জ্বলদর্চি

কাশ্মীরের জাতীয় সংহতি দিবস (৫ই ফেব্রুয়ারি)/দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

কাশ্মীরের জাতীয় সংহতি দিবস (৫ই ফেব্রুয়ারি)

দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

৫ই ফেব্রুয়ারি দিনটিকে 'কাশ্মীরের জাতীয় সংহতি' দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এই দিবস সম্পর্কে বলার আগে আমরা একটু জেনে নিই কাশ্মীরের ইতিহাস সম্বন্ধে।

'কাশ্মীর' শব্দটি আমাদের যেন কোন ভূস্বর্গের কথা মনে করিয়ে দেয়।
কাশ্মীর বৃহত্তর ভারতীয় উপমহাদেশ ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চল সমূহের(মধ্য, দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়া) ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ঐতিহাসিকভাবে কাশ্মীরকে 'কাশ্মীর উপত্যকা' নামে অভিহিত করা হয়। বর্তমানে কাশ্মীর বলতে, এক তুলনামূলক বৃহত্তর অঞ্চল কে বোঝায়। বর্তমান ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য (যেটি জম্মু-কাশ্মীর উপত্যকা ও লাদাকের সমন্বয়ে গঠিত),পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীর, গিলগিত ও বালতিস্তান অঞ্চলদ্বয় এবং চীন নিয়ন্ত্রিত আকসাই, চীন ট্রান্স কারাকোরাম ট্র্যাক অঞ্চল বৃহত্তর কাশ্মীরের অংশ।

পঞ্চম শতাব্দীর পূর্ববর্তী সময়ে কাশ্মীরে প্রথমে হিন্দু ধর্মের এবং পরে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচলন ও প্রসার ঘটে। পরবর্তীকালে নবম শতাব্দীতে কাশ্মীরে শৈব মতবাদের উত্থান ঘটে। ত্রয়োদশ থেকে পঞ্চদশ শতাব্দীতে কাশ্মীরে ইসলাম ধর্মের প্রভাব দেখা যায়,কিন্তু এতে পূর্ববর্তী ধর্মের প্রভাবগুলো হারিয়ে যায়নি বরং এক নতুন মতবাদ, 'সুফিবাদে'র প্রসার ঘটেছিল। এর পরের কাহিনী আমাদের সকলেরই জানা।

৫ই ফেব্রুয়ারি দিনটিকে 'কাশ্মীরের জাতীয় সংহতি দিবস' হিসেবে পালন করা হয়। এটি ভারত শাসিত জম্মু-কাশ্মীরের জনগণ এবং কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রচেষ্টার সাথে সাথে পাকিস্তানকে সমর্থন, ঐক্য প্রদর্শন এবং  নিহত কাশ্মীরীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায়।
পাকিস্তান শাসিত অঞ্চল আজাদ জম্মু-কাশ্মীরে পাকিস্তান ও যুক্তরাজ্যের মিরপুরি কাশ্মিরীদের দ্বারা কাশ্মীর সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এই দিবসের ইতিহাসের দিকে মুখ ঘুরালে দেখতে পাই,, ১৯৯০ সালে জামায়েত ই ইসলামী পাকিস্তানের কাজী হোসেন আহমেদ দ্বারা কাশ্মীর দিবসের প্রস্তাব করা হয়েছিল। শরীফ, জামায়াতের সহায়তায় ক্ষমতায় এসেছিলেন এবং ১৯৯১ সালের বিচ্ছিন্নতাবাদের ঘটনাও ছিল জামায়াতের ব্যাপার।

বর্তমানে যে 'কাশ্মীর সংহতি দিবস' টি পালিত হয় ২০০৪ সালে পাকিস্তানের কাশ্মীর ও উত্তরাঞ্চল বিষয়ক মন্ত্রীর দ্বারা শুরু হয়েছিল।

২০২১ সালে নিউইয়র্কের স্টেট অ্যাসেম্বলি একটি প্রস্তাব পাস করে নিউইয়র্কের গভর্নরকে এই দিনটিকে কাশ্মীর-আমেরিকান দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল। রেজুলেশন অনুসারে দিনটি নিউইয়র্কের কাশ্মীরি সম্প্রদায়দের স্বীকৃতি দেওয়ার এবং 'ধর্মের স্বাধীনতা সহ মানবাধিকারের চ্যাম্পিয়ন' করার উদ্দেশ্যে পালিত হয়।

২০২২ সালে হুন্ডাই, কিয়ামোটরস, সুজোকি মোটরস, টয়েটো,এএফসি এবং পিজ্জা হাটের মত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির পাকিস্তানি ফ্রাঞ্চাইসিগুলি কাশ্মীরিদের স্বাধীনতার অধিকারের পক্ষে বিজ্ঞাপন জারি করেছিল। এই কোম্পানিগুলির ভারতীয় ফ্রানঞ্চাইসিগুলি এই ধরনের পক্ষপাত মূলক কাজগুলির জন্য ভারত সরকারের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয় এবং আরো জানায় যে তাদের মূল কোম্পানির ব্র্যান্ডগুলোর কাছে অনুমোদন ছাড়াই এগুলি করা হয়েছিল।

 ৫ই ফেব্রুয়ারিকে কাশ্মীরের সংহতি দিবস হিসেবে পালনের প্রচলনের শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে ১৯৯০ সালের জানুয়ারিতে কাশ্মীর ভ্যালিতে কাশ্মীরী পণ্ডিতের গণহত্যার গোপন উদযাপনের সময় হিসেবেও স্মরণ করা হয়। সেই সময় কাশ্মীরের হাজার হাজার পণ্ডিতেরা, তাদের শত শত বছরের পূর্বপুরুষদের ভিটেমাটি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। এরপর তারা ভারত এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে যাযাবরের মতো জীবন কাটাতে থাকে।

কাশ্মীরের সংহতি দিবস মূলত একটি ঘৃণ্য উদযাপনের উৎসব যা মৃত্যু ও ধ্বংসকে নির্দেশ করে। এছাড়া এই দিবসের মিথ্যা রাজনৈতিক মতবাদ এবং ব্রিটিশ বিভাজনে উদ্বুদ্ধ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান এ দুই দেশের অশুভ সাম্প্রদায়িক আদর্শের বার্ষিক চর্চা হিসেবে দেখা হয়। এটি এমন একটি দিবস যা, পাকিস্তানের জনগণকে স্মরণ করিয়ে দেয়, তাদের শাসকদের আদর্শ ও ভৌগোলিক বিষয়গুলো আর কিছুই নয়, দেশের সেনাবাহিনীর মাধ্যমেই প্রভাবিত হয় বলে।

Post a Comment

0 Comments