জ্বলদর্চি

মেদিনীপুরের রসায়ন বিজ্ঞানী ড. সৌভিক মাইতি এবং তাঁর সত্যিকারের 'ফেলুদা' /পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা

বিজ্ঞানের অন্তরালে বিজ্ঞানী ।। পর্ব ― ৪৯


মেদিনীপুরের রসায়ন বিজ্ঞানী ড. সৌভিক মাইতি এবং তাঁর সত্যিকারের 'ফেলুদা' 

পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা

গোড়ার কথা ― ১ :


'আমি একদিনও না দেখলাম তারে
বাড়ির কাছে আরশিনগর
সেথায় পড়শি বসত করে
             একঘর পড়শি বসত করে
আমি একদিনও না দেখলাম তারে।'

―বলে গেছিলেন এক আধ্যাত্মিক বাউল কবি। আজ থেকে আনুমানিক প্রায় দেড়শ বছর আগে। তিনি সাধক লালন ফকির (১৭৭৪―১৮৯০)। গোঁড়া জাতি-ধর্ম-বর্ণ'র উর্ধ্বে মানবতাবাদী, সমাজ সংস্কারক এবং গভীর দার্শনিক। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ, নজরুল আর বাংলাদেশে তখন বাংলা সাহিত্যের স্বর্ণযুগ। অথচ লেখাপড়া-না-জানা, স্কুলের গণ্ডি পার না-হওয়া এক বাউলের এ হেন সুগভীর দর্শন আপামর বাংলার মননকে অভূতপূর্ব নাড়া দিয়ে গেল। তিনি প্রদীপের শিখার তলায় যেটুকু অমানিশা ছেয়ে থাকে, তার নিচে ঢাকা-পড়ে-থাকা এক চিলতে আলো যেন। অবজ্ঞা আর অবহেলার পঙ্কিল সলিলে আজীবন নিমজ্জিত। অথচ নিয়তির কী নিষ্ঠুর পরিহাস! সমকালীন সমাজে আজও তিনি বড্ড বেশি প্রাসঙ্গিক। প্রাসঙ্গিক তাঁর মনন, দর্শন আর চিন্তন প্রণালী। 

আসলে এ হেন গভীর দার্শনিক ভাবনা-চিন্তায় ব্যথিত লেখকের কোমল মন। বাড়ির নিকট যে আঁতুরঘর ― আরশিনগর, সেথায় যে-সকল অমূল্য রতন থাকে অনাদরে, অবহেলায়; সে-বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞ আমরা। অথচ দূর আকাশের চাঁদ ধরতে গিয়েছি। আইনস্টাইন, নিউটন, ডারউইন, স্টিফেন হকিং, আরও কত কী ভারী ভারী নাম! মাইকেল মধুসূদন দত্তের মতো দশা। বুঝতেও পারেনি, হিরে-মণি-মুক্তো খচিত খাঁটি সোনা আপন জন্মভূমিতে লালিত-পালিত। সে-সোনা অন্য কিছু নয়, বরং পরম প্রিয় পড়শি বৈজ্ঞানিক― যাঁদের জগৎজোড়া সুখ্যাতি আর আলমারি ভর্তি পুরস্কারের ডালি। রীতিমতো গর্ব করার মতো বৈজ্ঞানিক অন্বেষা ও এষণা। এবার তাই সুদূর আকাশের চাঁদ ধরতে নয়, মরিচিকার পিছনে ছুটে বেড়ানো আর নয়; বাড়ির কাছে আরশিনগরে সত্যিকারের রক্ত মাংসের উজ্জ্বল নক্ষত্র যে ক'ঘর বৈজ্ঞানিক আমার পড়শি, তাঁদের অনুসন্ধানে পায়ের নিচে সরষে নড়ে উঠল। তাঁদের অনুপ্রেরণাময় উল্কা গতি আর উত্থানের রোমহর্ষক অথচ রূঢ় বাস্তব গল্প আকর্ষণ করল এক অমোঘ টানে। সে-গল্প শোনাব আজ। রওনা হই মেদিনীপুরে বিজ্ঞানের আরশিনগর― ময়না ব্লকের ৩-নং তিলখোজা অঞ্চলের তিলখোজা গ্রাম। সেখানে রসায়ন বিজ্ঞানী ড. সৌভিক মাইতি'র মতো একঘর স্বনামধন্য পড়শি বসত করে যে!

শ্রদ্ধেয় ড. সৌভিক মাইতি স্যার ভারত সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রক (Council of Scientific and Industrial Research বা CSIR)-এর অধীনস্থ ইন্সটিটিউট অব জেনোমিকস অ্যান্ড ইন্টিপ্রেটেড বায়োলজি (IGIB)-তে বিজ্ঞানী হিসাবে যোগ দেন ২০০২ সালে ডিসেম্বর মাসে। অদ্যাবধি সেখানেই IGIB অধ্যাপক-বিজ্ঞানীরূপে গবেষণারত। নিউক্লিক অ্যাসিডের গঠন আর তার কার্যকারীতার উপর গবেষণা করে জীবনে চারটি বড় পুরস্কার জয় করে নেন তিনি। ২০০৭ সালে মিলল প্রথম সাফল্য। সে-বছর তিনি ইয়ং সায়েন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড পান। ২০০৯ সালে স্বর্ণজয়ন্তী ফেলোশিপ। তাঁর সাফল্যের শিখরে অবশ্যই বড় প্রাপ্তি ― বিজ্ঞানে কেন্দ্রীয় সরকারের সর্বোচ্চ সম্মাননা, ২০১৪ সালের 'শান্তিস্বরূপ ভাটনাগর পুরস্কার'। ২০১৫ সালে তাঁর কৃতিত্বের বৃত্ত সম্পূর্ণ হয় সাময়িক। সেবছর তাঁর সাফল্যের পালকে জুড়ল ডি ডি টি ন্যাশনাল বায়োসায়েন্স অ্যাওয়ার্ড। একগুচ্ছ জাতীয় সম্মান লাভ করে আজও তিনি অজানাকে জানার পিয়াসী; থেমে নেই তাঁর কঠোর অধ্যবসায়, গবেষণার অদম্য স্পৃহা।
     
করোনা মহামারী যেন এক সংকটপূর্ণ ক্রান্তিকাল। কঠিন এ সময়ে তাঁর আবিষ্কার জনমানসে সাময়িক স্বস্তির নিঃশ্বাস এনে দেয়। লকডাউন, সোস্যাল ডিসট্যান্স, স্যানিটাইজার, হ্যান্ডওয়াশ, এন-৯৫ মাস্ক― শব্দগুলি সরকার বাহাদুর আর সোস্যাল মিডিয়ার দৌলতে মানুষের মুখে মুখে ঘুরছে তখন। করোনা ভাইরাস আর তার প্রভাব প্রতিপত্তি নিয়ে মানুষ রীতিমত তীতিবিরক্ত। কারণ ভাইরাসটি বড্ড বেশি ছোঁয়াচে। সে-সুবাদে তার চটজলদি প্রভাব বিস্তার। ২০২০ সালে মার্চ মাসে, প্রথম যখন ভারতভূমিতে আছড়ে পড়ল ভাইরাসটি, কোভিড আক্রান্ত কিনা নির্ণয়ের জন্য হাসপাতালের দরজার বাইরে লম্বা সব লাইন। বিস্তর খরচাপাতি সত্ত্বেও আশায় মরে চাষা। কোভিড টেস্টের লক্ষ্যে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে লাখ লাখ মানুষের ভীড়। অথচ একশো পঁচিশ কোটির দেশ ভারতে চিকিৎসার ন্যূনতম পরিষেবা শিকেয় উঠল। ভেঙে পড়ল যাবতীয় পরিকাঠামো। কিন্তু খুব বেশি দিন রইল না সে টালবাহানা। 

২০২০ সালের এপ্রিলের প্রথম দিককার ঘটনা। দৈনিক খবরের কাগজ আর টিভির পর্দায় একটি নিউজ প্রত্যক্ষ করে দেশজুড়ে খানিকটা স্বস্তির হাওয়া। কোভিড-১৯ পজিটিভ কিংবা নেগেটিভ নির্ণয়ের করোনা কিটস আবিষ্কার করে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছেন দুই দেশজ বৈজ্ঞানিক। ওদের অন্যতম ড. সৌভিক মাইতি। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে করোনা কিটস তৈরি করে হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন তিনি। মূলত দেশীয় কিটস তৈরির সৌজন্যে করোনা রেপিড টেস্ট পরীক্ষা আজ সাধারণের আয়ত্তের মধ্যে। সেই সঙ্গে অল্প সময়ে আক্রান্ত ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা জেনে তার চিকিৎসার সুব্যবস্থা সম্পন্ন করা সত্বর সম্ভব হয়েছে। সুতরাং করোনা মহামারীকালে তাঁর আবিষ্কার ভগবানের আশির্বাদ স্বরূপ। আপামর জনসাধারণের চোখে তিনি যেন সাক্ষাৎ ঈশ্বরের দূত। 

অথচ স্কুল শিক্ষক বাবার ছোট ছেলে তিনি, তাঁর শৈশব কেটেছে আর পাঁচটা পল্লী বালকের ন্যায়, প্রত্যন্ত গ্রামের আনাচে কানাচে। ময়নার বৃষ্টি ভেজা গ্রামের মেঠোপথ থেকে তাঁর আজকের উচ্চতায় উত্তরণ যেন এক রূপকথার কাহিনী, অবাক বিস্ময় এবং অবশ্যই অনুপ্রেরণা জোগায়। এ হেন জীবন্ত কিংবদন্তি ড. সৌভিক মাইতি স্যার তাঁর জীবনের যে সরণি বেয়ে সাফল্যের শিখরে আজ বিরাজমান, আগামী ধারাবাহিক প্রবন্ধ পর্বগুলোতে তাঁর জীবন পথের অন্ধকার সে-সব অলিগলি ঘুরে দেখানোই লেখকের একমাত্র ইচ্ছা। তাঁর যাত্রাপথের পরতে পরতে অজানা অচেনা গল্পের ঘনঘটা।

(২)
ডিসেম্বর, ২০১৯ সাল। কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়ার ভেতর কানাঘুষো চলছে― চিনের উহান প্রদেশে না-কি এক মারণ ভাইরাসের দেখা মিলেছে। ভালো নাম কোভিড-১৯। ডাক নাম 'করোনা'। অসম্ভব ছোঁয়াচে এই ভাইরাস। এক-দুই মাসের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে চিন ছাড়িয়ে ইউরোপ, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, মায় গোটা বিশ্বে। নিজের অস্তিত্ব জাহির করেই ক্ষান্ত থাকেনি। অল্প কয়েক দিনে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ হরণ করে সে-ভাইরাস। সেটা টোয়েন্টি-টোয়েন্টি লিপইয়ার-এর প্রথম দিককার ঘটনা। ইউরোপ তথা পশ্চিমী দেশগুলিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সে। খবরের কাগজ ও মিডিয়ার দৌলতে চব্বিশ ঘণ্টা তাজা খবর নিউজ চ্যানেলগুলিতে। ভারতভূমি তখন ভয়ে কাঁপছে। আসন্ন মহামারীর ঢেউ-এর অপেক্ষায় প্রহর গুনছে দেশবাসী। ভারতের মতো জনবহুল দেশে এর সম্ভাব্য পরিণতির কথা চিন্তা করে কেউ কেউ শঙ্কিত। অচেনা শঙ্কায় কাঁপছে এ-ওয়ান শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম। বুক ধড়পড় ধড়পড় অবস্থা সকলের। অবশেষে এসে গেল সে-সন্ধিক্ষণ। ভারতের পশ্চিম উপকূলে আরব সাগরের তীরে আছড়ে পড়ল করোনার প্রথম ঢেউ। ২০২০ সালের বাইশে মার্চ। আসন্ন ভাইরাসের সম্ভাব্য ভয়াবহ সুনামি-সমান বিপদের গন্ধ আগাম আঁচ করে দেশজুড়ে চব্বিশ ঘণ্টার লকডাউন ঘোষণা করলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। পরদিন থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন ঘোষণা। দেশের যে-প্রদেশে যেমন পরিস্থিতিতে যত মানুষজন রয়েছে, সে-অবস্থায় থাকার বিধানের নামই লকডাউন। না শহর, না মুলুক, না গ্রাম― নিজের এলাকা ছেড়ে অন্য কোথাও বের হবার নিদান নেই। ফলে মানুষের রুটি-রোজগার-কাজকর্ম সব তলানিতে। ভাইরাস নয়, দিন-আনি-দিন-খাই মানুষগুলো মৃত্যুর দিন গোনে অনাহারে। দিশেহারা দশা সরকার আর সাধারণ মানুষের। ঘরের বাইরে চোখ রাঙায় ভাইরাস আর ঘরের ভেতর অনন্ত ক্ষুধা। দলে দলে কর্মহীন ক্ষুধার্ত মানুষ বেরিয়ে পড়ল ঘরের বাইরে, ভাইরাসের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে। তাতে যা হবার তা-ই ঘটল। বাঁকা হাসি অচিরে কান্নায় পর্যবসিত হল মে-জুন মাসের শেষে। দিকে দিকে কান্নার রব। অ্যাম্বুলেন্সের হৃদয়বিদারী শব্দ। বাতাসে পোড়া গন্ধ। অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্য পরিকাঠামো দ্রুত ভেঙে পড়ে। অল্প সময়ের মধ্যে হাজার হাজার মানুষ মরল বাড়িতে, হাসপাতালের বেডে; বিনা চিকিৎসায়, বিনা অক্সিজেনে। বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে বসে হা-হুতাশ করা ছাড়া অমিল বিকল্প সম্ভাবনা। স্বজন হারানোর শোক, বন্ধু বিয়োগের ব্যথা কুরে কুরে খাচ্ছিল সবাইকে। ক্যান্টনমেন্ট জোন, ১৪৪ ধারা, নাইট কার্ফু― কোনও কিছুতেই প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না মারণ ভাইরাসের ধাক্কা। দোকানে দোকানে ঔষধের লম্বা লাইন। এন-৯৫ মাস্ক কেনার ধূম, কালোবাজারি। পর্যাপ্ত স্যানিটাইজার লোশন, লিক্যুইড ডেটল, হ্যান্ডওয়াসের দারুণ আকাল। 

আর সবচেয়ে শোচনীয় দশা করোনা কিটস-এর অপ্রতুলতা। করোনা কিটস কী? করোনা আক্রান্ত হলে জানার উপায় কী? শরীরে করোনা ভাইরাস থাবা বসিয়েছে কি-না, তা জানবার উপায় হল করোনা টেস্টিং কিটস। ভাইরাস শরীরে হানা দিলে করোনা কিটস পরীক্ষায় যে-রেজাল্ট আসে, তাকে পজিটিভ ধরা হয়। আক্রান্ত ব্যক্তিকে তখন বাড়ির সকলের থেকে দূরে 'আইসোলেশন'-এ রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা উচিৎ। করোনা কিটস টেস্টে 'পজিটিভ' অথবা 'নেগেটিভ' যাচাই করা হয়। এ হেন করোনা কিটস প্রথমে বিদেশ থেকে আমদানি করা হত। স্বভাবতই এর দাম তখন আকাশছোঁয়া; রোজগার-শূন্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। তায় আবার প্রয়োজনের তুলনায় এর সংখ্যা খুব বাড়ন্ত। অথচ স্বল্প খরচে করোনার পজিটিভ-নেগেটিভ পরীক্ষা করা আশু প্রয়োজন। এদিকে, দেশের মধ্যে যে গুটিকয়েক ল্যাবরেটরি দিনরাত এক করে করোনা কিটস উদ্ভাবনের চেষ্টায় মত্ত, এদের মধ্যে অন্যতম দিল্লির সি এস আই আর (CSIR) ল্যাবরেটরি। বিগত প্রায় কুড়ি বছর ধরে এখানে যুক্ত আছেন বৈজ্ঞানিক ড. সৌভিক মাইতি। তাঁর যোগ্য দোসর বন্ধু-বৈজ্ঞানিক ড. দেবজ্যোতি চক্রবর্তী। দুই পণ্ডিতের অদম্য জেদে মিলল অভূতপূর্ব সাফল্য। তাঁদের যৌথ গবেষণা আলিবাবা-চল্লিশ চোরের চিচিং-ফাঁক দরজা খুলতে সমর্থ হল অল্প সময়ের ব্যবধানে। অত্যন্ত স্বল্প সময়ের ব্যবধানে কম খরচে করোনা ভাইরাস নির্ণয়ের (পজিটিভ/নেগেটিভ) কিট আবিষ্কার এক দিশা দেখাল। দেশের এই সংকটাপন্ন কালে এ হেন আবিষ্কার যে কতখানি আশার আলো বয়ে আনল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সেটা মার্চ মাসের শেষের দিকের ঘটনা।
       

সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এ হেন করোনা কিটস-এর নামটি বেশ খটোমটো― 'FnCas9 Editor Linked Uniform Detection Assay'। সংক্ষিপ্ত নাম 'FELUDA'। বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায় 'ফেলুদা'। বাংলা ও বাঙালির এক চিরন্তন মিথ। ষাটের দশকের মধ্যভাগে চিরস্মরণীয় সত্যজিৎ রায় যখন 'ফেলুদা' চরিত্র সৃষ্টি করেন, আট থেকে আশি― আপামর বাঙালির হৃদয়ে দোলা দিয়ে উঠেছিল এ হেন গোয়েন্দা চরিত্রটি। দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে জনমানসে অতুলনীয় ছাপ রেখে যায় প্রাইভেট ডিটেকটিভ প্রদোষ চন্দ্র মিত্র ওরফে ফেলুদা। সত্যজিৎ রায়ের সেই কালজয়ী সৃষ্টির সার্থক রূপায়ণ পুনরায় সম্ভব হল যোগ্য দুই বাঙালি উত্তরসূরীর হাত ধরে। যদিও বৈজ্ঞানিক ড. সৌভিক মাইতি'র আবিষ্কৃত 'ফেলুদা' বাস্তবে করোনা ভাইরাসের সুচতুর চাল নিমেষে ধূলোয় মিশিয়ে দিতে সক্ষম। বর্তমানের মুসকিল আসান এই 'ফেলুদা'র উপকারীতা কী? হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র কিংবা মেডিকেল ক্লিনিকে 'ফেলুদা' কিট দিয়ে করোনা পরীক্ষার এক ঘণ্টার মধ্যেই জানা যাবে পজিটিভ বা নেগেটিভ রেজাল্ট। 

কীভাবে কাজ করে ফেলুদা প্রযুক্তিতে তৈরি এই করোনা কিট? বৈজ্ঞানিক ড. সৌভিক মাইতি'র মতে― 'কোভিড-১৯ ভাইরাসে থাকে রাইবো-নিউক্লিক অ্যাসিড বা আর এন এ (RNA)। প্রথমে সেই আর এন এ'কে ডি এন এ (DNA বা ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) -তে পরিনত করা হয়। তারপর পলিমারের চেন রি-অ্যাকশন চেন (PCR) মেশিনের সাহায্যে একটি ডি এন এ থেকে তার অসংখ্য কপি (DNA) তৈরি করা হয়। পরের ধাপে এর সঙ্গে ক্রিসপার-ক্যাস-৯ নামে ব্যাকটেরিয়া প্রোটিনের সংযোগ করানো হয় যা ভাইরাল ডি এন এ-কে চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। এ হেন নমুনা একটি কাগজের স্ট্রিপে ফেলা হয়। নমুনা ফেলার পর কাগজের স্ট্রিপে প্রথমে একটি লাইন ফুটে ওঠে। এতে বোঝা যায় স্ট্রিপটি ঠিক মতো কাজ করছে। এর পরে দ্বিতীয় একটি লাইন ফুটে উঠলে বুঝতে হবে সেই নমুনা পজিটিভ। অর্থাৎ যার নমুনা তিনি করোনা সংক্রামিত। স্ট্রিপে দ্বিতীয় লাইন ফুটে না উঠলে সেই ব্যক্তির করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ। অর্থাৎ তিনি করোনা সংক্রামিত নন।'

শুধু তাই নয়, বিদেশি কিটের জন্য আকারে বড় আর দামি পিসিআর মেশিন প্রয়োজন। অন্যদিকে, ফেলুদা প্রযুক্তিতে তৈরি কিটের জন্য দরকার সাইজে ছোট পিসিআর মেশিন। ছোট পিসিআর মেশিনের দাম অনেক কম। ইউনিভার্সিটি, প্যাথলজি ল্যাব কিংবা অনেক স্কুলেও সাইজে ছোট পিসিআর মেশিন থাকে। ফলে খুব সামান্য খরচে ওই পরীক্ষা হতে পারে। একটি বিদেশি কিট দিয়ে করোনা পরীক্ষার খরচ যেখানে ৪৫০০ টাকার উপরে; সেখানে 'ফেলুদা' কিট পরীক্ষার খরচ সর্বসাকুল্যে ৪৫০ টাকার মত। অর্থাৎ, বিদেশি কিটস-এর তুলনায় খরচ প্রায় এক-দশমাংশ। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এ হেন কিটের বানিজ্যিক পরীক্ষা পদ্ধতি ২০২০ সালে মে মাসে চালু হয়। তারপর বাজারে চলে আসে কিট।

১৯৬৫ সালে বিশ্ববরেণ্য চিত্রপরিচালক সত্যজিৎ রায়-এর হাত ধরে যে-ফেলুদার একদা গোয়েন্দাগিরির জগতে হাতেখড়ি হয়; ২০২০ সালে বিজ্ঞানী ড. সৌভিক মাইতি'র তৈরি ল্যাব‍রেটরির 'ফেলুদা' জনমানষে আজও সমান প্রাসঙ্গিক। শুধু প্রেক্ষিত দুটো আলাদা। পূর্ববর্তী ফেলুদা এক কল্প-গোয়েন্দা সিরিজ, আর বর্তমান 'ফেলুদা' সত্যিকারের এক মানব-হিতৈষী।
 
(৩)
স্থানীয় প্রবাদ আছে 'ওল কচু কিটনা, তিন নিয়ে ময়না'। অখণ্ড মেদিনীপুর জেলার ময়না ব্লকের কথা বললে চোখের সামনে যে-ছবি ভেসে ওঠে; তাতে যতদূর দৃষ্টি চলে শুধু থইথই জল আর জল। বছরের অর্ধেক কাল জলের তলায় ডুবে থাকাই যেন ময়নার নিয়তি! মাঝে সাঝে নাম না-জানা পল্লী গ্রামগুলি মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকে দৈত্যের মত। এ গ্রাম থেকে ও-গ্রামে পারাপারের একমাত্র মাধ্যম তখন ডিঙি নৌকা কিংবা কলা'র ভেলা। অভাব, কষ্ট যেন নিত্যসঙ্গী। এলাকার অধিবাসীদের প্রধান জীবিকা কৃষিকাজ। এক ফসলি জমিগুলো বছরের অধিকাংশ সময় জলে ডুবে থাকায় বিকল্প জীবিকা মূলত মাছ ধরা। এ হেন ময়নার ৩-নং অঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রাম তিলখোজা। আয়তনে বেশ বড়। চারদিকে ধানক্ষেত ঘেরা গ্রামটিতে বেশির ভাগ কৃষিজীবী মানুষের বসবাস। অধিকাংশই নিম্নবিত্ত কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার। 
       
গ্রামের উত্তরে একঘর মাইতি পরিবারের বাস। এলাকায় শিক্ষক শ্রী সুকুমার মাইতি মহাশয়ের বেশ নাম-যশ-খ্যাতি। গ্রামের উজ্জ্বলতম মুখ। ব্যতিক্রমীও বটে। সেই কোন ১৯৬৩ সালে বাংলায় স্নাতক তিনি! স্নাতক পরীক্ষার পরের দিনই মিলে গিয়েছিল শিক্ষকতার চাকরি। বাড়ি থেকে চার কিলোমিটার দূরে রামচন্দ্রপুর রাইসুদ্দিন হাইস্কুলে। কাঁসাই নদীর তীরে গাছগাছালি ভরা অপূর্ব সুন্দর স্কুলের প্রাকৃতিক পরিবেশ। এ হেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে তাঁর ছেলেবেলা কেটেছে স্কুলের পাঠ মুখস্থ করতে করতে। ঐতিহ্যের সে-স্কুলবাড়িতে আজ তিনি শিক্ষক। গর্বে বুক ভরে ওঠে। শিক্ষকতার সূত্রে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয় পায়ে হেঁটে। ন্যূনতম একটি সাইকেল কেনার সামর্থ্য ছিল না সেসময়। সেজন্য স্কুলের ছাত্রাবাসে থাকবার পাকা বন্দোবস্ত। সপ্তাহান্তে তিলখোজায় বাড়ি ফেরেন। সময় খুব বাড়ন্ত। ইতিমধ্যে ভর্তি হয়েছেন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। লক্ষ্য উচ্চশিক্ষার টালমাটাল সমুদ্র পার হওয়া। সকল প্রতিবন্ধকতা জয় করে তিনি বাংলায় মাস্টারস ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৬৫ সালে। তারপর ১৯৬৮ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডেপুটেশনে বিএড সম্পূর্ণ করেন। থেমে থাকেনি তাঁর উচ্চশিক্ষার চাকা, বাসনা। ময়না রাজবাড়ি ঘুরতে গিয়ে হঠাৎ তাঁর হাতে এসে পড়ে নরসিংহ বসুর লেখা ধর্মমঙ্গল পুঁথিখানি। এ হেন পুঁথি নিয়ে তাঁর গবেষণার শুরু বিএড চলাকালে। ১৯৭২-এ পেয়ে গেলেন ডক্টরেটের ডিগ্রি। ডক্টরেট উপাধি প্রাপ্তি তাঁর সাফল্যের পাতায় নিঃসন্দেহে একটি মস্তবড় মুকুট। তারপর থেকে পুঁথি গবেষণার নেশা পেয়ে বসে তাঁকে। সে-নেশায় আজও তিনি ক্লান্তিহীন। চির তরুণ এক পরিব্রাজক। একাধারে আজ তিনি কবি, সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, পুঁথি বিশারদ আর গবেষক। ধুলিধুসরিত পল্লীগ্রামের এবড়ো-খেবড়ো মেঠোপথ পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়িয়েছেন পুরোনো পুঁথি দলিল দস্তাবেজ চিঠিপত্রের সন্ধানে ও উদ্ধারে। সেজন্য তাঁর লেখনীতে বারবার উঠে এসেছে আটপৌরে গ্রাম্যজীবনের অনাড়ম্বর বাস্তব চিত্র আর তাদের সুখ-দুঃখের বারমাস্যা। ইতিমধ্যে, ১৯৬৫ সালে তাঁর সঙ্গে গীতা দেবীর বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে। ভূমিষ্ঠ হয়েছে বড় ছেলে সৌগত আর কন্যা পাপিয়া। জন্মাবার পর ঘর আলো করে দাপিয়ে বেড়ায় দুই ভাই-বোন।

সমান্তরালে চুটিয়ে চলছে পিতা সুকুমার বাবু'র গবেষণা আর লেখালেখি। ধীরে ধীরে হাট করে খুলে যাচ্ছে স্বীকৃতির দরজা-জানালা। ২০০১ সালে আমেরিকান বায়োগ্রাফিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট তাঁকে সম্মাননীয় সদস্যপদ প্রদান করে। দশ বছর পর, ২০১১ সালে লন্ডনের রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটির সম্মানিত 'ফেলো' নির্বাচিত হন তিনি। কেন্দ্রীয় সরকারের মানব সম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের অ্যাওয়ার্ড অব সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ লাভ করেন ২০১২-১৩ সালে। ২০২১ সালে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় ডিলিট উপাধিতে সম্মানিত করে। বর্তমানে ড. সুকুমার মাইতি মহাশয় ঝাড়গ্রাম সাধু রামচাঁদ মুর্ম্মু বিশ্ববিদ্যালয়ের 'সেন্টার ফর আদিবাসী স্টাডিজ অ্যান্ড মিউজিয়াম'-এর অন্যতম সাম্মানিক কর্মকর্তা এবং পরামর্শদাতা।

(৪)
অগ্নিগর্ভ সত্তর। বিদ্রোহী সত্তর। বিপ্লবের আগুনে দগ্ধ সত্তর। উত্তাল। উদভ্রান্ত। দিশেহারা সত্তর। সত্তরের দশকের একেবারে প্রথম ভাগ। সংগ্রামের আগুন জ্বলে উঠে ছড়িয়ে পড়ল সারা বাংলায়। বাতাসে বারুদের সৌরভ। আকাশে ঘন ঘন ফাইটার প্লেনের ওঠানামা। হৃদয়ে অবিশ্বাসের চোরা স্রোত। সমাজে সন্দেহের বাতানল। সমাজে পট পরিবর্তনের সে এক মহার্ঘ্য সময়। দেশজুড়ে তখন বিপ্লবের আগুন জ্বলছে। চারপাশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে নকশাল আন্দোলন। ধরপাকড় চলছে জোরকদমে। বিদ্রোহ দমিয়ে রাখার অদম্য কৌশল। জোতদার, জমিনদার, মহাজনের বিরুদ্ধে বাংলার আকাশ গর্জে উঠছে ক্ষোভে। মালিকের চোখে চোখ রেখে রাগে প্রতিবাদে আজন্ম সঞ্চিত ক্রোধানল উগরে দিচ্ছে শোষিত শ্রমিক সম্প্রদায়। মোড়ে মোড়ে হঠাৎ গজিয়ে উঠছে শ্রমিক ইউনিয়ন, ক্লাব আর মজদুর সংগঠন। মান্ধাতার আমলের রীতি নীতির পরিবর্তন চাই। চাই সুষ্ঠু সমাজ ব্যবস্থা। লেলিন, মার্ক্সবাদ, মাও সে তুঙ তখন সকলের মুখে মুখে ঘুরছে। পুলিশ আসুক, চৌকিদার আসুক, নেতা-মন্ত্রী যে-ই আসুক না কেন; নো-পরোয়া! কোনও তোয়াক্কা নেই ওদের। এদের এই শ্রেণী সংগ্রামে যুক্ত হয়েছে বেশ কিছু শিক্ষিত বেকার যুবক। তাদের চোখে একরাশ স্বপ্ন। সমাজ সংসারে আমূল পরিবর্তনের নেশা। সমতার কথা শোনায় তারা। ধনী দরিদ্র ভেদাভেদ মুছে ফেলে ঐক্যের বাণী শোনায় কলেজ ইউনিভার্সিটি পড়া শত শত শিক্ষিত বেকার ছেলে ছোকরার দল। তারা সব ঝাঁকে ঝাঁকে নাম লেখাচ্ছে সংগঠনে। নিজেদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ জলাঞ্জলি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে বিপ্লবের দলে। নাম পরিবর্তন করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ শানাচ্ছে গ্রামেগঞ্জে। ধরা পড়লে জেলহাজত বাস, অকথ্য অত্যাচারেও ওদের টনক নড়েনি।

আসলে শ্রেণী শোষণের বিরুদ্ধে যে-আগুন একদিন নকশালবাড়ির চৌহদ্দির ভেতরে দগদগ করে জ্বলছিল, তা নিমেষে ছড়িয়ে পড়ল আকাশে, বাতাসে, সারা বাংলায়। বাংলার আকাশে সে এক কালো দিন। অনিরাময় ক্ষত। দূরারোগ্য ক্যানসার যেমন শরীর অভ্যন্তরে আস্তে আস্তে ছড়ায় তার শাখা প্রশাখা, তৎকালীন সামাজিক বিষ গ্রাস করেছিল সেই সমগ্র মেকি সমাজ ব্যবস্থাকে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পূর্ব বঙ্গের অনমনীয় স্বাধীনতার লড়াই। আকাশে তখন ঘন ঘন বিমানের ওঠানামার শব্দ শোনা যায়। আপদকালীন সাইরেন বেজে ওঠে। ব্যাহত হয় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।

বর্ষাস্নাত বৃষ্টিধারার পরে আলোকোজ্জ্বল সোনালি বিকেলের মত হাঁটি হাঁটি পা পা করে অশান্ত সময় বয়ে আনল শরতের সোনালী রোদ্দুর। বাতাসে তখন আগমনি সুর শেষে বিসর্জনের বাদ্যি বাজে। খাল বিল মাঠ ঘাট সর্বত্র কেবল সাদা কাশফুল। আকাশপানে সাদা ছেঁড়া পেঁজা মেঘের ভেলায় ভেসে চলেছে অপু আর দুর্গা, তেপান্তরের মাঠে। সেই যেথায় পদ্মফুলের মাথায় সাপ আর ভ্রমর একসঙ্গে খেলা করে। রেললাইনের ধারে কাশের বনে উড়ে বেড়ায় রঙিন প্রজাপতি। চৌধুরীদের আমের বনে নামে বৃষ্টির ফোঁটা, মুষলধারে। বৃষ্টির জলে ভিজতে কচিকাঁচা দলের আনন্দের সীমা-পরিসীমা থাকে না!
        
ঢাকের বাদ্যি বাজে, চড়াম চড়াম। সেদিনটা ছিল ৩০শে সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ সাল। মহাদশমী। দশেরা উৎসবের তোড়জোড় চলছে চারদিকে। লঙ্কাধিপতি রাবন'কে বধ করে সমাজে শুভ শক্তির আগমনের বিজয় ডঙ্কা বাজছে। মহাদশমীর পূজার তালে তালে ঢাকের কাঠির বোল আছড়ে পড়ে তিলখোজা গ্রামে মাইতি পরিবারে। ওদিকে ঢাকের চড়াম-চড়াম আওয়াজ আর এদিকে গর্ভধারিণী মায়ের আকুল চিৎকার, গর্ভ-যন্ত্রণা। নবজাতকের প্রথম কান্না। তিনে মিলে মিশে একাকার। এ এক অদ্ভূত সমাপতন। রাজযোটক মিল। সে-শুভক্ষণে শ্রী সুকুমার মাইতি মহাশয়ের পত্নী গীতা দেবী'র তৃতীয় গর্ভে জন্ম নিয়েছিল এক ফুটফুটে পুত্র সন্তান। অত্যন্ত আদরের সৌভিক। দেবীপক্ষে ছোট্ট সৌভিক এল মা গীতা দেবীর কোল আলো করে। এ হেন শিশু বালকের শুভ জন্মক্ষণেই রচিত হয়েছিল উজ্জ্বল তারা হয়ে প্রস্ফুটনের ঘোর যুদ্ধফল। রসায়নে ভবিষ্যতের তারা সে। অসুরদলনী মা দেবীদুর্গার কৃপায় মাতৃ জঠর থেকে যেন আবির্ভাব ঘটল তাঁর। টুকটুকে ফর্সা গায়ের রঙ। ছটপটে। নবজাতকের কান্নার সুরে যারপরনাই খুশির আভা খেলে গেল রত্নগর্ভা মাতা গীতা দেবীর চোখে মুখে। উৎসব মুখর বাড়িতে আনন্দের হিল্লোল। খুশির জোয়ার। পূজো শেষে আনন্দ এবার তাই দ্বিগুণ, তিনগুণ, চারগুণ, ...সীমাহীন। (চলবে)

তথ্য-সহায়তা :
●শ্রদ্ধেয় বৈজ্ঞানিকের পিতা ড. সুকুমার মাইতি মহাশয়
●সুকুমারচর্চা : সম্পাদনা শ্রী শ্যামল বেরা
●আনন্দবাজার, আজকাল, দি টাইমস অব ইন্ডিয়া পত্রিকাসহ অন্যান্য প্রিন্ট মিডিয়া

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇


Post a Comment

2 Comments

  1. শ্রদ্ধেয় গবেষক ও তাঁর বিজ্ঞানী
    সন্তান সৌভিককে এই মননশীল ও
    আন্তরিক লেখাটির প্রয়োজন ছিল । সৌভিকের অভূতপূর্ব বৈজ্ঞানিক কীর্তি বিষয়ে আমি অজ্ঞ । কিন্তু তাঁর বাবা অত্যন্ত প্রবীণ বয়সেও যে-সব গবেষণা করেছেন এবং করে ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌যাচ্ছেন , তা দেখে ও শুনে আমি যারপরনাই মুগ্ধ ও বিস্মিত ।



    ReplyDelete
  2. খুবই মননশীল লেখা। খুব ভালো লাগল।

    ReplyDelete