শব্দে নয়, বর্ণে লেখা ব্রহ্মের সন্ধানে অরুণ দাস
ঋত্বিক ত্রিপাঠী
কবিতা কেন নির্দিষ্ট নিয়মে নির্মিত হবে! কেন একই রীতি মেনে বাচ্য ব্যঞ্জনা ধরা দেবে! যে-কোনও শিল্পকলারই প্রধান শর্ত হল, নতুনকে প্রতিষ্ঠা করা। তার জন্য চাই নতুনকে সমর্থন ও নতুনকে রূপ দেবার সাহস। অরুণ দাস সেই সাহসী কবি, যিনি জেড প্রজন্মের কবিতা আন্দোলনের প্রাণপুরুষ।
সম্প্রতি তাঁর 'বর্ণে লেখা ব্রহ্ম' নামে কবিতার বই প্রকাশ পেয়েছে। এ বইতে দুটি বিভাগ। বর্ণে লেখা ব্রহ্ম ও হারানো পাণ্ডুলিপি। প্রিয় বাংলা বর্ণমালা বর্ণ ধরে ধরে অরুণ তুলে ধরেন তাঁর অনুভূতি মুহূর্ত। এই পর্বে তাঁর প্রেম গোপন, শান্ত। এক সমাহিত রূপ। বিশ্ব প্রকৃতির কাছে তিনি ঋণী। আর, 'হারানো পাণ্ডুলিপি' পর্বে উঠে এসেছে ব্যক্তি প্রেম, আত্মরতি।
আসলে কিছুই ছিন্ন কিংবা বিচ্ছিন্ন নয়। খণ্ড তো আসলে অখণ্ডেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই মুহূর্তকে কবি ধরেন এই ভাবে: ছবির শহর নেই,/ অচেনা এয়ারপোর্ট, নিঃসঙ্গ/ শূন্য ফ্লাইট / অবাধ তারাদের ম্লান রানওয়ে/ মুছে যায় তৃপ্ত চাঁদ / মেঝের ছায়া ঘুমে,/ পথ ভুলে যাওয়া পাখিরা।( কবিতার নাম: ছ)
এভাবেই অরুণ পথ ভুলে যাওয়া পাখিদের ছায়া অনুসরণ করে অবচেতনকে শব্দরূপ দেন। শব্দের মধ্যেকার বর্ণকে করে তোলেন সজাগ। তাই বর্ণ তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই শব্দ না অরুণ তাঁর কবিতা লেখেন বর্ণে। বর্ণে লেখেন শব্দ-ব্রহ্ম।
আর একটি কবিতায় দেখা যাক ক্যাথারসিস। লিখছেন : অন্ধকার ভাবি, ভাবি পরিচিত শীত হাওয়া/ কুয়াশা বিঁধলে বুকে/ নিয়মিত / খুন করি নিজেকেই, নিজেকেই।(কবিতার নাম: আত্মরতি)। পরিবেশ পরিস্থিতির সিঁড়ি বেয়ে কবি তাঁর পাঠককে নিয়ে যান এভাবেই অতলে। যে অতলে কবির বাস। তাঁর একক যাপন। কুয়াশা শুধু আলো আঁধার নয়, আক্রমণ ও রহস্যময়তার অস্ত্র। সেই অস্ত্রে অবশ্যম্ভাবী যে ক্ষত, আর তার শীতলতা নিয়েই কবির সময়যাপন। তাঁর একা বোধ। বর্ণের মতো একা। শব্দ গঠনের আকুলতা আছে আর্তি আছে, কিন্তু বশ্যতা স্বীকার করে নয়। আত্মমর্যাদার বর্ণে আসলে অরুণ কবিতার নতুন ভাষা ও ব্যাকরণে আমাদের স্থির করেন, আমাদের ধ্যানমগ্ন হতে ইঙ্গিত দেন। কারণ তিনি অতিচেতনায় আস্থা রেখে জেড প্রজন্মের কবিতাকে দেন অবয়ব। তাঁর পরমচেতনার ভাষা জানান দেয়, কবিতা পুরোনো প্রথানুগ রীতি থেকে মুক্তি পেতে চাইছে।
বর্ণে লেখা ব্রহ্ম / অরুণ দাস
প্রচ্ছদ : কমলেশ নন্দ
কবিতিকা / ২৯৯/-
0 Comments