জ্বলদর্চি

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও জীবনানন্দ দাশ- পূর্ববঙ্গের দুই কবি/অর্ণব মিত্র

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও জীবনানন্দ দাশ- পূর্ববঙ্গের দুই কবি

অর্ণব মিত্র 


গত শতাব্দীর দুই জনপ্রিয় কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও জীবনানন্দ দাশ- দুজনেই ছিলেন পূর্ববঙ্গের সন্তান। কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-এর জন্ম হয় ১৯৩৪ সালে। বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার মাদারিপুর গ্রামে। শৈশব ও কিশোর বয়সের কিছুটা সময় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বাংলাদেশে কাটিয়েছেন।
এরপর তাঁর পরিবার কলকাতায় চলে আসে। আর কলকাতা শহরেই গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের শুরুর সময় থেকে কিশোর কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-এর আত্মপ্রকাশ। 
কবিতা দিয়েই সাহিত্যে প্রবেশ করেছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।প্রথম জীবনে সুনীল একটানা কবিতাই লিখে গেছেন। তিনি যখন কবিতা লিখতে শুরু করেন অখণ্ড ভারত ভেঙ্গে দুটো আলাদা দেশ হয়ে গেছে। বাংলাও ভাগ হয়েছে। ডানদিকে পূর্ববঙ্গ ও বামদিকে পশ্চিমবঙ্গ রুপে। এক অভিনব ও তরতাজা চলতি শব্দের ব্যবহারে কবিতা লিখতে শুরু করেছিলেন তিনি। সপ্রতিভ ভাবে তিনি কবিতার শরীর নির্মাণ করেছেন। কবিতার ভেতর অনুভূতি ও মননের মিশ্রণ নিয়ে তাঁর আত্মপ্রকাশ।  
১৯৫১ সালে মাত্র সতেরো বছর বয়সে জনপ্রিয় ‘দেশ’ পত্রিকায় ছাপা হয় তাঁর প্রথম কবিতা। এ সমন্ধে ও সেই বয়সে প্রথম কবি জীবনানন্দ দাশ-এর কবিতা পড়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি একটি প্রবন্ধে লিখেছেন ‘ম্যাট্রিক পরীক্ষার পর ছুটিতে খেলাচ্ছলে দু –তিনটি কবিতা লিখেছিলাম, তার একটি ‘দেশ’-এ পাঠাতে ছাপাও হয়ে গেল। সেই সঙ্গে শুরু হয় নতুন করে কবিতা পাঠ। কল্লোল যুগের কবিদের বহু কবিতা বারবার পড়া সত্ত্বেও বেশি ভাল লেগে গেল সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতা, কিন্তু জীবনানন্দের কবিতা প্রথম পড়ার পর কেউ যেন দু-চোখে ঘুসি মেরেছিল। বিমূঢ় হয়ে বসে থাকার মতন অবস্থা! এ কী! এসব কবিতা আগে পড়িনি! এ যে সম্পূর্ণ নতুন ভাষা’।  
প্রায় সাত-আট বছর ধরে লেখা কবিতা থেকে বাছাই করে ১৯৫৮ সালে প্রকাশিত হয় তরুণ কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-এর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একা এবং কয়েকজন’। সেই সময়ও তিনি কবিতাই লিখতেন। এর কয়েকবছর পর তিনি দেশ পত্রিকার সম্পাদক সাগরময় ঘোষের কাছ থেকে শারদীয়া সংখ্যায় উপন্যাস লেখার আমন্ত্রণ পান। ‘আত্মপ্রকাশ’-নামে তাঁর প্রথম উপন্যাস শারদীয়া দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এরপর একাধিক কাব্যগ্রন্থের পাশাপাশি প্রকাশিত হতে থাকে তাঁর সাড়া জাগানো উপন্যাসগুলিও। প্রকাশিত হয় ‘সেই সময়’ ‘পূর্ব পশ্চিম’ ‘প্রথম আলো’ ও ‘মনের মানুষ’ উপন্যাসগুলি -যা ‘বেস্টসেলার’ হিসেবে দুই বাংলাতেই এখনো জনপ্রিয়।    
পূর্ববঙ্গ থেকে আসা তাঁর অগ্রজ ও সেই সময়ের জনপ্রিয়তম কবি জীবনানন্দ দাশ-এর মৃত্যু হয় ১৯৫৪ সালে। সেই সময় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-এর বয়স মাত্র কুড়ি বছর। তার এক বছর আগে ১৯৫৩ সালে সিগনেট প্রকাশনার কর্ণধার দিলীপকুমার গুপ্ত-এর পরামর্শে তিনি সম্পাদনা ও প্রকাশ করতে শুরু করেছেন কৃত্তিবাস পত্রিকা। কৃত্তিবাস পত্রিকা সম্পাদনার মাধ্যমে অল্প বয়সেই কলকাতাকে কেন্দ্র করে তাঁর একটি কবি বলয়ও তৈরি হয়েছে। 
এ সমন্ধে একটি প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন ‘ অচিরকালের মধ্যেই আমরা ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকা প্রকাশ করি। তখন সবাই জীবনানন্দ দাশে আচ্ছন্ন। কফি হাউসে তরুণ কবিদের আড্ডার বিষয় হিসেবে বুদ্ধদেব বসু ও বিষ্ণু দে ক্রমশ স্থানচ্যুত হয়ে সেখানকার সিংহাসনে বসানো হয় জীবনানন্দ দাশ-কে। কৃত্তিবাসের দলবলই যে প্রথম প্রকাশ্যে জীবনানন্দকে নিয়ে একটা হইচই শুরু করে,এটাও দাবি করা যেতে পারে’। 
এ সমন্ধে তিনি লিখেছেন ‘সৌভাগ্যবশত এই সময়টায় সিগনেট প্রেস ও দিলীপকুমার গুপ্তর সঙ্গে আমার বেশ যোগাযোগ ঘটেছিল।সিগনেট প্রেসের বাড়িতে জীবনানন্দকে দেখেছি,কথা বলিনি। সাহস পাইনি। শুধু একবারই শঙ্কর চট্যোপাধ্যায় নিয়ে গিয়েছিল জীবনানন্দ দাশের বাড়িতে, লান্সডাউন রোডের কাছাকাছি কোথাও থাকতেন। দরজা খুলেছিলেন তিনি নিজে,ঘরে নিয়ে গিয়েও বসিয়েছিলেন। জীবনানন্দ দাশের সঙ্গে এক মঞ্ছে কবিতা পাঠ করার সৌভাগ্যও আমার হয়েছিল’। 
১৯৪৮ সালে প্রকাশিত হয়েছিল কবি জীবনানন্দ দাশ –এর জীবনকালে তাঁর শেষতম কাব্যগ্রন্থ ‘সাতটি  তারার  তিমির’। তার আগে প্রকাশিত হয়েছে ঝরাপালক(১৯২৭), ধূসর পাণ্ডুলিপি(১৯৩৬),বনলতা সেন(১৯৪২, কবিতা ভবন সংস্করণ)মহাপৃথিবী(১৯৪৪)।এরপর ১৯৫৪ সালে সিগনেট প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত ‘বনলতা সেন’ কাব্যগ্রন্থের জন্য কবি জীবনানন্দ দাশ পান ‘নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার’। সেই বছর নাভানা প্রকাশনা থেকে বেরোয় কবি জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা। তাঁর মৃত্যুর পর এই বইটি পায় রাষ্ট্রপতি পুরস্কার। এ সমন্ধে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ প্রকাশের পর জীবনানন্দের খ্যাতি অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু সেই খ্যাতি তিনি বেশিদিন উপভোগ করতে পারেননি। বইটি বেরোল এপ্রিলে,অক্টোবর মাসে সেই ট্রাম দুর্ঘটনা। শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে কয়েকদিন জীবনমরণের লড়াই, দেখতে যাবার সুযোগ হয়নি। জীবনানন্দের প্রাক্তন ছাত্র অরবিন্দ গুহ গেছেন দু’একবার, তাঁর মুখে খবর শুনতাম’।  
১৯৫৪ সালের ১৪ই অক্টোবর ট্রাম দুর্ঘটনায় কবি জীবনানন্দ দাশ গুরুতরভাবে আহত হন । এরপর শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলে। কিন্তু সাত দিন পরে ২২ অক্টোবর সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
কবির মরদেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার সময় সদ্য কৈশোর পেরনো কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ও শবযাত্রীদের সঙ্গী হয়েছিলেন। এ সমন্ধে তিনি লিখেছেন ‘শবানুগমনে খুব বেশি লোক হয়নি। আমাদের অল্পবয়সি কাঁধ বেশ শক্ত, আমরা কয়েকজন কাঁধ দিয়েছিলাম পালা করে। জীবনে একবারই মাত্র সেই কবির শরীর আমি স্পর্শ করছি,তখন নিস্পন্দ। ক্যাওড়াতলায় তখনও বিদ্যুৎচুল্লি হয়নি,তাঁকে চিতায় পোড়ানো হয়েছিল। কবির শরীর যখন চিতায় জ্বলছে,কিছুদুরে একটা ফাঁকা জায়গায় বসে আমরা কয়েকজন অনর্গল তাঁর কবিতা বলছিলাম’।
রবীন্দ্রনাথের পরে গত শতাব্দীর আধুনিকতম কবি জীবনানন্দ দাশের   দেহ যখন চিতায় জ্বলছে, কিছু দূরে একটা ফাঁকা জায়গায় বসে কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও তাঁর কবিবন্ধুরা মিলে তাঁদের প্রিয় কবির কবিতা মুখস্থ আবৃত্তি করছিলেন । তাঁর থেকে ৩৫ বছরের বড় পূর্ববাংলার এক অবহেলিত অগ্রজ কবির জন্য তাঁর সেই সহানুভূতিময় করুণ দৃশ্যটি আজ নতুন করে এই সময়ের ও এই প্রজন্মের পাঠকের সামনে ফুটিয়ে তুলেছেন বাংলাদেশের এই সময়ের জনপ্রিয় তরুণ উপন্যাসিক মাসুদ আহমাদ। পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় ‘দেশ’ পত্রিকায় তাঁর লেখা কবি জীবনানন্দ দাশের জীবনভিত্তিক উপন্যাস ‘কাঞ্ছনফুলের কবি’ এক বছরের বেশি সময় ধরে প্রকাশিত হয়ে সমাপ্ত হয়েছে কয়েকমাস আগে। এই  ধারাবাহিক উপন্যাসের শেষ অংশে চিতায় জ্বলমান সেই সময়ের সব থেকে আলোচিত কবি জীবনানন্দ দাশের শেষ মুহূর্তের শ্মশানের সেই রাতের একটি ছবি আমরা পাই যেখানে অনুজ ও সম্ভাবনাময় কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ও উপস্থিত ।
১ 
কবি জীবনানন্দ দাশ-এর জন্ম হয় ১৮৯৯ সালে বাংলাদেশের বরিশালে। ১৯০৮ সালের তিনি বরিশালের ব্রজমোহন স্কুলে ভর্তি হন ও এই স্কুল থেকে ১৯১৫ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন। এরপর সেই সময় অখণ্ড বাংলার পশ্চিম দিকে কলকাতা শহরে এসে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজি অনার্স নিয়ে স্নাতক হন ১৯১৯ সালে। ১৯২১ সালে ইংরেজি সাহিত্যে এম,এ পাস করেন ওই কলেজ থেকেই । ১৯১৯-এ প্রেসিডেন্সি কলেজে ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে স্নাতক ও পরে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর পাশ করে ১৯২৬ সালে চাকরি জীবন শুরু হয় এই কলকাতারই  সিটি কলেজ থেকে । সিটি কলেজে কর্মজীবনের পাশাপাশি সাহিত্য পত্রপত্রিকায় লেখার শুরু সেই সময় থেকেই । ১৯২৭ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরা পালক’ প্রকাশিত হয়। 
কবি হিসেবে বাংলাকবিতার মানচিত্রে জীবনানন্দ দাশের উপস্থিতি অনুভূত হয় তিরিশের দশকের শেষের দিক থেকে তবে  নাম ছড়িয়ে পড়ে ‘বনলতা সেন’ (১৯৪২) কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের পর থেকে।  এরপর তাঁর পরের কাব্যগ্রন্থ ‘মহাপৃথিবী’ প্রকাশিত হয় ১৯৪৪ সালে। এরপর জীবনানন্দের জীবদ্দশায় একটিই কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল । সেটি হল ‘সাতটি তারার তিমির’। প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৪৮ সালে ।  তাঁর মৃত্যুর ছয় বছর আগে। ততদিনে পূর্ববঙ্গ ছেড়ে সপরিবারে তাঁরা কলকাতায় এসে উঠেছেন।
১৯৫৪ সালে ট্রাম দুর্ঘটনায় কবি জীবনানন্দ দাশের মৃত্যুর পর তিন বছর পর তাঁর সবচেয়ে সাড়া জাগানো কাব্যগ্রন্থ ‘রূপসী বাংলা’ প্রকাশিত হয় ১৯৫৭ সালে। এরপর ১৯৬১ সালে প্রকাশিত হয় কাব্যগ্রন্থ ‘বেলা অবেলা কালবেলা’। গবেষকরা বলছেন এখনো অবধি বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা মিলিয়ে তাঁর প্রায় ছয়শটি কবিতা প্রকাশিত হয়েছে।   
🍂
মৃত্যুর আগে অবধি প্রায় তিরিশ বছরের কর্মজীবনে বেশ কয়েকটি কলেজে কাজ করেছেন  কবি জীবনানন্দ দাশ।  যার সূত্রপাত  সিটি কলেজে থেকে। তবে কলকাতা শহরের এই কলেজের কাজটি তাঁর চলে যায় । কলকাতায় থাকার সময় কবি  বুদ্ধদেব বসু, প্রেমেন্দ্র মিত্র, কাজী নজরুল ইসলাম,  সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, অমিয় চক্রবর্তী, বিষ্ণু দে- রা ছিলেন তাঁর সমসাময়িক।
তাঁর ব্যক্তিগত ও আর্থিক জীবনের শেষ দিন অবধি ছিল অনিশ্চয়তা। ভাল না লাগায় ১৯২৯ সালে বাগেরহাট কলেজের চাকরিটিও তিনি ছেড়ে দেন। সেখা‌ন থেকে তিনি একটি চাকরি নিয়ে দিল্লিতে চলে যান । ১৯৩০ সালে তিনি দিল্লির চাকরি ছেড়ে বাংলায় ফিরে আসেন । তার পর বিয়ে করতে তিনি বরিশালের বাড়িতে ফিরে এসে আর দিল্লি যাননি। তাঁর জন্মস্থান বরিশাল ও প্রকৃতি ঘেরা বাংলাদেশ ছিল তাঁর সবথেকে প্রিয় ও ভালোলাগার জায়গা। তাইত বাড়ির কাছে বরিশালের ব্রজমোহন কলেজে ১১ বছর (১৯৩৫-১৯৪৬)চাকরি করেছেন। কোনো সমস্যা হয়নি ।কারণ তিনি বাংলার বাইরে থাকতে পারতেন না। কলকাতা বা অন্য কোনো শহর না। মৃত্যুর পর  প্রকাশিত ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থের প্রতিটি কবিতায় এই ভালোলাগার কথাই ফুটে উঠেছে।   
কবি জীবনানন্দ দাশ সারাজীবন বাংলা ছেড়ে কোথাও যেতে চান নি।আত্মীয় স্বজনরা তাঁর জন্য পঞ্জাবে কিম্বা শিলং-এ চাকরি ঠিক করে সেখানে যাবার জন্য পীড়াপীড়ি করেছেন। বেকার জীবনে অর্থ কষ্ট থাকা সত্তেও জীবনানন্দ যাননি।একবার বাধ্য হয়ে দিল্লির এক কলেজে কাজ নিয়েছিলেন। কয়েক মাস পরেই ছুটির সময় পালিয়ে এসে আর ফিরে যাননি। 
কবি জীবনানন্দ দাশকে চল্লিশের দশকের শেষের দিকে কলকাতায় চলে আসতে হয়। উপার্জনের অনিশ্চয়তায় ভরা অচেনা ইট-কংক্রিটের এই কলকাতা শহরে। এই শহরে আসতে হয়েছিল জীবনানন্দকে তাঁর প্রিয় পূর্ববঙ্গের মফঃস্বল আধো শহর আধো গ্রাম বরিশাল ছেড়ে। তাঁর স্থায়ী আশ্রয় ছেড়ে।
৩     
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ও ও জীবনানন্দ দাশ। পূর্ববঙ্গের দুই কবি।
একজনের কর্মকাণ্ড গত শতাব্দীর প্রথমার্ধে মূলত পূর্ববঙ্গে বিস্তৃত ।মৃত্যু ও মৃত্যুর আগে কয়েকটি বছর বা শেষ অংশটুকুর জন্য জীবন তাঁকে ঠেলে দেয় পশ্চিমবঙ্গের দিকে । 
আর একজনের প্রতিভার আত্মপ্রকাশ হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে। পঞ্চাশের দশকের শুরুতে ও রচনাকর্ম,কাজ ও জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছিল গত শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ ছড়িয়ে আরও কয়েক বছর মত। প্রথমে তাঁর নিজের বেড়ে ওঠার জায়গা পশ্চিমবঙ্গে ও তারপর দুই বাংলাতেই। ২০১২ সালে তাঁর মৃত্যু অবধি। এ সমন্ধে গল্পকার ও উপন্যাসিক মাসুদ আহমাদ একটি প্রবন্ধে লিখেছেন ‘শৈশব ও কিশোরের অনেকটা সময় সুনীল পূর্ববাংলায় কাটিয়েছেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কাজে ও বেড়াতে বহুবার বাংলাদেশে এসেছেন। দেশভাগের অনিবার্য ঘটনায় তিনি কলকাতায় থিতু হয়েছেন।কিন্তু নাড়ির টানের মতো একটা চোরা টান তাঁর আজীবন থেকে গিয়েছে। কখনও নিখাদ বেড়ানোর উদ্দেশ্যে,সাহিত্যের অনুষ্ঠান ও বইমেলায় অংশগ্রহণ এবং নানা উপলক্ষে তিনি বাংলাদেশ এসেছেন।বাংলাদেশের সঙ্গে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সম্পর্ক ও যোগাযোগটা নদীর মত। এমন এক নদী, দেশভাগ ও ধর্ম,কোনও কিছুই যে নদীকে আলাদা করতে পারেনি’। 
জানা যায় আজও,তাঁর মৃত্যুর দশ বছর পরেও পাঠকের মধ্যে দুই বাংলাতেই তাঁর সমান জনপ্রিয়তা আছে। পাঠকপ্রিয়তা ও জনপ্রিয়তা আছে কবি জীবনানন্দ দাশেরও। দুই বাংলাতেই। তাঁর মৃত্যুর পর প্রায় সত্তর বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও।
  
তথ্যসূত্র,
আমার জীবনানন্দ আবিস্কার ও অনান্য- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, আনন্দ পাবলিশার্স।
সুনীল,আজও চমৎকার-মাসউদ আহমাদ, দেশ,২০২৩ সেপ্টেম্বর। 
কাঞ্ছনফুলের কবি -মাসউদ আহমাদ, দেশ পত্রিকা।
ইন্টারনেট,

Post a Comment

0 Comments