তিনটি কবিতা
মলয় সরকার
তুমি এলে -১
তুমি এলে
হলুদ বসন্তের নিঃশ্বাস বয়ে যায়
নিঃশব্দ বারান্দায়,
শূন্য ঘরে ওঠে জলোচ্ছ্বাস,
সবুজ শান্তির নরম আশ্বাস
ভেসে আসে,
দক্ষিণের শুয়ে থাকা ঘাসে
বাতাসের ঘুর্ণি ওঠে,
নেচে ওঠে পাতার নুপূর। কোকিলের শুষ্ক ঠোঁটে
বেজে ওঠে গান-
যেন মাঠে মাঠে সোনালী ধান
নবান্নের গন্ধ নিয়ে এসেছে অঘ্রাণ।
ঘুমহারা রাত শেষ হয়;
মন বলে আর নয়-
বিনম্র প্রভাতের গালে
ফুটে ওঠে ঊষার চুম্বন -
যেন পলাশের ফুল ফোটে স্বপ্নের ডালে,
সুদীর্ঘ দিনের
ভেজা মন শুষ্ক হয়ে
বিলম্বিত টোড়ি বাজে রয়ে রয়ে,
মনময়ুরী পাখা মেলে
তুমি এলে-
তুমি এলে-২
তুমি এলে
রবীন্দ্রসংগীত বেজে ওঠে সত্তার গভীরে,
অতুলপ্রসাদ নজরুলের ভিড়ে,
হাজার পাওয়ারের আলো জ্বলে
মনের তিমিরে,
মাইকেল এঞ্জেলো মিশে যায়
পিকাসোর রঙে আর
গণেশ পাইনের তুলির ছোঁয়ায়,
কুমারপ্রসাদের শিল্পচর্চার সূত্র মেলে পাখা
জীবনের নানা ছলাকলা সরিয়ে রাখা,
পাশের বাগানে ফুটে ওঠে
প্রজাপতি ফুল,
দিগন্তপারের অমানিশার বাসিন্দা
হয় ছিন্নমূল।
তোমার হাতের স্পর্শ
ভুলিয়ে দেয় দিন মাস কি হাজার বর্ষ,
সব তত্ত্ব ডুবে যায় গভীর অতলে-
তুমি এলে।
ডানাভাঙ্গা চিল
সেদিন দুপুর রোদে রাজপথে
পড়ে ছিল চিল-
ডানাভাঙা থ্যাঁতলানো মাথা তার
রক্ত মাখা ধুসর পালক,
চোখে ছিল অবিশ্রান্ত ক্লান্তিহীন শুধু হাহাকার-
বুকভরা ছিল বুঝি বুভুক্ষার যন্ত্রণা ক্ষুধার ;
সবাই তাকিয়েছিল দেহটার দিকে-
কারো চোখে ছিল দেখি
ঘৃণার প্রলেপ,
কারো চোখে মাখা ছিল উদাসীনতার কঠিন প্রক্ষেপ,
কেউ ছিল নিজসুখে মত্ততায় ভীষণ নিস্পৃহ,
কারো চোখে ভেসেছিল দূরে থাকা নিজ সুখী গৃহ;
কিন্তু দেখেছি আমি-
সেই ভিড় ঠেলে তুমি পথপ্রান্তে দাঁড়িয়ে একাকী,
তুমি চেয়েছিলে
তার সেই ছিন্নভিন্ন শরীরের দিকে।
চারিদিকে রোদ যেন ধীরে ধীরে হয়েছিল ফিকে,
ট্রামের কিংবা মোটর -বাসের আওয়াজ যান্ত্রিক
তবু তুমি একদৃষ্টে ঠিক,
একা চেয়েছিলে তার দিকে
দুঃসহ নির্নিমিখে-
হয়ত তোমার সাথে
খুঁজেছিলে মিল-
তোমারই স্বপ্নের বুঝি প্রতিকৃতি
থ্যাঁতলানো ডানা ভাঙ্গা চিল।
1 Comments
ভালো হয়েছে।
ReplyDelete