জ্বলদর্চি

তিনটি কবিতা / মলয় সরকার

তিনটি কবিতা 
মলয় সরকার


স্বপ্ন দেখা বুড়ি

ছেঁড়া চটের ভাঙ্গা ঘরে প্রদীপ জ্বলে না।
স্বপ্ন দেখে গাল তোবড়া হাড় ছাড়ানো বুড়ি,
শীতের রাতে কুকুর যেন ছেঁড়া কাঁথায় মুড়ি,
তুলসী তলা নেইত ঘরে প্রদীপ জ্বলে না।

স্বপ্ন দেখে অতীত দিনের কোমর কুঁজো বুড়ি, 
শাঁখ ঘন্টা বাজছে কোথায় ঠাকুর পূজোর ঘরে-
জমি জিরেত হারিয়ে গেছে সবাই গেছে মরে,
স্বপ্ন দেখে আজও মনে, চুলে শনের নুড়ি।

কোন কালে কোন গ্রামে ছিল চোদ্দ ঘরের বাড়ি,
বাপের ছিল স্বামীর ছিল গোয়াল ভরা ধান,
কোন আকালে কেমন করে সবই অবসান,
আপন যারা ছিল সবাই দিয়েছে আজ পাড়ি।

স্বপ্ন তবু আঁকছে চোখে মায়ার কাজল টান,
হাড় হাবাতে সব খোয়ানো ডাইনি সে এক বুড়ি-
হারিয়ে গেছে কোন অতলে পুরানো সম্মান-
মনের মাঝে তবু যেন ফুটছে সে এক কুঁড়ি।

তুলসী তলা হারিয়ে গেছে প্রদীপ জ্বলে না,
সব গিয়েছে বুড়ির তবু স্বপ্ন মরে না।


পথজ

পথের ধারেতে জন্ম হয়েছে পথই হয়েছে ঘর,
আকাশের তলে ভূমিশয্যায় উন্নিদ রাত কাটে,
পথে পথে আছে উল্লাস তার পথেই তো অবসর।
সন্ধ্যা যখন রক্তিম ফেনা ছড়ায় সন্ধ্যামাঠে-

স্বপ্ন হাজার ভিড় করে সেই আঁধার পথের কোণে,
সাগরের মত মুক্ত জোয়ার খেলে যায় দিবা নিশি-
প্রাত্যহিকের চাওয়া পাওয়া কিছু ছাপ রেখে যায় মনে।
পথের মত বৈরাগ্যেই জীবন আজ সন্যাসী।

তবু কি কখনও বসন্তবায় খেলে যায় খেলা মনে,
পরভৃতের কুহুসন্দেশ এনে দেয় মধু লেখা,
উদাসী পথে কি রক্তিম ছাপ এঁকে যায় নির্জনে,
কি জানি কোথায় উতল হাওয়ার পড়েছে চরণরেখা।



সপ্তর্ষি

অনাদি অনন্ত কাল ধরে,
অনন্ত জিজ্ঞাসা বুকে ধরে
তাকিয়ে আছে সপ্তর্ষি;
লক্ষ কোটি অতৃপ্ত হৃদয়ে তোলে
অনুরণন,
বিদ্রোহী হয়ে ওঠে
অসংখ্য জিজ্ঞাসুদৃষ্টি,
জেগে ওঠে লক্ষ কোটি বুদবুদের মত
অগণ্য বিদ্রোহী-

যখনই ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নামে
এক পা এক পা করে,
কালিমামুক্ত আকাশে জেগে ওঠে সপ্তর্ষি।

লক্ষ কোটি প্রভাতী পাখীর কুজন
আজ অবসন্ন-
সত্য আজ বিদ্রোহী জিজ্ঞাসার নবকেতন।
 
পেজে লাইক দিন👇


Post a Comment

1 Comments

  1. মলয় সরকারের কবিতা ভালো লাগল।

    ReplyDelete