যেতে বলেছে গ্রামের লোকজন। ওদের লাঠিসোটা নিয়ে এক দঙ্গল গ্রামের লোক আক্রমণ করেছিল, পুলিশ সময়মতন এসে পড়াতে আর বেশিদূর ঘটনা গড়াতে পারেনি। তবে গ্রামের লোকদের কথামতন পুলিশ ওদের ঐ মুহূর্তে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বলে। বানজারারাও তাদের সেই যাযাবর জীবন নিয়ে অন্য কোথাও বেড়িয়ে পড়ে তারপর। তবে ওদের সাথে কিন্তু ঐ তিন বামন বন্ধুকে আর দেখা যায়নি। আমি বংশীকাকার মুদি দোকানে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানি। তবে ইলু- বিলু- তিলু আমার তিনবন্ধু কোথায় গেল?

সন্ধে হয়ে এলো আমার তিনবন্ধু আজ আর অদৃশ্য থেকেও কোন খোঁজ খবর দিল না। চিন্তায় আছি তাই খুব। বানজারারা নেই তবে ওরা থাকবে কোথায়? এইসব সাতপাঁচ ভেবে চলেছি। গোটাগ্রাম যেন সন্ধের মুখেই ঘুমিয়ে পড়েছে। বাবার কাছারি ঘরের আজ রাত আটটায় গ্রামের লোকেরা মিটিং- এ বসবে বলেছে। বাবা বাড়ির হ্যাজাক লাইট বের করে দিয়েছেন। বংশী সূত্রধর মানে বংশীকাকা সদলবলে এসে হ্যাজাক জ্বালিয়ে মিটিং- র তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন। তাতে বাড়ির বাইরেটা আলোয় আলোয় ভরে উঠেছে। বড়- বড় মাদুর পাতা হয়েছে। এইসবে বাড়ির বাইরে একটা ঝলমলে প্রাণ ফিরে এল আবার। লোকজন আসতে শুরু করেছেন। বাবা ঘরের ভেতরে কাগজ কালি কলম নিতে এলেন আর মাকে বলে গেলেন--  এখনই এত লোক! দেখবে আজ কত লোকজন আসবে। মিটিং- র লোকসংখ্যায় রেকর্ড হবে আমার বাড়িতে। আসলে বিপদটা কারও একার নয়, পুরো গ্রামের। তাই সবাই হাজির হচ্ছে।

এই বলে বাবা বাড়ির বাইরে কাছারি ঘরের দিকে যেতেই আমরা তিন ভাই-বোনে মাকে ঘিরে গল্পে মেতে উঠলাম। 

বাইরে অনেক লোকের কোলাহলে ঘরবাড়ি মুখর হয়ে উঠেছে। বাবার গলার আওয়াজ পাচ্ছিলাম। এমন সময় হঠাৎ অনেক লোকের জোরালো গলার আওয়াজ আর পায়ের ধুপধাপ আওয়াজ পাওয়া গেল। ভয়ার্ত চিৎকার চেঁচামেচি আর বাইরের হ্যাজাকের আলো নিভে গিয়ে এক তুলকালাম কান্ড ঘটল। মা আমাদের নিয়ে ভেতরের ঘরে খিল ছিটকিনি দিয়ে বসে রইল। ফিসফিস করে বলছি-- মা কী হল?

এরপর আগামী পর্বে------

কেমন লাগছে তোমাদের? জানাও। ইলু- বিলু- তিলুর গল্পের রহস্য আরও ঘনীভূত হল।

প্রকাশিত। ক্লিক করে পড়ে নিন।

সুধার স্বপ্ন

প্রীতি জ্যোতি
অষ্টম শ্রেণি, কোমধাড়া মথুরকুড় উচ্চ বিদ‍্যালয়
     
এক চাষীর এক মেয়ে ছিল। সাধ করে নাম রেখে ছিল সুধা। রং ছিল শ‍্যামলা, কিন্তু চোখ,নাক টিকালো, কোঁকড়ানো ঘন চুল, গালে টোল পরে, গজ দাঁতে হাসলেও দেখতে বেশ লাগে। পাঁচ বছর বয়সে কঠিন রোগে মাকে হারানোর পর থেকেই সুধা অদ্ভুত অদ্ভুত স্বপ্ন দেখত। ভয় পেত কিন্তু স্বপ্নের কথা ঘুম ভাঙলে কিছুই মনে পড়ত না। শুধু মনে হতো একই ঘটনা যেন এর আগে আর একবার ঘটেছিল।
      এখন সুধার বয়স পনেরো। সে সংসারের যাবতীয় কাজ করতে পারে। ইদানিং সুধা মনে মনে যা ভাবে তার কিছু অংশ যেন বাস্তবের সাথে মিলে যায়।যেমন গত দুদিন আগে সুধার বাবা কাস্তে নিয়ে মাঠে যায় ধান কাটতে। সেই মুহুর্তে সুধা কল্পনা করে তার বাবাকে বিষধর সাপে দংশন করছে। সঙ্গে সঙ্গেই সুধা বলে উঠল ' ছিঃ ছিঃ এসব আমি কি ভাবছি'! মনে মনে মা মনসাকে স্মরণ করে বলল "আমার বাবাকে রক্ষা কর ও আমায় ক্ষমা কর"। তারপর সুধা বাবার জন‍্য রান্নাবান্না শুরু করে দেয়। রান্না সেরে,ঘর পরিষ্কার করে, পুকুরে স্নান করে, ভাত বেড়ে ঢাকা দিয়ে দুয়ারের ধারে বাঁশের খুঁটিতে হেলান দিয়ে দুহাত দিয়ে হাঁটু দুটিকে ধরে অপেক্ষা করতে লাগল বাবার জন‍্য।
        এদিকে গ্রামের দুজন লোক চাষীকে ধরে ধরে বাড়ি পৌঁছে দিতে আসা দেখেই সুধা দৌড়ে গিয়ে বলল  "বাবার কি হয়েছে"? লোক দুটি বলল 'জানি না রে! মনে হয় রোদ লেগে মাথা ঘুরে গিয়েছিল। আমরা জলটল দিয়ে...... !  উঠে দাঁড়াতে পারছে না, মাথা এখনও ঘুরছে তাই ধরেধরে আনলাম'। সুধা তাড়াতাড়ি চাটাই পেতে দিল, একটা বালিশও দিল।বাবাকে সবাই মিলে ধরে আস্তে আস্তে শুইয়ে দিয়ে লোক দুটি চলে গেল। সুধা বাবাকে এক গ্লাস জলে চারটি বাতাসা গুলে খাইয়ে দিল। মাথায় ধীরে ধীরে পাখার বাতাস করল। মনে মনে ভাবতে লাগল আর কক্ষনো কোনো কুচিন্তা করব না।
      একদিন ভোরে সুধা স্বপ্নে দেখ্ছে সে খুব ছোট্ট, হামাগুড়ি দিতে দিতে সে খাটিয়ার তলায় ঢুকে পরেছে, সেখানে দেখতে পায় একটি এক টাকার নোট পড়ে আছে। সকাল হতেই ঘুম থেকে উঠে দেখতে পায় উঠোনে একটি এক টাকার কয়েন পড়ে আছে। তখন তার স্বপ্নের দৃশ‍্য কিছু কিছু মনে পড়ে গেল। সে কয়েন টি তুলে নিয়ে বাবাকে জিজ্ঞাসা করল "বাবা এই কয়েনটি কার? কোথা থেকে এল? তোমার কি পড়ে গেছে"? " " না-রে মা....দেখ্ কাউকে জিজ্ঞাসা কর -কার হয়!" সুধা বাড়িতে যখন যে আসে তখনই তাকে বলে "তোমার কি কোনো কিছু হারিয়েছে? এই ধরো টাকা বা অন‍্য কিছু"? সরাসরি কিছু বলত না। সবাই বলতো না- না। কিছুদিন যাবৎ কয়েনটি সে যত্নসহকারে নিজের কাছেই রেখে দিল। ভাবত এটি দিয়ে কিছু কিনব, না- রেখে দেব।
       একদিন সকাল সকাল স্নান সেরে কয়েনটি গঙ্গাজলে শুদ্ধ করে তুলসীগাছের  গোড়ায় পুঁতে দিল।মনে মনে অনেক কিছু  প্রার্থনা করল।
  তারপর থেকেই  মাঝে  মাঝে  সুধা  ভোর বেলায়  যা  স্বপ্ন  দেখত  তাই  মিলে যেত। সে  তার  বাবাকে  এই সব  কথা  একদিন  বলল। বাবা শুনে বলল  "মা সুধা  আমি জানতাম "। সুধা বলল - " কী জানতে?"
  বাবা  বলল - " তুই হবার  আগে  তোর  মা স্বপ্নে দেখেছিল একটা  সুন্দর  মেয়ে......... ! বলল "আমি আসছি  তোর  কাছে ....... সকলের  প্রিয়  হয়ে।" মেয়েটির চারিদিকে অসংখ্য ছোট্ট ছোট্ট  সাদা  সাদা   তুলোর মতো প‍্যাঁচা। হয়ত মা লক্ষ্মী হবেন! তাই তো তোর মা সাধ করে নাম রাখে সুধা। মানে লক্ষ্মী। তোর মা এই সব কথা বলে  ছিল বলেই কি........! তার পর  থেকেই অজানা রোগে আক্রান্ত হল। তাই মা সুধা একটা কথাই তোকে বলি "ভালো স্বপ্ন দেখলে কাউকে কিছু বলবি না - শুধু খারাপ  স্বপ্ন হলে সঙ্গে সঙ্গে আমায় বলবি। কেমন?" "ঠিক আছে  বাবা.......।"
     মেয়ে বড়ো হয়েছে,তাই বাবার চিন্তাও শুরু হয়েছে। চাষি রাস্তা -ঘাটে যখন-যেখানে পরিচিত কাউকে দেখলেই বলে 'আমার মেয়ের জ‍ন‍্য একটা পাত্র দেখে দিতে পার। মোটা কাপড় মোটা ভাত হলেই হবে।'
    সুধার দেখাশোনা শুরু  হয়। সব কটিই  শ্যামলা রঙের জন‍্য নাকচ হয়ে যায়। মনের কষ্ট বাবাকে বুঝতে না দিয়ে বলে 'বাবা তোমাকে ছেড়ে আমি কোত্থাও যাব না।' বাবার সাথে আরও বকবক করতে করতে সুধা কখন ঘুমিয়ে পড়ে।
     আকাশ থেকে একটা পক্ষীরাজ ঘোড়ায় ধুলোর মতো মেঘ উড়িয়ে এক রাজপুত্র উঠোনে এসে নামল,আর কিছু না বলে  লাল চেলির কাপড় একটি মেয়ের গায়ে জড়িয়ে দিয়ে সামনে বসিয়ে পক্ষীরাজ ঘোড়ায় চড়ে দূর আকাশে উড়ে গেল। মেয়েটির বাবা হাসিমুখে হাত নাড়াতে নাড়াতে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল।
      ঘুম ভাঙতেই সুধার মন খুশিতে ভরে গেল।দেখল আগের দিনের তুলনায় আজ অনেকটা বেলা হয়ে গিয়েছে, বাবাও মাঠে চলে গিয়েছে।
     তিন মাস পর এক বৃদ্ধ পথিক চাষীর বাড়িতে আশ্রয় নিল। সুধা বৃদ্ধপথিক কে খুব যত্ন করে। সুধার আচার -ব‍্যবহারে পথিকের খুব পছন্দ হল। সকাল হতেই বৃদ্ধপথিক চাষীকে তার পুত্রের সাথে সুধার বিবাহের প্রস্তাব দিয়ে বলল 'ছেলে ব‍্যারিস্টারি পড়ছে এবং ধার্মিক। তাই পিতার কথা অমান্য করবে এমন ছেলে আমার নয়। " সামনের ফাল্গুনে একটা দিন ঠিক হয়। ফলে চাষী তো খুব খুশি। বৃদ্ধপথিক গলা থেকে সোনার হার খুলে সুধাকে আশীর্বাদ করে এবং বিবাহের যাবতীয় খরচ বহন করার দায়িত্ব নিয়ে চলে যায়।
     আজ চলে এল সেই শুভদিন 3 রা ফাল্গুন বৃহস্পতিবার। মহা জাঁকজমক করে সুধা ও নির্মল    -এর শুভবিবাহ সুসম্পন্ন হল।

আড়ি 

অনন্যা মৈত্র
দ্বাদশ শ্রেণি,বেথুয়াডহরী মাতঙ্গিনী বালিকা বিদ্যালয়
নদীয়া

আজ তুতুলের সঙ্গে আমার আড়ি 
খেলব না তো পুতুল আর ওর সাথে 
যাব না ফুল তুলতে সকালবেলা 
ঘুরব না আর হাত মিলিয়ে হাতে। 

আজকে আমি দিলাম ওকে আড়ি 
পরশু দিনই কিন্তু ছিল ভাব
দুজন মিলে খেলাম তো সেই দিনই
ঝালমুড়ি আর মিষ্টি পাকা গাব।

কিন্তু কেন ও জ্বালাবে আমায়?
দিলাম ওকে জন্ম শোধের আড়ি।
এই জীবনে দেখব না ওর মুখ,
যা খুশি কর, গেলাম আমি বাড়ি। 

এই তো দুদিন মোট্টে গেল চলে, 
এতেই এত লাগছে কেন একা?
ঠিক করেছি করেই নেব ভাব 
একটু আসুক করতে সেধে দেখা।

                          
পাঠ প্রতিক্রিয়া
সুদীপ্তা আদিত্য 

(২০ তম সংখ্যার প্রাপ্ত পাঠ প্রতিক্রিয়া গুলির মধ্যে প্রথম স্থান হিসেবে বেছে নিয়ে সুদীপ্তা আদিত্যর প্রতিক্রিয়াটি ২১ তম সংখ্যায় প্রকাশ পাচ্ছে।)

দিনের শুরু টা বাঙালীদের কাছে ভুরিভোজ দিয়েই শুরু হয়। ভুরিভোজ বলতে এখন শুধু সাবেকিয়ানা নয়, পুরোনো আদলের রান্নাবান্না তে একটু ক্রিয়েটাভিটির মিশেল। ব্যস তৈরী হয়ে যাবে হরেক রকমবা। এভাবেই নতুন কিছুর অভিসন্ধি নেহাত মন্দ না। তেমনটাই চোখে পড়ে লেখিকা সুস্মিতা সাহার 'ছোট্ট বন্ধুরা এসো প্লেট সাজাই ' গল্পে। এমন আহ্বান বড়োরাই উপেক্ষা করতে পারে না, ছোটরা তো কোন ছাড়। জিভে জল আনার মত সব উপাদেয় রেসিপি। একহাতে কোক, অন্যহাতে আলুর টিকায়া,সামনে মাছের ঝুড়ি -'আহা! ' কোনটা আগে খাব ভাবতেই হবে বোধ হয়। 

এদিকে ঘটে গেছে আরেক কান্ড।লেখিকা মৌসুমী রায় এর 'এক দিন রাতে ' কবিতায় বলেছেন যে তিনি কোনটা দিন কোনটা রাত তা নিয়ে একদিন দুশ্চিন্তায় পড়েন। আমাদেরো এমন বিদঘুটে, বিচ্ছিরি  ভাবনা মাঝে মাঝে আসে বইকি।

লেখক শুভেন্দু মজুমদার এর দুটি ছড়াতে প্রথমে মেধাবী রিন্টির ডাইনোসরের জিন নিয়ে গবেষনার কীর্তিকলাপ আর পরের অংশ এ মিন্তিমাসির মেম দেখার ইচ্ছাতে খ্যান্তা পিসির বড় মেয়ের নাতির পো এর বাড়িতে পা রাখার ইচ্ছা একেবারেই ভিন্ন স্বাদের। 

শেষপাতে দই আর মিষ্টিমুখ হবে না এমন টা হতেই পারে না। কিন্তু লেখক মুক্তি দাশের অনবদ্য রচনা 'নেপোর দই বিলাপ'  এ দইপ্রেমী 'নেপো' দার পাতে মিষ্টি তো দূরহস্ত, দইটুকুও নেই। ভাবা যায়! তাই অভিমান হয় তার। অবশেষে মেদিনীপুরের দাঁতনে টাটকা ভালো জাতের দইয়ের খোঁজ মেলে ।

লেখক দিলীপ কুমার মিস্ত্রীর রচনা 'ছেলেবেলার খোঁজ' ছোটগল্প এ শহুরে উন্নয়ন এর নামে সরকারের প্রকৃতিহরণের ছাপোষা নীতিতে দমবন্ধ হওয়ার জোগাড় হয় অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক দেবব্রত বাবুর। 

-"আপনার কী কেড়ে নেওয়া হয়েছে? জমি, পুকুর ,বাগান না ঘরবাড়ি? "
-"চিরকালের মতো ছেলেবেলাকে কেড়ে নিচ্ছে।"

খুদে লেখক প্রবাহনীল দাসের "গয়না" কবিতার নামকরণ এমনভাবে রেখেছেন যাতে প্রথমে তা ধাতুবিশেষ মনে হলেও আসলে তা ছাদে কড়কড়ে রোদে শুকোতে দেওয়া গয়নাবড়ি। 

আরেক খুদে লেখিকা স্নেহাদৃতা রায়ের 'স্বর্ণর পাখি পোষা' গল্পে খাঁচাবন্দী পাখিদের জীবনযন্ত্রনার থেকে খোলা আকাশে উড়ানের আনন্দ যেন স্বর্ণর মনকে পুলকিত করে। 

এরপর অস্মিতা ঘোষের 'দুই পাখির গল্প ' তে হুলো বেড়াল ঘুঘু ছানাদের খেতে আসে। পুচকি গল্পকথকের লাঠির ঘায়ে ছানাদের প্রান বাঁচে। 

লেখক গৌতম বড়াই এর 'সাঁতরাইচেঙ্গার রহস্যময় সাতকাহন' দেখতে দেখতে পর্ব দশ এ পা দিল। উত্তেজনা ক্রমশ প্রকাশ্য। 

প্রিয়ব্রত ঘোষের আঁকাটি পটচিত্রের সাথে বেশ মানাসই ।অদ্যিতি সরকার ও রিম্পা রায়ের গ্রাম্য ছবি তে শান্তির হদিশ মেলে। শ্বেতা কুন্ডুর ছবিতে গ্রাম্য বালিকাদের খেলাধূলা, আর শ্রুতি চ্যাটার্জি  ও অবন্তিকা দত্তের  ছবিতে 'ওরা কাজ করে ' বিষয়টি যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে ।

এভাবেই একাধিক গল্প,কবিতা ,ধারাবাহিক লেখা, রঙ বেরঙের আঁকা  ছবি আর মনোজিৎ বেরা মহাশয়ের 'জানো কি?' তে পরিপূর্ণ  আমাদের 'জ্বলদর্চি' পাঠকদের মনে অনেক টাই জায়গা করে নিয়েছে। এভাবেই বিস্তৃত হোক পত্রিকার সাফল্যের সাথে পথচলা। 

সুদীপ্তা আদিত্য 
Apollo Gleneagles Nursing College, প্রথম বর্ষ

জানো কি!
মনোজিৎ বেরা 

আজকের বিষয় : ভারতের উচ্চতম কিছু বিশেষ স্থান ও তাদের সম্পর্কে ধারণা।

১. আমাদের দেশের উচ্চতম বিমানবন্দর কোথায় অবস্থিত?
২. ভারতের উচ্চতম জলপ্রপাতের নাম কী?
৩. আমাদের দেশের সব থেকে উচ্চতম স্তূপ কোন রাজ্যে অবস্থিত?
৪. ভারতের মাদুরাই-র কোন মন্দির সবথেকে উচ্চতম মন্দিরের শিরোপা পেয়েছে?
৫. ভাকরা নাঙ্গাল হলো ভারতের সবথেকে উচ্চতম বাঁধ। এটি কোন রাজ্যে অবস্থিত?
৬. ভারতের উচ্চতম মূর্তিটির নাম কি?
৭. কোন রেলস্টেশনটি ভারতের উচ্চতম স্টেশন এর শিরোপায় ভূষিত হয়েছে?
৮. ভারতবর্ষের উচ্চতম গিরিপথ কোথায় অবস্থিত?
৯.  ভারতের উচ্চতম স্তম্ভটির নাম কি?
১০. ভারতের সবথেকে উচ্চতম দরজা দেখা যায় কোথায়?

গত সপ্তাহের উত্তর:
১.মীনাক্ষী মন্দির ২.কোলকাতা ৩.মুম্বাই বা মহারাষ্ট্র ৪.বিশাখাপত্তনম ৫.দিল্লিতে ৬.থর ৭.তাজমহল ৮.কলকাতাতে ৯. ভারতীয় জাদুঘর ১০.হাওড়ার বোটানিক্যাল গার্ডেন।

পেজ-এ লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 

Post a Comment

1 Comments

  1. ছোটবেলা সংখ্যকায় ছোটদের আঁকা, গল্প, কবিতা এবং পাঠ প্রতিক্রিয়ায় অভিভূত –তাদের অনুভূতি , ভাবনা এবং তার প্রকাশ – ভারি মন কেমন করে দিল। ভালোলাগা গভীর হলে যেমনটি ঠিক হয়।
    আমন্ত্রিত গুণীদের মনোমুগ্ধকর সংযোজন ছোটদের অনুপ্রাণিত করবে। বলাই বাহুল্য।
    "জানো কি " – সবসময়ই আমার পছন্দের তালিকাভুক্ত হওয়ায় ভাল লাগল ।
    সম্পাদক মৌসুমী ঘোষকে আন্তরিক ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা জানাই।

    ReplyDelete