জ্বলদর্চি

সুবিমল মিশ্র /বিশ্বজিৎ পাণ্ডা

বাংলা গল্পের পালাবদল— ১১   

সুবিমল মিশ্র

বিশ্বজিৎ পাণ্ডা



সুবিমল মিশ্র (জন্ম-১৯৪৩) বিশ শতকের ষাটের বছরগুলি থেকে গল্প লিখে চলেছেন। গল্প নাকি না-গল্প? প্রতি গল্প ? তিনি নিজে অবশ্য ‘অ্যান্টি-গল্প’ বলেন। আসলে প্রথাগত গল্পের ধারপাস দিয়েও যায় না তাঁর গল্পগুলি। তিনি আদ্যন্ত প্রতিষ্ঠান-বিরোধী। লেখার ক্ষেত্রেও তাই। তাঁর গল্পের বিষয়-আঙ্গিক সবই প্রথাবিরোধী, প্রতিষ্ঠান-বিরোধী। তিনি মনে করেন— প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা একটা টোটাল ব্যাপার। যে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী সে সব অর্থেই প্রতিষ্ঠান-বিরোধী। এই বিশ্বাস থেকেই তিনি লিট্‌ল ম্যাগাজিন ছাড়া আর কোথাও কোনোদিন এক অক্ষরও লেখেননি। তাও হাতে গোনা কিছু লিট্‌ল ম্যাগাজিনে। বহু লিট্‌ল ম্যাগাজিনও তাঁর লেখা ছাপতে ভয় পান। আর তিনি ভয় পান সফলতাকে, জনপ্রিয়তাকে, পাঠক-প্রিয়তাকে। তাই তাঁর পক্ষেই বলা সম্ভব— 

“প্রত্যেকেই সফলতা খোঁজ করে, আমি খোঁজ করি অন্য কিছুর। আমার জীবনের প্রধান ব্যাপার হল হয়ে-ওঠা, হয়ে-ওঠার চেষ্টা। এই ‘চেষ্টা’ শব্দটির ওপর আমি বিশেষ ভাবে জোর দিতে চাই। জীবনের শেষক্ষণটি পর্যন্ত সম্পূর্ণ ভাবে সক্রিয় থাকা, সম্পূর্ণ ভাবে দায়িত্ববান হওয়া, নিরন্তর বিরূপ সমালোচনা— কোনো কিছু হয়নি ... কোনো কিছু হচ্ছে না সুবিমল এক ধরনের স্ট্যান্‌ট দেওয়া ছাড়া— এই ধরনের মতামতের ঝুঁকি নেওয়া এবং অবশ্যই স্থির লক্ষ্যে নিজের কাজ করে যাওয়া। নিজেকে ভাগ্যবান, ভাগ্য কিংবা এ ধরনের কারো হাতে তুলে দেওয়া এক ধরনের কাপুরুষতা বলে আমি মনে করি। আর কাপুরুষতা আমি আদৌ পছন্দ করি না। সফলতা এলে আমি ভয় পাই। কারণ নতুন কিছু করলে সফলতা সংগে সংগে আসে না। আমি যদি সফলতা পাই তার মানে হল আমি এমন কিছু করছি যা তত নতুন নয়।” (বই সংগ্রহ-১)     
        
এই বক্তব্যের মধ্যে একটা লড়াকু সুর রয়েছে, জেদি মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে, যা প্রতিষ্ঠা-বিরোধিতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। সুবিমল মিশ্র যে বাংলা সাহিত্যে সম্পূর্ণ নতুন কিছু করেছেন তার প্রমাণ, তিনি তথাকথিত সফলতা পাননি। এটাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। তাঁর গল্প আসলে অন্য রকম এক অভিজ্ঞতার বয়ান। সেখানে কখনও কখনও কাহিনি মৃদু ছায়া ফেলে যায় ঠিকই, কিন্তু কখনওই সেই কাহিনি প্রকট হয়ে ওঠেনি। যেমন ‘পরীজাতক’ (‘সাহিত্যচর্চা’, ১৯৬৮, ‘হারাণ মাঝির বিধবা বৌয়ের মড়া বা সোনার গান্ধীমূর্তি’) গল্পটি।     
 
যৌনতার বীভৎস স্বরূপ উন্মোচিত এই গল্পে।  সুখময়, রজত, তমাল, দীপেন— এই চার বন্ধু ‘রানি’ নামের একটি মেয়েকে নিয়ে সমুদ্রের কাছে বেড়াতে গেছে। রাতে সমুদ্রস্নান থেকে ফিরে হোটেলের ঘরে ঢুকে চারজন আশ্চর্য হয়ে দেখল রানি মারা গেছে। ওদের না জানিয়ে মরা আসলে রানির ‘নিমকহারামি’। কিন্তু তারা তো ভদ্রলোক। সুবিমলের ভাষায়—

“রানির স্বাস্থ্যের ওপর আমাদের লক্ষ ছিল। রানির পোশাকের ওপর আমাদের লক্ষ ছিল। কারণ আমরা জানতাম পরীর মতো এই শরীর খারাপ হয়ে গেলে রানি আমাদের কোনো কাজে লাগবে না। খারাপ দেখতে হয়ে গেলে রানিকে আমাদের দরকার থাকবে না। গরু বুড়ো ও অকর্মণ্য হয়ে গেলে মানুষরা যেমন কশাইয়ের কাছে বিক্রি করে দেয়, আমাদের সেই রকম অন্য জায়গায় রানিকে বেচে দিতে হবে।...    

রানি আমাদের সঙ্গে নেমকহারামি করল। আমরা তাকে এই সমুদ্রতীরের শহরে নিয়ে এসেছিলাম সকলে মিলে একটু সাধ-আহ্লাদ করব বলে। তাকে ন্যাংটো করে স্নান করাব, সারারাত তার শরীরের গরম নিয়ে উত্তেজিত থাকব। কিন্তু সে মরে গেল। আমরা যে এত টাকা-পয়সা খরচ করে তাকে পুষেছি তা সে একবারও ভাবল না। একবারও কৃতজ্ঞ হল না আমাদের প্রতি।...

যদি নেমকহারামি হয়, তবে সভ্য জগতের নিয়মে এর ভয়ানক শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু আমরা ভদ্র মানুষ। আমরা গণতন্ত্র মানি। পরস্পর পরস্পরের প্রতি সমঝোতার ভেতর দিয়ে আমরা বিবাদ-বিসম্বাদ মেটাই। আমরা হঠাৎ করে বিশ্বাস হারাতে পারি না। কারণ আমরা শিখে নিয়েছি মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ। রানি আমাদের কাউকে কিছু না বলে হঠাৎ মরে গিয়ে আমাদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বলে আমরা অভদ্র হতে পারি না। আমরা রানির বাবার কাছে রানির জন্য ক্ষতিপূরণ চাইতে পারি না। আমরা ভদ্র মানুষ। তাতে আমাদের বাধে।

কিন্তু অন্যায়ের শাস্তি হওয়া উচিত। না হলে গণতন্ত্র চলে না, পৃথিবী চলে না, চন্দ্র সূর্য চলে না।... আমরা রানিকে রেখেছিলাম, তাকে রোজ রোজ ঠিকঠাক খাওয়া-পরা দিতাম। সেই সূত্রে আমরা রানির কাছে অল্পস্বল্প কিছু দাবিও করতে পারি। আমরা সেই দাবির সূত্রে শাস্তিটা দিতে চাই।

...সমস্ত সভ্য জগতের দোহাই দিয়ে আমি বলতে পারি আমাদের কারোর মনে কোনো পাপ নেই। আমরা জানি কশাই তার বিক্রিত পশুর কোনো কিছুই ফেলে দেয় না। তারা মাংস রক্ত তো বিক্রি করেই, এমনকী চামড়া, মাথার শিং, পেটের নাড়িভুঁড়িগুলো পর্যন্ত ফেলে না। আমরা মৃত রানির কাছ থেকে অল্প কিছু দাবি করতে পারি। তাতে আমাদের ন্যায্য অধিকার...

জীবন্ত রানির শরীরের কোনো কোনো অংশ আমাদের ভালো লাগতো। আমরা আমাদের পূর্বোক্ত দাবির সূত্রে এখন রানির শরীর থেকে সেইসব জায়গা কেটে নিতে পারি। এতে কোনো পাপ নেই। আমাদের অধিকারই আমরা ব্যবহার করেছি মাত্র।

কথাটা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই তিনটে শরীর লাফিয়ে উঠল। এক ঝটকায় তারা মৃতদেহ থেকে খুলে ফেলল সাদা চাদরটা। মোমবাতির আলোয় তাদের হাতে ছুরির ফলা ঝলসে উঠেছিল। তারা দ্রুত সেই শবদেহ থেকে বিশেষ বিশেষ স্থানের মাংস কেটে নিতে ব্যস্ত হল, মোমের আলোটা জ্বলছিল তখন সারা ঘরে। একজন তার হাতের ছুরি নিপুণভাবে বাঁদিকের বুকে বসিয়ে গোল করে ঘুরিয়ে আনলে সমস্ত স্তনটা তার হাতের মুঠোয় উঠে আসে। ঘরের কোণে অন্ধকার। সেখানে মোমবাতির আলো পৌঁছোয় না। অন্যজন তলপেটের নীচের মাংসল অংশটা কেটে এনে জিভ দিয়ে চেটে সুখ নিতে উদ্যত। তৃতীয়জন অন্য স্তনটা কেটে নিচ্ছে, সুখময় আর দেরি না করে সেই দলের মধ্যে ভিড়ে গেল। শরীরটায় খাবলা খাবলা গভীর গর্ত। রক্তে মাখামাখি। সুখময় এবার দেহটা উল্টে পাল্টে একটুখানি রসালো জায়গা খুঁজতে লাগল। ভালো কিছু আর অবশিষ্ট নেই। কিন্তু তার ভেতর থেকে সে নিপুণ কশাইয়ের মতো রক্তাক্ত রাঙটা দেখতে পেল। মাংসল এই ঊরুখানা তখনও অক্ষত। সে কচি পাঁটা থেকে মাংস কেটে নেওয়ার ভঙ্গিতে নধর ঊরু থেকে মাংস কেটে নিল। তারপর সেই নরম মাংসের স্পর্শ নিতে নিতে সে অত্যন্ত উত্তেজিত হতে চাইছিল।...তারা সেইসব বিভাজিত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে রানির জীবন্ত শরীরের স্বপ্ন দেখতে দেখতে শেষ মুহূর্তটুকু পর্যন্ত উত্তেজিত হল। ক্রমে তাদের নড়াচড়া কমে এল, তারা বহুক্ষণ সেই সব স্বপ্ন বুকে সঞ্চয় করে রেখে রমণীত কুকুরের মতো পড়ে পড়ে হাঁপাতে লাগল।...”

ক্রমশ তাদের বাস্তবজ্ঞান ফিরে আসে। মৃতদেহটা লুকিয়ে ফ্যালার জন্য বেলাভূমিতে নিয়ে যায়। একসময় শ্রান্তিতে হাঁটতে না পারলে শবটাকে বালিতে নামিয়ে গোল হয়ে বসে পড়ে। চারজন অজানা কারণে শঙ্কিত হয়ে ওঠে। সুখময়ের মনে হল, শবের চোখদুটো ভয়ঙ্করভাবে তার দিকে তাকিয়ে আছে। রানি তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। ভয়ে সুখময় ঘেমে যাচ্ছে। আবার সে দেখল রানি কাঁদছে। ভীত সন্ত্রস্ত তিনজন “শবদেহ ফেলে রেখে সেই অসম্ভব সাদা জ্যোৎস্নার ভেতর দিয়ে প্রাণপণে ছুটে পালাতে লাগল। সুখময়ের বাস্তবজ্ঞান ক্রমশ লোপ পাচ্ছিল, সে শেষবারের মতো ভয়ে ভয়ে সেই শবদেহের দিকে তাকিয়ে দেখতে গেল। এবার রানির মুখময় হাসি। পরমুহূর্তে সেই মুখে ভয়ঙ্কর বিভীষিকা দেখল। তার পরক্ষণেই মনে হল মুখটা যেন কান্নায় ভেঙে পড়বে...মনে হচ্ছে এখানে আর কিছুক্ষণ থাকলেই রানির মৃতদেহ আবার জেগে উঠে বসবে এবং তার খোয়া যাওয়া অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো ফেরৎ চাইবে। সুখময় তখন প্রাণপণ শক্তিতে উঠে দাঁড়াতে চাইল, সেখান থেকে ছুটে পালাতে চাইল।...অসহায়ভাবে সেই নির্জন সমুদ্রবেলায় ছুটতে ছুটতে তার মনে হচ্ছিল রানির শবদেহ যেন এক ভয়ঙ্কর শব্দে জেগে উঠে হাসতে হাসতে তার পিছু নিয়েছে, তাকে ধরে ফেলছে।”
পাঁঠার মাংসের মতো নারী শরীরের প্রতি লোলুপতা প্রকাশিত হয়েছে। বৃদ্ধ গোরুর সঙ্গে বিগত যৌবনা নারীর তুলনা। যৌনতার সকল ভাবনাকে লেখক এখানে তছনছ করে দিয়েছেন। এর উন্মাদবিন্যাস পাঠকের যুক্তিজালকে ছিঁড়ে দেয়। পাঠ প্রতিক্রিয়ায় ধাক্কা দেয়। আমাদের বুদ্ধিনির্ভর ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বাস্তবতার বাইরে জাদু-বাস্তবতার সামনে এনে দাঁড় করায় যৌনতার এই নতুন ডিসকোর্স। যৌনদৃশ্য মাত্রই যে মানুষকে প্রলুব্ধ করে না এ গল্পে তারই প্রমাণ। এই গল্পে বীভৎস যৌনদৃশ্যের হাড় হিম করা বর্ণনা দিয়েছেন লেখক। 

অপ্রচলিত, বিকৃত, বীভৎস প্রসঙ্গকে কেন্দ্র করে বারবার বিন্যস্ত করেন তাঁর গল্প। যেসব বিষয়কে সাধারণত সকলে এড়িয়ে যেতে চান, সেই বিষয়গুলিকে আঁকড়ে ধরতে চান সুবিমল। ‘পরীজাতক’ গল্পে তবুও একটা বিষয়ের আদল রয়েছে, কিন্তু এর পরে লেখা গল্পগুলির অধিকাংশতে তাও নেই। তবে একটা বার্তা থাকে। খুব স্পষ্ট ও জোরালো বার্তা। মাঝে মাঝে পাঠকের চোখে আঙুল দিয়ে বোঝাতে চান তাঁর গল্পের উদ্দেশ্য। কোনও রকম রাখঢাক না-করে জানিয়ে দেন যে সেই লেখা উদ্দেশ্যমূলক। ‘বুর্জোয়া কাগজ যেভাবে চিন্তার-স্বাধীনতা-বিশ্বাসী লেখকদের ব্যবহার করে’ (এপ্রিল ১৯৭৪, ‘দু-তিনটে উদোম বাচ্চা ছুটোছুটি করছে লেবেল-ক্রসিং বরাবর’) গল্পের শুরুতে লেখা ‘একটি উদ্দেশ্যমূলক গল্প’। নামেই বোঝা যাচ্ছে গল্পের উদ্দেশ্য এবং বক্তব্য। এই গল্পে লেখক দেখিয়েছেন, একজন স্বাধীনপন্থী মানবতাবাদী লেখকের শুধু “কোন সঠিক রাজনৈতিক দৃষ্টিভংগি ছিল না” বলে কীভাবে ঝানু বুর্জোয়া কাগজের সম্পাদক তাঁকে কুক্ষিগত করে নিলেন। 

সম্পাদক লেখকের বাড়িতে এসে লেখার আমন্ত্রণ করলেন এবং বললেন— “যে-মত আর যে-পথের লেখাই হোক না কেন তা যদি আর্ট হয়ে ওঠে আমাদের কাগজ তা নির্দ্বিধায় প্রকাশ করে থাকে। মুক্তচিন্তার মুক্তবিবেকের স্বাক্ষরবাহী আমাদের কাগজ— চিন্তার কোনরকম খণ্ডত্বে সে বিশ্বাসী নয়।” লেখকও দেখলেন তাঁর গণচেতনার লেখা এরা পর পর গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করলেন সম্পাদক। লেখক তাঁর বন্ধুদের বললেন, মনগড়া ধারণা নিয়ে বুর্জোয়া পত্রিকার বিচার না করতে। 

বন্ধুরা একে একে সরে গেলেন। একদিন তিনি সম্পাদকের কাছে গিয়ে পত্রিকার খুব প্রশংসা করে এলেন। সম্পাদকের হাসি চওড়া হল। তার কয়েকদিন পরে সম্পাদক জানালেন— তাঁরা পত্রিকার পলিসি বদল করেছেন। “দিনরাত কিসব ঐ কলকারখানার শ্রমিক মজুর নিয়ে ঘ্যানর ঘ্যানর করেন বলুন তো ? জীবনের কত বিচিত্র দিক আছে— প্রেম-পার্ভারশান-পলিটিকস— আধুনিক ছেলেমেয়েরা হিপি হয়ে যাচ্ছে— এসব নিয়ে রগরগে মাল ছাড়ুন না— আমরা পূজাসংখ্যার বিশেষ আকর্ষণ বলে ব্যানার দিই।”

বন্ধুরা সব বিদায় নিয়েছে। নিঃসঙ্গ, ফাঁকা। তখন অবস্থার চাপে পড়ে তিনি ভাবতে বসেন কীভাবে “সাধারণ প্রেমের উপন্যাস ফাঁদবেন আধুনিক প্রেম-পার্ভারশান তাড়িত মানুষদের নিয়ে, যা কমার্শিয়াল কাগজে ছাপার উপযুক্ত হবে, অথচ বহিরংগ দেখে মনে হবে সিরিয়াস সমাজ-ভাবনার প্রতিফলন— যাতে করে শ্যাম ও কুল দুই-ই একসংগে বজায় রাখা যাবে।”
 
এরপর ‘অথবা’ উপশিরোনামে একটি স্বতন্ত্র অনুচ্ছেদ। তাতে লিখছেন— লেখক অবস্থার চাপে পড়ে কখন একসময় লেখা বন্ধ করে দিলেন নিজেই জানতে পারলেন না।                  

গল্পের শেষে একটি ছোট্ট অনুচ্ছেদ। তার শিরোনাম ‘উপদেশ’। শেষ দুটি শব্দ ছাড়া সব ক-টি বাক্যের নীচে লাইন টানা রয়েছে (under line)। 

“সঠিক কোন রাজনৈতিক দৃষ্টিভংগি না-থাকলে বুর্জোয়া কাগজ এইভাবে সমস্ত সম্ভাবনাকে কিনে নেয়, ব্যবহার করে, তারপর জনগণের কাছ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে তাদের দিয়ে নিজেদের খেয়ালখুশিমত কাজ করে।”    

এরকম প্রতিষ্ঠান বিরোধী লেখক আর কে আছে ? গল্পটির নামকরণ একটা-দুটো শব্দে নয়, একটা সম্পূর্ণ বাক্যে। তাঁর বহু গল্পের নামকরণ করেছেন এভাবেই। যেমন ‘আপনি যখন স্বপ্নে বিভোর কোল্ডক্রিম তখন আপনার ত্বকের গভীরে কাজ করে’ (আগস্ট ১৯৭৪, ‘হারাণ মাঝির বিধবা বৌয়ের মড়া বা সোনার গান্ধীমূর্তি’)। দুটি লাইন জুড়ে গল্পের নাম। একটিও জ্যোতিচিহ্ন ব্যবহার না করে পুরো গল্পটি লিখেছেন। তিনটি অনুচ্ছেদে বিন্যস্ত এই গল্পের কোথাও কোনও জ্যোতিচিহ্ন তো নেইই ; এমনকি অনুচ্ছেদের শেষে বা গল্পের শেষেও পূর্ণচ্ছেদ নেই। যেন একটা বাক্যেই লেখা হয়েছে পুরো গল্পটি। অথচ এমনভাবে বিন্যস্ত করেছেন অর্থ বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে না। একটু উদ্ধৃতি দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে— 

“... সভ্যতা দুঃসাধ্য রোগ রোগের সাথে লড়াই সুভাষ ঘরে ফেরে নাই দ্রুত কাজ করে মিষ্টি স্বাদ ব্রেনওয়াশটা চালিয়ে যাক স্ত্রীলোকেরা সাবধানে মাসে ৫ দিন সরকারি ন্যাপকিনে ৩০ দিন নিশ্চিন্তি জাঙ্গিয়া পরুন তুলতুলে নরম পরনে স্পর্শসুখ জাঙিয়া পরে বাজার করুন জাঙিয়া পরে অফিস করুন জাঙিয়া পরে মর্দানি করুন স্টাইলকে স্টাইল ইকনমিকে ইকনমি পয়সা স্রেফ প্রত্যংগবিবেক ব্যক্তিত্বব্যঞ্জন নিউবাহার বীনা লতা নিশ্‌মা কারেন গীতা মোনা রূপমাধুরী কি বিচিত্র ব্যাপার একসপোর্ট কোয়ালিটি শাড়ি কিনতে জেনেভায় যাওয়ার দরকার নেই দেশের কিনুন দিশি কিনুন দেশ বাঁচান...” 

প্রতিটি অনুচ্ছেদের শেষে গানের ধুয়ার মতো এসেছে গল্পের নামকরণ— “আপনি যখন স্বপ্নে বিভোর কোল্ডক্রিম তখন আপনার ত্বকের গভীরে কাজ করে”। এই নামকরণের আগে আরও কিছু শব্দ একইভাবে যোগ হয়েছে প্রতিটি অনুচ্ছেদের শেষে—“...দাদ-এগজিমা সারিয়ে নিন খুঁত-খুঁতানি সারিয়ে নিন রোগজীবাণু সারিয়ে নিন ফুলের সুরভি শ্বাসেপ্রশ্বাসে মধুর পুলক ভেসে ভেসে আসে নাচুন নাচুন ধেই ধেই নাচুন আপনি যখন স্বপ্নে বিভোর কোল্ডক্রিম তখন আপনার ত্বকের গভীরে কাজ করে...”। 

বিশ শতকের নব্বইয়ের বছরগুলিতে দেখেছি বহু মান্য লেখক পণ্যায়নকে বিষয় করে গল্প লিখেছেন। কিন্তু তার প্রায় দু-দশক আগে সুবিমল এই গল্পে পণ্যায়নকে প্রত্যক্ষভাবে আক্রমণ করেছেন। কবি-লেখকেরা তো ক্রান্তদর্শী হন। সুবিমল মিশ্রও যে ক্রান্তদর্শী ছিলেন— সে ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নেই। এই গল্পের মধ্য দিয়ে সমাজ-রাজনৈতিক বার্তা দিতে চেয়েছেন। পাঠকের চেতনায় একটা জোর ধাক্কা দিতে চেয়েছেন।  

তাঁর প্রতিটি গল্পই কোনও-না-কোনও ভাবে এক্সপেরিমেন্টাল। আর সেই এক্সপেরিমেন্ট এমনই বিস্তৃত যে তাঁর গল্পের আখ্যান নিয়ে আলোচনা করার থেকে পাতার পর পাতা উদ্ধৃত করা সহজ। কারণ আঙ্গিক নিয়ে এরকম এক্সপেরিমেন্ট ইতিপূর্বে নজরে আসেনি। এই গল্পে জ্যোতিচিহ্নের ব্যবহার করেননি, আবার কিছু গল্পের দৃশ্য-বিন্যাসও দ্যাখবার মতো। যেমন ‘মূলত সংবাদই কাব্য’ (অক্টোবর ১৯৭৪, ‘হারাণ মাঝির বিধবা বৌয়ের মড়া বা সোনার গান্ধীমূর্তি’) গল্পটি। এখানে বিভিন্ন সাইজের ফন্ট ব্যবহার করেছেন। কখনও শব্দকে ভেঙে বর্ণগুলিকে আলাদা আলাদা করে লিখেছেন। কিছু কিছু বাক্য কবিতার মতো করে বিন্যস্ত করেছেন। আবার গল্পটির মধ্যে এসেছে অঙ্কও। একটু উদ্ধৃতি দিলে বিষয়টি বোঝা যাবে। 

“কারণ ... কারণ হচ্ছে দুনিয়াজোড়া খাদ্যাভাব” 

এই বাক্যটিতে অনেক বড়ো মাপের টাইপ ব্যবহৃত হয়েছে। এরপর সাধারণ টাইপে লেখা—

“রাষ্ট্রসংঘের এক সমীক্ষায় বলেছে...
বুঝলি কিছু ? বুঝলি না ?
এসব তোদের মাথায় ঢোকার জন্য নয়
তোদের উনুনে হাঁড়ি চড়ে না
কারণ ... কারণ হচ্ছে দুনিয়াজোড়া খাদ্যভাব”

এই অংশটির প্রতিটি লাইন বাম দিক ঘেঁষে (left alignment)। আবার এর পরের অংশটির বাক্যগুলির বিন্যাস মাঝখানে (centre alignment)।           

“ভারতবর্ষের জনসংখ্যা ৫৮,০০,০০,০০০ কোটি
একদিনে একজনের যদি ৫০০ গ্রাম খাদ্যের প্রয়োজন হয়
তাহলে এক বছরের জন্য প্রয়োজন
৩৬৫ x ১/২ x ৫৮,০০,০০,০০০ ÷ ৪০ ÷ ২৫
= ১০ কোটি ৫০ লক্ষ টন খাদ্য
ভারতবর্ষের ৭২-৭৩ সালে ফলন হয়েছিল
মোটামুটি ১০ কোটি ৫০ লক্ষ টন খাদ্যশস্য”

এরপর আবার মস্ত বড়ো ফন্টে— 

“আর সারা ভারতে
এই আর্থিক বছরে
না খেতে পেয়ে মারা গেছে বা আত্মহত্যা করেছে ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ”

বর্ণনার মধ্যে একই অনুচ্ছেদে এক-দুটো বাক্য হঠাৎ বড়ো টাইপে— “হ্যালো পি-এম, খেতে না পেয়ে পশ্চিম বাংলার লোকেরা কম্যুনিস্ট হয়ে যাচ্ছে শিগগির শিগগির খাদ্য পাঠান।”

সুবিমল মিশ্রের গল্প তাই যতটা না পড়ার, তার থেকে বেশি দ্যাখারও। এই ধরনের গল্পের পাঠ শুনে কোনও কিছুই বোঝার উপায় থাকে না। গল্পের মধ্যে এখানে অংক করে দেখিয়েছেন। এ-তো বাংলা সাহিত্যের একটা অভিনব এক্সপেরিমেন্ট। এটাই তাঁর গল্প। বলার ভঙ্গিটাই তাঁর গল্পের বিষয় হয়ে উঠছে। এভাবেই বারবার বদলে গেছে তাঁর গল্পের বলার ভঙ্গি, বিষয়, সর্বোপরি তাঁর গল্প।  

‘দু-তিনটে উদোম বাচ্চা ছুটোছুটি করছে লেবেল-ক্রসিং বরাবর’ (১৯৭৯) গ্রন্থের নামগল্পটির নামকরণও বেশ বড়ো। গল্পের প্রথম বাক্যই এটি। একটি স্টেশন চত্বরের প্রেক্ষিতে লেখা হয়েছে। মাঝে এসেছে লোকাল ট্রেনের ভিতরের ভিড়ের ছবি। বর্ণনাটাই গল্প। আর এই বর্ণনার মধ্যে মাঝে মাঝে বলা হয়েছে দুয়েকটি অমোঘ বাক্য। শুরু হচ্ছে এভাবে—

“দু-তিনটে উদোম বাচ্চা ছুটোছুটি করছে লেবেল-ক্রসিং বরাবর। কঞ্চির মাথায় সুতো দিয়ে কাগজ বেঁধে ঘুড়ি ওড়াচ্ছে। ছোট ভাইটা ইস্টিশানের লোহায় হোঁচট খেয়ে রক্তারক্তি ঘটিয়েছে। কয়লা-কুড়োনো মেয়েটি নিজের আধ-ময়লা ফ্রকের কোণা দিয়ে তার চোখ মুছিয়ে দিচ্ছে। পিঠে হাত বুলোতে বুলোতে আদর করছে : লেগেছে না রে ? খুব লেগেছে ? একটা পেট-উঁচু রোগা ডিগিডিগে বাচ্চা মানুষজনের তোয়াক্কা না করে প্লাটফরমের ওপর ছচ্ছরিয়ে মুতে দিচ্ছে। খড়ি-ওঠা কালচে শরীর, গলায় রুপোর তাবিজ, কোমরে লাল ঘুন্সি। তার ভাই বোল রাধা সংগম হোগা কি নেহি গাইতে গাইতে প্লাটফরমেই বসে পড়েছে। পড়পড়িয়ে হাগছে। টকটক এক দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে। আটটা-চল্লিশের লোকাল ধরতে সবাই ব্যস্ত, কেউ দেখেও দেখছে না।”

একটা গা-ঘিনঘিনে কদর্য বর্ণনা। কিন্তু এর বাস্তবতাকে আমরা অস্বীকার করি কীকরে ? দুটি মাত্র অনুচ্ছেদ রয়েছে এই গল্পে। প্রথম অনুচ্ছেদের শেষ দুটো লাইন খুব গুরুত্বপূর্ণ— "পাকুড় গাছের শাখায় ঝুলে আছে নিবীর্য চাঁদ আর হিজড়ে-প্যাটার্ন স্বাধীনতা। যেখানে নুনু উঁচু করে ছচ্ছরিয়ে মুতে দিচ্ছে ইজেরটুকুও জোটাতে না পারা বালক, ভারতের ভাবী নাগরিক।” হ্যাঁ, যাদের আমরা কোনওভাবেই ধর্তব্যের মধ্যে আনি না, তাদের জন্য আলাদা একটা সিংহাসন এগিয়ে দিয়েছেন লেখক। তারাই ভারতবর্ষের নাগরিক হয়ে উঠবে একদিন। এভাবেই তারা আজন্ম ভারতবর্ষকে চিনে নিচ্ছে।  

দ্বিতীয় তথা শেষ অনুচ্ছেদটি বেশ বড়ো, প্রায় তিন পৃষ্ঠা জুড়ে। শুরু হয়েছে— “ইজ্জতের চাইতে খিদে জিনিসটা অনেক বেশি বাস্তব বড়দা— বলে মালতি উপস্থিত মানুষদের গ্রাহ্য না করে ব্লাউজ ব্রেসিয়ার তুলে নিয়ে গটগটিয়ে বারোয়ারি কলতলার দিকে চলে যাচ্ছে।” এরপর নানান ছবি— কাঠ-কুটোর আগুনে মহিলাদের রান্না, প্ল্যাটফরমের উপর ছেলেদের হাগা-মোতা, রেল লাইন দিয়ে হেঁটে যাওয়া ইত্যাদি। এখানকার মানুষদের রোজ নামচাও এসেছে। কার্জন পার্কে চাটাইয়ে শুয়ে তেল মালিশ, রাজভবনের ফুটপাতে খদ্দেরের আশায় মালতীদের দাঁড়িয়ে থাকা...। আর বার বার উদগ্র হয়ে উঠছে প্ল্যাটফরমের আপাত কদর্য চিত্র— “উবু হয়ে বসে ন্যাংটো বাচ্চাটা এখন মুত দিয়ে প্লাটফরমে আল্পনা আঁকছে নিজের মনে। কাদা মুত মাখা আমুল মুখে পুরছে। গু ঘাঁটছে তার ভাই, হাত-পা এখন গুয়ে মাখামাখি। সে সেই অবস্থাতেই তার সংগীত চর্চা চালিয়ে যাচ্ছে।” সবাই নির্বিকার ভাবে হেঁটে চলছে ফুরসৎ নেই কারও। 

ট্রেনের ভিতরের ছবিও এসেছে। “দাঁড়িয়ে আছে শুকনো চেহারার যুবক, ধূপকাঠির বাণ্ডিল ঝোলাব্যাগে। তার পেছনে লাইন দিয়েছে বছর-ষাট বয়সের এক বৃদ্ধ, খোঁচা খোঁচা দাড়িতে চোখ মুখ দেখা-যায়-কি-দেখা-যায়-না, হাতে ফাউন্‌টেন পেনের বাক্স। নাঙা পা, হাঁটু-বহর কোরা ধুতি, গায়ে কোন বাবু লোকের কাছ থেকে চেয়ে-চিন্তে-আনা বেঢপ মাপের বিচিত্র এক টি-সার্ট— বে বা ক ভারতবর্ষ। করছেন কি— ঘেমো শরীর নিয়ে একটু সরে দাঁড়াতে পারেন না— প্যাসেঞ্জারদের ভিতরে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে।” 

‘বে বা ক ভারতবর্ষ’ লক্ষ্য করবার মতো এই শব্দবন্ধ। তার বিন্যাসও ‘বেবাক’ শব্দের প্রতিটি বর্ণকে আলাদা করেছেন। প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে ইদানীং তিনি তাঁর নাম আর পদবীর মধ্যে কোনও রকম স্পেস ব্যবহার করছেন না— ‘সুবিমলমিশ্র’, এভাবেই লিখছেন। এখানে ‘বেবাক’— শব্দবন্ধটিকে আলাদা করে চিহ্নিত করেছেন। ভারতের আকাঁড়া, আদুল স্বরূপটিকে উন্মুক্ত করতে চেয়েছেন লেখক। ঝকঝকে রাঙতায় মোড়া যে দেশটাকে আমরা দেখি, সেটা সঠিক দ্যাখা নয়। দেশের আলখাল্লাহীন, মোড়কহীন নগ্ন চেহারাটাকে আলোকিত করেছেন। 
      
গল্পটি শেষ হচ্ছে— “ইজের-বিহীন ভারতের দুই ভাবী নাগরিক তাদের সামনে নুনুতে আঙুল রেখে দাঁড়িয়ে আছে, সংগম হোগা কি নেহি গাইছে, আর চিড়িয়াখানা দেখার চোখে ট্রেনে মানুষ উপচে-পড়া দেখছে।” 

একদিন প্রকৃত নাগরিক হয়ে উঠবে যারা, তাদের সামনে প্রকৃত ভারতবর্ষকে মেলে ধরেছেন সুবিমল মিশ্র। আকাঁড়া এবং প্রকৃত ভারতবর্ষ, আমাদের স্বদেশকে ভাবী নাগরিকদের সঠিক অর্থেই চেনা যে বড়ো জরুরি!         
বিশ শতকের ষাট-সত্তরের বছরগুলিতে বাংলা ছোটোগল্প নিয়ে বহু আন্দোলন হয়েছে। সবকটি আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল তথাকথিত আধুনিকতা থেকে সরে আসা। বহু ক্ষেত্রে সেইসব আন্দোলন খানিকটা সফলও হয়েছে। বাংলা গল্পের পালাবদলও ঘটেছে কিছু আন্দোলনের সূত্রে। কিন্তু সুবিমল মিশ্র প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনও আন্দোলনের শরিক না হয়েও এই কাজটা সাফল্যের সঙ্গে করতে পেরেছেন। বারবার ন্যারেশনকে আশ্চর্য দক্ষতায় ভেঙেছেন। তাঁর কোনও পূর্বসূরী নেই। হয়তো উত্তরসূরীও আসবে না। তিনি সব অর্থেই বাংলা গল্পের স্বমহীম সম্রাট। আমরা পছন্দ করি বা নাই করি তাঁর অনিবার্য এবং অমোঘ গল্পগুলিকে কোনও ভাবেই এড়িয়ে যেতে পারি না। প্রকৃত প্রস্তাবে বাংলা গল্পের পালাবদল ঘটিয়েছেন তিনি।

পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

4 Comments

  1. সুবিমল মিশ্র সবসময়ই নতুন করে দেখতে শেখান , ভাবতে শেখান।

    ReplyDelete
  2. অসাধারণ বিশ্লেষণ। আমার প্রিয় গল্পকার।

    ReplyDelete
  3. সুবিমল মিশ্রের গল্পের আলোচনা পড়তে পড়তে বার বার মনে হচ্ছিল, গল্পকার গল্প লেখেন নি, জীবনের অন্যতর এক যাপন দেখাচ্ছেন। দেখলাম। আশ্চর্য হলাম। বিশেষ করে ' পরীজাতক' গল্পটির বিষয় এবং আঙ্গিক কয়েক মুহূর্ত যেন হৃদপিণ্ড স্তব্ধ করে দিয়েছিল। শিহরণের এক শীতল স্রোত বয়ে গেল যেন। প্রথা ভাঙার জন্য প্রথাকে অস্বীকার করেন নি সুবিমল। প্রতিদিনের বাস্তবকে একটুও এড়িয়ে না গিয়ে স্পর্ধা ভরে তাকে ধরেছেন অবলীলায়।
    অভিনন্দন রইল বিশ্বজিৎ এর জন্য।

    ReplyDelete
  4. সমৃদ্ধ আলোচনা। তবে জ্যোতি চিহ্ন বোধহয় নয়, টাইপের ভুল হয়েছে, ওটা যতি চিহ্ন হবে।

    ReplyDelete