জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা-১১ / শুভশ্রী রায়

গুচ্ছ কবিতা-১১ / শুভশ্রী রায়


আলোয় ছায়ায়

ছায়াটুকু চুরি করে নিই গাছটিকে রেখে,
কৌশলী গাছ নিজেকে ফের নেয় ঢেকে
কোন অপূর্ব শিল্পী রেখেছে গাছ এঁকে,
পাখী ডাকে নিচে ঘাসগালিচার থেকে!

এই গাছ, ডালে ডালে পাখীদের মেলা
তলায় কখনও বা খরগোশ করে খেলা,
অকাতরে গ্রাস করে নেয় সমস্ত বেলা
তাকিয়ে তাকিয়ে হয় কাজে অবহেলা।

যা কিছু রুটিন বাঁধা, শাসনের হাত ধরা
তোলা থাক, বাদ যাক আজকের পড়া,
সবুজে দৃষ্টি রেখে নিজের প্রহরকে গড়া
সামান্য নয় মোটে, ছেড়ে দিই সব ত্বরা।

শুষে নেয় আমার চোখ অদ্ভুত মায়া,
দিনের সবুজ জাদুতে ডুবে যায় কায়া,
তারপরে আয়ুর ভাগে আলো ও ছায়া
সাফল্য-ব্যর্থতা খোঁজে কেমন বেহায়া!

গহন টান

হৃদয় জুড়ে তার শান্তি, সবুজকালো জল
ডাকে আমায়, ভাবি- যাব কি না যাব,
হাতছানি দেয় ছায়া ঘেরা পুকুর টলটলে
খালি খালি বলে- আমার ভেতর নাব।

সেই পুকুরে নামা সহজ তো নয় মোটে
ছেড়ে দিতে হয় পোড়া সংসারের টান,
তাকে নিয়েই তো সকল টানাপোড়েন
জমে থাকা কত মান আর অভিমান।

ঘাটের সিঁড়ি দিয়ে নামার সময়ে ঠিক
এত ধপাস ধপাস নিষেধ করে এ কি!
সব হিসেব চুকিয়ে দেওয়া এক পলেই?
যায় না, বুকের মাঝে অভিমানের ঢেঁকি।

পুকুর ভরা জাদু-ডাক , জলের আদর
প্রাণ জুড়ানো শীতলতা বড়ই প্রশান্তি,
মায়ায় নিজেকে সঁপে দেওয়ার আগে
নাগপাশে টেনে ধরে সাংসারিক ভ্রান্তি।


জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇



আলোবাসা

বানাবো মনের মতো বাড়ী, নাম দেব আলোবাসা
বন্ধুরা যাবেন সেখানে, এই আমার একান্ত আশা
বাড়ী খুব বড় এমন নয়, বড় জোর তিনখানা ঘর
সামনে বাগানে শিউলি, পেয়ারা, কুল গাছ পরপর
বারান্দা হবে টানা, পূরবের দিকে তার আগ্রহী মুখ
শান্তিতে বসে চেখে নেব রোদ্দুর ও জ্যোৎস্নার সুখ
বাড়ী নিরিবিলি, রাস্তার ওপরে নয় তবে নিরাপদ
সম্পত্তি হবে না শুধু, ভবন আমার জীবনের সম্পদ
তৈরি করার পরে কাঙ্খিত ছিমছাম আলোবাসা
মিটে যাবে জনমের মতো নিজের বাড়ীর পিপাসা।
আলোকিত নিরিবিলি, প্রার্থনাসম একতলা বাড়ী!
বন্ধুরা যেও মাঝেমাঝে, সে বাড়ী মাত্র আমারই। 


পুতুল কাজ নারাজ

আমাদের বাড়ী ভর্তি নানা রকম পুতুল
একেক জনের একেক রকম মেজাজ,
পোষাকআষাকও তাদের আলাদা আলাদা
পুতুল সংসারে তাদের ভিন্ন ভিন্ন কাজ।

একটা পুতুল রান্না করে তবে চুলও বাঁধে
আরেকটা সে বিছানা করে এবং তোলে,
জামাকাপড় কাচা ও ঘর ঝাড়ার পুতুল অন্য
কখনোই তারা নিজের কাজ না ভোলে।

এদের মধ্যে একটা পুতুল ভীষণ কুঁড়ে
কোনও কর্মই করতে চায় না সহজে,
হাজার বার একটি কাজ করতে বলা হলেও
ফাঁকি দেওয়ার উপায় খালি খোঁজে।

তাইতো বাকি পুতুলগুলো নিরুপায়
কু্ঁড়ে বন্ধুর কাজ নিজেরা দেয় করে,
পুত্তলিকা কর্মবিমুখ হলেও কি এমন ক্ষতি?
দোষ কি থাকবে না তাদের ভেতরে!


মনোহারী

কাচের নীল সবুজ মনোহারী চুরি
এ জগতে তাদের হয় না কি জুড়ি?
আমাকে অনেকগুলো দাও দেখি
দুই হাতে সাজাই রঙীন গায়কী!

শুধু কাচ নয়, চুড়ির মাঝে স্বপন
বাসনা আমার সহজাত সোনালি,
সব কিছু মিলে সাজায় আমাকে
ভাগ্যিস আমায় কিশোরী বানালি!

Post a Comment

1 Comments

  1. দারুন লেখা দারুন

    ReplyDelete