অরূপ তোমার বাণী থুড়ি জীবনী
(তৃতীয় পর্ব )
অরূপ পলমল
চতুর্থত :
আমি তোকে ‘ছাত্রী’ আজকে আর মানি না। এ বিষয়ে রয়েছে তোমার প্রবল আপত্তি। good!
হ্যাঁ!
মানি না!
আমি কিছুই শিখাতে পারিনি তোদের।
এই বিশ্বাস আমার আজ দৃঢ়।
আর যত দিন যাচ্ছে ততই আমি আমার ধারণায় আরও দৃঢ় হচ্ছি।
দোষ তোদের না।
অশিক্ষাটা আমার. .. তা আগেই বলেছি। এখানে অন্য কথা বলি --
তোরা এখন অনলাইন - এর যুগের স্মার্ট বাচ্চা। তোদের কানেকশন যতটা না আমাদের সাথে তার থেকে অনেক বেশি তোদের কানেকশন হৃদয়ের, - মুকেশ আম্বানি, অনিল আম্বানি, নীতা আম্বানির সাথে। তোরা যুগের আধুনিক প্রোডাক্ট। স্মার্ট!
সভ্য!
ডিজিটাল ভারতের হাইবিট ফসল।
আমরা ততটাই আনস্মার্ট!
মান্ধাতার যুগের বাসিন্দা।
কানেকশন টুটে যাচ্ছে।
network একেবারে কাজ করছে না।
চারিদিকে শুধু "সেলফি সেলফি" গন্ধ. ..
আমরা তোদের পড়িয়েছি বা পড়াচ্ছি- এ কথা আমরা ভুলে যাই।
যেতে হচ্ছে।
আগামীতে যেতে হবেও।
এগোচ্ছি সেদিকেই।
অজস্র উদাহরণ আছে।
এখানে নয়!
অগত্যা অন্যত্র অন্য কোনদিন দেওয়া যাবে।
তাই আমিও দাবী করি না যেখানে - সেখানে যে, আমি শিক্ষক বা তোদের "শিক্ষাদানের” সাথে যুক্ত একজন।
আর "দান" কী রে?
রীতিমতো সরকারের কাছ থেকে কড়ায়- গন্ডায় পয়সা নিয়ে তোদের সেদিনও পড়িয়েছিলাম আর এখনো পড়াই।
আমিও নির্দিধায় রাস্তা- ঘাটে বলে চলি- কেউ জানতে চাইলেই যে --"কোথায় যান এপথে প্রতিদিন? এদিকে কোথাও কোন কাজ বাজ করেন?"
-- আমি বলি নির্দ্বিধায়- "কলেজে একটা কাজ করি"!
ভাবনাটার জায়গাটা প্রায় শেষ হয়ে গেছে!
ভাবতে পারছিস না।
কোনকিছু -
ভাবাটা এখন তোদের "ফোর্থ সাব্জেক্ট"!
Additional পেপার!
ভাববার ফুরসত কই?
ভাবনাগুলো সব মুঠোফোনে বন্দী আজ। আর ভাবনাগুলো বন্ধক দিয়ে দিয়ে দিয়েছিস network- এর মালিকের মাথার কাছে। বিক্রি হয়ে যাচ্ছিস ডিজিটাল দুনিয়াই।
চক্রান্ত!
এ- এক গভীর চক্রান্ত!
কখনো পাখির কূজন কান পেতে শুনেছিস? পাখির ডানা মেলে উড়বার শব্দ শুনতে পেয়েছিস? কুকুরের গলায় হাত দিয়ে আদর করেছিস? বাছুরের গলায় হাত ছুঁয়ে তার প্রতিআবেগ লক্ষ্য করেছিস ও খেয়েছিস?
পিঁপড়ে- কেঁচো- উইপোকা- কেন্নোর হাঁটা .. একাগ্রতা ..পরিশ্রম. .. চোখ দিয়ে দেখেছিস?
বিরিয়ানি আর রেস্টুরেন্ট ছেড়ে ফোকরাপুকুর পাড়ের বেঁচকূল খেয়ে দেখেছিস?
আহ্!
কী সুস্বাদু !
ওরে .. .ওই. .. কান্না শুনেছিস ? মানুষের কান্না মানে অপরের কান্না কান পেতে শুনেছিস ?
কুকুরকে কোনদিন একটা পাঁচ- টাকার বিস্কুটের প্যাকেট খাওয়ালি না .. .. আদর করলি না.. . শুধু কুত্তার সহজাত জৈবিক প্রবৃত্তির দৃশ্য উপভোগ করে করেই জীবনটা কাটিয়ে দে না.. . মোর কী?
আর ভাবতে যাবিই বা কোন দুঃখে?
"মরণ" !
[ ধিন. .. ধা. .. ক. .. চা .. .ধিন. .. ধা / তেরে.. .. কেটে .. .. ধিন. .. না .. .ধা // ধুন... ধাক. .. চাক. .. চুক. .. ধুক. .. .পুক. .. ফুঁক. .. কুক. .. মুক. .. ধিন. .. .ধা !!
( বার্থরূম সিংগিং ধুন )]
পঞ্চমত :
প্রসংগ - "Misogynist"! নারী বিদ্বেষী!
স্ত্রী বিদ্বেষী!
আমি?
good!
হয়তো তাই!
মানলাম!
আমি আমার অল্প হলেও- নাই নাই করে কুড়ি বছরের শিক্ষকতা জীবনে এখন পর্যন্ত কম করে হলেও হাজার বার বলে এসেছি বিভিন্ন প্রসংগে ক্লাসে ক্লাসে- যে আজ যে তোরা (মানে মাইঝি গুলো) এই স্কূল- কলেজে জায়গা দখল করে বসছিস না- আট-ফাট মারছিস- বড় বড় লেকচার মারছিস- সেলফি তুলছিস - এ সবের পেছনে তোদের আসল দেবতা কে জানিস? কার দয়া?
তাই ঘরের দেয়ালে তোর বরের না.. . রামমোহন ও বিদ্যাসাগর -এর ফটো বড় করে টাংগিয়ে রাখবি। সকালে ঘুম থেকে উঠে হাত জড়ো করে নত হবি।
ঈশ্বর রে ঈশ্বর. .. . একদিন তোদের জ্যান্ত জ্বালিয়ে দিতো।
পুড়তিস!
দাউ. .. দাউ. .. করে. ..
চিৎকার করতিস. ..
ঢাক- ঢোল বাজিয়ে তোর আর্তনাদ চাপা দেওয়া হতো।
আগুন. .. আগুন. ..
কান পেতে শুনেছিলেন ও নিশ্চয় কেঁদেছিল. .. রামমোহন রায়! আধুনিক ভারতের পথিকৃৎ!
ঈশ্বর রে ঈশ্বর. .. ..(আমি টাইপ করছি- এই শব্দগুলো আর চোখে জল আসছে- ফোনের কিবোর্ড ঝাপসা! / আসলে দুদিন আগে "ধড়কন ২"- র শুটিং ছিলো তো। ভিজেছিলাম! হয়তো তাই।)
কে শুনে কার কথা?
সেলফি বাচ্চা!
বরের সাথে সেলফি তুলতে তুলতে.. .আর পোস্ট করতে করতেই এক জন্ম ওদের কম পড়ে গেলো রে .. .
আর শোন-- ওই 'বর'- নামক পুরুষ প্রজাতিটিও সেদিন ছিলো- ওই চিতা জ্বলার দিনে দর্শকের ভূমিকায়। হোক কলরবের দলে!
আহ্!
হোক কলরব!
ওই মহান বরটি যে আজও তোকে গ্রহণ করেছে.. .
সেলফি তুলছে দাঁত আর ঠোঁট 72.5 ডিগ্রি ক্যালিয়ে.. .
ওটাও ওই ঈশ্বরেরই দান--
আর বিদ্যাসাগর ?
জানবি একটু মানুষটাকে।
পাপ হবে না।
দেশ ঘরের মানুষ রে.. ..
হায় ঈশ্বর!
এ স্যারটাই সরকারের বেশি পয়সা পায় আর বেশি বেশি নাটক করে। কই? প্রাইমারী বা হাইস্কুলে এতো বছর পড়ে আসছি-- কই? কোন ম্যাসটরকে তো এতো নাটক করতে দেখিনি বাপের জন্মে?
হা হা হা.....
এবার আসি এতদিনের আমার অল্প পড়াশুনার ও লেখালিখির কথায়- --"Your Silence Will Not Protect You' by Audre Lorde.
--'My Life On The Road' by Gloria Steinem.
--'The Second Sex' by Simone de Beauvoir.
--'Invisible Women' by Caroline Criado Perez.
--'Fat is a Feminist Issue' by Susie Orbach.
--'Hood Feminism' by Mikki Kendall.
--'Men Explain Things to Me' by Rebecca Solnit.
----আরও আরও অনেক পড়েছি! দেখেছি!
সংগ্রহ করেছি।
কিছু অনলাইনে চোখ বুলিয়েছি।
ওই যে আগেই বললাম পেটের দায়। বড় বালাই!
পড়াতে গেলে তো কিছু পড়তেই হয়। বিনা পরিশ্রমে তো আর পয়সা নিতে পারি না। সরকার ও ছাত্র-ছাত্রীদের ঠকাতে তো পারি না। বল?
জীবনে অনেক ঠকেছি-
কিন্তু কাওকেই ঠকাতে পারিনি।
এই আফশোস আমার আজীবনের।
যদিও উপরের বইগুলোতে তেমন কিছু পায়নি। আমি ঠিক যেমনটা ভাবি তেমনটা কোন বই- এই খুঁজে পায়নি। আসলে জীবনচর্যা থেকে যা কিছু আমরা শিখি.. . ভাবি.... তা বোধহয় কোন বই থেকেই শিখতে পারি না। ভাবায় না.... জীবনের চেয়ে বড় বই বা শিক্ষক বোধহয় আর কেউ হতে পারে না প্রত্যেকের জীবনে।
আর আমার লেখালেখির বিষয়ে এখানে কিছু বললাম না। আমি তা নিজের কাছেই রাখতে ভালোবাসি। ভালোলাগে!
এবার ঘরের ভিতর আসি।
চল. .. ঢুকি !
আরে আয় না-- ভয় কিসের ?
"মে হু না" ! "তেরে সাথ "!
আমি আগেই বলেছি আমি অকর্মন্য ও অকেজো ও অসামাজিক অক্ষম ব্যক্তি!
বিকলাঙ্গ! এটা আমার বাড়ির সবাই জানে। এমনকি আমার ছোটো ছেলেও জানে।
আমি এই তো সেদিন ছেলে একটা প্রসংগে বলছিলো--"তোমার জীবনের সব থেকে কার বেশি প্রভাব আছে?"
আমি বললাম--"আমাদের বাড়ির দুই 'মা' ! মানে- 'আমার মা' আর 'তোর মা'। দুজন 'মা' আছে বলে আমরা এখনো খেতে পাচ্ছি।
জানি একদিন এদের অবর্তমানে হয়তো খেতেও পাবো না আমরা। আর তোর ঠাকুমা ছিলো বলে আমি ছাত্রজীবনটা উতরে গেছি কোনভাবে। না হলে আজ মাঠে খাটতাম। আর তারপর একটা সময় তোর 'মা' এসেছিল বলে আমি গোটা মানে আস্ত মানুষটাই উতরে গেলাম। আজ আমি যা কিছু সবই তোর মায়ের জন্য। আমার আজকের পায়ের মোজা থেকে মাথার সেম্পু সবই তো তোর মা। আমি একটা আস্ত ঢেঁকি ছাড়া কিছু নয়।
তাইতো তোর 'মা'- কে একটা গান প্রায় বহুবছর শুনিয়ে আসছি সেই ভোরবেলা থেকে! আজও--
'একা মোর গানের তরী ভাসিয়েছিলাম নয়ন-জলে।
সহসা কে এলে গো
এ তরী বাইবে ব’লে
যা ছিল কল্পমায়া,
সে কি আজ ধরল কায়া?
কে আমার বিফল মালা
পরিয়ে দিল তোমার গলে।
কেন মোর গানের ভেলায়
এলে না প্রভাত-বেলায়?
হলে না সুখের সাথী
জীবনের প্রথম দোলায়।"
আমি খুব একটা নারী পিপাসু নই- সবাই জানে। নারী নিয়ে কারবারও খুব একটা করি না। আমার কাজও না।
তবুও যে আমি সাধু সন্ন্যাসী- ঠিক তাও নয়। মাংশাসী নই কোনকালে। আর এখনতো আবার কোলেস্টোরল- এর ওষুধ খেতে হয়। কিন্তু ওই যে মন রে- একটু মন দেখতে পেলে চুক-চুক করি আর বই কী! তবে আজ তারও বড় সংকুলান! তাই এই বয়সে আর সমুদ্র সম নারী হৃদয় আজ খোঁজ করি না।
বুড়ো হলাম তো। সূর্য হেলে গেছে পশ্চিম আকাশে। এই ডুবু ডুবু। অত মহান নারী- হৃদয় রসভাণ্ড নিয়ে মোর কী হবে? গায়ে না মাথায় মাখাবো?
কোথায় রাখবো?
তাই জীবনে দু - একটা ভুল-চুক যে করিনি তা নয়- মিথ্যে বলা হয়ে যাবে। তবে তা নিয়ে খুব একটা পাপী ভাবি না- নিজেকে । অনুশোচনা করিনি কোনকালে। হয় নিও।
পৌরাণিক সব সাধু - সন্ন্যাসীরা যদি তাঁদের দীর্ঘদিনের সাধনা বা তপস্যার মঞ্চ ছেড়ে- মেনকা ও উর্বশীদের কোমল শরীর বা রমণীয় লাস্যে- নৃত্যে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায়- হ্যাঁ! মাত্র একটা নাচ বা গান শুনেই- তো মুই কে? আমি তো সামান্য নর! রক্ত- মাংসের! নরাধম!
ওরকম কতো কতো ছেঁড়া- ফাটা জিন্স পরা উর্বশী- মেনকাদের দেখি. .. হররোজ… ... কতো কতো গান শুনি ও গান গাই- কই ? তোদের পৌরাণিক ওঁদের মতো দাঁড়িয়ে যাই না তো... চলি... চলে যাই... হেঁটে- হেঁটে। পাশ কাটিয়ে।
আমি তো ফুল গন্ধ ও গান গাইতে প্রায় কলেজ স্ট্রিটে যাই- ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকি। আহ্! অপূর্ব স্বর্গোদ্যান! গোলকধাম! যেন ইন্দ্রের রাজসভা! পুরো মাখন!
কই? আমি তো তবুও আমার সাধনার ট্রেক থেকে সরে যাই না। দাঁড়িয়ে পড়ি না। দাঁড়িয়ে যাই না।
তাহলে তো তোদের প্রাচীন মুনি- ঋষিদের চেয়ে আমি অনেক বড় সাধু- সন্ন্যাসী রে .... অনেক বড় সাধক। জয় রাধে! জয় গৌর! জয় নিতাই!
জয় শ্রীকৃষ্ণ! (কেষ্ট- আর কেসটা এখানে আর খুললাম না)
তা বলে যে আমি তোদের "উগ্র নারীবিদ্বেষী"- এটা কি করে হলাম বুঝলাম না?
আর শোন ঘরের নারীটাকে আজ দীর্ঘ পনের সতেরো বছর রবীন্দ্রনাথের একটা নাটকের লাইন শুনিয়ে আসছি-
শুনিয়েই আসছি-
শত শত বার!
মানলে তো?----
"শাস্ত্রসাথে তর্ক করি,
নহে তোমা -সনে ! সভায় পণ্ডিত আমি, তোমার চরণে বালকের মতো!
দেবী, লহো মোর ভার! যে পথে লইয়া যাবে জীবন আমার
সাথে যাবে, সর্ব তর্ক করি পরিহার,
নীরব ছায়ার মতো দীপবর্তিকার!
জানিবার কিছু নাই,
নাহি চাহি গ্ঞান!
সব শাস্ত্র পড়িয়াছি,
করিয়াছি ধ্যান. ..
শত তর্ক শত মত!
ভুলাও, ভুলাও. ..
যত জানি সব জানা দূর করে দাও !
পথ আছে শত লক্ষ. ..
শুধু আলো নাই!
ওগো দেবী জ্যোতির্ময়ী --
তাই আমি চাই একটি আলোর রেখা
উজ্জ্বল সুন্দর তোমার অন্তর হতে!" ( 'মালিনী')
ওহে
রবীন্দ্র অনুরাগীর দল. ..
ওহে-
"কেউ যখন আমায় ‘ফেমিনিস্ট’ বলে / তার প্রতিবাদ করি আমি "-র দল. .. .
এই উপরের রবীন্দ্র নাটক ('মালিনী')- এর সংলাপটা মাত্র দশবার উচ্চারণ করো দেখি--"প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে"!
দেখি! আমিও-
"কার আছে হিম্মত ?"
(আমি তো পাঁচশ - সাতশবার ঈশ্বরের স্তবস্তুতি করে গেছি।
আর মুই হলাম গে- "MISOGYNIST"?
ওটা তোর "সুপ্ত গুপ্ত"টা!
আমি না.. .. মুই না.. .
কখনো না.. .
একেবারেই না.. .. না .. . না .. . না .. .
বুঝলি ?
"কাঁকন কাঁকন! ঝুমুর ঝুমুর!"
[পরবর্তী অংশ বিরতির পর]
0 Comments