নির্মল বর্মন
অধ্যাপক ড.প্রবোধচন্দ্র বাগচী বিশিষ্ট গবেষক ও প্রাবন্ধিক হিসেবে সুযশের অধিকারী । ড.বাগচী বৌদ্ধধর্ম ও সংস্কৃতি বিষয়ে গভীর আগ্রহী। বস্তুতঃ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গবেষণা করে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ ও উজ্জ্বল করেছিলেন । ১৮ই নভেম্বর ১৮৯৮ এ যশোর , বাংলাদেশে জন্মেছিলেন।১৯২৩-২৬ সালে ভোট ও চিনা ভাষা এবং বৌদ্ধধর্ম ও শাস্ত্র অধ্যয়ন করে প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস বিষয়ে গবেষণা করেছিলেন। বস্তুতঃ এই গবেষণার ফসল ফরাসী ভাষায় তিন খণ্ডে রচিত "চীনদেশে বৌদ্ধশাস্ত্র"এবং দুখণ্ডে দুটি "সংস্কৃত-চীনা"অভিধান বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাসে জগৎ জোড়া নাম।
গবেষক ও অধ্যাপক ড.প্রবোধচন্দ্র বাগচী ১৯১৮ সালে কৃষ্ণনগর কলেজ থেকে সংস্কৃত সাহিত্যে বি.এ. (অর্নাস) এ সকল ছাত্রছাত্রীর মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করার জন্য মোহিনী মোহন রায় পদক পান এবং ১৯২০ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে "প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি" বিষয়ে এম.এ. পাশ করেছিলেন। ১৯২১-সালে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ড. বাগচী কে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছিলেন। এবং বিশ্বভারতী'র সিলভ্যালেভির শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। ১৯২২এ অধ্যাপক লেভির আগ্রহে ১৯২২ নেপাল দরবারের লাইব্রেরীতে সুরক্ষিত বৌদ্ধধর্ম ও সংস্কৃতি বিষয়ক পাণ্ডুলিপি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজে হাত দেন। ১৯২৩-এ ড.বাগচীপ্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে যান এবং প্যারিশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণা করে সম্মানীয় Docteur-e-Letters ডিগ্রি লাভ করেন। প্রাবন্ধিক বাগচী ১৯২৬-এ ভারতে ফিরে 'দোহাকোষ', 'চর্যাপদ' ইত্যাদি সংগ্রহের জন্য দ্বিতীয়বার নেপাল পরিভ্রমণ করেন। তাঁর বিরোচিত গ্রন্থ ও প্রবন্ধাবলীর এই সময়ের মধ্যে "দোঁহাকোষের ব্যাখ্যা ও অনুবাদ", "চর্যাপদের মূল পাঠ ও ব্যাখ্যা"' বিশেষ উল্লেখযোগ্য।আজ ও অম্লান। তবুও বিস্মৃতপ্রায় সাহিত্যিকের দলে স্থান অধিকার করার পথে।১৯৫৬ এর ১৯ জানুয়ারী শান্তিনিকেতনে ৫৭ বছর বয়সে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় উপাচার্য শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
🍂
আরও পড়ুন 👇
উপাচার্য অধ্যাপক প্রবোধচন্দ্র বাগচী'র উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ:-
বৌদ্ধধর্ম ও সাহিত্য
ভারত ও চীন
ভারত ও ইন্দোচীন
ভারত ও মধ্য এশিয়া
দোঁহাকোষের ব্যাখ্যা ও অনুবাদ
চর্যাপদের মূল পাঠ ও ব্যাখ্যা।
প্রাবন্ধিক প্রবোধচন্দ্র বাগচী'র "'দূরপ্রাচ্যে ভারতীয় শিল্পের প্রভাব" প্রবন্ধে বৌদ্ধধর্মের ভাবনার সঙ্গে ভারতীয় শিল্প ভাবনার প্রসার বিভিন্ন দেশে বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ স্থান লাভ করেছিল সে সম্পর্কে তথ্যপূর্ণ সমালোচনা করেছেন।
দৃষ্টান্তস্বরূপ:-
১."বৌদ্ধধর্ম প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় শিল্পের ধারাও মধ্যএশিয়ার পথে চীনদেশ পর্যন্ত পৌঁছেছিল। খ্রিস্টপূর্ব প্রথম ও দ্বিতীয় শতকেই বৌদ্ধধর্মকে অবলম্বন করে ভারতে একটি উন্নত ধরনের শিল্পের প্রতিষ্ঠা হয়। এই শিল্পের দুটি প্রধান অবদান হচ্ছে স্তূপ ও চৈত্য বিহার।"
২. “মধ্য এশিয়ার পথে হিন্দুকুশ পর্বতের অন্তঃপাতী বামিয়েন নামক স্থানে এই বৌদ্ধ শিল্পের যেসব নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে তা ভারতীয় শিল্পের ধারাই অনুসরণ করে।"
৩. “ভারতীয় শিল্প ও সংস্কৃতির বিভিন্ন ধারা মধ্য এশিয়ার পথ বেয়ে মিলিত হয়েছিল চীনসীমান্তে তুন-হোয়াং নামক স্থানে।"
৪. “বৌদ্ধধর্ম প্রচারের সঙ্গেই জাপানের রাজধানী নারার নিকটে প্রথম বৌদ্ধ বিহারের প্রতিষ্ঠা হয়। এই বৌদ্ধ বিহারের নাম হোরিয়ুজি। এই বিহারেই জাপানি চিত্রকলা ও ভাস্কর্যের সর্বাপেক্ষা প্রাচীন নিদর্শন পাওয়া যায়।"
ড.বাগচী ১৯৫৪ তে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে নিযুক্ত হন এবং এই পদে থাকাকালীন অকস্মাৎ মৃত্যু ঘটে। গবেষক ও প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ হিসেবে সম্মান যত্নসহকারে পেলেও কালের অমোঘ আকর্ষণে আজ বিস্মৃতপ্রায় সাহিত্যিক হিসেবে পরিগণিত।
বস্তুতঃ জনৈক সমালোচকের মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য:-
"ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম পন্ডিত এবং চৈনিক বিষয় সম্পর্কে গবেষণা ক্ষেত্রে ভারতের প্রবীণতম ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব শিক্ষাবিদ প্রবচন্দ্র বাগচী"!
0 Comments