জ্বলদর্চি

বিস্মৃতপ্রায় সাহিত্যিক দক্ষিণারঞ্জন শাস্ত্রী/ নির্মল বর্মন

বিস্মৃতপ্রায় সাহিত্যিক দক্ষিণারঞ্জন শাস্ত্রী 
নির্মল বর্মন

ড.দক্ষিণারঞ্জন শাস্ত্রী সংস্কৃত ও বাংলায় এম.এ. পাশ। ভারতীয় দর্শনের বস্তুবাদের ওপর গবেষণা করে পিএইচ.ডি ডিগ্ৰী লাভ করেন। বিদগ্ধমহলে ব্যাপক সাড়া পড়ে গিয়েছিল। দক্ষিণারঞ্জন শাস্ত্রীর  প্রবন্ধগুলির বিষয় দর্শন, ধর্ম, সংস্কৃতি ইত্যাদি । ড.দক্ষিণারঞ্জন‌ এম.এ (সংস্কৃত) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করার জন্য  শাস্ত্রী উপাধি লাভ করে বিদগ্ধমহলে সুনাম অর্জন করেন। 
পন্ডিত দক্ষিণারঞ্জন শাস্ত্রী স্মৃতিশাস্ত্র বিষয়ক  গবেষণা গ্ৰন্থ "অরিজিন অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অফ রিচুয়ালস অফ অ্যানসেস্টর ওয়ারশিপ ইন ইন্ডিয়া" উল্লেখযোগ্য গবেষণা গ্ৰন্থ। চার্বাক দর্শনের বস্তুবাদের উপর গবেষণা গ্ৰন্থ 'চার্বাক যষ্টি' (১৯২৮), 'চার্বাক দর্শন' আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। 
পন্ডিত শাস্ত্রীর অন্যান্য গ্রন্থগুলি হল:- "ভাষা সমস্যা ও মীমাংসা"(১৯২৯), "স্মৃতি : আচার ও ধর্ম", "প্রবন্ধ সংগ্রহ" প্রভৃতি।
"স্মৃতি: আচার ও ধর্ম" প্রবন্ধ গ্রন্থের 'অন্ত্যেষ্টি' প্রবন্ধটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সময় ও সমাজে মৃতদেহ সৎকারের রীতি, পদ্ধতি সম্পর্কে ইতিহাসভিত্তিক তথ্যতলাশে ভরপুর। বস্ততঃ 'ভারতবর্ষে 'অন্ত্যেষ্টি' প্রথা কিভাবে , কোন প্রেক্ষিতে এসেছে, তার বিবর্তন-ই বা কখন  কিভাবে হয়েছে সে বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ  ও সংবেদনশীল প্রাসঙ্গিকতা প্রবন্ধটির প্রেক্ষাপট। প্রবন্ধির মূল থিম:- 
অ) পাশ্চাত্যের পারস্য, গ্রীসে সমাধি প্রথার নীতিরীতি থাকলেও ভারতবর্ষে সেই প্রাচীন কাল থেকেই 'সমাধি' ও 'দাহ' দুই ব্যবস্থাই সুপ্রচলিত। 
আ)  আদিমযুগে 'কোথাও শবদেহ পক্ষী বা জীবজন্তু সুষম খাবার হিসেবে ব্যাবহার করা হতো।  লেখকের কথায়:--"কোথাও নীলাকাশের নীচে শবদেহ উন্মুক্ত করিয়া রাখিয়া দেওয়া হইত"। 
ই) কালের অমোঘ নিয়মে  মৃতদেহ সৎকারেরও বিরাট পরিবর্তন সূচিত। 
ঈ ) সিন্ধুসভ্যতার সময়ে মৃতের উদ্দেশে নানা ধরণের উপহার দ্রব্য উৎসর্গ  ও দান করার প্রবণতা ছিল।  উ)ঋগ্বেদের যুগে 'সমাধি' ও 'দাহ' এই দুই ব্যবস্থারই প্রচলন প্রচলিত ছিল। 
ঊ) শবদেহ সমাধিস্থ করে রাখলে মৃতের আত্মা তার পরিজনদের আঘাত হানতে পারে করতে । এই কালজয়ী ধারণায় দাহপ্রথা'কে অনুকূল  ভাবনায় ভাবিত।মৃতদেহ দাহ করলে আত্মার মুক্তি ও শান্তি ত্বরান্বিত হয়, এই বদ্ধমূল ধারণা থেকে দাহব্যবস্থা তাই বেশি জনপ্রিয়তার দাবিদার । সমালোচনার পাল্লায় ভর করে উত্তর ইউরোপের এক বিশেষ ধরনের উপজাতির বিজয় অভিযানের ফলে গ্রিস,রোম, পারস্য ও ভারতবর্ষে শবদাহ প্রথার প্রসার বিস্তার লাভ করেছিল। কারণ --
"এই উপজাতি বিশ্বাস করিত মৃত্যুর দ্বারা জীবনে যে কলুষের, যে অপবিত্রতার সৃষ্টি হয় একমাত্র অগ্নিদ্বারাই সেই কলুষ বিনাশ সম্ভব এবং স্বর্গগমনের ইহাই একমাত্র উপায়।" 

🍂

এ) মানব সভ্যতার আদিম আর্য জাতিরা গোষ্ঠীবদ্ধভাবে জীবন যাপন করতো। পরে সময়ে ও কালের নিয়মে জনসংখ্যা বিরাট বৃদ্ধির ফলে  বিভিন্ন স্থানে  ছড়িয়ে পড়েছিল। ফলতঃ বাসস্থানের সন্নিকটে সমাধিস্থ করার রীতি ও পাটার্ণ বদলে স্বর্গগমনের ভাবনাকে ত্বরান্বিত করার জন্য শবদেহ দাহ করার রীতিনীতি প্রচলিত হয়েছিল। অধ্যাপক কীথের ধারণা প্রণিধানযোগ্য 
"আত্মার স্বর্গগমনের জন্য মৃতদেহের দাহ প্রয়োজন"।           ঐ) মৃতদেহ দাহপ্রথা প্রসারের ক্ষেত্রে প্রাবন্ধিক দক্ষিণারঞ্জন শাস্ত্রী বৈদিক যজ্ঞানুষ্ঠানের প্রভাব-এর কথা স্মরণযোগ্য:--, 
"দাহ প্রথা আমাদের নিকট অগ্নিপূজারই নামান্তর। যজ্ঞ প্রথায় গভীর বিশ্বাস হইতে এই প্রথা এদেশে এমন একটি স্থায়ী ও তাৎপর্যপূর্ণ অনুষ্ঠান বলিয়া সম্মান লাভ করিয়াছে।" 
ভারতীয় আচার ও সংস্কার নিয়ে এই আলোচনা যেমন ইতিহাসভিত্তিক তেমনি তা অভিনবও বটে।

সংগ্রহ করতে পারেন। হোয়াটসঅ্যাপ -৯৭৩২৫৩৪৪৮৪


Post a Comment

2 Comments