জ্বলদর্চি

পৃথিবী ২০৭৭ / রাজ অধিকারী

পৃথিবী ২০৭৭ 

রাজ অধিকারী



পর্ব ১

- না মা! আমি যাবো না আলিপুর জেলে।
- একদম জেদ করবি না পাপান। বুল্টি মাসির একমাত্র মেজ ছেলে গনুর বিয়ে। 

সকাল থেকে এই জেলে যাওয়া নিয়ে মা আর পাপানের মধ্যে ফাটাফাটি দক্ষযজ্ঞ লেগে গেছে। পাপানের এই অভিমান হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। আজকে বাবার অফিসের এই কাজের জন্যে জেলে যাও, তো কালকে এই মাসি বা পিসির ছেলের বিয়ে, তো আবার কখনও কারোর অন্নপ্রাশন। নিজের জন্যে কবে যাবে জেলে! 
না মানে, পাপান বা ওর পরিবারের কেউ মারাত্মক কোনও ক্রিমিনালের বংশ নয় কিন্তু। ওহ! পাঠক তো এই মুহূর্তে ২০২১ বা ২০২২ সালে এই গল্পটা পড়ছে। গল্পের প্লট আসলে ২০৭৭ সালের। অনেক কিছুই বদলে গেছে গত কয়েক বছরে। না, গান্ধী পরিবারের কনিষ্ঠ অকৃতদার এখনও প্রধানমন্ত্রী হননি। যাগগে, সেসব বাজে কথা। তবে এই কয়' বছরের একটু আপডেট না দিলে আমার সদ্য যুবতী পাঠিকা চোখ উল্টে এখুনি পড়া বন্ধ করে দেবে।

আসলে জেলে যাওয়ার ব্যাপারটা খুবই সাধারণ হতে শুরু করে ২০২২-২৩ এর থেকে। সরকার মধ্যবিত্ত সরকারি চাকরিজীবি বাবাদের মতো বদমেজাজী হয়ে ওঠে। যখন তখন যে কোনও কারোর ওপর ক্ষেপে যান। আর ক্ষেপে গেলেই জেল। আজকে ছেলে কৌতুকধর্মী রম্যরচনা লিখে জেলে গেল। তো কালকে ছেলের বাবা-মা মিডিয়াতে কান্নাকাটি করে সরকারকে গালমন্দ করার জন্যে জেলে। এভাবেই ছেলের কলেজের বন্ধুরা, প্রেমিকার বেস্ট ফ্রেন্ড, পাড়ার চক্কত্তি-মিত্তির, মুদি ও সবাই। শেষমেশ জেলে বসেই রিইউনিয়ন হচ্ছে সবার। 
মানুষের এই বিষয়ে অভ্যাস হতে শুরু করে। আসলে সবাই বুঝতে শুরু করে যে জেলে গিয়ে বেশি স্বাধীনতা আছে। কমেডিয়ানরা জেলে সরকারকে কমেডি করার জন্যে জেলে গেল, পরদিন অডিয়েন্সরা সাপোর্ট করার জন্যে একে একে জেলে ঢুকলো। তারপর জেলে বসেই কমেডি শো চলতে থাকলো। 

শুধু শিল্পচর্চা নয়। হাটে মাংস বিক্রির জন্যে জেল, অফিসে বিদেশ কোম্পানিকে সার্ভিস দিলে দেশভক্তদের প্রতিবাদে জেল, মুদির দোকানের নাম হিন্দি বাদে অন্য ভাষায় লেখার জন্যে জেল, সেলুনে বাটিছাঁট বা মাঝখান থেকে সিঁথি না করলেও জেল, এমনকি বিয়েবাড়িতে ইংরেজি গান চালালেও জেল। দেখতে দেখতে জেলগুলো কখনও যে সত্যিই মামাবাড়ি হয়ে উঠলো!

আমাদের পাপানের জন্মও তো তিহার জেলে। পাপানের বাবার তখন বদলির চাকরি। আজকে এই জেলে, তো কালকে অন্য জেলে। বেচারি পাপানের মা কেও যেতে হতো জেলে। কাকিমার ইচ্ছে ছিল আলিপুর জেলে ডেলিভারি হোক। ক্যালকাটা মেডিকেল কলেজ থেকে মিছিল করে বেশ ভালো ভালো ডাক্তার জেলে ঢোকে। কিন্তু বিধাতার লিখন খণ্ডায় কে! বিধাতা লোকটা কোন জেলে থাকে কে জানে। 

যাই হোক, এই পূর্ববর্তী ইতিহাস দিতেই অনেকটা সময় গেল। অনেকটা আমার সেই চিকেন ডাকবাংলো রান্নার মতো। সকাল থেকে আয়োজন করে করে এত হাঁফিয়ে গেলাম, শেষ অব্দি মাংসের পাতলা ঝোল ভাত দিয়ে খেতে হলো। সে গল্প অন্যদিন বলবো না হয়। আপাতত পাপানের বিয়ে। ওহ না! পাপানের বুল্টি মাসির একমাত্র মেজ ছেলের বিয়ে। পৃথিবীতে কারোর দু'টো বা আরও বেশি মেজ ছেলে আছে বলে আমি যদিও শুনিনি। 
বিয়ের আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি। 

বুল্টিমাসিরা সপরিবারে থাকতেন আগে হাওড়ার জেলা সংশোধনগারে। সেখান থেকে বরযাত্রী আসবে আলিপুর জেলে। এবার অন্য জেলে ট্রান্সফার হওয়া মুখের কথা নয়। ক্রাইম করে জেলে যাওয়া যায়। জেলের ভেতরে আবার বেশি ক্রাইম করলে ফাঁসিও হয়ে যায়। কিন্তু ভাগ্যবশত বুল্টিমাসির বড়ো দেওরের সাথে জেলারের বেশ ভাব ছিল। উনি আগে জেলারের মেয়েকে টিউশন পড়াতেন; জেলের ভেতরেই। সেই সূত্রে জেলারই সব বন্দোবস্ত করে দিয়েছে। বিয়েরদিন সকাল সকাল ক্যান্টিন থেকে রান্নার হলুদ দিয়ে বরের গায়ে হলুদ হলো। সরকারবিরোধী নাটকে যুক্ত থাকায় অনেক মেকআপ আর্টিস্টও জেলে ঢুকেছিল। তাদের কৃপায় মেয়েরা সবাই মেকআপ করলো। তারপর সময়মতো বিকেলবেলা কয়েদির ভ্যানে চেপে রওনা দিল বরযাত্রী। ফুল দিয়ে সাজানো চারটে ভ্যান চলছে পরপর।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇


Post a Comment

1 Comments

  1. এই এতো মজার সন্ধান পাওয়া যাবে ভাবিনি

    ReplyDelete