বিশ্বজিৎ অধিকারী ও সঞ্জীব ভট্টাচার্য-র অণুগল্প
ছায়া || বিশ্বজিৎ অধিকারী
মাঝরাস্তায় খোয়া ভাঙার কাজ চলছে। ঘরবাড়ি তো দূর একটা বড় গাছও নেই আশেপাশে। কাজের বিরতিতে ডালাওলা ট্রাকটারের একপাশে লেপটে থাকা আওতায় মাথা গুঁজে বসে জল খাচ্ছে কয়েকজন।
কিছুদূরে, যেখানে ডাঙ্গা ঢালু হয়ে জমিতে মিশেছে, বেঁটে ঝোপঝাড়। তারই সামান্য ছায়ায় বিছিয়া রাখা কাপড়ের ওপর বসে খেলা করছিল একটি শিশু। তাকে খাওয়ানোর জন্য ছুটে এসেছে ফুলমণি। বরের হাতে বেদম মার খেয়ে পালিয়ে এসে সে এখন বাপের ঘরে আশ্রিত। বাপ স্পষ্ট বলে দিয়েছে, নিজেরটা নিজে যোগাড় করে খা।
অনেকক্ষণ বাদে কাছে পেয়ে শিশুটি দুই হাতে মা-র দিকে এগিয়ে ধরে তোবড়ানো জলের বোতল। ছেলেকে কোলে তুলে আঁচলের আড়ালে নিতে নিতে ফুলমণি অস্ফুটে বলে, তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যা বাপ আমার।
সকাল সন্ধের গল্প
সঞ্জীব ভট্টাচার্য
প্রায় সকাল সাড়ে সাতটা বাজতে যায়।কেমন নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছে দেখ।।ঠকবাজ। ভূঁড়ির ভাঁজে ভাঁজে শয়তানি। আজ মজা টের পাবে।
সে তো জানতেই পারতো না যদি না বিভাস দার সঙ্গে দেখা হত। সরল মনেই সে বিভাস দাকে বলেছিল,'সন্ধেবেলা দু বন্ধুর বেশ হাঁটা চলছে।'
বিভাস দা হা হা করে হেসে উঠে বলেছিল,'ন্যান্টার সঙ্গে! তার তো সন্ধে থেকে চায়ের ঠেক আর আড্ডা।'
একে ঐ নাম শোনা, তায় আবার এই খবর। মৌসুমীর মাথাটা দ্বিগুণ জ্বলে উঠল।
সে নাকি মোটা হয়ে যাচ্ছিল। তাই জোর করে তাকে হাঁটতে পাঠানো।
অথচ যখন দুজনে মিলে হাঁটার কথা বলেছিল বদমাইশটা উত্তরে বলেছিল,'আমি তো রোজ সন্ধে বেলা বিভুর সঙ্গে হাঁটি, নাহলে এরকম ফিট থাকি'।............
মৌসুমী ন্যান্টাকে ঘুম থেকে তুলে বলে,'উঠে পড়।বাইরে তোমার জন্য একজন অপেক্ষা করছে'।
ঘরে ঢুকে ন্যান্টা বলে,'এটা কী হল?'
'বেশী বলেছে নাকি।একমাস ধরে গোটা শহর ঘুরিয়েছে। সাত হাজার বরং কম।ভালো টোটো ওয়ালা।'
'মানে তুমি হাঁটার নাম করে....'
মৌসুমী ন্যান্টার পেটে আলতো চিমটি কেটে বলে,'তোমার সন্ধে আমার সকাল সোনা।'
সংগ্রহ করতে পারেন 👇
0 Comments