বার্লিনের ডায়েরি -৭ পর্ব
চিত্রা ভট্টাচার্য্য
বার্লিনের প্রাচীর
শীতের কুয়াশার চাদরে ঢাকা কালচে আকাশের মাঝে মেঘলা ভাঙা রৌদ্দুরের সাথে মেঘদের লুকোচুরি খেলা চলছে প্রতিদিন। শ্রীময়ীর অলস প্রহর গুলো কাঁচে ঢাকা দেওয়াল জোড়া প্রিয় ' জানলার পাশে বসে আনমনে গড়িয়ে যায়। রাত আসে আবার একই নিয়মে,ভোরের পাখির ডাকে ক্যালেন্ডারের তারিখ পাল্টে যায়। ওর মনের গভীরতায় ভাবনা গুলো কত রকমে দেখা দেয়। সুদীর্ঘ চলার পথে ফেলে আসা অভিজ্ঞতা কত কিছু যে মনে করায় তার হিসেব নিজেই মেলাতে পারে না। প্রবল ঠান্ডায় ঘরের কোণে রুম হিটারের উষ্ণতায় বই ডায়েরি নিয়ে সময় কাটে।
দেওয়াল চিত্র।
সপ্তাহ শেষের এমনি এক সকাল এলো , লম্বা ঝাকড়া গাছ গুলোর ফাঁক দিয়ে সোনালী রোদ মাটিতে রৌদ্র ছায়ার আল্পনা এঁকেছিল । শীত কাতুরে সকাল অযাচিত রোদের তাপে ভারী মনোরম । এমন রোদ্রৌজ্জ্বল দিনের প্রত্যাশায় সহস্র প্রাণের আশীর্বানী খুশির স্রোতে ঝরে পরছে। না চাহিলে যারে পাওয়া যায়''এর মত ঝকঝকে দিনের শুরুতে সুযোগ এসেছে বেড়াতে যাবার।
শ্রীময়ী ট্যুরিস্ট ম্যাপ খুলেছে। কত জায়গা দেখার আছে এই শহরের মানচিত্রে। পট্সডাম প্যালেস ,বার্লিন ওয়াল ,বার্লিন জু। যদি ও সেদিন বার্লিন গেট দেখতে গিয়ে স্মৃতিসৌধ উন্টারডেন, লিন্ডেন রাইখস্ট্যাগ ,বার্লিন রেল স্টেশন আলেকজান্ডার প্লাজা ,ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ মিউজিয়াম ইত্যাদি জায়গা গুলো ইচ্ছে মত ঘুরে দেখেছিল আর ঋষভ খুব উৎসাহে বলেছিল ,পৃথিবীর প্রতিটা উল্লেখযোগ্য বিখ্যাত শহরের জায়গা গুলো দর্শনীয় স্থান হিসাবে বিশেষ প্রসিদ্ধ হয়ে গড়ে ওঠার পিছনে কোনো না কোনো ইতিহাস জড়িত থাকে। সে স্থানের শৈল্পীক সৌন্দর্য , পৌরাণিক উপাখ্যান ,বা ঐতিহাসিক গুরুত্ব গল্পের মাধ্যমে লোকমুখে প্রচারিত হয়ে ধীরে ধীরে জায়গাটি কালজয়ী হয়ে ইতিহাসে বিখ্যাত স্থান লাভ করে । আদ্রিজা মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বলে তারপরে দেখাযায় সে জায়গা গুলোতে কোথাও সিনেমার লোকেশন , কোনটি মিউজিয়াম অথবা কোনটি ঐতিহ্য গত আধুনিক স্থাপনার নিদর্শন রূপে স্মরণীয় হয়ে গিয়েছে।
স্প্রি নদীর তীরে
অদ্রিজার তাড়ায় আধ ঘন্টায় রেডি হয়ে পাঁচ মিনিটেই পৌঁছলো এস বার্ন ইউ বার্ন লোকাল রেল স্টেশনে। মান্থলি কুপন আগেই সংগ্রহে থাকায় ট্রেন এসে গেলে ,চকিতে উঠে প্রতিবারের মত জানলার ধারের সিট টি দখল করে শ্রীময়ী বাইরে তাকিয়ে থাকে। ইন্টারনেটের সুবিধা থাকাতে অচেনা পৃথিবীটা যেন এক মুহূর্তে হাতের মুঠোয়। পিতা পুত্রীর ইচ্ছে উইকএন্ডে নিজেদের মত প্ল্যান অনুসারে স্বাধীন ভাবে ঘুরে বেড়াবে বার্লিনের নিকটস্থ স্থান গুলো।
বার্লিনের গল্প লিখতে বসে শ্রীময়ী স্মৃতির খেয়ায় ভেসে চলেছে আট বছর আগের ঠিক তুষার স্নাত শীতের বার্লিনের সেই আনন্দ
ময় দিন গুলোতে।
দুরন্ত গতিতে ট্রেন ছুটলো, লাইনের পাশ দিয়ে সবুজ বুনো ঝোপ চলেছে ঘাড় হেলিয়ে। ওদের মাঝে ক্যাকটাস আর ফার্নের সারি হলদে রোদের পরশ পেয়ে চিকচিক করে এক গাল হেসে স্বাগত জানায়। অল্প সময়ের মধ্যেই ওরা পৌঁছেছিল অস্টবাহপ (Ostbanhof ) রেল স্টেশনে।এবং সেখান থেকে পাঁচ মিনিটের পথ , প্রচন্ড ঠান্ডার এলো মেলো বাতাসের চাবুক সহ্য করে স্প্রী নদীর ওপর লম্বা এক কাঠের সেতু পেরিয়ে বার্লিন ওয়ালের কাছে পৌঁছে শ্রীময়ীর মুগ্ধ চোখের পলক পরে না। দমকা বাতাসে বাকরুদ্ধ হয়ে আসে, অতীত নীরবে ফিস ফিসিয়ে আলোড়ন তুলে নালিশ জানায়। শত শত প্রতিবাদী রক্তাক্ত বিদেহী আত্মার হাহাকার বাতাসে গুঞ্জন তোলে । স্তব্ধ স্থিতধী জলরাশির ধারায় সে শব্দ সোচ্চার হয়ে বাতাস কাঁপায়।
সুরক্ষিত কংক্রীট পাথরে গাঁথা মজবুত ঐতিহাসিক দেওয়াল টির গল্প শ্রীময়ী শোনায় মুগ্ধ শ্রোতা তিতির কে।ঋষভ হেসে শ্রী কে বলে," বিদেশে বেড়াতে এসে তোমার মত এমন ইতিহাস জানা গাইড পাবো সত্যি সে আমাদের সৌভাগ্য "। শ্রী কৃত্রিম গম্ভীর হয়ে,বলে বাধ্য ছাত্রের মত মন দিয়ে শুনবে তো !
স্প্রি নদী
১৯৬১সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত আক্ষরিক এবং মতাদর্শ গত ভাবে বার্লিন কে দ্বিখণ্ডিত করে বিভক্ত করা হয়েছিল। জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র জি ,ডি ,আর পূর্ব জার্মানি দ্বারা পূর্ব বার্লিন সহ ,পশ্চিম বার্লিনের মধ্যে সীমানা প্রাচীর হিসাবে গন্ডি কেটে দেওয়া হয়েছিল। বার্লিন প্রাচীরের অবশিষ্ট্যাংশ বর্তমানে ৩০০মিটার মাত্র যার অস্তিত্ব আছে। যদি ও তা দেখতে খেয়ালী কোনো চিত্র করের বিশাল ক্যানভাসের মত। পৃথিবীর প্রায় সব ভাষাতেই কিছু না কিছু শান্তি মৈত্রীর বার্তা পরিবেশিত হয়েছে। দেওয়ালের ওপর আছে বিচিত্র সব পেইন্টিং। এই দেওয়াল যেন কোনো অঙ্কনপ্রিয় চিত্র শিল্পী মানুষের মহাতীর্থ। আদ্য প্রান্ত জুড়ে হাজারে হাজারে নানা রকমের ছবি আঁকা দেওয়ালের গায়ে। এবং এই সব গ্রাফিতি বা আঁকা ছবি গুলো কোনো পূর্ব বার্লিন বা পূর্ব জার্মানির প্রসিদ্ধ শিল্পীর আঁকা নয়।এবং এই বিচিত্র চিত্রশালার অঙ্কন শিল্প সব গভীর ভাবে মনোনিবেশ করে দেখতে অন্ততঃ কয়েকঘন্টা নয়,দিন লেগে যাবে।
দাপুটে শীতের হাওয়া উপেক্ষা করে ১৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১৩ফুট উঁচু দেওয়ালটির প্রায় দুই কিমি পথ হেঁটে ,যত দূর যাওয়া যায় যেন এক অশরীরী আত্মার ডাকে মোহগ্রস্থের মত ওরা হেঁটেছিল। প্রথমেই দেখা গেল,সোভিয়েত নেতা লিওনিদ ব্রেজনেভ এবং পূর্ব জার্মান নেতা এরিক হোনেকার কে চুম্বন রত অবস্থায় মগ্ন। কিন্তু কেন ?এই প্রশ্নের উত্তরের সমাধান নেই। শুধুই হেঁয়ালি তে ভরা অনেক ছবি মনে অজস্র প্রশ্ন উত্থাপন করে। ঋষভ দেখায় সাদা প্রাচীরের গায়ে গাঢ় নীল রঙের আঁচড়ে উড়ন্ত শান্তির দূত শ্বেতশুভ্র পায়রার চিত্র কেউ এঁকেছে। শুধুই দেওয়ালের পূর্ব পিঠে বা পশ্চিম পিঠে পশ্চিম ইউরোপের বা অন্য দেশের শিল্পীরা ও গ্রাফিতি এঁকেছে। যার যা খুশি রাজনৈতিক চিত্র থেকে নিসর্গ প্রকৃতি, মুখের ছবি থেকে নগ্ন নরনারীর দেহ চিত্র ,নানা রঙ্গে বিচিত্র ঢঙে ও ভাষায় হাজার হাজার ছোট বড় চিত্র ও লিখিত মন্তব্য। ঋষভ অবাক ! বলে এ কেমন ছবি ? তিতির বলে,ওর বন্ধু আলেক্সেই বলেছিল , এই দেওয়াল চিত্র ও মন্তব্যের বিশেষ কোনো কারণ নেই। পর্যটক রা বার্লিনে ঘুরতে এসে " নিরীহ মানুষ হত্যার" ঐতিহাসিক স্বাক্ষরের প্রতীক এই দেওয়াল টি যে দেখেছে তারই এক লিখিত দলিল রেখে যাচ্ছে ।
শ্রী আবার বলা শুরু করে, এই যে কংক্রীটের প্রাচীর দেখছো, এর সব টাই মজবুত দেওয়াল নয়,সেখানে নদী বন জঙ্গল এবং কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া ছিল। হাফ কিলোমিটার দূরে দূরে ছিল ওয়াচ টাওয়ার কেউ সেখানে আত্মগোপন করে আছে কিনা বাইরে থেকে তা বোঝার উপায় ছিলো না। এই প্রাচীরটি বার্লিনের চেক পয়েন্ট ব্রাভোর মধ্য দিয়ে পূর্ব জার্মানির হেমস্টেড শহরের সাথে সংযুক্ত ছিল এবং সে সময়ে পশ্চিম বার্লিন প্রবেশের জন্য চারটি রেলপথ ছিল। বিভক্ত বার্লিন শহরের বিভক্তি কে চিরস্থায়ী করতেই গড়ে তোলা হয়েছিল এই প্রাচীরটি। পুলিশী প্রহরার রক্ত চক্ষুর সতর্ক দৃষ্টি ,কর্তব্য পরায়ণ সেনা বাহিনীর টহলদার,বাঙ্কার ,প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কুকুর এবং কাঁটা তারের বেড়ায় দুই দিকের দেওয়াল দিয়ে বার্লিন কে এমন করে বিভক্ত করে দেওয়া হয়েছিল যে এই প্রাচীরটি ক্রমশ জার্মানিদের স্নায়ু যুদ্ধের এক ঐতিহাসিক নিদর্শন হয়ে উঠেছিল। আসলে দুই বিপরীত আদর্শের মধ্যে মত ভেদের কেন্দ্রবিন্দু ছিল শহরের বুকে এই বিশাল প্রাচীরটি। তৎকালীন দেশ শাসকের রাজনীতির অস্ত্র এক সময়ের যুদ্ধ হিংসা ,লোভ , বিদ্বেষ ,কায়েমী স্বার্থ প্রভুত্ত্ব কূটনৈতিক চক্রান্তে মানব সম্পদ ধ্বংস কারীর এক জ্বলন্ত উদাহরণ। আজো এই প্রাচীরের এক অংশ ইতিহাসের করুণ সাক্ষী হয়ে অবিচল দাঁড়িয়ে আছে এক কলঙ্কিত নায়কের ভূমিকায়। যেন এক অশরীরী আত্মার ডাকে মোহগ্রস্থের মত ওরা হেঁটে চলেছে।
একটানা কথা গুলো বলার পর একটু দম নিয়ে শ্রী কিছুটা এগিয়ে হাতের আঙ্গুল নির্দেশ করে বলে এই যে জায়গাটি দেখছো এটি একটি নোম্যান্স ল্যান্ড। যেখানে প্রাচীরটি গড়ে তোলা হয়েছিলো পূর্ব জার্মানির ১০০ গজ ভেতরে। এই ১০০ গজের মধ্যে থাকা বাড়ি ঘর এবং স্থাপত্য ধ্বংস করে এখানকার অধিবাসী দের তৎকালীন সময়ে অন্যত্র স্থানান্তর করে তখন এই নোম্যান্স ল্যান্ড তৈরী করা হয়েছিল। এবং এই নিরপেক্ষ এলাকা টি কে মৃত্যু ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। যেমন কারো পায়ের চিহ্ন সহজে চিহ্নিত করার জন্য এই দিকটি নুড়ি ও বালু দিয়ে ভরে দেওয়াতে স্থাপিত হয় এক স্বয়ংক্রিয় ফাঁদ। যা কারোর পায়ের স্পর্শে সচল হয়ে উঠবে এবং শব্দ পেলেই গুলি চালানো যাবে। রক্ষকের বুলেটের অব্যর্থ নিশানায় পাঁচিল টপকাতে গিয়ে এভাবে অকালে মৃত্যু বরণ করেছিল কত নিরীহ প্রাণ। এ ছাড়া স্পষ্ট দৃষ্টি সীমার মধ্যে থাকায় গুলি চালানোর জন্য খুবই সুবিধা জনক এলাকাটি হওয়াও ছিল বেশ গুরুত্ব পূর্ণ। অদ্রিজা মন দিয়ে শুনে বলে ,''হায়রে মানুষ খুনের কি সাংঘাতিক নির্মম পরিকল্পনা ''।
🍂
আরও পড়ুন 👇
জার্মানির রাজধানী বার্লিন শহর আলোচনার কেন্দ্র বিন্দু হয়ে উঠেছিল দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরবর্তী কালে। সেই সময় থেকে বার্লিন প্রাচীর পরিচিত হয়ে আছে পশ্চিম বার্লিন ও পূর্ব বার্লিনের সীমানা প্রাচীর হিসেবে। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন , যুক্তরাষ্ট্র ,যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্স জার্মানি দখল করে নেওয়ার পর বার্লিন কে দুইভাগে ভাগ করে। এক অংশ সোভিয়েত ইউনিয়নের অধীন এবং বাদবাকি অংশ যুক্তরাষ্ট্র ,যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের অধীনে চলে যায়। সুদীর্ঘ ২৮বছর এটি পশ্চিম বার্লিন থেকে পূর্ব বার্লিন এবং পূর্ব জার্মানির অন্যান্য অংশ কে পৃথক করে রেখেছিলো। পূর্ব পশ্চিম দুইদিকে একই দেশের একই ভাষাভাষির লোক বসবাস করেন কিন্তু তাঁদের একপাশ থেকে অন্যপাশে যাওয়ার স্বাভাবিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। প্রাচীর তোলার কারণে বহু পরিবারের জীবনধারা সুখ শান্তি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে যায় । জনজীবনে নেমে আসে গভীর দুঃখের কালো ছায়া। যেন এক অশনি সংকেত , বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত পরিবারের সদস্যরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। পশ্চিম বার্লিন পূর্ব জার্মানির একটি ছিটমহলে পরিণত হয়। পূর্ব জার্মানি থেকে শরণার্থীদের স্রোতে বাঁধা প্রদান ,এ ছাড়া ও সোভিয়েতের দাবী অনুযায়ী এই প্রাচিরের মাধ্যমে পূর্ব জার্মানি এবং ওয়ার্স ব্লক ভুক্ত রাষ্ট্র গুলোতে পশ্চিমা গুপ্তচর দের অনুপ্রবেশ রোধ করা।
পুঁজি বাদী বিশ্ব ইউরো ডলার এবং পশ্চিম জার্মানিতে মেধা পাচার রোধের বিরুদ্ধে এই প্রাচীরের ছিল প্রধান গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা। মানুষের মনে ক্রমশঃ অসন্তোষের পাহাড় জমে প্রতিবাদ ও প্রতিশোধের তুষের আগুন ধিকিধিকি করে জ্বলে উঠে একসময় ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। পাঁচ হাজারের ও বেশী ব্যাক্তি এই প্রাচীরটি পার হওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ৩২০০ জনকে ওরা বন্দি করে অকথ্য অত্যাচার করেছিল। এবং ১৯১ জন কে নির্মম ভাবে হত্যা করলে জনগণের চরম অসন্তোষ কয়েক সপ্তাহকাল ধরে নিয়মিত চলতে থাকে। তাদের পুঞ্জীভূত রোষ ক্রমশঃ প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। এবং তারা প্রতিবাদে গর্জে ওঠায় অভ্যন্তরীণ অশান্তি দূর করতে বাধ্য হয়ে ১৯৮৯ সালে ৯ নভেম্বর পূর্ব পশ্চিম খণ্ডিত ভূমির ,বিধি নিষেধ তুলে দিয়ে দুই বার্লিন কে একাকার করে দিয়ে পূর্ব জার্মান সরকার পশ্চিম বার্লিনে যাবার অনুমতি দেবার সিদ্ধান্ত নেয়। হাজার হাজার উৎসুক জনতা প্রাচীর ভেঙে বাঁধা নিষেধ টপকে পশ্চিম দিকে যেতে থাকে ,পশ্চিম প্রান্তে উৎসব মুখর পরিবেশে তাদের স্বাগত জানানো হয়। পূর্ব পশ্চিম বার্লিনে দ্বিধা দ্বন্দ্ব মিটিয়ে সৌহার্দ্যের সম্পর্কে তারা মিলিত হয়। কিন্তু সাধারণের মতে প্রাচীরের পতন দুই যুগ পেরিয়ে গেলে ও বার্লিনের দুই অংশের মানুষের মনস্তাত্বিক পার্থক্য স্বাভাবিক হয়নি। ঐতিহাসিক দেওয়াল চিত্র।
একটু এগিয়ে স্প্রী নদীর তীরে ওরা এসে বসেছিল। সবাই চুপ --কারো মুখে ভাষা নেই। বার্লিন ওয়ালের তলায় চাপা পরে গিয়েছে অজস্র নিরীহ তরতাজা প্রাণ। তাদের বাঁচার লড়াইয়ের প্রাণপণ সংগ্রাম , সব হারানোর হাহাকার ,বেদনার ক্রন্দন রোল শুধু প্রতিধ্বনিত হয়ে আকাশ বাতাস ভারাক্রান্ত করে ছে। সাক্ষী থেকেছে কয়েক হাত দূরের কলকলিয়ে বয়ে যাওয়া এই স্প্রী নদী। যেন অনুরণিত হয় সেই নির্মম কাতরোক্তি। '' ইটের পাঁজরে লোহার খাঁচায় দারুণ মর্মব্যাথা ' -- । সেই সময়ের ঘটনা গুলো ছায়া ছবির চলমান চিত্রের মত ওদের চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। উত্তেজনার প্রবলতায় এক অদ্ভুত রোমাঞ্চকর অনুভূতি শিরায় শিরায় প্রবাহিত হয়ে চলেছে। বেলা শেষে আকাশের অস্তরাগে নদীতীর স্বপ্ন ময়। বিদায়ী সূর্যের রক্তিম প্রতিচ্ছবির ছোট্ট ছোট্ট ঢেউ ভেসে চলেছে স্রোতস্বিনীর অজস্র ধারায়।
ক্রমশঃ
জ্বলদর্চি অ্যাপ ডাউনলোড করুন। 👇
0 Comments