দেশান্তরী -২৮
হিল্লোল রায়
ফিলাডেলফিয়া ত্যাগ, ফার্গো, নর্থ ডাকোটা অভিমুখে
প্লেনের মধ্যে বসে যাত্রাপথের বর্ণনা
ডিসেম্বর ২, ১৯৭৫
মঙ্গলবার, সকাল ৭-৪০ মিনিট
নর্থ ওয়েস্ট অরিয়েন্ট এয়ারলাইন্সের বিমানে বসে
আজকের দিনটা সত্যিই উল্লেখযোগ্য কারণ আজ ঠিক তিনমাস পূর্ণ হল। বেশ মনে আছে, নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে এনভায়রণমেণ্টাল ইঞ্জিনিয়ারীং এ M.S. করবার জন্য বিগত (সেপ্টেমবর ২, ১৯৭৫ মংগলবার) আজকের এই ফ্লাইটেই ফিলাডেলফিয়া ত্যাগ করেছিলাম। ফিলাডেলফিয়ার পরিচ্ছন্ন নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল ছেড়ে বরফের স্টেট নর্থ ডাকোটায় যাচ্ছি। মনটা তাই ভীষণ খারাপ লাগছে। কিন্তু কর্তবের খাতিরে আমাকে যেতেই হবে। গতকাল অর্থাৎ ডিসেম্বর ১, ১৯৭৫ থেকে আমার Winter Quarter শুরু হয়ে গিয়েছে। আর আমার কোন ক্লাস না থাকায় ফিলাডেলফিয়া থেকে ফার্গো অভিমুখে আজ সকালেই যাত্রা করলাম।
গত শনিবার অর্থাৎ নভেম্বর ২২, ১৯৭৫ ফার্গো থেকে সকাল ১০-৫৫ -এ বেরিয়ে ফিলাডেলফিয়াতে পৌঁছেছিলাম সন্ধ্যা ৭-১০। তারপর নভেম্বর ২৪, একটা ইন্টারভিউ দিয়ে এলাম হ্যারিসবার্গে। চাকরীর জন্য এটাই আমার জীবনের প্রথম ইন্টারভিউ এবং এ জন্যই ফার্গো থেকে ফিলাডেলফিয়াতে আমার ক্ষণিক আগমন। ফল' কোয়ার্টার শেষ হয়েছিল নভেম্বর ২০, ১৯৭৫। দিন সাতেকের ছুটী। চাকরীর ইন্টারভিউটাও ঠিক এই মুহূর্ত্তের মধ্যে পড়ল। তাই এসেছিলাম ফিলাডেলফিয়াতে। আজ আবার কর্মস্থলের দিকেই ছুটছি DC 10 প্লেন -এ করে।
ফিলাডেলফিয়া ত্যাগ, ডেট্রয়েটের পথে !!
ঘুম থেকে উঠেছি ভোর ৫-০৫এ। হাতমুখ ধুয়ে বাথরুম থেকে বেরুতেই ৫-২৮। তাড়াতাড়ি প্রস্তুত হয়ে নিলাম। আমার সংগী -দুখানা হ্যান্ডব্যাগ। ওগুলো আগে থাকতেই গুছিয়ে রেখেছিলাম। মেজমামা-সেজমামা ও ঘুম থেকে উঠেছেন একটু সকাল সকাল ৬-১৫ এ। আজ ডায়েরি লিখতে বিশেষ ভাল লাগছে না। গত সপ্তাহটা লম্বা পাড়ি দিয়েছিলাম আমি, মেজমামা-মামিমা-কাকলী। প্রায় ৯০০ মাইলের কাছাকাছি। ফিলাডেলফিয়া থেকে 'ভার্জিনীয়া বীচ'। মাঝখানে অবশ্য নিউজার্সি-তে মেজমামার বন্ধু ডঃ গৌ্রাঙ্গ সুন্দর চক্রবর্ত্তীর বাড়ীতে নভেম্বর ২৭, ১৯৭৫ এর রাতটা কাটিয়েছিলাম। গত সপ্তাহটা বেশ হৈ-চৈ এর মধ্যে কিভাবে কেটে গেল টেরই পাই নি। আবার কর্মব্যস্ততা শুরু হল ভেবেই মনটা আরও বেশি খারাপ লাগছে। আজকের ফ্লাইট নং ৫১৫। আমার সীট নম্বর ২৩ সি।
প্লেনের যাত্রাপথের বর্ণনা আজ আর লিখতে ভাল লাগছে না কারণ নতুনত্ব কিছুই পাচ্ছি না। তা ছাড়া বিগত সেপ্টেম্বর ২, ১৯৭৫ মংগলবারে এই ডাইরীতে ফিলাডেলফিয়া থেকে ফার্গো যাত্রাপথের বর্ণনার সংগে আজকের এই যাত্রাপথ, দিনক্ষণ সমস্ত কিছুই হুবহু এক। এখন চলেছি অনেক উঁচু দিয়ে, মেঘের মধ্যে সূর্য্যের আলো পড়ে নীচের দৃশ্য ঢাকা পড়ে গিয়েছে। মামাদের এ্যাপার্টমেন্টে E 102 থেকে বেরিয়েছি সকাল ৭-১০ ভারাক্রান্ত মন নিয়েই।
🍂
ডেট্রয়েট বিমানবন্দরে অবতরণ !!
হাতে সময় বেশি নেই। সকাল ৭-৫০ মিনিটে মেজমামা-সেজমামা আমাকে See Off করতে এসেছেন। ফিলাডেলফিয়া এয়ারপোর্টে। রাস্তা সর্টকাট করে আমরা এয়ারপোর্টে পৌঁছালাম ৭-৩৫। মেজমামা টিকিট করে দিলেন, ফিলাডেলফিয়া থেকে ফার্গো ভাড়া ১০৪ ডলার ৭৩ সেন্টস। গতবার যখন গিয়েছিলাম তখন ছিল ১০১ ডলার ৭৩ সেন্টস। আমার হ্যান্ডব্যাগ চেক করে প্লেনের মধ্যে ঢুকলাম ঠিক ৭-৪৮ মিঃ। মেজমামাকে একবার দেখে নিলাম শেষ মুহূর্ত্তে । প্লেন ছেড়ে দিল ৭-৫০ এ। আগেই বলেছি ডায়েরি লিখতে বিশেষ ভাল লাগছে না, কারণ যাত্রাপথের বর্ণনায় নতুনত্ব একেবারেই নেই।
ডেট্রয়েট বিমানবন্দরে এসে পৌঁছালাম ৯-৩৫এ আমার ঘড়ি অনুযায়ী। অবশ্য মিনিয়াপোলিশ পৌঁছাবার পর ঘড়ির কাঁটা একঘণ্টা পিছিয়ে নিতে হবে কারণ ফিলাডেলফিয়া এবং নর্থ ডাকোটার মধ্যে সময় পার্থক্য ঠিক এক ঘণ্টা। ডেট্রয়েটে বেশ কিছু সংখ্যক যাত্রী নেমে গিয়েছেন। চারিদিকে বরফ জমে সাদা হয়ে রয়েছে। আমার প্লেন ডেট্রয়েট বিমানবন্দরের রানওয়ের উপর দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে আধঘণ্টার জন্য। মন ভাল নেই, তাই সীটে বসে আছি। একটু ঘুমোবার চেষ্টা করছি। নতুন যাত্রীর আগমন শুরু হয়েছে।
প্লেন আবার চলতে শুরু করল ঠিক সকাল ১০-০২ মিনিটে। এবার গন্তব্যস্থল মিনিয়াপোলিশ। ডেট্রয়েট বিমানবন্দরকে 'টা' -'টা' জানাচ্ছি। আমার ফ্লাইট ৫১৫।
ক্রমশঃ
ক্লিক করে পড়ে দেখতে পারেন 👇
হে, কবি হে... /ঋত্বিক ত্রিপাঠী
0 Comments