জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১৫৯

 ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১৫৯
সম্পাদকীয়,
বড়দিনের একমাত্র প্রার্থনা, ঝোলা ভরা মজাদার উপহারগুচ্ছ। কে বলেছে? কেন সবিতা পিসি। আজ রাত পোহালেই ভোর হতে না হতেই মোজা খুলে দেখো সান্টা কি দিয়ে গেল। ঐ যে প্রচ্ছদের ছোটো বন্ধুদুটো অপেক্ষায়। রাত পোহালেই মোজা খুলে গুলি, লজেন্স, রঙ পেনসিল নিয়েই খেলা শুরু করবে। লাচুঙের গল্প জমে ক্ষীর। ওরা নেকড়ে খুঁজে চলেছে। ওরা কারা? সেটা শ্রীকান্ত আঙ্কেল বার বার প্রতিটা পর্বেই বলছে কিন্তু। বাসবদত্তা আন্টির জন্য আমরা ঘরে বসে নায়াগ্রা ঘুরে নিচ্ছি। ভূত দেখা এখনও শেষ হয়নি। তাই দিলীপ জেঠুর কুন্ডলার ভূতকান্ড এবারো আছে। সবশেষে বলতেই হয় কাল ছিল জাতীয় কৃষক দিবস। দোলনচাঁপা আন্টি প্রতিবারের মতো এবারো সুন্দর ভাবে এউ জানানোর কাজ টি করেছেন। আর শান্তা ও রাণিকে ছবি পাঠানোর জন্য বড়দিনের শুভেচ্ছে। শুভ বড়দিন।   -- মৌসুমী ঘোষ।

ধারাবাহিক উপন্যাস
লাচুঙের নেকড়ে
শ্রীকান্ত অধিকারী

পর্ব ৩১

ক্যায়া বোল রাহা হ্যায় সাব? সামনে এক কনস্টেবল উত্তরের অপেক্ষায়। 
-তোমাদের অফিসার সাহেবের সঙ্গে একবার দেখা করতে চাই। বলো কলকাতা থেকে ফ্রেন্ড এসেছে। 
এখনো কনস্টেবল লোকটা দাঁড়িয়ে। 
ও কি বাংলা বুঝছে না! আরো একবার বড় মামা বলে,-বলো কোলকাত্তা সে ফ্রেন্ড নন্দী স্যার আয়া হ্যায়। 
লোকটা চলে যেতেই গ্যাটসো বেশ অবাক হয়েই বলে,-সাব, দেখিয়ে,ও বাঙালি বাবুর ওয়াইফ অর উস কি লেড়কি। 
সত্যিই তো এতক্ষণ খেয়াল করে নি।এমনিতে এখানের পুলিশ স্টেশনগুলো সমতলের মত হয় না।এরিয়ায় অনেক ছোট। কিছুটা কাঠের কিছুটা পাকা।মানে পাথর দিয়ে গোড়া বাঁধা।কোনোটা  আবার গোটাটাই চৌকো পাথর দিয়ে তৈরি। নাথুলা বা দ্রাসে বা গুলমার্গের হায়েস্ট পয়েন্টে যেমন জওয়ানরা থাক থাক করে সাজিয়ে খোপের মত করে। তাতে লাভ হয় দুভাবে।নিজেদের সেফটি। অশান্ত প্রকৃতি আর দুর্বিনীত শত্রুদের থেকে প্রাথমিক রক্ষা।আর সে রকম কিছু ঘটলে বাইনোকুলার বা শক্তিশালী দূরবীন দিয়ে দূরের বিপদ সঙ্কেত সহজেই জানতে পারে। কোনো  কোনো ক্যাম্পে অবশ্য রেডিও ট্রান্সমিশন বা রেডিও ডিটেকশন অ্যান্ড রেঞ্জিংয়ের ব্যবস্থা থাকে।  এখানে এ সব না থাকলেও রেডিও ট্রান্সমিশনের ব্যবস্থা আছে।এতে করেই হেড অফিস এবং কখনো কাছাকাছি সেনাবাহিনীর ক্যম্পে যোগাযোগ করা হয়ে থাকে। বড় মামা সে সবই ভাব ছিল। অফিসের অন্য প্রান্তে যে মা মেয়েতে বসে আছে লক্ষ্য করে নি। যখন ওদের লক্ষ্য করল এবং কিছু প্রশ্ন করার উদ্দেশে চেয়ার ছেড়ে উঠছিল তখনই ওয়েল ড্রেসড একজন পুলিশ অফিসার এসে বড় মামার সামনে উৎসাহের সঙ্গে সোল্লাসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,-আরে নটবর নন্দী স্যার!  ইঁহা? ইটস অ্যা গুড সারপ্রাইজ! হাত ধরে ওখানেই বসে পড়ে দুজনে। 
 -এস পি সেরগিল সাব! চলে এলাম বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে।সেই হায়দ্রাবাদের সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল অকাডেমির মেমোরি উসকে দিতে। 
-খামোকা! বিকট এক হাসি সারা পুলিশ স্টেশন কাঁপিয়ে দেয়। 
-আরে ভাই রিটায়ার্ড পার্শন। বেড়াতে এসে এইমাত্র তোমাকে ফিরতি গাড়িতে দেখেই চিনতে পারলাম।আর তখনই তোমার কথা মনে পড়ল। তাই ভাবলাম চলে আসি। বড় মামাও কম যায় না। হাসিতে শরীর দুলে ওঠে। পরক্ষণেই বেশ গম্ভীর হয়ে বলে, তবে…! 
-তবে?  
ধোঁয়া ওঠা কফি এসে হাজির। এস পি সের গিল সাহেব ঈশারায় অন্য কিছু পানীয় আনাব কিনা জিজ্ঞাসা করে। কিন্তু তার বদলে বড়মামা কয়েকটা পেপার বের করে টেবিলের ওপর রাখে।একটা পুরোনো পেপার,বাংলা।শিলিগুড়ি এডিশন।সঙ্গে লোকাল দুটো পেপার। হাম রো প্রজাশক্তি,আর সিক্কিম এক্সপ্রেস।তবে এগুলো গতকালের। 
বিস্ফারিত চোখে এস পি সাহেব বড় মামার দিকে তাকিয়ে থাকে।–ইতনা সব? 
-আমরা এসেছি গত পরশু দিন। মানে টোয়েলফথ সেপ্টেম্বর,আজ ফরটিন্থ। আসার সময় থেকে এই পেপারগুলো সাক্ষী, চারজন লোক আর একটা কুকুর গায়েব।  
-ডগ হিডেন! স্ট্রিট ডগ!  
-নো। ইটস অ্যা পেট ডগ। অ্যান্ড জানানো দরকার, সবকটাই সিক্কিমের বাইরের।  
-আরে ছোড় দি জিয়ে না মেরে ইয়ার। ইঁহা ইস হিল এরিয়া মে অ্যায়সা হি চলতা হ্যায়। 
-লেকিন, ওই যে বসে আছে, দে আর বাংলাদেশি। এনি ওয়ান মিসিং,-কুতুব উদ্দিন!   
-ইয়েস! রাস্তা হারিয়ে ফেলেছে সিওর।    
-কিন্তু নিউজ রিপোর্ট ত অন্য কথা বলছে।   
-পাহাড়ের রিপোর্ট অল টাইমস রং থাকে। দেন উই হ্যাভ সাফার্ড ফ্রম দি গ্রেট রং। ১৯৮০ সাল। আপনাদের পাহাড়ে তখন আগুন জ্বলছে। এ ভায়োলেন্ট মুভমেন্ট চালাচ্ছে সুভাষ ঘিষিং। অলগ স্টেট, অলগ পহেচান বানানে কে লিয়ে উত্তর পূর্ব ভারতে গঠন করে জি এন এল এফ। পোভার্টি বেকারত্ব সোশিও ইকনমিক ব্যাকগ্রাওন্ডলেস পলিসির জন্য এই ভায়োলেন্ট চলেছিল এইট্টি ফাইভ- সিক্স পর্যন্ত। আপ কো ভি মালুম হোগা কত মানুষ সেই প্রটেষ্ট অ্যান্ড ভেরিয়াস স্ট্রাইকের জন্য মারা গিয়েছিল,- অ্যাবাভ ফিফটিন হান্ড্রেড! আপনারা কি ভাবেন শুধু ওয়েস্ট বেঙ্গলেই এর ইফেক্ট পড়েছিল, নো ইধার ভি--,থমকে যায় সের গিল সাহেব।তারপর ধীর স্বরে বলেন,-‘দি ইনহেরিট্যান্স অফ লস’ পড়েছেন। কিরণ দেসাই দার্জিলিয়ের সেই ছবি তুলে ধরেই বুকার পেয়ে গেলেন। এরপরেও আছে।
-হ্যাঁ। বিমল গুরুং। বড় মামা মাথা নাড়েন।  
-প্রেজেন্ট জেন হয়তো এত খবর রাখবে না লেকিন আপ তো সব জানেন বাঙ্গালিবাবু।এর পরেও আরো আছে। উ সব আপনাকে জেনে কাজ নেই। দু দিন ঘুরে নিন ব্যস!পুলিশ কাজ করছে।সের গিল সাহেব কেমন কঠোর স্বরে বলে, সিক্কিমের পুলিশ কিন্তু নীচের পুলিশের মত নয়। ডোন্ট বি টেন্সড! ইফ ইউ ডিমান্ড,আমি আপনাদের সিকিউরিটির বন্দোবস্ত করে দিতে পারি নন্দী স্যার। কুছ দিন না হয় সাবধানে ঘুরলেন। 
-আমরা লাচুঙের নেকড়ে দেখতে এসেছি তোমাদের ছেলেধরা নয়, বুঝলে।একবার পেলে শিখিয়ে দিতাম! রাগ লুকোতে পারে না বড় মামা।সের গিল সাহবের প্রস্তাবে সম্মতি না জানিয়ে জিজ্ঞেস করে, তুমি ক্রিশ্চান কবে হলে? 
হা হা করে আবার সের গিল সাহেব হেসে ওঠে,-বলে কত্ত দিন এখানে? ফির একবার আমার ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি সারা লাচুং আপনাদের সুন্দর ঘুরিয়ে দেবে। কোই দিক্কত হবে না। এমন কি হায়ার হিল এরিয়ায়ও নিয়ে যাবে।  
-দরকার লাগলে জানাব।  
-ওকে। ফির কোথাও না কোথাও দেখা মিলবে। আমি তো ইয়ারলি ওয়ান টাইম হায়দ্রাবাদ যাই। ইনফর্ম করব।   
বড় মামা ষ্টেশনের বাইরে এসে চারদিকে চোখ ঘুরিয়ে নেয়।এখনো কুয়াশার মত বৃষ্টি উড়ছে। গ্যাটসো পাশে। 
-এখানে কত পার্সেন্ট ক্রিশ্চান আছে গ্যাটসো?  
(ক্রমশ)
শান্তা বিশ্বাস, পাটিকাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়, একাদশ শ্রেণি

বড়দিনের প্রার্থনা 
 সবিতা বিশ্বাস 

হাতে মোজা পায়ে জুতো ফিটফাট সান্টা
হাসিমুখে জিতে নেয় ছোটদের মনটা
ঝোলা ভরা মজাদার উপহার গুচ্ছ 
ক্রিসমাস ট্রির গায়ে ময়ূরের পুচ্ছ 

নিঃঝুম মাঝরাত খড়খড়ি বন্ধ 
ভোরবেলা চোখ খোলা মজা ও আনন্দ 
কেক কুকি চকোলেট নীল চোখ বার্বি 
টগবগ টগবগ সাদা ঘোড়া ডার্বি

বরফের স্নোম্যান লম্বাটে নাকরে 
গলা ঢাকা মাফলার ধরে খোকা পাকড়ে  
বসে থাকে ফটকেতে মনে বড় ফুর্তি
বড়দিনে বড় ভোজ হবে পেট পুর্তি

লাল টুপি লাল জামা পেটমোটা সান্টা
গির্জার মাঠে ঘোরে খায় কিনে ফান্টা
কোকোকোলা লেমনেড রোস্টেড টার্কি
যত খুশি খাক না সে তাতে বলো কার কি?

বড়দিনে বড় মজা গির্জার ঘন্টা 
সান্টার সাজে ঘোরে বহুরূপী ভন্টা 
মেরি কোলে প্রভু যীশু দূরে যাক কালো রে 
প্রার্থনা একমনে হোক সব ভালো রে |

রাণি মণ্ডল 
নাওভাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়, তৈবেচারা, নদিয়া, চতুর্থ শ্রেণি

বড়োগল্প
কুণ্ডলার ভূতকাণ্ড
দিলীপকুমার মিস্ত্রী

শেষ অংশ

পরদিন সকাল সাড়ে সাতটা হবে হয়তো। পরভু অফিসে ঢুকেই দেখল,সাহেব চেয়ারে বসে কাজে ডুবে রয়েছেন। সে একটু অপ্রস্তুত হয়ে, আমতা আমতা করে বলল,’সাব,নমস্তে। আজ থোড়ি লেট হো গই। ফির কভী ন –।‘
      সাহেব মাথা না তুলে,তার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললেন,’আরে ন, তুমকো কোই  লেট নেহি হুয়া। আজ ম‍্যায় কুছ পহেলে অফিস মে আ গই। আব সাত বজে ষোলা মিনট। ম‍্যাঁয় কল্ রাতকো তুমহারা গাঁওমে গিয়া থা,ভূত দেখনেকে লিয়ে। লেকিন ভূত কাঁহা মিলি ভাই ? রাতভর মাহী নদ্দীকি কিনার মে মচ্ছরো কো ডান্স দেখা। অর মচ্ছর,প্রেমসে মেরেকো কাটা।
        সাহেবের কথা শুনে পরভুর দু’চোখ কপালে উঠেছে। ভয়ে তার বুকের ভেতর আকুপাকু শুরু হয়ে গেছে। শীতের সকালেও তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করেছে। সে গলা থেকে গামছা টেনে,ঘাম  মুছতে মুছতে  বলল,’সাব,ইয়ে আপনে বিলকুল ঠিক নেহি কিয়া। লেকিন দ্বোবারা অ্যায়সা মত করনা। উহ ভূত সহি মে বহতই খতরনক হোতে হ‍্যাঁয়। আপকো জান সে মার দেঙ্গে।‘
          সাহেব পরভুর কথা শুনে হেসেই পাগল। চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,’পাগল্ কাঁহেকা। আরে ভাই,ভূত নহি হ‍্যাঁয় তো উহ ক‍্যায়সে কিসিকো লুকসান করে? ঠিক হ‍্যাঁয়, আভী তুম টেবল্ কো আচ্ছি তরফসে সাফ কর দো-তো ইয়ার। ফির বড়িয়া,কড়ক চায় বনানা।‘ 
            বলতে বলতে সাহেব বাইরে বেরিয়ে গেলেন। পরভু কাজে লেগে পড়ল। কিন্তু সে মাঝেমধ্যেই ঘাড় ঘুরিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা সাহেবকে দেখতে লাগল। তার যেন কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না,গতকাল রাতে সাহেবের ভূত দেখতে যাওয়ার কথাটা। 
              মাস দেড়েক পরের ঘটনা।  ফেব্রুয়ারি মাস পড়ে গেছে। কিন্তু এ’বছর শীত এখনো জাঁকিয়ে রয়েছে। দুপুরের নাস্তা শেষ করে, সাহেব বাইরে চেয়ারে বসে রোদে গা শেঁকছেন। পাশাপাশি বসে আছেন বিশ্বাসবাবু আর ঈশ্বরলাল। ঈশ্বরলাল রাঠোর স্থানীয় যুবক। সাইট ইঞ্জিনিয়ার বিশ্বাসবাবুর হেল্পিং-হ‍্যান্ড। 
         পরভু ট্রে-তে তিনজনের চা নিয়ে এল। সবাই ট্রে থেকে চায়ের কাপ তুলে নেওয়ার পর সাহেব তাকে জিজ্ঞেস করল, ‘পরভু,তুম কিঁউ চা নেহি পিতে ? চায় পিনেসে তমে কই প্রবলেম ছে ?’
       সাহেবের কথা শুনে পরভু খুব লজ্জা পেয়ে গেল। লজ্জায় তার মুখশ্রী লাল হয়ে উঠল। সে কিছুক্ষণ ট্রে হাতে,মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। তারপর নীচুস্বরে বলল,’সাব,হমলোগ দেহাতি। হমকো ঠিক সে দো-টাইম খানা নহি মিলতে। তবিয়ত খারাপ হোনে পর, দবাই নহি মিলতে। বচ্চেকো দুধ নহি মিলতে। গাঁওবালো কো,ঠিকসে পিনে কা পানি ভি নহি মিলতে। হমসে চায় পিনা---!‘
       পরভুর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে, ঈশ্বরলাল বিরক্তি প্রকাশ করে বলে উঠল,’এ এ পরভু-ছোরা,মামা,তু আজকাল বহত বোলনে লগি। ভগ ইঁহাসে।‘ ঈশ্বরলালের কথায় প্ররভুর মনে দুঃখ হল। কিন্তু কথা না বাড়িয়ে সে সেখান থেকে দ্রুত সরে পড়ল। 
           হাইডেল প্রোজেক্টের অন্তর্গত মাহী নদীর উপর ব্রীজ তৈরির কাজটি করছে অন্য একটি  কোম্পানি। দু’বছরের মধ্যে তাদের কাজটি শেষ করার কথা। কিন্তু মাসসাতেক কাজ করার পর সেখানে একটি বড় রকমের দূর্ঘটনা ঘটে যায়। দূর্ঘটনায় অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। মৃতদের মধ্যে তিনজন স্থানীয় কুণ্ডলা গ্রামের বাসিন্দাও ছিল। ফলে, গ্রামবাসীরা  ক্ষিপ্ত হয়ে ব্রীজের কাজ বন্ধ করে দেয়।  টানা তিন মাস ব্রীজের কাজ বন্ধ থাকার পর,অনেক  আলাপ-আলোচনা শেষে সেই কাজ শুরু হয়েছিল ন’মাস আগে। কিন্তু গাঁয়ের মানুষের দাবী ছিল,নদীর চরে ছালনি চালিয়ে বালি পাথর তোলা যাবে না। সম্প্রতি ব্রীজের কাজ শেষ হয়েছে।  কোম্পানির লোকজনও কলোনি তুলে অন‍্যত্র চলে গেছে দিনসাতেক আগে। 
          দুপুরে টিফিনের সময় সুদর্শন সাহেব পরভুকে বলল,’ইয়ার,আজ সাম কো,তুমহারা ঘর যানে কা মন কর রহে।  বিশ্বাসসাব ভী যায়েগা। যানেসে,মকাই কি রোটি অর মোরগা খিলাওগী ন ?’
          পরভু দু’চোখ বড় বড় করে, সাহেবের মুখে তাকিয়ে বলল, ‘খিলাউ। লেকিন সাব,আজ সাম কো বদলে,পরশু এতোয়ার সুবে আনে সে অচ্ছা হোগা।‘
      পরভুর কথা শুনে,রায়সাহেব বিশ্বাসবাবুর মুখে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসলেন। তারপর পরভুকে জিঙ্গেস করলেন,’আজ নেহি কিঁউ? আজ যানে সে,তমে সুঁ প্রবলেম ছে ?’
         পরভু আড়ষ্ট গলায় বলল,’ন ন, কোই প্রবলেম নথি। সাম কো যানে সে,আপ লোগোকো ফিরনে মে রাত হো যায়ে গা। আন্ধার রাতকো,নদ্দী কিনার মে ভূ-!’
         পরভুকে কথা শেষ করতে না দিয়ে,সাহেব তাকে আচমকা প্রশ্ন করলেন,’কুণ্ডলা গাঁও মে অভিভী ভূত হ‍্যাঁয় ?  পরভু,আপনে আঁখো সে তুমনে  কভী ভূত দেখা  ?’
           পরভু মাথা নিচু করে, কাঁপা গলায় বলল,হাঁ হাঁ সাব, ন ন সাব ! উত্তর শুনে,সাহেব তার কাছে এগিয়ে গেলেন। তার পিঠে এক হাত রেখে,তাকে আশ্বস্ত করে বললেন,’তুমকো ম‍্যাঁয় ফিরসে বোলরহাহুঁ,ভূত বোলকর কুছ নহি হ‍্যাঁয়। উহ সব মনমারী বাত। দেখো, ইলেকট্রিক সুইচ দাবানেসে উহ  ব্লাভ জ্বল যাতে। ই তুম আপনে আঁখো সে দেখ রহে।  এ্যায়সা কভী তুম ভূত কো দেখা? তুমহারা  গাঁওবালো নে কভী দেখা ?’
          পরভু সাহেবের কথার কোনও উত্তর খুঁজে পেল না। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে  সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘সাব,গাঁওবালোকো ই-বাত বুঝানা পড়েগি,সমঝানা হ‍্যাঁয়। পহলে আজ ঘর যা কর,মেরি বাবুজীকো ই বাত বোলুঙ্গি।‘
           আজ  রবিবার। সকালে দুই সাহেবের পরভুর গ্রামে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কেউ যাননি। পরভুর মা ভূট্টা-আটার চাপাটি আর মোরগা বানিয়ে অপেক্ষা করেছিল বিকেল পর্যন্ত। কিন্তু সাহেবদের পাত্তা নেই।
          সন্ধে নামার খানিক পর, পরভুর ঘরে হঠাৎ হাজির দুই সাহেব। তাদের দেখে,পরভু তো অবাক। সে তার দু’চোখে যেন ভূত দেখছে। তবু সাহেবদের কোথায় বসতে দেবে তাই নিয়ে ব‍্যস্ত হয়ে পড়ল। ঘরের ভেতরে বসার তেমন জায়গা নেই বললেই চলে। ঘর তো নয়,চারদিকে  পাথর সাজিয়ে দেয়াল। উপরে জঙ্গলের ডালপালা চাপানো।  তার উপর, হাতে গড়া মাটির পোড়া টালি সাজিয়ে রাখা। পরভু সাহেবদের বসার জন্য দুটি সিমেন্টের বস্তা বাইরে পেতে দিল। তারপর তাদের কিছু বলতে যাচ্ছিল। দুই সাহেব দেরী না করে,বস্তার উপর পা ছড়িয়ে বসে পড়লেন। সুদর্শন সাহেব বললেন,’আরে ইয়ার,তুম খামোখা পরিসান হো রহে, হম দোনো মস্তিমে হ‍্যাঁয়। তুম পহেলে হম দোনোকো বড়িয়া পানি পিলাও। ফির তুমকো সাথ লে কর ভূত দেখনে যায়েঙ্গে।‘ 
         পরভুর ঘরে সাহেবরা এসেছেন। তাঁদের দেখতে গ্রামের অনেক মানুষ জড়ো হয়েছে। সবাই অবাক হয়ে দুই পরদেশীকে দেখছে আর তাঁদের মুখে মিষ্টি কথা শুনছে। ভূতের কথা শুনতেই সকলের আগ্রহ বেড়ে গেল।  সুদর্শন সাহেব হঠাৎ গ্রামবাসীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন,’নদ্দী কি কিনার মে,আপ লোগোনে কভী ভূত দেখা ?’
    কেউ মুখে কিছু বলল না। কিন্তু সকলেই ঘাড় নেড়ে জানিয়ে দিল,হ‍্যাঁ।
          সাহেব আবার প্রশ্ন করল,’কিতনে দিন পহেলে ভূত দেখা ? কিতনে ভূত থে ?’
          সাহেবের এমন  প্রশ্ন শুনে গ্রামবাসীরা ভয়ে কেমন যেন সিঁটিয়ে গেল। কিন্তু গাঁয়ের মুখিয়া  সরজু হাকরু সাহস করে সামনে এসে বলতে লাগল। 
            ‘সাব,কুণ্ডলা গাঁওমে পহলে ভূত নেহি থী।  হাইডেল প্রোজেক্ট কি কাম চালু হোনে কি পহেলে, হমলোগ কভী ভূত কী নাম ভী শুনা নহি। বিরিজ কা কাম শুরু হুয়া। থোড়ি দিন বাদ অ্যাক্সিডেন্ট মে বহত আদমি কো মৎ হো গই। ইসকি বাদ,নদ্দীকি কিনার মে ভূত-জিন আনা যানা বরাবর চলতে রহে। রাত মে উহ-সব আ-কর,হাসতে রহা,রো-তে রহা, নাচা-গানা ভী করতে রহা। ফের সুরজ উঠনে কি পহলে উহ সব ভাগ যাতে। লেকিন হমলোগ ডরসে কভী উনকা নজদিক মে নেহি গয়া। দূরসে স্পষ্ট্ দেখা মরদ অর জনানা ভূত ভী হ‍্যাঁয়। পচ্চিশ সে যাদা তো হোগাই। একদিন দেখা,জনানা অর মরদ ভূত একসাথ ডান্স কর রহে থে। উকরার মু সে নিকলি আওয়াজ শুনকর হমকো বহতই ডর লগ রহে। উহ হাস রহে থে, হিঁ হিঁ হিঁ হিঁ হিঁ, হেঁ হেঁ হেঁ হেঁ হেঁ। কেঁ কেঁ কেঁ কেঁ কেঁ, কুঁ কুঁ কুঁ কুঁ কুঁ । অর বোল রহে থে, কুঁনডলাঁ চঁল, কুঁনডলাঁ চঁল,কুঁনডলাঁ চঁল।‘
         সাহেব মুখিয়াকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,’বিলকুল সমঝগই। অচ্ছা, তুমলোগ বিতরোজ রাতমে কোই ভূত দেখা? পরশু,চারদিন পহেলে, একহপ্তা পহেলে ? বোলো,দেখা কেয়া?’
          সাহেবের প্রশ্ন শুনে, গ্রামবাসীরা সবাই মুখিয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। মুখিয়া তাদের সকলের মনের কথা বুঝতে পেরে আবার বলতে লাগল,’ন ন সাব। একহপ্তা হো গই,ভূত কো অর নহি দিখা যাতে। এক ভী নহি।‘
        সাহেব মৃদু হেসে বলতে লাগলেন,’মতলব,ভূত ইঁহা পর অভী নহি,কভীভি নেহি রহা।‘
          সাহেবের কথা শুনে,গ্রামের সকলেই একটু রাগ দেখাল। তাদের মধ্যে থেকে নর্মদা ছোরি চোখ বেঁকিয়ে  বলতে লাগল,’সাব,ই আপ ঠিক নহি বোল রহে। অ্যাক্সিডেন্ট হোনেকি বাদ বিরিজ কা কাম বিলকুল বন্ধ হো গই থি। ফিরসে চালু হোনে পর, হমলোগ উঁহা পর আপনে আঁখোসে ভূত দেখা। ভূত  হমকো ডর ভী দিখাতে থে। ত ক‍্যায়সে ই সব ঝুট হুয়া?’ 
          সাহেব হাসতে হাসতে বললেন,’ছোরি,গুস্সা মত করনা। তুম সহি দেখা। লেকিন উহ ভূত নেহি থে। আব ভূত কি আসলি রোমাঞ্চ কি কহানি হম  সবকো বোল রহা হুঁ। দিলসে শুনিয়ে।
             ‘ব্রীজ অ্যাক্সিডেন্ট হোনেকি কী বাদ আপ গাঁওবালো ঠিকাদার কা কাম বন্ধ কর দিয়ে থে। ফির বহত দিন কি বাদ কাম চালু হুয়া। লেকিন আপ লোগনে,নদ্দী সে পাথ্থর অর বালি ছাননে মে বিরোধ কর রহা থা। বালি পাথ্থর ন মিলনে সে বিরিজ কি ঢালাই ক‍্যায়সে হোঙ্গে ?
           ‘ইঁহা পর যো লোগোনে কাম কর রহে থে,উহলোগ স্কুল কালেজমে বহত লিখাপড়া কিয়া হুয়া। উহ সব ইঞ্জিনিয়ার,এক এক সায়েন্টিস্ট হ‍্যাঁয়। অর সায়েন্টিস্ট নে জানতে হ‍্যাঁয়,ক‍্যায়সে কাম উঠানা হ‍্যাঁয়। সমাজ কি কোনে কোনে মে যো  গলতি,কুসংস্কার ঘুসকর  রহে,উসকো ক‍্যায়সে হটানা হ‍্যাঁয়; উহ সব জানতে থে। উহ মডার্ন সোসাইটি বনানেকে লিয়ে আয়ে ন ? অর উহ কাম খতম করকেই যাতে। উহ লোগ ডরসে কভী ভাগতা নহি। 
          ‘ঠিকাদার কা হর ইঞ্জিনিয়ার জানতে থে, নদ্দী সে বালি-পাথ্থর তুমলোগ নেহি উঠানে দেঙ্গে।  লেকিন উনহনে এ-ভী জানতে থে,তুমলোগ ভূত কো বহতই ডরতে হ‍্যাঁয়। ব‍্যস্,উনকা কাম সিধা অর তুরন্ত হো গই। 
        ‘ব্রীজ কা কাম খতম হুয়া,ঠিকাদার কা লেবর কলোনি উঠ কর চল গই। অর সাথ মে ভূত ভী চল্ গই কুণ্ডলা ছোড়কর। মতলব ওহী এক বাত,কুণ্ডলা গাঁও মে ভূত কভী নেহি থে,আজ ভী নেহি রহা, অর আগে ভী কভী নেহি আয়েগা। মতলব, অবসে  গাঁওবালো কো সবকুছ সোচসমঝকে,বিজ্ঞান কী আঁখো সে দেখনা পড়েগি।‘
              সাহেবের গল্পটা শুনে গ্রামবাসীরা সবাই যেন বোবা হয়ে গেছে। তারা অবাক চোখে সাহেবের মুখে ফ‍্যাল্ ফ‍্যাল্ করে তাকিয়ে রয়েছে। আর শুধু ভাবছে,সত্যিই তো,ভূতপ্রেত হঠাৎ এল কোথ্থেকে,আবার হঠাৎ গেলই বা কোথায় !
         সাহেবরা এবার উঠে দাঁড়িয়ে গ্রামবাসীদের অনেকের সঙ্গে হ‍্যান্ডশেক করলেন। অনেককে পিঠ চাপড়ে দিলেন। সব শেষে সুদর্শন সাহেব গাঁয়ের ছোট্ট একটি ছেলেকে কোলে তুলে নিয়ে মহাখুশিতে বললেন,’পরভু,ইয়ার মকাইকা  রোটি অর মোরগা বানায়া ন? জলদি লাও। বহত জোরসে ভুখ লাগা। ই ছোট্টু ভী আজ হমারা সাথ রোটি খায়েঙ্গে।‘
           পরভুর বাবা হাসি মুখ নিয়ে সাহেবদের কাছে এগিয়ে গেল। নমস্কার জানিয়ে বলল, ‘সাব বৈঠিয়ে। মোরগা পহেলেই বন্ চুকে। রোটি বন্ রহা হ্যায়। রাত হুয়া। লেকিন,অব তো ডরনে কা কুছ নহি রহা। ভূত ত চলি গই কুণ্ডলা ছোড় কর। অর কভী বাপস  আয়েগা ভী নহি।‘

ধারাবাহিক ভ্রমণ
উৎসব মরশুমে আমেরিকাতে বাসবদত্তা কদম
পর্ব ৪  

-পরে ফেল।
অনিচ্ছাসত্ত্বেও বর্ষাতি গায়ে চড়াই। নায়েগ্রা ঘুরিয়ে দেখাবে যে লঞ্চ তার সিঁড়িতে কি লাইন কি লাইন। মনে হচ্ছে দুনিয়ার লোকেদের এই দিনটাতেই নায়েগ্রা দেখতে আসতে হয়েছে।
আসবার সময় রাস্তায় দেখা হয়েছে নায়েগ্রা নদীর সঙ্গে। প্রচন্ড বেগে সে এগিয়ে চলে গেছে রাস্তার পাশ দিয়ে। উত্তর আমেরিকার নিউইয়র্ক রাজ্যের এই নদী কানাডা আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাকৃতিক সীমা তৈরী করে দিয়েছে।
এরপরেই সে প্রবল বেগে নেমে গেছে নায়েগ্রা জলপ্রপাত হয়ে। তবে নায়েগ্রা জলপ্রপাতের মধ্যে তিনটি ফল একসাথে হয়েছে। এর মধ্যে সব থেকে বড় কানাডার হর্স সু জলপ্রপাত। একটি বিশাল অশ্বখুরাকৃতি জলপ্রপাত, ব্রাইডাল ভেইল জলপ্রপাত এটি সব থেকে ছোট এবং আমেরিকার দিকে অবস্থিত। কিন্তু এর অপূর্ব গড়নের জন্য এটি যথেষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ। আরেকটি আমেরিকান ওয়াটার ফল এটির উচ্চতা প্রায় দুশো ফুট আর চওড়ায় আটশো ফুটের কিছু বেশি। এই সব কটি জলপ্রপাত তৈরী হয়েছে নায়েগ্রা নদীর জল থেকেই। 
আমাদের যখন সময় এলো- উঠলাম লঞ্চে। এই লঞ্চের নাম মেইড অব দা মিস্ট। 
লঞ্চ চললো সোজা সেই পাহাড়ের দিকে, যেখান থেকে হুম হুম করে নায়েগ্রার জল নেমে আসছে, সামনে শুধুই সাদা ধোঁয়া। জলের ধোঁয়া। এই লঞ্চ জলপ্রপাতের নীচে যতটা যেতে পারে ততটাই যায়। যে হর্স সু জলপ্রপাত সব থেকে বড়, তার নীচ পর্যন্ত।
যখন যাচ্ছি, তখন বুঝলাম রেইন কোট কেন? অত উঁচু থেকে পড়ছে জল, আর সেই জল ধোঁয়া হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। আমরা রেইন কোট পরেও প্রায় পুরোটাই ভিজে গেলাম। ছবি কয়েকটা তুললাম বটে তবে ক্যামেরাও জল মেখে একশা। বেশ ভয় হলো ক্যামেরাকে নিয়ে। দেখেই চলেছি নায়েগ্রাকে। লঞ্চ যখন ফিরছে তখন দেখছি জলস্রোতের পাহাড়ের দুপাশে অজস্র রঙিন গাছ। ছবি দেখলেই বুঝতে পারবে। নায়েগ্রার এপারে আমেরিকা। ওপারে কানাডা। কানাডা থেকেও লঞ্চ ছাড়ছে। দুই লঞ্চ পাশাপাশি ঘুরে নায়েগ্রা দেখায়। 
লঞ্চগুলো দোতলা। দোতলার থেকে নায়েগ্রাকে আরো সুন্দর দেখায়। তবে ভিজতেও হয় আরো খানিক বেশি। 
লঞ্চ যখন ফিরে এলো, সত্যিই লিখে বোঝাতে পারবো না আমার অনুভূতির কথা। ছোট থেকে ভূগোলে পড়া নায়েগ্রা তখন আমি দেখে ফেলেছি। নায়েগ্রার জলের ছোঁয়া লেগে আছে আমার রেইনকোটে। এ রেইনকোট ওনারা ফেরত নেন না। এটা মেমেন্টো বলা যায়। আমিও অনেকদিন রেখে দিয়েছিলাম সমুদ্র নীল সে রেইনকোট।
ওপরে উঠে এবার গন্তব্য হোটেল। সেখানে খেয়ে এক ঘুম দিয়ে উঠতেই সন্ধে। জানলা দিয়ে দেখা যাচ্ছে নায়েগ্রা ফলসের আলো। আবার গেলাম। আলোর রামধনু বলা যায়। একের পর এক রঙ প্রতিফলিত হচ্ছে আর সঙ্গে নায়েগ্রার হুমহুম শব্দ। জলের ঐ প্রচন্ড শব্দে কেউ কিছু শুনতে পাচ্ছিলাম না। বেশ অনেক রাত পর্যন্ত আলোর খেলা দেখে হোটেলে ফিরলাম। তখন প্রচন্ড ঠান্ডা পড়তে শুরু করেছে। 
চিত্রগ্রাহক - বাসবদত্তা

পরদিন ভোর হতে না হতে আবার দৌড়লাম নায়েগ্রা পার্কে। নায়েগ্রার সংলগ্ন এক বিশাল পার্ক। এর নাম নায়েগ্রা পার্ক। অজস্র গাছ, পাখি আর অগুন্তি কাঠবেড়ালি। একেবারে নির্ভীক কাঠবিড়ালি। সাধারণত এরা মানুষ দেখলে পালায়, এদের দেখলাম ভয়ডর নেই। গাছেদের ঝরা পাতায় পার্ক পুরো রঙিন। কোথাও লাল, কোথাও হলুদ। একেবারে ইস্টবেঙ্গলের জার্সি।
এদের পেরিয়ে এগিয়ে গেলাম অনেকটা। বেশ খানিকটা সিঁড়ি নামলে নায়েগ্রা জলপ্রপাতকে দেখা যায় খুব ভালোভাবে। সম্ভবত কাছ থেকে দেখলাম যে অঞ্চল তার নাম আমেরিকান ওয়াটার ফল। 
অত সকালে মাইনাস চার ডিগ্রি তাপমাত্রায় লোকে লোকারণ্য তখন। হঠাৎ দেখি রামধনু। পাশাপাশি দুটো।
এরপর আবার পেনসিলভেনিয়ার জন্য রওনা হয়ে পড়লাম। প্রচন্ড উত্তুরে হাওয়া বইছিল সকাল থেকেই। সকালেই ছিল মাইনাস চার, এর সঙ্গে হাড় কাঁপানো হাওয়া। অদ্ভুত ব্যাপার; যে সব গাছগুলো অত সুন্দর সেজে আমাদের নানা রঙে অভ্যর্থনা জানালো আগের দিন; তারা কেউ নেই। সত্যিই নেই। ভ্যানিশ। দাদা বললো ‘দ্যাখ, পাতা ঝরিয়ে হাড় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সব।‘ সত্যিই তাই। শুনলাম, অত সুন্দর সব পাতারা একটা হাওয়া এলেই ঝরে যায়। আবার পরের বছরের অপেক্ষায়। 
দাদার বাড়ি যখন পৌঁছলাম তখন রাত প্রায় এগারোটা। সেদিন আলুসেদ্ধ ,ডিমসেদ্ধ আর ভাত খেয়ে কম্বলের নীচে। বাইরে বরফ পড়ছে না তখনো, তবে কনকনে ঠান্ডা।
(ক্রমশ)
স্মরণীয় দিবস
জাতীয় কৃষক দিবস 
(২৩ শে ডিসেম্বর)
কলমে-দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে


কৃষকরা দেশের মেরুদন্ড, তারা না ফসল ফলালে আজ দেশ কৃষিতে এত উন্নতি করতে পারত না। সামান্য অর্থের বিনিময়ে কৃষকরা যে মূল্যবান পরিষেবা দিয়ে থাকেন, তার গুরুত্ব অপরিসীম,অথচ তাঁদেরকেই অবহেলায় থাকতে হয়। প্রত্যেক কৃষকের ফসল ফলানোর পেছনে থাকে অনেক পরিশ্রম,অনেক কষ্ট, যা আমাদের মতো সাধারণ মানুষরা জানতেই পারে না। এর নৈপথ্যে থাকা মানুষদের আজ কুর্নিশ জানানোর দিন।

২৩শে ডিসেম্বর, সারা ভারত জুড়ে পালিত হয় জাতীয় 'কৃষক দিবস'। মূলত কৃষকদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানাতে ভারতের মেরুদন্ড এই কৃষকদের উদ্দেশ্যে  'কৃষক দিবস পালন করা হয়।
সারা বিশ্বে ভিন্ন ভিন্ন তারিখে কৃষক দিবস' পালন করা হয়। আসলে কৃষক ও কৃষি জাতীয় অবদান উদযাপন করার জন্য মূলত এই দিবস পালিত হয়।
২৩ শে ডিসেম্বর ভারতের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী চরণ সিং এর জন্মবার্ষিকী। কৃষকদের সুবিধের জন্য একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী চরণ সিং। দেশের অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে তাঁর আমলে কৃষি এবং কৃষকদের দিকটি বিশেষ প্রাধান্য দিয়ে দেখা হয়েছিল। খুব কম সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়েও চৌধুরী চরন সিং কৃষির জন্য একাধিক প্রকল্প শুরু করেন।
২০০১ সাল থেকে চৌধুরী চরণ সিংহের জন্মদিন ২৩ শে ডিসেম্বর তারিখ টিকে 'কৃষক দিবস' হিসেবে পালন করা হয়। চৌধুরী চরণ সিংহ 'জয় জওয়ান, জয় কিষান এই' বিখ্যাত স্লোগানটি অনুসরণ করেছিলেন। ভারতের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী কৃষকদের এই স্লোগান প্রচার করেন।
চৌধুরী চরণ সিংহ ২৩ শে ডিসেম্বর ১৯০২ সালে উত্তরপ্রদেশের মীরার জেলার নুরপুর গ্রামে, এক মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি ১৯৭৯ থেকে ৮০ সাল পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং দেশে বেশ কয়েকটি কৃষক-বান্ধব ভূমি সংস্কার নীতি নেন।
ভারতের এক বৃহৎ অংশ গ্রাম অর্থাৎ কৃষি প্রধান অঞ্চল। দেশের গ্রামীণ জনসংখ্যা বেশিরভাগ মানুষই কৃষক বা কৃষির সঙ্গে যুক্ত। 
কৃষকদের আত্মত্যাগ কে সম্মান জানাতেই পালন করা হয় 'কৃষক দিবস'। এই উদযাপনের মাধ্যমে তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বার্তাও দেওয়া হয়।


Post a Comment

0 Comments