জ্বলদর্চি

মাতাল ছেলে /ভাস্করব্রত পতি

বাংলা প্যারোডি কবিতা পর্ব -- ৫২
মাতাল ছেলে

ভাস্করব্রত পতি

মাতাল ছেলে! মাতাল ছেলে! আমার দিকে চাও, 
টলমলে পায় একা একা কোথায় তুমি যাও? 
ঐ যে দ্যাখো ঐ দূরেতে তোমার নিজের গাঁ, 
সেথায় গিয়ে দিনের শেষে রাখবে তুমি পা। 
সেথায় বসে মদের আসর তালপাতাতে ছাওয়া! 
সকাল সাঁঝে মজেই থাকো ভুলেই খাওয়া নাওয়া। 
ভয় করোনা মোটেও তুমি, তোমার বাবা মা;
দোহাই তোমায় বোতল সেবন, এবার ছাড়ো না। 
মাতাল ছেলে! মাতাল ছেলে! কোথায় তুমি ধাও? 
বাড়ছে বেলা বাড়ি গিয়ে সিনান সেরে নাও;
বসলে কেন আবার হেথায় সবুজ রঙা ঘাসে? 
ঐ যে দ্যাখো সবাই কেমন তোমায় দেখে হাসে! 
দেদার মজে মদের নেশায় আমার মাতাল ভাই, 
ওপরওয়ালা রুষ্ট হয়ে ডাকবে তোমায় তাই। 
রাস্তাঘাটে চলছো যখন টলমলানো পা;
সবাই বলে 'চলছে মাতাল', আয়রে দেখে যা! 
ছুটছো মিছেই প্রহেলিকায় আমার সোনা ভাই, 
সবসময়ই মনটা তোমার 'শুঁড়িখানায় যাই'। 
মাতাল ছেলে! মাতাল ছেলে! এ কি মরণ খেলা! 
কাজকর্ম শিকেয় তুলে নেশায় আছো মেলা। 
দোস্তরা বলে 'আয়রে সবাই তাস জুয়াটাই খেলি'
হেরে গিয়ে বেচেই ফ্যালো গয়না কাপড় চেলি! 
লাগামছাড়া জীবন নিয়ে থাকবে কি ভাই সুখে? 
মাতাল ছেলে! জবাবটা দাও, ফুটছে না বাক মুখে? 
তোমায় দেখে মুখটা ফেরায় পাড়ার বুড়ো বুড়ি;
তোমার মতো মাতালগুলোর নেইকো কোনো জুড়ি। 
মদের নেশায় জীবন ভরে করছ মরণ চষা;
আর দেরি নয়, এবার ওঠো, অনেক হলো বসা। 

জসীমউদ্দীন

রাখাল ছেলে

'রাখাল ছেলে! রাখাল ছেলে! বারেক ফিরে চাও,
বাঁকা গাঁয়ের পথটি বেয়ে কোথায় চলে যাও?'
ওই যে দেখ নীল নোয়ান সবুজ ঘেরা গাঁ
কলার পাতা দোলায় চামর শিশির ধোয়ায় পা;
সেথায় আছে ছোট্ট কুটির সোনার পাতায় ছাওয়া,
সাঁঝ আকাশের ছড়িয়ে পড়া আবীর রঙে নাওয়া; 
সেই ঘরেতে একলা বসে ডাকছে আমার মা
সেথায় যাব, ও ভাই এবার আমায় ছাড় না!'
'রাখাল ছেলে! রাখাল ছেলে! আবার কোথায় ধাও,
পূব আকাশে ছাড়ল সবে রঙিন মেঘের নাও।'
'ঘুম হতে আজ জেগেই দেখি শিশির ঝরা ঘাসে,
সারা রাতের স্বপন আমার মিঠেল রোদে হাসে।
আমার সাথে করতে খেলা প্রভাত হাওয়া ভাই,
সরষে ফুলের পাঁপড়ি নাড়ি ডাকছে মোরে তাই।
চলতে পথে মটরশুঁটি জড়িয়ে দু খান পা,
বলছে ডেকে, 'গাঁয়ের রাখাল একটু খেলে যা!'
সারা মাঠের ডাক এসেছে, খেলতে হবে ভাই!
সাঁঝের বেলা কইব কথা এখন তবে যাই!'
'রাখাল ছেলে! রাখাল ছেলে! সারাটা দিন খেলা,
এ যে বড় বাড়াবাড়ি, কাজ আছে যে মেলা!'
'কাজের কথা জানিনে ভাই, লাঙল দিয়ে খেলি
নিড়িয়ে দেই ধানের ক্ষেতের সবুজ রঙের চেলি;
সরষে বালা নুইয়ে গলা হলদে হওয়ার সুখে
মটর বোনে ঘোমটা খুলে চুম দিয়ে যায় মুখে!
ঝাউয়ের ঝাড়ে বাজায় বাঁশি পঊষ পাগল বুড়ি,
আমরা সেথা চষতে লাঙল মুর্শিদা গান জুড়ি।
খেলা মোদের গান গাওয়া ভাই, খেলা লাঙল চষা
সারাটা দিন খেলতে জানি, জানিইনেকো বসা।'

Post a Comment

0 Comments