জ্বলদর্চি

হলুদ পাতায় কমলেশ লেখেন জীবনের কথা /ঋত্বিক ত্রিপাঠী

হলুদ পাতায় কমলেশ লেখেন জীবনের কথা

ঋত্বিক ত্রিপাঠী 

হলুদ ব্যঞ্জনায় বিষাদ আছে। থাকা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু তা জীবনেরই বিষাদ। সেই বিষাদের স্বাদ সবাই পায় না। জীবনকে  ভালোবাসলে জীবনের অনুরাগ ও বিষাদ হাত ধরাধরি করে আসে। তাকে তো উপভোগ করার ক্ষমতা সবার থাকে না। কমলেশের আছে।  

জীবনের লড়াই যন্ত্রণা, বিষময় দিককে উপেক্ষা করে নয়, বরং জীবনের মধ্যে থেকেই জীবনকে অনুভব করা। সম্প্রতি প্রকাশিত কমলেশ নন্দের 'হলুদ পাতার যৌবন' বইতে তা-ই ধরা দিয়েছে আপ্তবাক্যের স্বরূপে। স্বপ্ন আছে বলেই গড়ে ওঠে স্বপ্নের পিরামিড। কিন্তু সে সময়ের প্রেক্ষিতে ভঙ্গুর। তাই ভোরের প্রত্যাশায় এগিয়ে যাওয়া আর মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা এক। প্রথম কবিতা  'আলিঙ্গন'-এ তারই ইঙ্গিত। 

কমলেশ জীবনকে ধরেন সময়ে। তাঁর যাপনে সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ। নির্মেদ, সংক্ষিপ্ত, সীমিত বাক্য ব্যবহারে গড়ে তোলেন তিনি শব্দ-সমবায়। তাই তাঁর কবিতার ভাষা সরল কিন্তু গভীর, সাধারণ কিন্তু জড়িয়ে থাকে আকুলতার সুর। আর আছে আশ্চর্য উপমা ব্যবহারের সফল প্রয়াস। 'নিশ্চত অন্ধকারের গভীরে দুর্ভেদ্য সংযমী হাওয়ায় / হলুদ পাতার মতো ঝরে গ্যাছে যৌবন'(গতানুগতিক)। 'সংযমী হাওয়া' শব্দ ব্যবহারে হলুদ পাতার ঝরে যাওয়া যেন আলাদা মাত্রা পেয়ে গেল। পাঠককে দুবার পড়তে বাধ্য করাবেই।

 অতি অল্প কথায় অনেক গভীর বার্তা দেওয়া কবির স্বভাব। 'শব্দ ছড়াতে ছড়াতে/ কারা যেন বলে গ্যালো/ আজ রাত্রির জন্মদিন। রাত্রির/ মৃত্যু নিয়ে সেভাবে কোনও কথা বলেনি কেউ/ রাত্রি/ মৃত্যুর সহোদরা।'(রাত্রি) শুরুতে বেশ নরম স্বভাবে গল্লবলার রীতিতে শুরু করে কবিতার শেষে চরম ও আসল ধাক্কা দেন। কমলেশের কবিতার মধ্যে প্রবেশ করতে হলে যে শব্দ-চাবি জরুরি তা সাধারণত কবিতার শেষেই থাকে। তবে পাঠককে অবশ্যই হতে হবে মনোযোগী।  রোমান্টিক ভাষার আড়ালে তিনি আসলে কঠিন বাস্তবের শ্লেষে পাঠককে চমকে দেন।

বইতে কবিতাগুলোর ইংরেজি অনুবাদ করেছেন মানব মানিক। প্রচ্ছদ ও সজ্জা চমৎকার। আশা করি পাঠক সমাদর পাবে এ বই। 
----------
হলুদ পাতার যৌবন / কমলেশ নন্দ
প্রচ্ছদ - কমলেশ নন্দ
কবিতিকা /১৯৯/-

Post a Comment

0 Comments