ঋত্বিক ত্রিপাঠী
সময়সচেতন বলেই তিনি সুসময়ের অপেক্ষায়। সমাজসচেতন বলেই তিনি সমাজ পরিবির্তনের কথা বলেন। তিনি কবি সুকমল ঘোষ।
সম্প্রতি ত্রিষ্টুপ প্রকাশনী থেকে প্রকাশ পেয়েছে তাঁর কাব্যগ্রন্থ : 'সামনে রাখা তপ্ত ছাইদানি'। উপমা ব্যবহারে তিনি অনন্য। সময়ের কথা বলতে গিয়ে তাঁর বক্তব্য স্পষ্ট। কিন্তু শব্দ বাচ্যে আটকে থাকে না। ব্যঞ্জনায় হয়ে ওঠে অরূপ। কেজো, মৌখিক ভাষাকেও তিনি সহজে ব্যবহার করতে পারেন।
'ঠিক এই সময়ে কোনো প্রশ্ন / করো না নদীকে / নদী এখন খরস্রোতা।' নদী এখানে সময়ের প্রতীক। তাই স্পষ্ট ভাবেই পরের অংশ লেখেন—
'নদী এখন রক্তমাখা/ রক্তস্নাতা পাহাড়ী বুকে/ পাথরচাপা সকাল বিমুখ/ আগুনজ্বলা কান্না মুখে/ কাঁদছে দুপুর মায়ের কোলে।'
.....
'আগুনকে শান্ত হতে দাও/ কিছুটা সময় অপেক্ষায় না হয় থাকো'
আশাবাদী। পথপ্রদর্শক। এগিয়ে ভাবেন। আগুনও একদিন শান্ত হবে। শুধু সময়ের অপেক্ষায়। অসাধারণ শব্দসমবায়ে বাস্তব উঠে আসে। কিন্তু উপমা অলংকারে বাক্য কাব্যরূপ পায়। 'স্মৃতি' কবিতায় লিখেছেন 'একটা রাত মানেই আর/ একটা সকাল।/ একটা দুপুর হলেই দু'হাত রোদ্দুর। /এভাবেই একটা জীবন / এবং, আর একটা / স্মৃতির চাদর।' এভাবেই সহজ সরল ভাষায়
কখনও তিনি স্মৃতিকাতর। মনে পড়ছে আলু পোস্ত, গরম ডালের বড়া, মুসুরি ডাল সহযোগে কোনও এক দুপুর। কখনও তিনি আত্মমগ্ন। জরুরি নয় কোনও কথা। কারণ 'ওপরে নীচে —শুধু হালুম! অতএব, চুপ!! কখনও প্রার্থনার সুরে আহ্বান করেন — 'মাটিকে পাথর করে দাও।'
পরাঙ্গিক এঁকেছেন উজ্জ্বল ফৌজদার। সুন্দর অক্ষরবিন্যাস ও ঝকঝকে ছাপা — প্রকাশকের নিষ্টা প্রমাণ দেয়।
সুকমল ঘোষের কবিতার নানাভাবে এসেছে নদীর ব্যবহার।কখনও তা সৌন্দর্যের প্রতীক, কখনও জীবনের গতিময়তার প্রতীক, কখনও নদী নিজেই এক স্বতন্দ্র চরিত্র। কখনও বর্তমান সময়ের প্রতীক। তিনি দেশের কথা বলেন। বলেন আমাদের কথা। সময়ের ক্ষতকে তুলে ধরেন। সময় ও সমাজ সচেতন সুকমল কাব্যশৈলীতে ব্যঞ্জনার চাইতে লক্ষণাকে গুরুত্ব দেন বেশি। আশা করি পাঠকের কাছে এ বই সংরক্ষণযোগ্য হবে।
সামনে রাখা তপ্ত ছাইদানি / সুকমল ঘোষ
প্রচ্ছদ : উজ্জ্বল ফৌজদার
ত্রিষ্টুপ/ ১৫০/-
0 Comments