জ্বলদর্চি

দূর দেশের লোকগল্প—স্কটল্যাণ্ড (ইউরোপ)/একশ’ গিনির বউ /চিন্ময় দাশ

চিত্র-সম্পা সেনাপতি

দূর দেশের লোকগল্প—স্কটল্যাণ্ড (ইউরোপ)
একশ’ গিনির বউ
চিন্ময় দাশ

বাবা আর ছেলে—দুজনের সংসার। ছেলেটির নাম জ্যাক। বাবাটি ভারি বদমেজাজী। জ্যাক তার নিজের ছেলে, তার সাথেও ভালো ব্যবহার করে না সে।
কতো দিন আর মুখ বুজে সহ্য করা যায়। একদিন বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গেলে ছেলেটা। 
এতো বড়ো দুনিয়া। কিছু না কিছু একটা উপায় হবেই-- এই ভেবে, ঘর ছেড়েছে জ্যাক।
হাঁটছে তো হাঁটছে। পথের যেন শেষ নাই। চলতে চলতে একটা বনের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে। যখন দিন ফুরিয়ে এলো, এক বুড়ির সাথে দেখা।
 বনের কাঠকুটো কুড়োচ্ছিল বুড়ি। জ্যাককে দেখে বলল—কোথায় চলেছে, বাছা? রাতের অন্ধকারে বনের ভিতর থাকাটা নিরাপদ নয়।
জ্যাক তো নির্দিষ্ট কোথাও যাচ্ছে না। নিজের কথা বুড়িকে খুলে বলল সে। শুনে বুড়ি বলল—দেখে তো তোমাকে ভালো ছেলে বলেই মনে হচ্ছে। তাহলে, এক কাজ করো তুমি। আমার তো বয়স কম হোল না। সব কাজ করে উঠতে পারি না ভালো করে। শরীরে কুলোয় না। আমার এখানেই থেকে যাও। কাজকর্মে সাহায্য করে। বছর শেষে মাইনেও দেব তোমাকে।
জ্যাক থেকে গেল বুড়ির বাড়িতে। 
দেখতে দেখতে বছর পার হয়ে গেল। বুড়ি বলল—কাজকর্ম তুমি ভালোই করেছ। বেতনও তোমাকে ভালোই দেব আমি। তোমার ভাগ্য বদলে যেতে পারে তা থাকে।
নিজের গোয়াল থেকে একটা গাধা এনে ধরিয়ে দিল বুড়ি। এমন বেতন পেয়ে, জ্যাক তো অবাক। বুড়ির মুখে মুচকি হাসি। বলল—অবাক হয়েছ তো? আরও বাকি আছে তোমার অবাক হতে। গাধার একটা কান ধরে মুচড়ে দাও, তারপর দ্যাখো, কী হয়!
জ্যাক গাধার কান ধরে একটু টান দিয়েছে, গাধাটা ব্যা করে উঠল। অমনি তার মুখ দিয়ে কতকগুলো রুপোর পেনি, সোনার গিনি ঝরে পড়ল। জ্যাকের তো আনন্দ ধরে না। গাধা নিয়ে বাড়ি রওণা দিয়েছে।
অনেক দূর এসে একটা সরাইখানা। গাধাটাকে আস্তাবলে বেঁধে, খাবার ঘরে ঢুকল জ্যাক-- ভালো যা আছে, দাও। তাড়াতাড়ি করো, খিদে পেয়েছে আমার।
মালিক এগিয়ে এসে বলল—আমার সরাইখানার নিয়ম, আগে দাম মিটিয়ে দাও। পরে খাবার নাও।
জ্যাক চলল আস্তাবলে। ভারি কৌতুহল হোল মালিকের। দাম চাইতে আস্তাবলে গেল কেন? দরজার ফাঁক দিয়ে ভেতরে উঁকি দিয়ে যা দেখল, চোখ দুটো গোল গোল হয়ে গেল তার। জ্যাক গাধাটার কান ধরে টান দিতেই, ঝর ঝর করে পেনি গিনি বেরিয়ে এলো।
 খাওয়া সেরে গাধা নিয়ে রওণা দিল জ্যাক। এক ফাঁকে, মালিক যে তার গাধা বদল করে নিয়েছে নিজের গাধার সাথে, সে জানতেও পারল না।
গাধা নিয়ে সোজা বাড়ি ফিরে এল জ্যাক। উপার্জন করবার পথ খুলে গেছে। এবার বিয়ে করে সংসারী হতে হবে। বাবা তো গাধার ব্যাপার জানে না। বিয়ের কথা শুনে বলল—বিয়ে তো করবে, বউকে খাওয়াবে কী? আগে উপার্জন করে, নিজের পায়ে দাঁড়াও। তার পরে বিয়ে।
বাবার কথা শুনে, জ্যাক ভারি খুশি। সে গাধার লেজ মোচড়াতে গেল গোয়ালঘরে। কিন্তু, গাধা যে বদল হয়ে গেছে, তার জানা নাই। মাঝখান থেকে গাধার যন্ত্রনাই বাড়ল। ব্যা-ব্যা করল কেবল। গিনি তো দূরের কথা, একটা পেনিও গড়িয়ে পড়ল না মুখ থেকে।
জ্যাককে তার বাবা তাড়িয়ে দিল ঘর থেকে। চলতে চলতে কতো দূর এসে পড়েছে। সামনে এক ছুতোর মিস্ত্রীর দোকান। সেখানেই কাজ জুটে গেল জ্যাকের। ছুতোর বলল—আমার এখানে কাজ করো। বছর ফুরোলে, ভালো মতন মাইনে দেব তোমাকে। উপকারে লাগবে তোমার।
কাজে লেগে গেল জ্যাক। দেখতে দেখতে বছর শেষ হোল। ছুতোর বলল—তোমার বেতন আমি তৈরি করে রেখেছি। এই টেবিলটা নিয়ে যাও। যখনই তোমার মন চাইবে, যা খেতে মন চাইবে, সাথে সাথেই টেবিল ভর্তি খাবার পেয়ে যাবে।
শুনে জ্যাক ভারি খুশি। খাবারের চিন্তা ঘুচে গেছে সারা জীবনের মতো। ফুর্তিতে বাড়ির পথ ধরল। 
চলতে চলতে সন্ধ্যে নেমে এলো। রাতটুকু কাটাতে হবে। সেই  সরাইখানটায় এসে পড়েছে। ভিতরে ঢুকে বলল—ডিনার সাজাও। ভালো খাবার দিও কিন্তু। 
মালিক বলল—মাফ করবেন। তেমন কিছু নাই আর। কিছুটা হ্যাম আর কয়েকটা ডিম পড়ে আছে কেবল।
--সে কী গো? আমিই তো অনেক খাবার খাওয়াতে পারি তোমাকে। বলেই টবিলটাকে বলল—ভালো মতন ডিনার সাজাও তো দেখি।   
সরাই মালিকের চোখ ছানাবড়া। তার চোখের সামনেই টেবিল ভর্তি খাবার, পানীয়  হাজির! ঝলসানো তিতির, সসেজ, মাটন, আলু, সবজি—হরেক রকম খাবার!
ডিনার সেরে, জ্যাক বিছানায় গড়িয়ে পড়ল, অনেক হাঁটাহাঁটি হয়েছে সারা দিনে। ঘুম এসে গেল তাড়াতাড়ি।
সরাই মালিকের তো মনে লোভ। সে গিয়ে ঢুকল নিজের চিলেকোঠায়। খুঁজে খুঁজে জ্যাকের টেবিলের মতো একটা টেবিল পেয়েও গেল। জ্যাকের টেবিলের সাথে নিজেরটা বদলে নিল চুপিসারে। 
সকাল হোল। টেবিল ঘাড়ে নিয়ে বাড়ি ফিরে এল জ্যাক। বাবাকে বলল—সক্কলের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করে ফেলেছি। এবার বিয়ের জোগাড় করো।
বাবার মুখে ব্যাঙ্গের হাসি—তাই নাকি? কী ব্যবস্থা করেছ, দেখাও তো, দেখি।
জ্যাক বলল—এই টেবিলটা দ্যাখো। বলা মাত্রই এ তোমাকে ভূরিভোজ খাইয়ে দেবে।
--তাই না কি? একেবারে ভুরিভোজ! বাবা বলল-- নিজের চোখে পরখ করে নিই তাহলে।  
ঘরের মাঝখানে টেবিল পাতল জ্যাক। বলল—খাবারের ব্যবস্থা হোক। 
ঐ বলাই সার। কোন সাড়াই এলো না টেবিল থেকে। দ্বিতীয় বার বলল জ্যাক। কিন্তু কোথায় খাবার! সব ভোঁ ভোঁ। বাবা বেরিয়ে এসে সজোরে দুটো কিল বসিয়ে দিল ছেলের পিঠে। রেগে আগুন হয়ে বলল—দূর হয়ে যা বাড়ি থেকে। অকর্মার ধাড়ি কোথাকার। 
মনের দুঃখে, অপমানে দৌড়তে দৌড়তে একটা নদীর ধারে এসে হাজির হোল ছেলেটা। বেঁচে থাকবার ইচ্ছেটাই চলে গিয়েছে। নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পড়ল জ্যাক। 
এক কাঠুরিয়া ছিল কাছাকাছি। সে দেখতে পেয়েছে ব্যাপারটা। তাড়াতাড়ি জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে, তুলে আনল ছেলেটাকে। সব শুনে, নরম গলায় বোঝাতে লাগল—জীবন অনেক মূল্যবান, বাছা। তাকে নষ্ট করতে নাই। দু’বার চেষ্টা করেছ। পারোনি। তাতে হাল ছেড়ে দেবে কেন? আবার চেষ্টা করো। ভাগ্যের চাকা ঘুরে যেতেও তো পারে।
--দু’বার আমি ঠকেছি, আর… জ্যাককে কথা বলতে না দিয়ে, কাঠুরিয়া বলল—তিনবারের বেলায় জিতেও যেতে পারো। এক কাজ করো, এক বছর কাজ করো আমার সাথে। আমি তোমাকে জিতবার ব্যবস্থা করে দেব। 
দু’জনে মিলে একটা কাঠের সাঁকো বানাল নদীতে। বছর শেষ হলে, কাঠুরিয়া বলল—তোমার কাজ ফুরিয়েছে। জীবনে উঠে দাঁড়াবার উপায় করে দিচ্ছি আমি। 
একটা গাছের ডাল কেটে, পাকাপোক্ত একটা লাঠি বানিয়ে দিল কাঠুরিয়া। বলল—যে তোমার সাথে শত্রুতা করেছে, ঠকিয়েছে তোমাকে, তার কাছে ফিরে যাও। সামনে পৌঁছে কেবল বলবে—লাঠি, পেটাও এই বদমাসটাকে। তার পর খেলা দেখবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। 
ভারি খুশি হোল জ্যাক। হাতে লাঠি নিয়ে সোজা গিয়ে হাজির হোল সেই সরাইখানায়। মালিকের সামনে পৌঁছে, চেঁচিয়ে বলল—লাঠি, পেটাও এই ধূর্তটাকে। 
তার পর আর যায় কোথায়? দমাদ্দম লাঠি পড়তে লাগল লোকটার উপর। হাতে পায়ে মুখে মাথায় পিঠে—সর্বত্র। বাবা গো ,মা গো—পরিত্রাহি চিৎকার করতে লাগল বেচারা।
এক সময় আধমরা হয়ে পড়ে গেলে মাটিতে। তখন থামল লাঠি। লোকটা ককিয়ে উঠে বলল—ঘাট হয়েছে আমার। মাফ করে দাও আমাকে। তোমার জিনিষ ফেরত দিয়ে দিচ্ছি আমি।
গাধা আর টেবিল ফেরত পাওয়া গেছে। গাধার পিঠে চড়ে বাড়ি ফিরে চলল জ্যাক। ঘাড়ে সেই যাদু টেবিল। ঘরে পৌঁছেছে, আবার তেড়ে এলো তার বাবা—আবার  ঐসব বুজরুকি দেখাতে এসেছিস তুই?
--না, বাবা। জ্যাক বলল— বদমায়েস সরাইওয়ালাটাকে উচিত শিক্ষা দিয়ে, আমার আসল জিনিষ ফিরিয়ে এনেছে আমি। পরীক্ষা করে দ্যাখো নিজের চোখে। 
বাবা ছেলে মিলে, গোয়ালঘরে ঢুকল গাধাটাকে নিয়ে। যেই না কান ধরে টান দিয়েছে, গাধাটার মুখ দিয়ে, কতকগুলো রূপোর পেনি আর সোনার গিনি ঝরে পড়ল। নিজের চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছে না মানুষটার।
বাবার তো আনন্দ ধরে না। চোখ মুখ আলোয় চকচকে। বলল—এবার তোমার টেবিলের কেরামতিটা দেখাও, দেখি। 
বাবা ছেলে মিলে, টেবিলটা নিয়ে খাবার ঘরে সাজিয়ে রাখল। জ্যাক গলা তুলে বলল—টেবিল, আমাদের দুজনের জন্য খাবার সাজাও। 
আবার সেই ভোজবাজির মত ঘটনা। বাবার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না। চোখের সামনে টেবিল ভর্তি খাবার দাবার। সুবাসে ঘর ভরে উঠেছে। এত সব মহার্ঘ খাবার চোখেও দেখেনি জীবনে!
বাবা জ্যাককে বলল—শোন বাছা, দেশে দুষ্টু লোকের অভাব নাই। এই টেবিল আর গাধাটার কথা কেউ যেন জানতে না পারে। কোন দিন মুখেও আনবে না। কারও কানে যেন একটি শব্দও না যায়। 
বেশ আনন্দে দিন কাটে দুজনের। বাবা এদিকে করছে কী, মাঝে মাঝে কান ধরে টানছে গাধার, আর পেনি-গিনি জমাচ্ছে। জ্যাক বলল—এটা কী হচ্ছে, বাবা? 
--দু’দিন সবুর করো। সব বুঝতে পারবে। বাবা বলল—যা সরল মানুষ তুমি। কোনও ভরসা নাই তোমার উপর। কবে এ দুটো জিনিষ হাতছাড়া হয়ে যায়, তার নাই ঠিক। আগেভাগেই ভালো মতন একটা বিধিব্যবস্থা করে ফেলতে হবে।
সব ব্যবস্থা করেও ফেলল মানুষটা। এক এক করে অনেক জমিজমা কিনল। তিন-চারটে ঘোড়া কিনল তাগড়াই দেখে। ভেড়া কেনা হোল এক পাল। গ্রামের লোকের চোখ টাটাতে লাগল। ব্যাপারটা ভোজবাজির মতো লাগছে তাদের কাছে। তারপর যেদিন পেল্লাই একখানা বাড়ি হোল বাবা-ছেলের, কারও বিশ্বাসই হচ্ছে না।
তার পর শুরু হোল এক উৎপাত। বিয়ের যুগ্যি যত মেয়ে ছিল গাঁয়ে, তাদের বাবাদের উমেদারি শুরু হোল জ্যাকের বাড়িতে। সবাই জ্যাকের সাথে মেয়ের বিয়ে দিতে চায়।
এর পর যখন আশপাশের গ্রাম থেকেও মেয়ের বাপেরা আসতে লাগল, বাবা-ছেলের একেবারে নাজেহাল অবস্থা। ঘরে টেকা দায় হয়ে উঠল দুজনের।
জ্যাকের বাবা একটা বুদ্ধি বের করল। ঘোষণা করে দিল—আজ থেকে ঠিক সাত দিন বাদে, সবাই নিজের নিজের মেয়েকে নিয়ে, এখানে এসে হাজির হবে। যারা গুণে গুণে একশটা সোনার গিনি আনতে পারবে, তাদের ভিতর থেকে একজন মেয়েকে পছন্দ করে নেবে আমার ছেলে । কেন না, বিয়ে তো একজন মেয়েকেই করবে জ্যাক। 
ঘোষণা শুনে, অনেকেই ফ্যাসাদে পড়ে গেল। একশ’ গিনি কি চাট্টিখানি কথা না কি? সবাই পারবে না। এদিকে হোল কী,  মেয়ের বাবাদের কথা থাক। সবচেয়ে মন খারাপ জ্যাকের। 
ছেলের শুকনো মুখ দেখে, বাবার অনুমান হোল, নিশ্চয় কিছু একটা গোলমাল হয়েছে কোথাও। জিজ্ঞেস করার পর জানা গেল, গ্রামেরই একটি মেয়েকে জ্যাকের পছন্দ। ছোট বেলা থেকে এক সাথে খেলাধুলো করে বড় হয়েছে দুজনে। জ্যাকের মন খারাপের কারণ হোল, মেয়েটির বাবা খুব গরীব। সোনার গিনি জোগাড় করা তাদের সাধ্য নয়। 
বাবা বলল—এই কথা? চিন্তা কোর না। ঐ মেয়ের সাথেই তোমার বিয়ে দেব আমি। বাবার উপর ভরসা রাখো।
সাত দিন বাদে। জ্যাকের বাড়ির সামনে যেন মেলা বসে গেল। মেয়েকে সাথে নিয়ে, একশ’ গিনি জোগাড় করা বাবারা তো এসেছেই। একশ’ জোগাড় হয়নি যাদের, তারাও কেউ কেউ এসেছে, মনে আশা নিয়ে। কিন্তু মজা দেখবার জন্য এসেছে আরও বেশি জন। কেন না, এমন ঘটনা তো আগে দেখেনি কেউ কোনদিন।
এক এক করে একশ’গিনি জোগাড় করা বাবারা এগিয়ে এলো। জ্যাকের বাবা গিনির সংখ্যা গুণে গুণে দেখছে। জ্যাক ঠায় বসে রইল। একটি করে মেয়ে এগিয়ে আসে। নিয়ম রক্ষার জন্য একবার চোখ বুলিয়ে নেয় ছেলেটা। 
আসলে তার মন খারাপ। গরীব বাড়ির মেয়ে। একশ’ গিনি তার বাবা জোটাবে কী করে? এটাই ভয় তার। সেজন্যই মন ভার করে বসে আছে সে।
একশ’ গিনির বাবাদের পালা শেষ হোল। সকলের পিছনে, জ্যাকের পছন্দ করা মেয়েটি দূরে দাঁড়িয়ে আছে তার বাবার হাত ধরে। জ্যাকের বাবা তাকে ডেকে বলল—তোমরা গিনি এনেছ?
মেয়েটি ভয়ে ভয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে বলল—এনেছি।
জ্যাকের বাবা বলল—সামনে এসো তো। দেখি, কতগুলো গিনি আনতে পেরেছ?
মেয়ের বাবাও বেশ সংকুচিত পায়ে সামনে এগিয়ে এলো। একটা থলে ছিল হাতে। সেটা এগিয়ে দিল। 
গুণে দেখা গেল, একশ’টা গিনি নয়। পুরোপুরি একশ’ একটা গিনি আছে থলেতে। 
জ্যাকের বাবা বলল- এবার জ্যাক, তুমি বেছে নাও। কাকে তুমি বিয়ে করবে।
জ্যাক যেমন আশ্চর্য হয়েছে, খুশি হয়েছে তার অনেক গুণ বেশি। সে বলল—একশ একটা গিনি এনেছে যে, তাকেই আমার পছন্দ। 
ধুমধাম করে বিয়ে হয়ে গেছে জ্যাকের। আনন্দেই দিন কাটে তিনজনের। কিন্তু জ্যাক আজও ভেবে পায় না, এতগুলো গিনি কোথায় পেল অভাবী মানুষটা? 
আমরা কিন্তু আসল ব্যাপারটা জানি। চুপি চুপি বলে দিই তোমাদের। ঘটনা হোল, জ্যাকের বাবাই একদিন গভীর রাতে গিয়ে, গিনির থলিটা মেয়ের বাবার হাতে গুঁজে দিয়ে এসেছিল। দুই বুড়োর কেউই কথাটা বলেনি কোন দিন। নিজের ছেলেমেয়েদেরও না।

Post a Comment

0 Comments