জ্বলদর্চি

এলোমেলো-৩ /মলয় জানা

এলোমেলো-৩
মলয় জানা 

-- সত্যি বল, মনে পড়ে?
 আমার কথা মনে পড়ে?
সকাল কিংবা দুপুরবেলা,
সন্ধ্যা কিংবা রাত?
ভোরের আলো ফোটার আগে,
কিংবা সন্ধ্যা নামার পরে,
মনে পড়ে আমার কথা?
আমার কথা মনে পড়ে???

--- এক্কেবারে না।
-- বল একবার!!
একটি বার ও না??
এক্কেবারে না??
-- এক্কেবারে না।
-- কেমন করে বললে তুমি??
এক্কেবারে না!!
তখন কত মিষ্টি কথা,
কত্ত কত মিষ্টি কথা!
সেবার বোধহয় নতুন দীঘা,
সূর্য ওঠার আগে,
নীল সাগরের ধারে,
জড়িয়ে ধরে বলেছিলে,
" তুমি আমার ভোরের আলো, 
বুকে পেলেই হারিয়ে যায়
মনের যত কালো।
দূর সাগরে তাকিয়ে দেখো,
জলের বুকে আলোর নাচন,
নীলে নীলে কেমন মিলন,
তোমার আমার মতন।
তুমি আমার ভোরের বাতাস,
ছুঁয়ে দিয়েই মুছিয়ে দাও
যত্ত হা হুতাশ।
তুমি আমার তটভূমি, 
সাগর হয়ে নিত্য চুমি,
ছুঁয়ে দিয়ে ভাসিয়ে দিয়ে,
তোমায় নিত্য চুমি"
মনে পড়ে সে সব কথা??
সেবার বোধহয় শুশুনিয়া,
মাঝ শ্রাবণের বৃষ্টিবেলা,
সবুজ পাহাড় সিক্তবাস,
ঘন মেঘের ঝরে চলা,
দুজনে গেলাম ঝরণাতলা।
মনে পড়ে???
ঝরণার জল দুহাতে নিয়ে
ভিজিয়ে ছিলে ভেজা শরীর, 
ভেজা ঠোঁটে চুমুটি দিয়ে
কানে কানে বলেছিলে,
" তোমায় আমি ভালোবাসি,
পাহাড় যেমন ভালোবাসে
ঝরণাটাকে,
তার থেকে ও অনেক বেশি"।
আমি বললাম, সেটা কেমন??
তুমি বললে, " শোন তবে,
পাহাড় টা তো পাষাণ হৃদয়,
ঝরণাটাকে বের করে দেয়
বুকের পাঁজর থেকে। 
আমি সেটা পারবই না,
তোমায় আমি রাখব বেঁধে
অলিন্দ আর নিলয় জুড়ে।
হাসবে তুমি কলকলিয়ে
আমার বুকের মাঝে।
রক্তস্রোতে ছুটবে তুমি
শিরায় ধমণীতে।
তোমার গতি বুঝিয়ে দেবে
আমার বাঁচন মরণ।
বোঝা গেছে""
বোকার মতো বুঝেছিলাম,
প্রবল জোরে জড়িয়ে ধরে,
আরো নিবিড় নিবিড় হয়ে,
ভেজা শরীর মিলিয়ে দিয়ে,
বুকের শব্দ শুনেছিলাম,
আমার নামটা শুনেছিলাম।
---- তারপর???
----- তারপর কী
থাক সে কথা।
--- কখন ভাব আমার কথা??
----- সকাল সন্ধ্যা দুপুরবেলা,
আমার ভাবনা আমার মতো,
তোমার মতো নয়গো খেলা।
---- রাতের বেলা????
---- ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।
----- তুমি যখন ঘুমিয়ে পড়,
আমি তখন গল্প জুড়ি
তোমার সাথে।
---- চুপ করবে।
একদম চুপ।
তুমি একটা ডাহা মিথ্যুক।
কথার জালে ফাঁদ পাতছ,
বন্ধ কর মিষ্টি কথা।
ভাগ্য ভালো বউ হই নি,
বিয়ে করলে কী যে হোত?
মিথ্যেবাদীর ফাঁদে পড়ে
সারাজীবন নষ্ট হোত।
--- ঠিক বলেছ। মিথ্যেবাদী।
বিয়ে করলে জ্বলে মরতে।
এখন সুখে ভেসে আছ।
তবুও কেন মনে কর??
মনে পড়ে আমার কথা???
--- ভুল হয়েছে,
মনে করা
মস্ত বড় ভুল হয়েছে।
ও পথে নেই আর অযথা।
--- শোন তবে আমার কথা। 
কেমন তোমার মনে করা??? 
আলমারিতে পুরনো শাড়ি,
ভাজে ভাজে কাটতে পারে,
তাই সেটাকে রোদে দেওয়া।
আবার তাকে গুছিয়ে রাখা।
মনে মনে এটাও ভাবা,
তেমন কোন ফেরিওলা
আসে যদি এই পাড়াতে,
দিয়ে দেব এই শাড়িখান,
যা দেয় দেবে, সেটাই লাভ।
আমি তোমার ঐ শাড়িটা।
কিংবা ধর, পুরনো বই,
আলমারিতে ধূলোয় ভরা,
পাতা খোলার সময় কোথায়?
আছে তো থাক এক কোনাতে।
নাই বা পড়ি,
বই তো আছে।
আমি তোমার ঐবইটা।
---- তবু তো আছে।
দেখাতে পারি। 
নিজের বেলা??
এক্কেবারে না।
--- ঠিক বলেছ।
দেখাতে পার।
আমিও তোমায় ঠিক বলেছি।
এক্কেবারে না।
মনেই পড়ে না। 
মনে তোমায় করব কি গো?
তুমি তো এই মনেই আছ,
মনের মাঝে, বুকের মাঝে।
কেমন জানো??
মরা ঝিনুক যেমন করে
বুকের মাঝে মুক্তো ধরে,
তেমন করে,
তেমন করে তুমি আছ
মনের মাঝে, বুকের মাঝে। 
জ্যান্ত হলে দেখিয়ে দিতাম
কেমন করে, কোথায় আছ।
মরে তবে ভালো হয়েছে,
আর তো মরার সুযোগ নেই,
হারিয়ে ফেলার ভয় ও নেই।
বিয়ে না করে ভালো করেছ,
বিয়ে করলে ঘরণী হতে,
বিয়ে না করে মানসী।
ভাবছ বোধহয় কথার ফাঁসে
বাঁধছি আবার নতুন করে,
এক্কেবারে না৷ 
বাইরে তোমায় খুঁজি না গো,
মনেই দেখে মেটাই আশ।
সহবাসে নেই আমি তাই,
মনে তোমার নিত্য বাস।।

Post a Comment

0 Comments