জ্বলদর্চি

পঞ্চবাণ /সুমিত্রা মাহাত

পঞ্চবাণ

সুমিত্রা মাহাত 


দ্রৌপদী

তোমার জীবনের সেই মুহূর্ত 
অনুভব করেছি বহুবার-
একঝাঁক সুপুরুষ, 
যখন সামান্য এক নারীর সম্মান রক্ষা করতে অসমর্থ হয়,
সত্য আর সম্মান বাঁচাতে,
অন্তর করে হাহাকার-
ছড়িয়ে পড়ে আকাশে বাতাসে,
অন্ধকার মন হাঁতড়ে ফেরে প্রাণ সখাকে-
না! কেউ আসে না,অফুরান বস্ত্র হাতে।
বই এর পাতায় গল্প থাকে সীমাবদ্ধ!
ঈশ্বর আছে কিনা পরীক্ষা করতে সাধ হয়েছিল একবার 
বাসে এক নিদারুণ পরিস্থিতিতে করজোড়ে স্মরণ করেছি, 
তুমি প্রকট হও, 
অলৌকিক ক্ষমতা বলে এই পরিস্থিতি থেকে করো মুক্ত, 
না! কেউ আসেনি,ঘটেনি কোন অলৌকিক ঘটনা;
বুঝেছি, একাই লড়তে হবে দ্রৌপদী!
অমানিসার কালো মেঘ ছিন্ন ভিন্ন করে,
একাই এগিয়ে যেতে হবে তোমায়,
সুপুরুষতার কাছে , তোমার নারীসত্তা,
সম্মান ভিক্ষা করে কেঁদে ফিরবে না,
বজ্রমুষ্ঠিতে ছিনিয়ে নিতে হবে আপন বস্ত্র, 
আপন শক্তি আর মনোবলে, 
জয় তোমারই হবে,
মানুষের হৃদয়ে বাস করবে তুমিই, দ্রৌপদী!


মন্দোদরী 

কর্মই ধর্ম, এ কথা মেনে নাও প্রিয়, 
কেনো রাখো জেদ;
মন পুড়ে ছাই হয়,
মনস্তাপের আগুনে, 
আমার জীবনের দীপশিখা তুমি,
আঁধারের পর্দা কেনো দাও টেনে;
বুদ্ধিহীনের মতো , কেন ভুলো ছলে,
চেয়ে দেখো সূর্য শিশুর লাল আভায়, আকাশ গেছে ছেয়ে;
মুছে নাও সব গ্লানি 
ধরো আপন পথ-
ফিরে এসো!
আঁধার পুরীর এককোণে,
অপেক্ষায় আমি;
আমি মন্দোদরী!

ঘাটপাথর 

পাহাড়ে পাহাড়ে রঙ্কিনী থান
ডাহি,ডুংরী, ডি;
ঘাটশিলা জুড়ে,যত খুশি ঘুরে,
তবু সাধ মেটেনি;
পাহাড়ে ,পাহাড়ে খুঁজে খুঁজে ফিরি,
আদি নাড়ী টান;
পাথরে পাথরে লেখা ইতিহাস, 
শুনি পেতে কান।
লতায়, পাতায় জড়ানো পৃথিবী,
প্রাচীন অতি প্রাচীন;
হাতছানি দেয় বুনো ফুল,লতা,
কানে কানে বলে কত শত কথা,
হাঁফ ধরে যায় শীর্ষ ছুঁতে,
তবু ছাড়বো না কোনমতে,
ইচ্ছে করে ধুলো মাটি মেখে
পাথরে পাথরে তোমার বুকে,
যুগ যুগান্ত যাই না থেকে,
ঘাটপাথর!ঘাটপাথর!
নতুন নাম দিলাম তোর!


ঊর্ধ্বে ওঠা

ছোট চাওয়া-পাওয়া,হীন চিন্তা,
হিংসা,ক্ষোভ, ছোট মন যা
সবকিছুরই উর্ধ্বে ওঠা ,
সহজ কথা নয়।
যাকে মনে ভাবো এতই আপন,
হিংসার বীজ করে বপন;
ত্যাগের সীমা পার করে দাও ,
পাহাড় প্রমাণ দুঃখ ও পাও,
আকাশ ,বাতাস ,বৃক্ষ, লতা,
তারাও বোঝে মনের ব্যথা। 
মানুষ তবু হয় না মানুষ, 
মিথ্যে সাজাই রঙীন ফানুস;
ধিক! বিধাতা সৃষ্টি তোমার, 
এমন বেকার, শুধুই আকার!
যা বেঁচেছে প্রেম, ভক্তি, 
ত্যাগ, মায়া, বল,শক্তি, 
সব দিয়েছো আমায় ভরে!
থাকি আমি কেমন করে,
বিলিয়ে বিলিয়ে শেষ হতে চাই, 
হোক না আমার শূন্যতে ঠাঁই !

নিম্ন ধারা

নদীর গতি নিম্ন মুখে,
বাড়িয়ে ছড়িয়ে এগিয়ে চলে;
মানুষের মন হয় না যেন, 
নদীর মতো নিম্ন ধারা!
পাহাড়ে নদী সরু পথে
পলি ভরে ভরে যায় মুখে,
উপর(থেকে)নীচে যে কাজ করে
মানুষের ফল উল্টো দিকে।
উর্ধ্ব পানে মন যত চায়, 
দুই তীরে তার পলি ভরায়;
চাষ আবাদে ভরে ওঠে,
মানব ক্ষেতে শালুক ফোটে।
ভুলেও চলে নিম্ন টানে,
দুঃখ মনে ডেকে আনে;
উর্ধ্বে চলার অভ্যাস চাই, 
বদলে যাবে জীবনটাই;
দেখবে শুধু আনন্দ, দেখবে শুধু আলো,
মন হয় না কালো, সব দেখবে ভালো।
সে সব ভুলে কু-অভ্যাসে,
 মনের গুনে ,মনের দোষে
ঝরঝরিয়ে নীচে চলে;
ভুলে যায় মনের নতি,
তাতেই হয় সর্ব ক্ষতি!


Post a Comment

1 Comments