জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা -৩৯

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা -৩৯

সম্পাদকীয়,

বড় বড় লরিগুলো যেগুলো এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে মাল বহন করে নিয়ে যায় তাদের কোনটার আটটা, কোনটার দশটা, কোনটার বারোটা বা তারো বেশি চাকা থাকে। সেই অনুযায়ী লরিগুলোর মাল বহন ক্ষমতা থাকে। তবে ঐযে ঋপণ আর্যের তোলা প্রচ্ছদের ছবিতে দুটো ছোটো বন্ধু কাঠের লরি টেনে নিয়ে যাচ্ছে, ওগুলোর কিন্তু চারটে করে চাকা। আরে অন্যবারতো ওরা আজকের দিনে রথ টেনে নিয়ে যায় কিন্তু এবারে কি করবে বলো কোভিডের জন্য রথের মেলা বন্ধ তাই কাঠের লরি টানছে। তাই বা মন্দ কি? তোমরা কি জানো, পুরীর রথ উৎসবে বলরাম যে রথে চাপেন তার চৌদ্দটা চাকা, সুভদ্রাকে যে রথে বসিয়ে মাসির বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয় সেটার বারোটা চাকা আর জগন্নাথের রথের ষোলোটা চাকা? শুধু কি চাকা ওদের তিন ভাই বোনের চেহারা নিয়েও কৌতূহলের শেষ নেই, সেটা জানতে পড়তে হবে মুক্তি দাশের ছড়া। রথে মাসির বাড়ি কিন্তু জগন্নাথ একা যায় না। সঙ্গী দাদা আর বোন। তবে এদের দাদা বোনের লধ্যে যেমন ভাবসাব সে কিন্তু সবার হয় না। এই যে দেখনা সুস্মিতা সাহার গল্পে তিতির আর তিতিরের দাদা পিকলুর মধ্যে নিত্য অশান্তি লেগেই আছে। তিতরের সঙ্গী এখানে চড়ুই ছানা। সঙ্গীর কথায় মনে পড়ে গেল নিমোর আর তিন্নির কথা। আরে এরা কারা? সৌরভ ঘোষের গল্প পড়ে জেনে নিও তবে। যতই গল্প ছড়া পড়ি না কেন রথের মেলা দেখার মজা কিছুতে নেই তাইতো? এখন অবশ্য তোমাদের তার থেকেও বেশি মজা হত যদি বর্ষায় জল মারিয়ে স্কুলে যেতে পারতে। কি করবে বল, পারছো না যখন তখন কবি মধুশ্রী সেন স্যানালের ছড়া পড়ে এবারের মতো বর্ষাটাকে উপভোগ করে নাও মনে মনে। আর স্কুলে গিয়ে এখন যদি বন্ধুদের সঙ্গে শালিখ পাখির মতো ঝগড়া করতে পারতে তাহলে তো আর এত কথা থাকত না। এবারে আমাদের শালিখ পাখির গল্প শুনিয়েছেন ভূমিকা গোস্বামী। না না আমি তোমাদের রথের মেলার পাঁপড় ভাজা আর জিলিপির কথা বলে কিছুতেই মন খারাপ করে দেব না। তারচেয়ে চল ফুলকুসুমপুরে গিয়ে ছোট্ট খরগোশ কুমি আসার আনন্দে মিষ্টি খেয়ে আসি। ছোটোরা যারা এ সংখ্যায় লিখে এঁকে সকলকে আনন্দ দিয়েছ তাদের সকলকে রথের মেলা থেকে পুতুল কিনে দেব কোভিড মিটলে, কেমন?  - মৌসুমী ঘোষ।


আষাঢ়ে জগন্নাথ
মুক্তি দাশ

দেবতারা সব প্রিয়দর্শন-
জানি সেই কথাটা্‌ই।
তোমরা যে বাবা কিসের দেবতা
মাথায় আসে না ছাই!
শ্রীজগন্নাথ, বলরাম আর
সুভদ্রা– তিনজনে,
এত বিদঘুটে কেন গো তোমরা
হলে তিন ভাইবোনে?
তোমাদের ছাড়া ভক্তকুলের
নয়নের মণি যে হারা!
অথচ কেমন কিম্ভূত সব
তোমাদের এই চেহারা!
প্রতি বছরেই ফিরে ফিরে মনে 
জাগে যে প্রশ্ন দুটো-
কেন তোমাদের পা-গুলো উধাও?
হাতগুলো কেন ঠুঁটো?
এর জবাবে যে আষাঢ়ে গল্প
বহু পুরাতন যা- সেই
শোনাতেই বুঝি আসো বারে বারে
ঠিক সে আষাঢ় মাসেই?


তারাদের বাড়ি 
সৌরভ ঘোষ
   
 আমি নিমোর বেস্টফ্রেন্ড। সেই ছোট্টবেলা থেকে আমি আর নিমো একসঙ্গেই বড় হয়েছি।আমি ওর ছায়াশরীর। ওর নিত্যসঙ্গী। কিন্তু আপন মনে নিমোকে কথা বলতে দেখে আমি কে, এই প্রশ্নটা মাঝে মাঝেই অনেকে করে থাকে। এই একটামাত্র প্রশ্ন সে এক্কেবারে পছন্দ করে না। কারণ সব প্রশ্নের উত্তর নিমোর কাছে নেই। নিজের ছায়ার সঙ্গে কথা বললে কেউ কি উত্তর দিতে পারে? নিমো বরং তাদের দিকে কটমট করে তাকিয়ে থাকে।আবার অনেক সময় হতভম্ব হয়ে যায়। স্কুলের টিফিন টাইমেও নিমো মাঠে খেলতে যায় না। কেবল আমার সঙ্গে একলা বসে গল্প করে।অনেক রকমের গল্প হয়– রাজকুমার আর ড্রাগনের গল্প, ভালো ডাইনোসার খারাপ ডাইনোসারের গল্প আরও কত কি। আমার সঙ্গে সে বিড়বিড় করে কথা বলে আর খিলখিলিয়ে হাসে। এই নিয়ে স্কুলে ওর ক্লাসের বেশকিছু ছেলেরা ওকে দেখে হাসিঠাট্টাও করে। কিন্তু নিমো? সে এইসবে একদম কান দেয় না।  
    স্কুলে নিমোর কোনও বন্ধু হয়নি। আর হবেই বা কী করে সে ক্লাসের ফার্স্ট বয় নয়। নিমোর বাবা তাকে বহুবার বলেছে পাশের বাড়ির তিন্নিকে দেখে শিখতে। তিন্নি প্রত্যেকবার অঙ্কে একশোয় একশো পায়। কিন্তু নিমো? সে সত্তরের গণ্ডী পেরোতে পারে না। তবে এবারে আমি আর নিমো একটা ভালো ফন্দী এঁটেছি। আমরা দুজনে কাজগুলো ভাগ করে নিয়েছি। এই যেমন নিমো যখন টিনটিনের অভিযান পড়বে আমি তখন ওর স্কুলের হোম ওয়ার্কগুলো করে দেব। কিংবা পরীক্ষার সময় ও যেই উত্তরগুলো পারবে না সেগুলো ওর কানে কানে বলে দেব। মাম্মাম বা বাবা যখন বকাবকি করবে তখন আমি ওর হয়ে সমস্ত কথা মাথা নিচু করে শুনে নেব। এমনকি স্কুলে ক্লাসমনিটর সৈকত দিদিমণির কাছে নালিশ করলে নিমোর হয়ে আমি ওর কান মুলে দেব। বেশ কিছুদিন হল এই নিয়মেই সব চলছিল। ছবি আঁকার মত জরুরী কাজের মাঝখানে বাবা বা মাম্মাম ডাকলে আমি আর নিমো পালা করে ঠিক চলে যাচ্ছিলাম। কোনও অসুবিধেই নেই।  
   দিনগুলো কাটছিল বেশ আনন্দেই।ঘটনাটা ঘটল গতকাল বিকেলে। পাশের বাড়ির তিন্নি এসেছিল নিমোর সঙ্গে খেলতে । কারণ নিমো গতবার অঙ্কে আটানব্বই পেয়েছে। কিন্তু সেটা যে আমার আর নিমোর দুজনের বুদ্ধিতে হয়েছে সেটা বোধহয় তিন্নি জানত না। আমি মন দিয়ে ওদের দুজনের খেলা দেখছিলাম। খেলতে খেলতে ওরা ছাদের দিকে দৌড়ে গেল। খোলা আকাশের নীচে বিরাট নীল শামিয়ানার কাছে। এই সময়ে নিমো কোনওদিন ছাদে আসেনি। আমারও তাই আসা হয়নি। দেখলাম আকাশের গায় কত ছোট ছোট বাড়ি। তাতে ছোট ছোট জোনাকির মত আলো জ্বলছে।মনে পড়ল ওরকমই… ঠিক ওরকমই একটা বাড়িতে আমি আগে থাকতাম। এখন শুধু নিমোর সঙ্গে থাকি। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল।  
নিমো আকাশের দিকে আঙুল দেখিয়ে তিন্নিকে বলল,  “ ওই যে তারাদের বাড়ি।“ তিন্নি মুচকি হাসল। দেখলাম তিন্নির বেস্টফ্রেন্ড, তিন্নির ছায়াশরীর ওদের দুজনের সঙ্গে ছুট্টে নীচে খেলতে চলে গেল। আমি যেতে পারলাম না। আমায় যে তারাদের বাড়ি ফিরতে হবে। নিমোর কথা ভেবে মনটা খারাপ হয়ে গেল। আর নিমোর ? সে এখন তিন্নির ছায়ার সঙ্গে খেলতে ব্যাস্ত।

বৃষ্টিবেলা
মধুশ্রী সেন সান্যাল

বৃষ্টি পড়ে ঝমঝমিয়ে ছোটোবেলার গানে
লাফিয়ে উঠে ঝেঁপে এল দামাল কলতানে!

ঘন সবুজ গাছের ফাঁকে কালো মেঘের বাড়ি
খেলার মাঠে আঁকাবাঁকা গেরুয়া জলের সারি -
যে মেয়েকে স্কুলফেরতা বৃষ্টি নিত ভুলিয়ে
ছপ্ ছপা ছপ্ ভিজত একা হাতে চটি ঝুলিয়ে,
আপন মনে জাম মাড়িয়ে পা রাঙিয়ে চলা
টুপ্ টুপা টুপ্ পাতার জলে অনেক কথা বলা!
সে জল কখন গোটা ক্লাসের আসন-খাতা ভেজায়
গাছের তলা চমকে উঠে জুবুথুবু বেজায়।
ভিজে একসার গৌর প্রাঙ্গন, ঘন্টাতলাও খালি
ছাতার নিচে জড়ো সবাই - পেন, পেন্সিল, কালি।
আর যে ছিল নাট্যঘরে বাদলদিনের গান
বর্ষা এলেই বৃক্ষরোপন, হলকর্ষণ টান।

আজও যখন বৃষ্টি এসে জানলায় দেয় টোকা
কদম গাছে নানান ছবি ফোটে থোকা-থোকা
আষাঢ় মাসের এমন দিনে বৃষ্টি রে আয় ঝেঁপে
সোনাঝুরি বনের হাওয়ায় নেব শৈশব মেপে!

শালিক পরিবার ও দধিমুখী 
ভূমিকা গোস্বামী 

একদিন দুপুরে দুটো শালিক উড়তে উড়তে এসে একটা বড় বাড়ির কার্নিশে এসে বসলো। অনেক  অনেক ফলের আর ফুলের গাছ ছিল সেখানে। দুজনে পেট ভরে অনেক অনেক ফুলের বীজ  আর বকুল গাছের প্রচুর ফল খেল। 

বিকেল শেষ হয়ে আসছে। এখুনি রাত নামবে। ওরা এবার একটা থাকার জায়গা খুঁজতে লাগলো। দোতলা বাড়ির চারদিকে ঘুরতে থাকলো। হঠাৎ মেয়ে শালিকের একটা ভেন্টিলেটরে  চোখ পড়ল। বলল , - দেখ দেখ , এই ভেন্টিলেটরের  মাঝখানের জাফরিটা কিছুটা ভাঙা। আমরা এর ভেতরে অনায়াসে ঢুকতে পারি। 

ছেলে শালিকটা বলল , থাম থাম। আগে আমি গিয়ে দেখে আসি।

ভেতরে ঢুকে ছেলে শালিক তো মহা খুশি। এতো দশ বাই দশ ইঞ্চির এক বড়সড় ঘর ! 

সকাল হলে ওরা দুটিতে ওদের ঘর থেকে বেরোয়। খুঁটে খুঁটে খায় । গান করে । গল্প করে। 

মেয়ে শালিকটা একদিন চারটে ডিম পাড়লো।  সারাদিন মেয়ে শালিক ওর ডিমে তা দিয়ে বসে থাকে। তখন ছেলে শালিক মুখে করে খাবার নিয়ে এসে মেয়ে শালিককে খাওয়ায়।এভাবেই বেশ কিছুদিন গেল। একদিন অবাক হয়ে ওরা দেখল চারটে ডিম থেকেই ছোট্ট ছোট্ট চারটে শালিক ছানা হয়েছে। সেদিন ওদের আনন্দ আর ধরে না। 

ওদের ঘরের মধ্যে রেখে দুজনেই বাইরে এল । এখন তো ওদের অনেক কাজ। বাচ্চাদের খাবার আনতে হবে যে। মাটি  খুঁড়ে খুঁড়ে কেঁচো খু়জতে হবে। যতদিন না বাচ্চারা উড়তে শিখছে।
এদিকে ওই শালিক পরিবারকে আবার দূর থেকে রোজ দেখে দধিমুখী।

 এই তো কয়েক দিন আগে , ওই ভেন্টিলেটরের নিচের জানলার কাছে বসে ছিল। আর জুলজুল করে তাকিয়ে ছিল । শালিক দুটোই কর্কশ স্বরে ক্যা ক্যা করে চক্কর কেটে ওর মাথায় এমন ঠোকর মারলো,  মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠেছিল ওর।

শালিক বৌ বলে ওর ছানাদের - খবরদার এখন ঘর থেকে বেরোবি না সোনারা। বাইরে বিপদ। আগে ডানায় জোর আসুক, তারপর এই গোটা আকাশটাই তোদের।

ছানাগুলো জাফরির ভাঙা অংশ দিয়ে মুখ বার করে ছোট্ট ছোট্ট চোখ দিয়ে মস্ত বড় লীল আকাশকে দেখে।
কয়েক দিন ধরে একনাগাড়ে বৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তায় জল জমে রয়েছে। তবে আজ সূর্য উঠেছে। ঝলমল করছে চারদিক। আজ তাই দধিমুখী পাড়া বেড়াতে বেরিয়েছে।  ও  ওই যে রংচংয়ে ফ্ল্যাটটা ! ওখানেই রাতে থাকে। দিনের বেলা এ বাড়ি  ও বাড়ি সে বাড়ি ঘুরে ঘুরে বেশ কেটে যায় । যেখানেই যায় সবাই কিছু না কিছু খেতে দেয় ওকে। ছোট বাচ্চারা ওকে বেশ পছন্দ করে। 

এই দধিমুখী নামটা বড় গেট অলা বৌটা দিয়েছে। এখানেই তো শালিক পরিবার রয়েছে।

সেদিন ওর বরটাকে বলছিল - দেখ,  কি মিষ্টি সাদা ধবধবে ! চোখ দুটো কেমন কালো ! ওর নাম দিলাম দধিমুখী।
এখন তো সবাই  ডাকে । আয় আয় দধিমুখী। আয় আয়।
ও ছুট্টে চলে আসে। বাটি ভর্তি মাছের কাঁটা তারিয়ে তারিয়ে খায় ।
এক বাড়ির উঁচু পাঁচিলের ওপরে ছোট ছোট পেরেক দিয়ে দিয়েছে। দধিমুখী মনে মনে হাসে।
বীর দর্পে সেই পেরেকের ওপর দিয়ে  সুন্দর করে হেঁটে চলে। আজকে লাফ দিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়ল ও। বেশ বড় বাগান অলা বাড়ি।
এই বাড়ির বুড়োটা ওকে দেখলেই গায়ে জল ছিটিয়ে দেয়। ভারি রাগ হয় ওর। মাঝে মাঝে রাগ করে দরজায় হিসি করে দিয়ে আসে। বুড়োটা গজগজ করতে করতে জল ঢেলে ঢেলে দরজা ধোয়ায় । দূরে দাঁড়িয়ে মনে মনে  ও বলে - বেশ হয়েছে । নিজেও মাছ খায় না । আমাকেও মাছ দেয় না। কেমন মজা ।

তবে কয়েক দিনের বৃষ্টি তে আজ কিন্তু অনেক ছোট বড় ব্যাঙ দেখল ও ওই বাগানে। আজ তো এখানেই ওর মহা ভোজ। আনন্দে নাচতে নাচতে সোজা বাগানের ভেতরে চলে গেল ও। মনে মনে ভাবল - নাঃ , আর শালিক পরিবারের কাছে যাবো  না। মাথার ব্যাথাটা এখনও সারে নি।

গল্প কথায় আম্র কথা
বন্দনা সেনগুপ্ত

কি গো ছোট্ট বন্ধুরা, ভালো আছো তো? গরমে হাঁস ফাঁস অবস্থা হচ্ছিল কিন্তু এখন একটু ভালো, তাই না! 

যাই হোক, গরমের মজা কিন্তু বিভিন্ন ফলে। আর, ফলের রাজা হচ্ছে আম। আহা! রূপে গুনে, স্বাদে, এ এক অপুর্ব সৃষ্টি। 

সে এক সময় ছিল যখন এক টাকায় একশ আম পাওয়া যেত। তখন আবার 64 পয়সায় এক টাকা হত। সে অবশ্য অনেক অনেক আগের কথা। আমরা দেখিনি সে সব সোনার দিন। আমাদের ছোটবেলায় আম আসত ঝুড়ি করে। যেগুলো আধ পাকা, সেগুলি থাকত ঝুড়ির তলায়, ওপরে নিচে আম পাতা চাপা দেওয়া। এই ভাবে দুই তিন থাক থাকত, সব চেয়ে ওপরে থাকত পাকা আম, যা এক্ষুণি খাওয়া যাবে। সকাল বেলায় মা বা ঠাকুমা বঁটি নিয়ে বসতেন, সবার জলখাবারের জন্য থাকত আম। রুটি, চিঁড়ে, মুড়ি, যে যাই খাক, সবের সঙ্গেই আম দেওয়া হত। বেশি পেকে গেলে, আমসত্ব করে রাখা হত। আমাদের বাড়িতে অন্তত একদিন বিকেলে পাড়ার সব বাচ্চাদের আম খাওয়ার নেমতন্ন থাকত। সেখানে কাড়াকাড়ি পড়ত আঁটি খাওয়ার জন্য। এখন কিন্তু অনেকেই আঁটি ভালবাসে না, বলে messy। মিল্ক শেক বা স্মুদি বানায়। 

এতো গেল পাকা আমের কথা। কিন্তু পাকা আমের আগে তো কাঁচা আমের গল্প আছে, নয় কি!

আমাদের বাড়িতে ছিল এক ঝুপ্সি আম গাছ। মাটি থেকে সোজা উঠে যাওয়া কান্ড থেকে ছাতার মত ছড়িয়ে পড়া ডালপালা সারা উঠোনটাকে ঢেকে রাখত। আমাদের খেলার যায়গা। লোডশেডিং এর সময় আরাম দিত এই গাছ। সারা গরম কাল কাঁচা এবং পাকা আম খাওয়া হত। গ্রীষ্মের দুপুরের এক বিশেষ কাজ ছিল আম পাহারা দেওয়া কারণ ছোট বড় ছেলেরা আম চুরি করে নিয়ে যেত। না, অভাবে নয়, মজা। কালবৈশাখী হলে তো কথাই নেই। এক ঝুড়ি আমরা তুলে নিয়ে ওদের ও কিছু ছেড়ে দেওয়া হত। কি হত এত আম দিয়ে? আচার, চাটনি, মোরব্বা, আমসি, কত কি যে বানিয়ে রাখা হত! তাছাড়াও রোজের খাওয়ার জন্যে নানা ধরনের টকও বানানো হত। আমরা ছোটরা তো লবণ, মিষ্টি, কাঁচা লঙ্কা ইত্যাদি দিয়ে মেখেই খেয়ে ফেলতাম, রান্নার তর সইত না।

তাহলে কেমন লাগল আম্র কথা? জানিও কিন্তু। আর সাবধানে থেক। সুস্থ থেক, কেমন!


তিতির ও চড়ুই
সুস্মিতা সাহা 

তিতির কে তোমরা কি কেউ চেনো?
ঐ যে ঐ একতলা ছোট্ট বাড়িতে থাকে ওরা চারজন। মাঝে মাঝে অবশ্য তিতিরের জেঠিমা, মাসিমা আসেন। দাদাদের সঙ্গে খুব জমে তিতিরের। ঠাকুমা'তো বেশির ভাগ সময়েই তিতির দের সঙ্গে থাকেন। হ্যাঁ আর একজন কে তাই তো?
কে আবার? তিতিরের দুষ্টু দাদা পিকলু। দিনরাত বল পেটাচ্ছে , বৃষ্টির মধ্যে মাঠে যাবে, না যেতে দিলে মেজাজ খারাপ করে ঘরের মধ্যেই ধুমাধুম বল পেটাবে।
উফ্ফ শান্তিতে যে তিতির মার আঁচলের তলায় মুখ গুঁজে রেডিওতে নাটক শুনবে তার উপায় আছে! 
এই নিয়ে দাদা বোনের নিত্য অশান্তি মেটাতে মেটাতে মা ও বাবা তিতিবিরক্ত। 
আজকে সকাল থেকে খুব বৃষ্টি হচ্ছে। দাদাটি আজ আর মাঠে যেতে সাহস করে নি বাবার কাছে ধমক খেয়ে - দ্যাখো কেমন মুখটা হাঁড়ি করে বসে আছে। তিতির জানলায় বসে বসে বৃষ্টি দেখছে- পাশের বাড়ির রত্না কাকিমা কি সুন্দর গান চালিয়েছেন টেপ রেকর্ডারে।
মা'ও গুনগুনিয়ে উঠছেন থেকে থেকে। কি মিষ্টি গলা মায়ের। আচমকা তাল কেটে যায়, খুব আস্তে কাঁদছে না কেউ ? তিতিরদের দরজার সামনে ছোট্ট সিঁড়ি থেকেই তো একটা কুইকুই আওয়াজ।  একটু দেখি তো ফাঁক দিয়ে - ''ওমা এতো একটা খুদি মিষ্টি চড়াই পাখি, জলে ভিজে একসা।'' 
এর মধ্যেই মা,ঠামু, বাবা ও গম্ভীর মুখ দাদা এসে হাজির ঘটনাস্থলে। ''এই না না, উড়িয়ে দে এখখুনি, এসব পারবো না, ঘর নোংরা করবে সব''। মায়ের তীব্র আপত্তি চড়ুই ছানাকে ঘরে আনতে। এদিকে তিতিরের চোখে ততক্ষণে বৃষ্টির ধারা নেমে এসেছে। 
'' আচ্ছা আচ্ছা, পাখির বাচ্চা আগে একটু শুকনো হোক্ একটু দম পাক, তারপর ওকে ধীরে ধীরে ওর মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেবো আমরা, কি ঠিক তো তিতির সোনা?'' 
বাবার এমন কথায় খুশি হয়ে যায় তিতির।
একটু পরে দেখা যায় এক আশ্চর্য দৃশ্য - তিতির ও তিতিরের রাগি দাদা দুজনে মিলে অল্প অল্প করে জল ও দানা খাওয়াচ্ছে চড়ুই 'কে আর চড়ুই দিব্যি পিটপিট করে তাকিয়ে দেখছে তিতিরদের ঘরের ঘুলঘুলির খোপটি।
আজ দুই ভাইবোন খুব খুশি। ঘুলঘুলি দিয়ে কেমন চমৎকার বাতাস বইছে দ্যাখো। মনটা নিমেষে ভালো হয়ে যায়। তাই না?

আমার চোখে সিটং
সোমরাজ দাস
নবম শ্রেণি, স্প্রিংডেল হাইস্কুল


পশ্চিম সিকিমের ওখরে আমার খুব প্রিয় তাই সহজে অন‍্য কোন পাহাড়ি এলাকা আমার চট করে ভালো লাগে না। এই বছর জানুয়ারিতে মার জন্মদিন পালন করতে আমরা ছুটে ছিলাম পাহাড়ে। রামধুরা আর সিটং ছিল আমাদের গন্তব‍্য। এরমধ‍্যে সিটং আমার বেশ অন‍্য রকম ভালো লেগেছে।বিশেষ হোম স্টেতে আমরা ছিলাম দুটি দিন। না বন্ধুরা বিশেষ মানে স্পেশ‍্যাল না। ওর নামই বিশেষ। ছবির মতো সুন্দর বিশেষ হোমস্টেতে আমার সঙ্গী হয়ে গেল কুট্টুস। টিনটিনের কুট্টুস সাদা আর এ হল ঘন ঘোর কালো।আর একটা গোটা বিস্কুট খেতে পারে না এমন আলসে। আমাদের হোমস্টেটা ছিল বড় সুন্দর। তার উপরের রাস্তায় ছিল রক গার্ডেন।সেখানে গিয়ে আমি আর বাবা বেশ রক ক্লাইমবিং করলাম।নিজের একটা লেজ আছে বলেই জানতাম বাবারো আছে বলে সন্দেহ হল।যাই হোক সিটং এর কমলালেবু বাগান খুবই সুন্দর।আমরা মন ভরে গাছ থেকে পেড়ে কমলালেবু খেয়েছি। অবশ‍্যই ওনারের পারমিশানে টাকার বিনিময়ে।

রিকেশ ভাইয়ার গাড়িতে মংপু, যোগীঘাট আর অহলদাঁড়া দেখেছি। মংপুতে গিয়ে রবি ঠাকুরের ব‍্যবহার করা জিনিসপত্র দেখে ও গাইড শিশির দাদুভাইয়ের গল্প শুনে রোমাঞ্চিত হচ্ছিলাম।যোগীঘাট খুব নোংরা তবে ভালো লেগেছে অহলদাঁড়া। কুয়াশায় পরিপূর্ণ চারিদিক তার মাঝে সিঙ্কোনা প্লান্টেশানের মধ‍্যে দিয়ে আমরা তিনজন চলেছি। অদ্ভুত সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ। ওখানে আমরা মোমো আর চা খেলাম।তবে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে না পাওয়ায় খুব দুঃখ হচ্ছিল।

ও একটা কথা সিটং গেলে যদি বিশেষে থাকো, প্রচুর গাছ দেখতে পাবে। ওদের কটেজ খুবই সুন্দর।সবার ব‍্যবহার খুব ভালো। আর ভালো খাবার। বুফে সিস্টেম। রাতে চিকেন যত খুশি। চুপিচুপি বলি সাত আট পিস খেয়েছি চিকেন রোজ রাতে।আমি বোধহয় একটু পেটুক। চলে আসার দিন মালিক বিক্রম রাই আঙ্কেল খাদা পরিয়ে, চা পাতা ও কমলালেবু উপহার দিয়ে আমাদের সি অফ করলেন। সিটং আমার ভালোই লেগেছে। যদিও ওখরে আমার প্রিয় গ্রাম। তার গল্প বলবো অন‍্য একদিন।

রঙ উৎসব
সমাদৃতা রায়
নবম শ্রেণী, উত্তরপাড়া গার্লস হাই স্কুল, হুগলি

আসছে দোল আসছে দোল।
দরজা খোল দরজা খোল।।।
রঙ লাগবে বনে এবং রঙ লাগবে মনে।
রঙ ফাগুনে আজকে সবাই দোল এর গান শোনে।।
রঙিন শহর রঙিন গ্রাম রঙিন হবে ধরা ।
আসল কাজ দেহকে নয় মনকে রঙিন করা।।
মনের রঙ সরিয়ে দেবে সকল আঁধার কালো
রঙের বিভেদ ভুলে আমরা যদি বাসি ভালো।

ফুলকুসুমপুর খুব কাছে ১২
রতনতনু ঘাটী

   ইচ্ছেঠাকুরমা উপর থেকে গলা তুলে বললেন, ‘আমি বিলম্বকে মিষ্টির দোকানে পাঠিয়েছি! ও এক্ষুনি চলে আসবে।’
   নীচ থেকে শুধুকাকার গলা শোনা গেল, ‘মা, বিলম্বদাদু কবে এত তাড়াতাড়ি ফিরেছে? এই দেখবে এসো, আমাদের বাড়ির নতুন অতিথি এসেছে!’
   হুড়মুড় করে তিন্নি, বিন্নি, বুম্বা, চিকলু, নীলূফার, সকলে হইহই করে নীচে দৌড়ল। অনিচ্ছেঠাকুরমাও সিঁড়ি ভেঙে নীচে নেমে গেলেন।
   ওরা গিয়ে দেখল, ছোট্ট একটা তারের খাঁচায় একটা দুধসাদা খরগোশ পিটপিট করে সকলকে দেখছে। চিকলু বলল, ‘দেখে মনে হচ্ছে, খরগোশটা যেন তুলো দিয়ে তৈরি। আর কান দুটো কেমন লম্বা! কানখাড়া করে খাঁচার ভিতরে এদিক-ওদিক ঘুরছে। দ্যাখ বিন্নি, ওর লেজটা কইটুকুনি!’
   শুধুকাকা খাঁচার দরজাটা ভালভাবে তালাবন্ধ আছে কিনা হাত দিয়ে টেনে  দেখতে-দেখতে বললেন, ‘জানিস চিকলু, দোকানদার লোকটা বলছিল, খরগোশ কানের সাহায্যে ওর সামনে কে এসেছে, তাকে চেনার চেষ্টা করে। তাই ওদের কান দুটো সব সময় খাড়া হয়ে থাকে। খরগোশের দোকানটায় আরও নানা রঙের খরগোশ ছিল। মানে ধর, কালো, সাদার মাঝে কালোর ডোরা, খয়েরি রঙের খরগোশও ছিল। আমি এটাই পছন্দ করে এসেছিলাম!’
   খরগোশের দোকানদার এইমাত্র ডেলিভারি দিয়ে গেল। শুধুকাকা দিন তিনেক আগে খরগোশের দোকানদারকে কলকাতায় অ্যাডভান্স করে এসেছিলেন। তারপর কলেজ স্ট্রিটের ফুটপাতে পুরনো বইয়ের দোকানে ঢুঁ দিচ্ছিলেন। এটা শুধুকাকার অনেক দিনের অভ্যেস। গতকাল খুঁজতে গিয়ে একটা বই পেয়ে গিয়েছিলেন। সেটা ঝপাত করে কিনে নিয়েছিলেন। বাড়িতে ফিরে বইটা তিন্নি, বিন্নি আর বুম্বাকে দেখিয়েছেন। বইটার নাম ‘সহজে খরগোশ পালন’। 
   তখন বিন্নি বলেছিল, ‘শুধুকাকা, তোমার খরগোশই তো এখনও এল না। তার আগে খরগোশ পালনের বই চলে এল?’

   শুধুকাকা বলেছিলেন, ‘দেখবি, দু-একদিনের মধ্যে ঝপাং করে তিনি চলে আসবেন। দোকানদার ডেলিভারি দিয়ে যাবে বলেছে!’
   শুধুকাকার কথাই সত্যি হল। আজই খরগোশটা ডেলিভারি দিয়ে গেল। কিন্তু অত ডেকেও বিলম্বদাদুকে পাওয়া গেল না। শুধুকাকার সঙ্গে ছোটরা সকলে ধরাধরি করে খরগোশের খাঁচাটা দোতলায় তুলে নিয়ে গেল। পিছন-পিছন ঠাকুরমাও উপরে এলেন। 
   ইচ্ছেদাদু খরগোশটা দেখলেন ঝুঁকে পড়ে। বললেন, ‘বাঃ! ভারী সুন্দর খরগোশটা পেয়েছিস! কত নিল রে?’
   শুধুকাকা বললেন, ‘বাবা, বেশ কম দাম। মাত্র চারশো টাকা!’
   ‘কোথা থেকে কিনলি?’ দাদু জানতে চাইলেন।
   ‘পাখিবাজার থেকে। কলকাতার বাগবাজারের কাছে গালিফ স্ট্রিটে পাখিবাজার বসে প্রতি রোববার। আমি এক স্থায়ী দোকানদারের কাছে পরশু গিয়ে অর্ডার বুক করে এসেছিলাম। ও আজ ডেলিভারি দিয়ে গেল।’
   ‘ওর কী নাম রাখলি?’ ঠাকুরমা জিজ্ঞেস করলেন।
   ‘ওর নাম রেখেছি ‘কুমি’!’
   ঠাকুরমা শুনে বললেন, ‘যাই হোক বাবা! বাংলা নাম! আমাদের কুকুরটার নাম যে ‘বিংগো’। আমার একদমই পছন্দ হয়নি!’
   ইচ্ছেদাদু বললেন, ‘কুমিকে ওর নিজের খাঁচায় ভরে দে। ওইটুকু খাঁচায় ও সারারাত থাকবে কী করে?’
   ঠাকুরমা শুধুকাকাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ওকে এখন কী খেতে দেব রে? কখন থেকে দোকানে হয়তো কিছুই খেতে দেয়নি?’
   শুধুকাকা বললেন, ‘মা, কাল ওর খাবারদাবার কিনে আনব। এখন তুমি তোমার রাধাগোবিন্দর ভাগ থেকে ভেজানো ছোলা আর রান্নাঘরে গাজরের টুকরো থাকলে কুমিকে এনে দাও।’ 
   ইচ্ছেঠাকুরমা ভাঁড়ারঘর থেকে এক মুঠো ভেজানো ছোলা রাধাগোবিন্দর একটা বাটিতে করে এনে কুমির খাঁচায় রাখলেন। কুমি কুটুস-কুটুস করে ছোলা খেতে লাগল। ঠাকুরমা আপন মনেই বলে উঠলেন, ‘বেচারা কখন থেকে কিচ্ছুটি খায়নি!’
    তারপর বুম্বার দিকে তাকিয়ে শুধুকাকা বললেন, ‘বুম্বা, তুই আর নীলূফার আমাদের বাগান থেকে নরম ঘাস তুলে নিয়ে আয় তো শিগগির! ওরা নরম ঘাস খেতে খুব ভালবাসে!’
   পাঁইপাঁই করে বাগানে ছুটল বুম্বা আর তার বন্ধু নীলূফার। ইচ্ছেদাদু তিন্নিকে বললেন, ‘তোরা ঈশপের গল্প পড়েছিস তো? গ্রিসের ‘সামস’ নামের একটি দ্বীপে বাস করতেন তিনি। ঈশপ ছোটদের নীতিমূলক উপকথার গল্পের জনক। তাঁর কত গল্পই তোরা নিশ্চয়ই পড়েছিস। ‘খেঁকশিয়াল ও আঙুর’, ‘রাজহাঁস ও সোনার ডিম’, ‘শকুন আর শেয়ালের গল্প’ মনে পড়ে? তোরা খরগোশকে নিয়ে একটা গল্প নিশ্চয়ই পড়েছিস?’
   তিন্নি মাথা নেড়ে বলল, ‘হ্যাঁ পড়েছি দাদু! ‘কচ্ছপ ও খরগোশের গল্প’।’
   দাদু হেসে বললেন, ‘সেই গল্পে কচ্ছপের কাছে দৌড়ে খরগোশ হেরে গিয়েছিল। কিন্তু আমাদের ‘কুমি’ হেরে যাওয়া খরগোশ নয়।’
   শুধুকাকা নতুন খাঁচায় কুমিকে ভাল করে ধরে এনে ভরে দিলেন। তারপর খাঁচার দরজাটা ঝপাস করে বন্ধ করে দিলেন। বড় খাঁচা পেয়ে আনন্দে গোটা খাঁচাময় ছুটতে লাগল ‘কুমি’।
   এমন সময় বিলম্বদাদু হন্তদন্ত হয়ে দোতলায় এল। তার আসতে খুবই দেরি হয়ে গেছে। শুধুকাকা বললেন, ‘কোথা থেকে তুমি অমন শশব্যস্ত হয়ে ফিরলে বিলম্বদাদু?’
   ইচ্ছেদাদু হেসে বললেন, ‘এই যে ‘শশব্যস্ত’ শব্দটার মানে, যে সব সময় খুব ব্যস্ত। খরগোশকে তো ‘শশক’ বলা হয়, সে সব সময় ব্যস্তও থাকে! ওর থেকে বাংলা শব্দ ‘শসব্যস্ত’!’
   এর পর বিলম্বদাদুর আনা লাড্ডু ঠাকুরমা সকলের হাতে তুলে দিলেন। লাড্ডু খেতে-খেতে চিকলু বলল, ‘ঠাকুরমা, আমরা এখন আসি?’
   নীলূফার বলল, ‘আমরা আর-এক ছুটির দিন আসব তোমাদের চিড়িয়াখানাটা দেখতে।’
    ইচ্ছেঠাকুরমা বললেন, ‘সাবধানে যা তোরা। অন্ধকার নামি-নামি করছে। তোদের ভয় করবে না তো রে? নাকি বিলম্বকুমার তোদের খানিকটা এগিয়ে দিয়ে আসবে?’
   চিকলু আর নীলূফার বলল, ‘বিলম্বদাদু সঙ্গে গেলে আমাদের ভয়ই করবে না!’
   (এর পর আগামী রোববার)



গল্পে গল্পে ক্যুইজ
রাজীব কুমার ঘোষ

পর্ব ৩
আজেবাজে কাজের গল্প আর সেইসব শিশুদের কথা

এসো আমরা আজকে আজেবাজে কাজকর্ম নিয়ে একটু গল্প করি। তোমাদের মধ্যে আশাকরি এমন কেউ নেই যে আজেবাজে কাজের জন্য কখনো ধমক-ধামক খাও নি। যদি থাকো তাহলে তো ছোটোবেলার মজাটাই মাটি। ছোটোবেলার আনন্দ আজেবাজে কাজেই, ছোটোরা যদি সব কেজো কাজে ব্যস্ত থাকে তাহলে তারা আর ছোটো থাকে না, তাদের ছোটোবেলা হারিয়ে যায়।

তোমাদের নিশ্চয়ই মনে পড়ছে তোমাদের নিজেদের নানা ধরণের আজেবাজে কাজের কথা তার সঙ্গে বড়দের বকুনির কথাও। আচ্ছা যদি এই বকুনিগুলো মনে থাকে তাহলে ভেবে বলো তো বড়রা কেন আজেবাজে কাজ করলে বকা দেয়।
উত্তরগুলো অনেকটা এই রকম কিনা দেখো তো –
 
এক — সময় নষ্ট, অর্থাৎ যে কাজটা তুমি করছো সেটা করে কোনো লাভ নেই। লাভ বলতে বড়রা মনে করছেন ওই কাজটা করে তোমার কোনো উপকার হবে না। তোমার জীবনে ওই কাজ কোনো কাজে আসবে না। 

দুই — যে সময়ে তুমি আজেবাজে কাজ করছ, বড়দের মতে সেই সময়টা কোনো কাজের কাজ করলে কাজে দিত। কাজের কাজ বলতে বড়রা মনে করেন যে কাজের ফলে তোমার জীবনে লাভ হবে, লাভ বলতে তোমার রেজাল্ট, পড়াশুনা বা ভবিষ্যতে চাকরি পেতে ইত্যাদি। 

তিন — আজেবাজে কাজে ব্যস্ত থাকলে তোমাদের চিন্তাভাবনাগুলো সব ভোঁতা হয়ে যাবে। 

আরো পয়েন্ট তোমরা মনে মনে যোগ করে নিতে পারো। পয়েন্ট কম পড়বে না। তোমরা বুঝতে পারছো বড়রা বড়ই হিসেবী আর লাভ ক্ষতির অঙ্ক কষতে দক্ষ। তাদের কিন্তু দোষ নেই, তারা তোমাদের চারাগাছের মতো আগলে আছেন, সবসময় ভাবছেন তোমাদের কিসে ভালো হবে, কিসে মন্দ হবে। অনেক সময়েই তারা তোমাদের যাকে বলে ‘কঠিন বাস্তব’ তার থেকে সরিয়ে রাখতে চান। আবার উল্টো দিকে তোমাদের মতোই বহু ছেলেমেয়েরা আছে যারা এই কঠিন বাস্তবের মধ্যেই আছে। যাদের শৈশব, কৈশোর বিপন্ন। তোমরা নিশ্চয়ই শিশু শ্রমিকদের কথা জানো। আনন্দের কথা ধীরে ধীরে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা আমাদের দেশে অনেক কমে এসেছে। তবুও ২০১১ সালের জনগণনা থেকে জানা যায় ভারতে যত শিশু আছে তাদের ৩.৯% শিশু শ্রমিক, অর্থাৎ প্রতি ১০০ জন শিশুর মধ্যে ধরে নাও চারজন শিশু শ্রমিক। এই সংখ্যাটাও কম নয় কিন্তু, ১০.১ মিলিয়ন।

 আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনের উদ্যোগে ইউনাইটেড নেশন এই ২০২১ বছরটি ‘ইন্টারন্যাশন্যাল ইয়ার ফর দ্য এলিমিনেশন অফ চাইল্ড লেবার’ হিসাবে ঘোষণা করেছে। উদ্দেশ্য শিশু শ্রমিকের সংখ্যা আরো কমিয়ে আনা। তোমরা নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারছো এই করোনাকালে আর স্কুল বন্ধ থাকার জন্য শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বেড়ে যাবার সম্ভাবনা আছে। এসো আমরা স্বপ্ন দেখি শিশুশ্রমিক শূন্য এক পৃথিবীর। এই ফাঁকে একটা কথা জানিয়ে রাখি ভারতে শিশু শ্রমিক আইন অনুসারে এই ‘শিশু’ বা ‘চাইল্ড’ বলতে ১৪ বছরের নিচে বয়সের ছেলেমেয়েদের ধরা হয়। ইউনিসেফ এই বয়সটাকে ১৮ ধরে। 

আমরা ফিরে আসি আজেবাজে কাজের কথায়। রবীন্দ্রনাথ একবার লিখেছিলেন, “অন্য খরচের চেয়ে বাজে খরচেই মানুষকে যথার্থ চেনা যায়। কারণ, মানুষ ব্যয় করে বাঁধা নিয়ম অনুসারে, অপব্যয় করে নিজের খেয়ালে।” ঠিক একইভাবে আমরা একজন মানুষকে আজেবাজে কাজেই বেশী করে চিনি। 

বেঁচে থাকার জন্য মানুষকে কাজের কাজ করতেই হবে, না করে তার উপায় নেই। কিন্তু তার পরে সে অকাজের কী কী কাজ করছে সেটাই তার প্রকৃত পরিচয় হয়ে ওঠে আমাদের কাছে। আমার ছাত্রদের বলা আছে ভবিষ্যতে বড় হলে, দেখা হলে যদি প্রশ্ন করি কী কাজ করছ? তাহলে যেন তার জীবিকার কথা না বলে, তার আজেবাজে কাজগুলোর কথাই বলে। সে ডাক্তার না ইঞ্জিনিয়ার না অফিসার সেটা গৌণ আমার কাছে। এই বেঁচে থাকার লড়াইয়ের পরেও সে তখনো কি কোনো আজেবাজে কাজ নিয়মিত করছে সেটাই আসল কথা। তবেই বোঝা যাবে সে কেজো কাজের মাঝে নিজের মানবিক সত্তাটিকে হারিয়ে ফেলে যন্ত্র হয়ে ওঠেনি।

তোমরা নিশ্চয়ই এবার ধরে ফেলেছো এই আজেবাজে কাজকে অনেকসময় আমরা ‘হবি’ বলেও ডেকে থাকি। অনেক কিছু আজেবাজে কাজের মধ্যে বিশেষ কিছু কাজ তোমাদের করতে ভালো লাগে কোনো উদ্দেশ্য ছাড়াই, এই কাজ ধীরে ধীরে তোমার হবি হয়ে ওঠে। মজার কথা যাদের আমরা নানা ক্ষেত্রে বিখ্যাত ব্যক্তি হিসাবে জানি তাদের অধিকাংশই বিখ্যাত তাদের কেজো কাজের জন্য নয়, তাদের অকাজের জন্য। অনেকে আবার কেজো কাজেও বিখ্যাত আর অকাজেও বিখ্যাত। 

আমরা কি কোনো বিখ্যাত সাহিত্যিক কোথায় কাজ করেছেন, কী কাজ করেছেন তা মনে রাখি নাকি? বঙ্কিমচন্দ্র আমাদের কাছে সাহিত্য সম্রাট, তার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় আমাদের কাছে গৌণ। একইভাবে পরশুরামকে আমরা সাহিত্যিক হিসাবেই জানি। মহেন্দ্র সিং ধোনি রেলে কাজ করতেন তা ছাপিয়ে তিনি আমাদের কাছে বিখ্যাত ক্রিকেটার। 

নানা জায়গায় আঞ্চলিকভাবে যে সব পত্রিকা বেরোয় তাদের মধ্যে কিছু পত্রিকাকে আমরা লিটল ম্যাগাজিন বলি। তোমাদের এই ‘ছোটোবেলা’ যে জ্বলদর্চি পত্রিকার একটি বিভাগ, সেই ‘জ্বলদর্চি’ পত্রিকাও একটি লিটল ম্যাগাজিন। ১৯৭২ সালে কলকাতার এক যুবক দেখেন জাতীয় গ্রন্থাগারে আসা এইসব লিটল ম্যগাজিনগুলোকে অবহেলায় রাখা হয় এবং ফেলেও দেওয়া হয়। সেই যুবক তখন ভাবেন এইসব লিটল ম্যাগাজিনগুলির সংরক্ষণের কী হবে, তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে তার বাড়িতেই লিটল ম্যাগাজিন সংগ্রহ করে জমাতে থাকেন। আজ তার সেই বাড়ি সারা পৃথিবীতে বিখ্যাত, যার পরিচয় ‘কলিকাতা লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি ও গবেষণা কেন্দ্র’। দেশ বিদেশ থেকে বহু লোক এখন এখানে আসেন গবেষণা করার জন্য।

তোমরা তোমাদের নানা হবিগুলো ছেড়ো না। এখন কিন্তু পড়াশোনাটা কিন্তু ঠিক আগের মতো নেই। সেই আগের মতো ধরাবাঁধা সায়েন্স, আর্টস, কমার্স, ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ার, ওকালতি এর বাইরেও নানা ধরণের পড়াশুনার সুযোগ এখন আছে। ভারত সরকার যে নতুন শিক্ষানীতি এনেছেন তাতে তোমাদের এইসব নানা হবিগুলো নিয়েই অর্থাৎ তোমাদের পছন্দের বিষয় নিয়ে যাতে তোমরা পড়াশুনো চালিয়ে যেতে পারো এবং সেটাকেই জীবিকা করতে পারো তার নানা ব্যবস্থা রাখার চেষ্টা করেছেন। তোমাদের অভিভাবকদের বলো সম্ভব হলে এই শিক্ষানীতিটি নেট থেকে সংগ্রহ করে পড়ে নিতে। 

পড়াশুনোয় কিন্তু একটা বড় বদল আসতে চলেছে। পড়ার বইতে মুখ গুঁজে পড়ে থাকার দিন অনেকদিন আগেই চলে গেছে। আর পড়া বলতে এখন শুধু পাঠ্য পুস্তক পড়া বোঝায় না। তাহলে তো যে ছাত্র বা ছাত্রী পড়ার বই একেবারে কন্ঠস্থ করে ফেলেছে বা পরীক্ষায় প্রচুর নম্বর পেয়েছে, জীবন যুদ্ধে, জীবিকার জগতে তাদেরই অনেক উপরে উঠে যাবার কথা। আচ্ছা সত্যিই কি তাই হয়? তোমাদের চোখে তোমার চেনা পরিচিত যারা জীবিকায় সফল তাদের কাছে জানতে চাও যে তারা কোন স্কুলে পড়েছেন, সেটা কি শহরের স্কুল না গ্রামের স্কুল? সেটা কি বিখ্যাত স্কুল না অখ্যাত স্কুল ছিল। আর তারা কত নম্বর পেতেন। দ্যাখো নতুনভাবে ভাবার কিছু পাও কিনা। তারপর ভেবে দেখো, এই ক্যুইজের আসরের কোনো গুরুত্ব আছে কিনা।

এবার আসি আজকের প্রশ্নে।  
১।। ২০০১ থেকে ২০০৩ সাল অবধি মহেন্দ্র সিং ধোনি পশ্চিমবঙ্গেরই একটি জংশন স্টেশনে ট্রাভেলিং টিকিট এক্সামিনার অর্থাৎ 'টিটি' হিসাবে কাজ করেছিলেন। সেটি কোন স্টেশন?

২।। পরশুরাম — এটি ছদ্মনাম। লেখকের প্রকৃত নাম কী? তিনি কোথায় তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন?

৩।। বঙ্কিমচন্দ্র তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন ১৮৫৮ সালে যশোহরের (তখন অবিভক্ত বাংলা) ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হিসাবে। এখান থেকে তিনি বদলি হয়েছিলেন মেদিনীপুরে। মেদিনীপুরের কোথায়?

৪।। ১ মিলিয়ন মানে কত লক্ষ? 

৫।। ১০.১ মিলিয়ন শিশু শ্রমিক যদি ভারতের শিশু সংখ্যার ৩.৯% হয় তাহলে ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে ভারতে শিশুর মোট সংখ্যা কত ছিল?

৬।। আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন বা ইন্ট্যারন্যাশন্যাল লেবার অরগানাইজেশন (ILO) কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?

৭।। অমিতাভ বচ্চন তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন একটি কোম্পানির বিজনেস এক্সিকিউটিভ হিসাবে। কোন শহরে?

৮।। ইউনিসেফ, UNICEF এর পুরো কথাটি কী? এই সংস্থার প্রধান উদ্দেশ্যটি কী?

৯।। কলিকাতা লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি ও গবেষণাকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সেই ব্যক্তির নাম কী? কবে এই লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয়?

১০।। ২০২০ সালে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি বা ন্যাশন্যাল এডুকেশন পলিসি (NEP) গ্রহণ করা হয়েছে। এর আগের শিক্ষানীতি কত সালে গ্রহণ করা হয়েছিল? দুই শিক্ষানীতির মধ্যে কত বছরের ব্যবধান ? তোমাদের কী মনে হয়, এই ব্যবধানে জীবিকা জগতে কি নানা পরিবর্তন এসেছে না আসেনি।

সামনের রোববার এই উত্তরগুলো নিয়েই আবার গল্প হবে। তোমরা কিন্তু জানাতে ভুলবে না গল্পে গল্পে ক্যুইজ কেমন লাগছে।



 পাঠ প্রতিক্রিয়া ১
(পূর্ব মেদিনীপুরের জ্ঞানপীঠ বিদ্যাপীঠের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী শতভিষা মিশ্র জ্বলদর্চির ৩৮ তম সংখ্যা পড়ে যা লিখল)

'জ্বলদর্চি' পত্রিকার প্রত্যেক সংখ্যাই আমি পড়ি। এবারের সংখ্যাও পড়লাম। আমার খুব ভালো লাগলো। শুরুতেই ইন্দিরা আন্টির কবিতা পড়লাম।সত্যি রান্নার যেসব রিয়েলিটি শো গুলি হয় তাতে ছোটদের অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন ধরনের মজার মজার খাবার তৈরি করে তারা। শুরুতে কি হবে তা না বুঝলেও রান্নার শেষে দুর্দান্ত খেতে হয়।রান্নার রেসিপি শুনেতো আমারও ফুলটুসি আর পাপড়ির তৈরি 'নাসিগোরেং' খেতে ইচ্ছে করছে।😋😋
     সুব্রত আঙ্কেলের গল্পটিও খুব ভালো।এই লকডাউনে আমাদের অনেকেই তাদের প্রিয়জনদের হারিয়েছে।তাদের সঙ্গে আবার সময় কাটানোর ইচ্ছে তো সবারই থাকে তাই না! আর এই চারদেওয়ালের মধ্যে থেকে এই বিজ্ঞানের জগতেও রূপকথার গল্প শুনে তার মধ্যেই রিম্পার মতো আমাদেরও খুঁজতে হচ্ছে আনন্দ।
           মুনমুন আন্টির লেখা কবিতাতে আমাদের দাবিকেই তিনি তুলে ধরেছেন।স্কুল বন্ধ ।সেই ক্লাসরুম,বেঞ্চ,ব্লাকবোর্ড,স্কুল মাঠ এ সবই এখন স্বপ্নের মতো।এক অফুরন্ত ছুটি।এই ছুটি থেকে সত্যিই আমরা মুক্তি চাই।ফিরে পেতে চাই সেই সুন্দর দিনগুলোকে।
       অর্কায়ন বসুর লেখা গল্পে প্রত্যুষের স্বপ্নটা অবশ্য অবাস্তব নয়।বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যে আনন্দের এক ঠিকানা হলো অনলাইন গেম। তাই তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখাটাও অপরাধের নয়।
     দিলীপ আঙ্কেলের লেখা গল্পটা অত্যন্ত শিক্ষামূলক।একদিক থেকে দেখতে গেলে হাঁটি হাঁটি পা পা গাড়িটি পরিবেশ বান্ধব এবং অবশ্যই নিজেকে নিয়মানুবর্তিতা শেখায়।
          স্নেহার কবিতা পড়ে তো আমার এখনই সব ফলগুলো খেতে ইচ্ছে করছে । খুব সুন্দরভাবে ছন্দ রেখে প্রতিটি ঋতুর ফলগুলোর কথা সে কবিতায় বলেছে।গ্রীষ্মের আম🍋, জাম, বর্ষার জামরুল, পানিফল, শরতের আঙ্গুর🍇, পেঁপে🥑,হেমন্তে লেবু ,পেয়ারা , শীতকালে কমলালেবু🍊, স্ট্রবেরি🍓 আর বসন্তে কুল🍒, বেল সবমিলিয়ে ফলের সমাহার 😋😋।
       সংঘমিত্রার  লেখা গল্প আমাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছে।কারো মানুষ বন্ধু না থাকলেও প্রাণী বন্ধু থাকতে পারে। কুকুর 🐕 প্রভুভক্ত হওয়ায় উপকার পেয়ে সে রাজুকে বাঁচাতে গেছিল।
      রতন আঙ্কেলের "ফুলকুসুমপুর খুব কাছে" ধারাবাহিকটা আমি প্রতি সংখ্যায় পড়ি।এবারের সংখ্যা পড়ে খুব ভালো লাগলো।সামনেই রাধাগোবিন্দের 🐦জন্মদিন। কেক🎂 খাওয়া হবে, আনন্দ হবে , হইহই হবে আর তার সাথে একটা ধাঁধাতো থেকেই যাচ্ছে। শুধুকাকা যে কার আসার কথা যে বললো সেটাই এখন দেখার। তবেকি আগমন ঘটবে নতুন কোনো চরিত্রের!!🤔🤔
            এবারের সংখ্যায় গতবারের ক্যুইজের উত্তর পেলাম ।কিছু মিলল ।কিছু নতুন কথা জানলাম। রাজীব অঙ্কেলকে এই ধরণের দারুন দারুন প্রশ্ন আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
          এই সংখ্যায় যারা এঁকেছো তাদের সবার আঁকা আমার খুব ভাল লেগেছে। পরের সংখ্যার অপেক্ষায় রইলাম বিশেষ করে ধারাবাহিকটির জন্য।

পাঠপ্রতিক্রিয়া ২
( জ্বলদর্চির ছোটবেলা বিশেষ সংখ্যা-৩৮ পড়ে খড়্গপুরের মহুয়া ব্যানার্জী যা লিখলেন)

পাঠক হিসেবে চিরকাল বইয়ের পাঠপ্রতিক্রিয়া দিয়ে এসেছি। এই প্রথম কোন একটি পত্রিকার পাঠপ্রতিক্রিয়া দিতে এসেছি। আর সেখানেই হয়েছে মুশকিল। এযে চাঁদের হাট। কি সব মনিমুক্ত ছড়িয়ে রয়েছে। আমি তো অবাক। গোগ্ৰাসে পড়লাম। কিন্তু এর বিশ্লেষণ করা ভারী মুশকিল হয়ে পড়ল।

জ্বলদর্চি পত্রিকার একটি রবিবারের বিভাগ এই ছোটবেলা। এই পত্রিকাটি আমি নিয়মিত পড়ি।ছেলেবেলা ফুরিয়ে গেলেও মনে মনে আমি সেই ছোট্টটিই আছি।তাই এই ছোটবেলা আমায় একনিমেষে আমার কল্পরাজ‍্যে পৌঁছে দিয়েছে। 
এই সংখ্যায় মৌসুমী ঘোষের  সম্পাদকীয় বিশেষ ভাবে নজর কাড়ল। কি সুন্দর ভাবে খেলা দিয়ে শুরু করে বর্তমানের অতিমারী জনিত মনকষ্ট ছুঁয়ে সূচীপত্রটিকে চোখের সামনে নিপূণ অক্ষর দিয়ে এঁকে দিলেন। সম্পাদকীয় লেখায় মৌসুমী অসম্ভব মুন্সীয়ানা দেখিয়েছেন। 
চমকের এখানে সবে শুরু। নামী দামি লেখক লেখিকাদের ভালো ভালো মজার লেখা তো আছেই, তারই সাথে স্কুলপড়ুয়া পুচকেগুলো তাদের আঁকা, কবিতা, গল্পদিয়ে মন ভরিয়ে দিল। শুভাঙ্গী, শিঞ্জিতা, শ্রীজা, রায়ান, অনুভব যেমন সুন্দর এঁকেছে তেমনই সুন্দর লিখেছে স্নেহা ও সংঘমিত্রা। স্নেহার লেখা ঋতু কবিতাটি পড়ে মন বড় খুশি হল। সেই ছোটবেলায় ফিরে গেলাম। সংঘমিত্রা লিখেছে মানব শিশু আর পথকুকুরের শিশুর অনাবিল বন্ধুত্বের কথা। মন ছুঁয়ে যাওয়া গল্প এটি।
এদের সাথে দুরন্ত ভাবে তাল মিলিয়েছেন প্রথিতযশা লেখকবৃন্দ। ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের 
'রান্নার রিয়েলিটি শো' র নাসিগোরাং, পাপড়ি শোরেন যেমন মজাদার তেমনই মজা আর আনন্দের ছড়াছড়ি রতনতনু ঘাটী মহাশয়ের ধারাবাহিক উপন্যাস'ফুলকুসুমপুর খুব কাছে।'

 মুনমুন ঘোষের ছুটি চাই কবিতা এবং অর্কায়ণ বসুর 'উড়ান'গল্পটি এই অতিমারীর বন্দীদশায় শিশুমনের যন্ত্রনা, চাহিদা ও টানাপোড়েনের মনস্তত্ত্ব কে সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। 
সুব্রত ঘোষের অনলাইন-অফলাইন আবার এক অন‍্যরকম মানবিক বন্ধনের গল্প। একটি শিশু ও তার ঠাকুমার ভালবাসার বন্ধনের গল্প। 
দিলীপকুমার মিস্ত্রীর 'হাঁটি হাঁটি পা পা' গল্পে লেখক অতি সহজ ভাবে গল্পের মাধ্যমে শরীর সুস্থ রাখা কত জরুরি তা বুঝিয়েছেন। 
সবমিলিয়ে হাসি -কান্না-কল্পনা ও ভালোবাসার এক জাদুদন্ড ছোটবেলার এই সংখ্যাটি। যার ছোঁয়ায় সব মনখারাপ ভ্যানিশ হয়ে যায়। সম্পাদককে ধন্যবাদ এমন সুন্দর একটি সংখ্যা পাঠকদের উপহার দেওয়ার জন্য।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments