ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১৬৬
সম্পাদক -মৌসুমী ঘোষ
চিত্রগ্রাহক - মৃণাল ঘোষ
সম্পাদকীয়,
মৃণাল আঙ্কেলের পাঠানো আজকের প্রচ্ছদের ছবি দেখে আমার মন এত খুশি হয়েছে যে আজ আর পড়াশুনা নয় কেবল গান গল্প আর আড্ডা দেব সারাদিন। আমার কথা শুনে তোমরা কি ভ্যাবাচাকা খেলে নাকি? সে তো চন্দন জেঠুর গল্পের নাম। শ্রীকান্ত আঙ্কেলের উপন্যাস লাচুঙের নেকড়ে পড়ে বন্ধু কাকে বলে জেনে নাও। থ্রিলার গল্পে বন্ধু! হয় গো হয়। প্রচ্ছদের পাখি তিনটির মধ্যে কে কার বেশি বন্ধু দেখলেই যেমন বোঝা যাচ্ছে এও তেমন। হাওড়া আর কলকাতা গঙ্গার দুপাশে থাকলে কি হবে, এই শহর দুটি কিন্তু দুজনের খুব বন্ধু। কে বলল? কেন ভ্রমণে লিখেছে বাসবদত্তা আন্টি। ছড়ার রাজা কবি ভবানী প্রসাদ মজুমদারকে নিয়ে ছড়া লিখেছে সুব্রত আঙ্কেল। বেতার দিবস নিয়ে লিখেছে দোলনচাঁপা আণ্টি। আর সাহির ও রুদ্রাংশের আঁকাও আছে। এত সবের মধ্যে এবারের সংখ্যা পূর্ণপ্রভা পিসির পাঠানো পাঠ প্রতিক্রিয়ায় আরো বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। বন্ধুরা তোমরা আছো বলেই পাখিরা গান গায়, আড্ডা দেয়, গল্প করে আমাদের মতো। আজ থেকে পড়াশুনার পাট তুলে মন দিও সরস্বতী পুজোয়। ঘরে ঘরে হোক বাগদেবীর আরাধনা।..... মৌসুমী ঘোষ।
শ্রদ্ধার্ঘ :কবি ভবানী প্রসাদ মজুমদার
সুব্রত দেব
ছড়ার রাজা ভবানী প্রসাদ
ছড়ায় ভুবন ভরে,
ছড়ার ঝুলি নিয়ে তুমি
গেলে অচিন পুরে।
দু:খ শোকের বিষাদ পুরে
মনের দরজা বন্ধ,
তোমার ছড়া আনত বুকে
ছন্দে গন্ধে আনন্দ!
আট থেকে আশি
ছেলে মেয়ে বুড়ো বুড়ি,
তোমার ছড়ায় উঠত নেচে
তোমার নেইকো জুড়ি।
ছড়ায় তুমি গল্প শোনাও
ছড়ায় হাসাও সব
শোনাবে আর কে বল আর
তুমি যে নীরব!
ছড়ার রাজ্যে তুমি ছিলে
বেতাজ রাজাধিরাজ!
এ লোক ছেড়ে অন্য লোকে
পাড়ি দিলে আজ।
অন্য ভুবন পেয়ে তোমায়
ছন্দে মাতোয়ারা,
এই ভুবনে ছন্দ পতন
আমরা ছন্দহারা।
এই ভুবনে হরেক ছন্দ
থাকবে যতদিন
তুমি আমাদের হৃদয় পুরে
থাকবে আসীন।
যাবার মেলা ছন্দ সুরে
শ্রদ্ধা, নমস্কার
ছন্দ ছড়ার কবি ভবানী
প্রসাদ মজুমদার।
রুদ্রাংশ দাস
নবম শ্রেণী, সোদপুর চন্দ্রচূড় বিদ্যাপীঠ, উত্তর ২৪ পরগণা
ভ্যাবাচাকা
চন্দন চক্রবর্তী
পর্ব ২
আগামীকাল ম্যাচ। একটু মাঠের দিকে গেলে কেমন হয়। এখনও সন্ধে হতে ঢের বাকি। মাঠে গেলে হাওয়াটা বোঝা যাবে। কোচ পল্টুদাও আছে নিশ্চয়ই। পল্টুদা নিজে বলেছে ‘দ্যাখ ঋকু তোমার ভ্যাবাচ্যেকা শট একদিন হিট হবেই। তবে তার সঙ্গে কেতাবি টেকনিকও শেখায়। কিন্তু ঋকু কিছুতেই ভ্যাবাচ্যেকা মার ভুলতে পারে না। হঠাৎ চিলে ছোঁ মারার মতো কে যেন ফুলুরির ঠোঙা ছোঁ মেরে তুলে নিল।
‘কি রে একা একা ফুলুরি খাচ্ছিস যে বড়’?
ঋকু হাঁ! তাইতো এতো সাক্ষাৎ পল্টুদা।
সেই সিরিঙ্গে চেহারা। খোঁচা খোঁচা মিলিটারি ছাঁট চুল। লাল টিশার্ট আর কালো প্যান্ট পরে মাথার চুলে হাত বুলিয়ে গম্ভীরসে বলে, হ্যাঁরে বলি একলব্যের নাম শুনেছিস’?
ঋকু একবার ঘাড় নাড়ে ‘হ্যাঁ’ আর একবার ‘না’।
‘মানেটা কী? হ্যাঁ-না করছিস কেন?
এবারে ঋকুর গলায় মিহি স্বর।
‘হ্যাঁ জানি। একলব্যের অস্ত্র গুরুর নাম ছিল দ্রোনাচার্য’!
‘তারপর.... আগে বাড়’
‘দ্রোনাচার্য একলব্যের কাছে হাতের বুড়ো আঙুল চেয়েছিল....’
‘হুম! সেটা এমনি এমনি নয়। গুরুদক্ষিণা হিসাবে। আর একলব্য কচাৎ করে আঙুল কেটে দিয়েছিল। বুঝলি? আর তুই সামান্য ক’টা ফুলুরি দিতে পারিস না’। আমি তোর গুরু সে খেয়াল নেই বুঝি?
‘বারে তুমি দেবার আগেই তো জটায়ু হয়ে গেলে। আমার কি দোষ’!
‘সাধে ছোঁ মেরেছি রে। এখনকার দিনে ওই রকম শিষ্য কি আর পাওয়া যায় রে! এখন উলটে গুরুর আঙুল কেটে নেয় আর কি! যাইহোক তুই যেটুকু খেলা শিখেছিস তারজন্যে অ্যাডভান্স ফুলুরি গুরুদক্ষিণা হিসাবে নিয়ে নিলাম’।
‘পাঁচটাই নিয়ে নেবে’?
‘মাত্র তো পাঁচটা’! ঠিক আছে একটা রাখ। পেটটা হেউ ঢেউ করছে। দশটা ফুচকা আর তেতুঁলজল তো কম কথা নয়’?
‘ফুচকা কোথায় খেলে’?
‘ওই রে রাজুর ফুচকা দোকানে মুখ লুকিয়ে ফন্টু ফড়িং ফুচকা খাচ্ছিল। খপাৎ করে ওর শালপাতার ঠোঙ্গাটা নিয়ে আমি খেতে লাগলুম। ওর তো গুরু হয় কিনা! দ্যাখ, শিষ্যরা ভুল করতে পারে কিন্তু গুরু হয়ে আমি তো ভুল করতে পারি না।
ঋকু কিছুটা দমে গিয়ে বলল, ওর থেকেও ফুচকা খেয়েছো? মানে ওই গুরুদক্ষিণা হিসাবে’।
‘তবে আর কি বলছি’।
‘তবে একটা কথা বলতে পারি যা প্র্যাকটিস করেছি চান্স পেলে সব ফুচকাকে পিটিয়ে মাঠের বাইরে পাঠাবো। দেওয়ালির রকেটের মতো! সাঁই সাঁই করে বল ছোটাবো’!
‘বুঝলাম সব! কিন্তু কেসটা জটিল খুব। একদিকে তুই, অন্যদিকে ফন্টে তারওপর যেভাবে ভ্যাবলা ভিমরুলে চোখে ভীমের মতো গদা চালাচ্ছে। ওকেও রোখা মুশকিল!
‘পল্টুদা আমার এই ফুলুরিটাও তুমি খেয়ে নাও’।
শিষ্যের একটা ফুলুরি কখনও গুরু খেতে পারে? ওটা তুই খা। আমাকে এখন মাথা ঠান্ডা রেখে সব চিন্তা করতে হবে। একটা বাটার স্কচ কাপ আইস্ক্রিম খাওয়া দিকি? যদি মাথা খোলে।
ঋকু ব্যাজার মুখে বলে, ‘আবার আইসক্রিম, না মানে, ফুচকা ফুলুরি তারপর আইসক্রিম খাবে? যদি কিছু হয়? তোদের মতো পেট রোগী নাকি! যত্তসব। খাওয়াবি নাকি বল!
কাঠের চামচটা আইসক্রিমে ঢুকিয়ে পল্টুদা বলল, ‘কি রে তুই খাবি না’?
‘উঁহু! যদি ঠান্ডা লেগে জ্বর আসে তবে কাল খেলব কী করে? .... মানে যদি চান্স পাই।
তারিয়ে তারিয়ে আইসক্রিম খেতে থাকে। বেশ কিছুক্ষন পরে বলে একটা ফান্টা হলে মন্দ হয় না! না থাক। তবে তোকে একটা কথা বলি তোর কালকে একটা চান্স আছে’।
‘কিন্তু ভ্যাবলা যে ভীমের মতো ব্যাট চালাচ্ছে পল্টুদা’।
‘ও তো খেলবে। কিন্তু নন্টের আবার পেট ছেড়েছে সঙ্গে জ্বর। এটা হলগে লেটেস্ট খবর! দেখা যাক’।
‘কিন্তু ফন্টে ফড়িং’?
‘ধুর, আমাদের চমকানো ব্যাটসম্যান দরকার। বোলার নয়’।
‘কাল মাঠে চলে আসিস। তারপর দেখা যাবে’।
(২)
এদিকে ঋকুর মা কিছুতেই রাজি নয়। চুঁচুড়ায় নাড়ুমামাকে একা ছাড়া যাবে না।‘জীবনে ক্রিকেট ম্যাচ বহু আসবে কিন্তু তোর নাড়ুমামার কিছু হলে’?
‘কি আর হবে? ট্রেনে তুলে দিয়ে আসবো। নাড়ুমামা গড় গড় করে চলে যাবে’।
‘নারে ভাগ্নেচন্দ্র, চোখে চালসে পড়ার পর থেকে কেমন যেন কমজোরি হয়ে গেছি। তুই তো আমার অন্ধের যষ্ঠি’!
অগত্যা যেতে হল। দুপুর দুটোয় ট্রেন। ওদিকে চারটেয় খেলা। বেলা একটার ট্যাক্সি চেপে মামা, ভাগ্নে হাওড়ার স্টেশনের দিকে রওনা দিল।
ঋকু ব্যাজার মুখে জানলার বাইরের দিকে তাকিয়ে। নাড়ুমামা বলে, কি হলো ভাগ্নেচন্দ্র! ওরকম মুখ গোমড়া করলে চলে। দ্যাখো, তোমার ওই শুধু ভ্যাবাচ্যেকা মার একটা চমক হতে পারে কিন্তু ক্রিকেটের ব্যাকরণ না জানলে চলে!
🍂
আরও পড়ুন 👇
ঋকু রেগে বলে, কে বলল, শুধু ভ্যাবাচ্যেকা শট! পল্টুদার কাছে অন্যান্য মারও শিখেছি। জানো, আজ আমার একটা বিশাল সুযোগ ছিল। কিন্তু মার জন্য তা হলো না। তুমিও তো একটু বলতে পারতে!
‘কী রকম বিশাল সুযোগ’?
ঋকু ফুলুরি আইসক্রিম ফুচকা এমনকি নন্টের জ্বর সব পর পর বলে গেল। নাড়ুমামা শুধু বলল, ‘হুম’। সত্যিই তবে চান্স ছিল বলছিস!
তবে আর কি বলছি? পল্টুদা নন্টের জায়গায় আমাকে খেলাতো!
অনেকটা মেঘ না চাইতেই জল। ট্রেনের মোটামুটি ফাঁকা কামরায় উঠে মামা ভাগ্নে দেখল একজন ধুতি পাঞ্জাবি কাঁধে ঝোলা মানুষ বসে। দেখে, নাড়ুমামা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে –
‘আরে অবিনাশ তুই? চুঁচুড়ার সাহিত্যসভায় যাচ্ছিস তো’?
‘হুম, তোরও তো যাবার কথা’।
‘ভালোই হলো, চল, দুই বন্ধুতে গল্প করতে করতে যাই’। গল্পে মেতে উঠল দুজনে’।
‘ভাগ্নেচন্দ্র একটা ঠান্ডা জলের বোতল কিনে নিয়ে এসো তো। এই নাও টাকা’। ট্রেন ছাড়ার সময় এগিয়ে আসে। এদিকে ঋকুর পাত্তা নেই। নাড়ুমামা উদ্বিগ্ন। জানলা দিয়ে উঁকি মারে। নাহ, ভাগ্নেটা এইভাবে পালিয়ে গেল? অবিনাশ বলেন, কী হলো? তোমার ভাগ্নেচন্দ্র গেল কোথায়?
মুহুর্তের মধ্যে হাঁপাতে হাঁপাতে জলের বোতল নিয়ে হাজির। ‘এই নাও নাড়ুমামা, সেই স্টেশনের বাইরে থেকে আনতে হলো।
ওর চোখ মুখ দেখে নাড়ুমামার কেমন মায়া হল। পকেট থেকে কয়েকশ টাকা দিয়ে বলল, ভাগ্নেচন্দ্র ট্যাক্সি নিয়ে সোজা মাঠে চলে যাও। তুমি আজকে চান্স পাবে।
ঋকু হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। সত্যি বলছো নাড়ুমামা যাবো?
বলছি তো যাও। ঠিক চান্স পেয়ে যাবে। আজ তোমার ভ্যাবাচ্যাকা জয় হবেই হবে।
‘কিন্তু মা যে বকবে’।
‘আমি ম্যানেজ করে দেব। তুমি যাও’।
চলে যাওয়ার মিনিট খানেকে মধ্যে ট্রেন ছাড়তে যাবে হঠাৎ বন্ধুকে বলল, অবিনাশ তুমি যাও। জীবনে অনেক সাহিত্য হয়েছে। অনেক সভাপতি হয়েছি। কিন্তু ভাগ্নেচন্দ্রের ভ্যাবাচ্যেকা মারতো তো দেখা হয় নি কখনও!
‘মানে’?
‘মানে, পরে বলবো’।
নাড়ুমামা নেমে দেখল ঋকু তখনও দাঁড়িয়ে।হাঁ করে ট্রেন চলে যাওয়া দেখছে। কিছু না বলে পেছন থেকে গিয়ে কাঁধে একটা থাপ্পড় দিয়ে নাড়ুমামা বলল, কি রে ভ্যাবাচ্যেকা খেয়ে গেলি’?
‘নাড়ুমামা তুমি’!
ধারাবাহিক উপন্যাস
লাচুঙের নেকড়ে
শ্রীকান্ত অধিকারী
পর্ব ৩৫
পর্ব-পঁয়ত্রিশ
দীপকবাবু এসেছেন বিশেষ কারণে, তার বন্ধুর ডাকে। বিপদের দিনে বন্ধুর পাশে এসে না দাঁড়ালে কীসের বন্ধু। কিন্তু ঘটনার মূল ধরে টানাটানি করতে গিয়ে কে ভেবে ছিল এক অনাস্বাদিত মনোরম প্রকৃতির মাঝে এসে পড়তে পারবে। কোথায় লাচুং আর কোথায় জঙ্গু। জঙ্গু নর্থ সিকিমের এক লুকানো সৌন্দর্যের পাহাড়ি খাজানা। কী নেই এই পাহাড়ি বনক্ষেত্রে। নিজস্ব বিশুদ্ধ পাহাড়ি কৃষ্টি-সংস্কৃতি সম্পন্ন মানুষের আবাস। উদার প্রকৃতি,এখনো পর্যন্ত দেখা গোটা সাতেক ঝরণা, কাঞ্চনজঙ্ঘার আকাশ ছোঁয়া রূপ, পবিত্র হ্রদ, থোলুং চু নদীর উপর ঝুলন্ত বাঁশের সাঁকো ঘুরে থোলুং মনাস্ট্রি, উষ্ণ প্রস্রবণ, লিংজ্যা ঝরণা। আর রাস্তার পাশে পাহাড়ের গায়ে রঙ বেরঙের ফুলের গালিচা। সেই অনাবিল সৌন্দর্যের মাঝে অকুতোভয় সৌন্দর্যের আকর হাজার প্রজাপতি। খোলা মনে দেখলে আর কোত্থাও যেতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু এত সবের মাঝেও ভয়ঙ্কর নেকড়েদের আরো ভয়ঙ্কর আগুন গোলার চাওনি আর প্রিয় দুইজনকে খুঁজে না পাওয়া শূলের তিক্ষ্ণ ভেদব্যথা যন্ত্রণা কাতর করে তুলছে। এখনো পর্যন্ত সঠিক দিশা পাচ্ছে না। অন্তত তার মনে হচ্ছে। শুধুই অনুমান।
নর্থ সিকিমের রাস্তাগুলো পৃথিবীর আতঙ্ক জাগানো রাস্তাগুলোর মধ্যে অন্যতম। রাস্তার বাম পাশে ছোট ছোট অর্কিড রডডেন্ড্রন কনিফার, মাঝে মাঝে প্রাইমুলা আর টকটকে নেরিয়াম ওলেন্ডারে ঢাকা উচ্চ অনুচ্চ পাহাড়ের অমায়িক আকর্ষণ অন্যদিকে তেমন হৃদকম্প জাগানো খাদ, যা দেখলেই বুক হালকা হয়ে যায়। এর মাঝে সময়ে সময়ে বাঁক ঘুরতেই গোটা শরীর দুলে ওঠে। কাঠ হয়ে গাড়ির ভিতর থাকতে হয়। এই ভাবে কতক্ষণ বসে ছিল কে খেয়াল নেই, হঠাৎ এক দুসংবাদে বড় মামা প্রদীপবাবু আর সেরগিল আঁতকে ওঠে,- ক্যায়া!
সাব, রোড ব্লক। অর উপর গাড়ি নেহি যায়েগা। আভি পয়দল সে চল না হোগা। ড্রাইভারের কথাগুলো বজ্রপাতের মত শোনালো।
ইয়ে তো হোনাহি থা। নন্দীসাব চিন্তা করবেন না। আভি আ যায়েগা আমার লোগ। বলতে বলতে কতগুলো লেপচা এসে কাঠের মত মাথা নামিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। সবার মাথায় পশমি কাপড়ের তৈরি টুপি। কোমরে বানপক। ধারালো বাঁকা অস্ত্র। নেপালিদের যেমন কুকরি।
এদের দেখে কেমন অস্বস্তি করতে লাগল দীপকবাবুর। কিন্তু সেরগিল সাহেবের সে সব কিছু নেই। তিনি ওদের দেখা মাত্রই গাড়ির ভিতর বেশ কিছু কাপড় জামা আর ব্যাগপত্র ছিল সেগুলো সঙ্গে নিতে বললেন। আর জলের ছোট ড্রাম।
এরাই কি ইন্ডিজিনিয়াস পিউপল ইন ইন্ডিয়া! নিজেদের ভাষা লেপচা ভারতীয় সংবিধানের অষ্টতম শিডিউলের অন্তর্ভূক্তির জন্য গতবছর ২০২৩ সালে হাজার হাজার লেপচা কালিম্পঙে আন্দোলন করেছিল? দীপকবাবু সেরগিল সাহেবের দিকে চেয়ে রইলেন।
সেরগিল সাহেব একবার দীপক বাবুর দিকে তাকালেন। তারপর দীপকবাবুকে বললেন ওই যে দেখছেন বানপক ইচ্ছে করলে আমাদের সব কটার মুন্ডু বডি থেকে আলাদা করতে সময় নেবে না। চুপ হো যাইয়ে। সেরগিল সাহেবের জমাট বরফের মত গলার স্বরে দীপকবাবুর বুকের গতি দ্বিগুণ বেড়ে যায়। মনে পড়ে এই ইন্ডিজিনিয়াস লোকগুলো প্রথমত পাহাড়ি তাতে বহুদিনের বঞ্চনায় জর্জরিত রক্ত বইছে ওদের শরীরে। বারবার এরা চতুর্পার্শ্ব রাজ্য নেপাল ভোট চিনাদের থেকে অবহেলা অত্যাচার পেয়ে পেয়ে নিজেদের আত্মভিমান বিক্রি করে দিয়ে এক প্রকার আত্মসমর্পণ করে সংযুক্ত ভারতবর্ষের ২২তম রাজ্যে পরিণত হয়েছে। হৃদয়ে কি কম চাপা অভিমান লুকিয়ে আছে!
অথচ স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে থাকার সুবর্ণ সুযোগ সে দিন ছিল। শুধুমাত্র সিকিম স্টেট কংগ্রেস আর ভারত অনুগামী নেপালি,বহিরাগত সিকিমিজ এবং কিছু সিকিমরাজা চোগিয়াল নামগিয়াল বিরোধীদের আন্দোলনে ১৯৫০ সাল থেকেই সিকিম ভারতবর্ষের একটি আশ্রিত রাজ্যে পরিণত হয়। তখন থেকেই একটু একটু করে রাষ্ট্ররক্ষার নামে আদি সিকিমিজদের আত্মমর্যাদা খর্ব হতে শুরু করে না কি! দীপকবাবু অদ্ভুতভাবে ইতিহাসের করুন কথার মাঝে হারিয়ে যাচ্ছিলেন। লেপচা লোকগুলো দেখলেই মন কেমন যেন হয়ে যায়!
দীপকবাবু আপনি কি ভয় পাচ্ছেন? তা হলে নন্দী সাব কে লিয়ে অমরবাবুর হোমে ফিরে যেতে পারেন। গাড়ি আপনাকে নিয়ে যাবে। সেরগিল সাহেব কঠিনভাবে কথাটা বলেন।
-আপনি কি সিরিয়াস? দীপকবাবু ভ্রু দুটো ধনুকের মত করে দেন।
-নো স্যার ইঁহা সে পয়দল জানা হোগা। আপ তো লো ল্যান্ডের হ্যা না? বহোত দিক্কত হোগা।
-একটা কথা জিজ্ঞেস করি, এই ঠান্ডায় পাহাড় জঙ্গল ডিঙিয়ে যাচ্ছি , সঠিক জায়গায় যাচ্ছি তো? নন্দীবাবুর চোখে আশঙ্কা। কোই সুরাগ ইয়া প্রুফ?
ছেত্রী ম্যাডাম একটু দাঁড়ালেন। পরে একটা মোবাইলের ট্র্যাকিং রুট মার্ক দেখিয়ে বলেন, এটা আমাদের নয় ইন্ডিয়ান আর্মির। ওরা আমাদের হেড কোয়ার্টার গ্যান্টকের অফিসে পাঠয়েছে। সেখান থেকেই এই ট্রাক রিপোর্ট। সাহি জাগা পে নজরদারি জারি হ্যায়। লেকিন উন লোগো কা পাতা নেহি চল না চাহিয়ে। ইস লিয়ে লোকাল লোগ লেনা পরেগা। ওদের বাতানা হোগা হাম লোগ ঘুমনে যাচ্ছি।
কিন্তু ওদের থামতে হয়। কারণ আগে আগে যাওয়া লেপচারা থেমে গেছে। বার্বাডোজ বাদাম গাছের ওপাশে কিছু লোক তখন ত্রিভূজাকার গর্ত করে তার পাশে জটলা করে আছে। কাছে যেতেই দেখা গেল একটা মৃতদেহ পড়ে আছে। ওরা খবর নিয়ে জানল, ওদের একটা লোককে কোন একটা তেন্ডুয়াতে ধরে খাবলেছে। ওকে এখানে গাড়া হবে। মৃতদেহের পাশে একটা তির আর ধনুক রাখা আছে। মৃতদেহের পাশে ওগুলোকেও মাটিতে দেওয়া হবে।
দীপক বাবু বলেই দিলেন,-এভাবে এই ত্রিভূজ আকারের কেন?
ছেত্রী ম্যাডাম বলেন,-এখানে কোক ব্লী বলে। গোলাকার হলে কোক বলে। দেখছেন না তির ভি হ্যায়। লেডিজ হলে কুঙ্গিও দিত। এ সব আদি প্রথা ইঁহা কা। লেকিন সেরগিল সাব ইঁহা তেণ্ডুয়া কব সে আনে লাগা? পাণ্ডা হ্যায় লেকিন তেন্ডুয়া?
এখন সূর্য অনেকটা মাথার ওপাশে চলে গেছে। পাহাড়ে সন্ধে দ্রুত নামে। সেই ভাব না তেই সেরগিল সাহেব আগেই ঠিক করে রেখেছে লেপচাদের বাড়িতে রাতটুকু কাটাতে হবে। কিন্তু তার আগে যতটা পারা যায় যনকের দিকে এগিয়ে উষ্ণ প্রস্রব নের কাছাকাছি এসে যেতে পারলে টাওয়ারটাও ভাল পাবে এবং জিরো পয়েন্টের ইয়ুম্থাং সিকিয়রিটির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পার বে। তবে যে জায়গায় রেড ঊলফের ডেরার লোকেশন দেখাচ্ছে সেখানে সেনাবাহিনী ছাড়া পৌঁছানো সম্ভব নয়। এই অবসরে যতটা পারা যায় ওপরে উঠে ফাঁকা ম্যালের খোঁজ করতে হবে। সেরগিল সাহেব বলেন, জলদি কিজিয়ে নন্দী সাব। লেপচাকে সাথ আইয়ে।
ঠিক একই সময়ে লাচেন চুর ওপরে আরো পূর্ব দিকে ইথং সাবাফুর কাছে গোপনে জুঙ্গ ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা গোপন বৈঠকে ব্যস্ত। প্রসঙ্গ ওদের বিদেশি কম্বোডিয়ান আর ভিয়েতনামি দুই ছোকরা মঙ্গন পুলিশের কাছে ধরা পড়েছে। কিন্তু উৎসব যে আর বেশি দেরি নেই। জুঙ্গের মুখে হতাশা-এত দূর এসে ভেস্তে যাবে! ইন্ডিয়া সরকারকে কিছুই জানাতে পারবে না!
উৎসব মরশুমে আমেরিকাতে বাসবদত্তা কদম
পর্ব ১১
হাডসন নদী নিউ ইয়র্ক রাজ্যেই আডিরনডক পাহাড়ে জন্মে, তারপরেই ক্রমাগত নেমে এসেছে দক্ষিণ দিশায়। তারপর হাডসন উপত্যকা হয়ে অবশেষে সে গিয়ে মিশেছে আটলান্টিক মহাসাগরে। ম্যানহাটান শহর এবং নিউ জার্সি এই দুই ব্যস্ত শহরের মাঝখান দিয়ে বইছে এই নদী। সারাদিন অজস্র মানুষ স্টিমারে এই নদী পেরিয়ে এদিক থেকে ওদিক করছেন নিজেদের কাজ কর্মের প্রয়োজনে। অনেকটা বলতে পারো আমাদের হাওড়া আর কলকাতার মতো। সেখানে মাঝে গঙ্গা নদী।
আমরা যে ফেরিতে গেছিলাম তার নাম স্ট্যাটেন আইল্যান্ড ফেরি। নাম শুনলেই বোঝা যায় এর যাত্রার এক মাথা স্ট্যাটেন আইল্যান্ড অন্য দিকে ম্যানহাটান। এ ফেরি শুনলাম চলে দিন রাত। এই ফেরি থেকেই ম্যানহাটান শহরের সুন্দর রূপ দেখা যায়। দেখতে পেলাম স্ট্যাচু অব লিবার্টি। স্ট্যাচু অব লিবার্টিকে বলা যায় আমেরিকার চিহ্ন। যাচ্ছি আর ফটো তুলছি। হাডসন নদীর ওপর সারাদিন রাত ধরে চলে এরকম আরো বেশ কয়েকটি ফেরি সার্ভিস। তাতে আবার হপ অন হপ অফ ফেরি সার্ভিসও আছে। সেই ফিলাডেলফিয়া শহরে ঘুরেছিলাম হপ অন হপ অফ বাসে আর এখানে তেমন লঞ্চও আছে শুনলাম। তবে আমরা যে ফেরিতে গেছিলাম তা হপ অন হপ অফ নয়। নামলাম গিয়ে ম্যানহাটানে।
ম্যানহাটানে অজস্র দেখার জিনিস। সেদিন বেশ ঠান্ডা। শহরে নেমেই বেশ কাঁপুনি ধরে গেল। বিশাল লম্বা লম্বা বাড়িগুলোর ফাঁক দিয়ে ঠান্ডা হাওয়া এসে সুঁচ ফোটাচ্ছে। সোয়েটারের উপর জ্যাকেট পরে নিতে একটু স্বস্তি।
প্রথমেই ভেবে রেখেছিলাম দেখতে যাবো ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সেই টুইন টাওয়ারের ধ্বংসাবশেষ। সারা পৃথিবীর অজস্র মানুষ রোজ এখনো এখানে আসেন। নীরবে শ্রদ্ধা জানান ফুলের তোড়া রেখে। সেই অভিসপ্ত দিনে একসাথে দুটি টাওয়ার ধ্বংস করা হয়েছিল। অজস্র নিরপরাধ মানুষ অন্যদিনের মতোই বাড়ি থেকে অফিস এসেছিলেন কিন্তু ফেরা হয়নি। মনটা বেশ ভারী হয়ে গেল এই জায়গায় এসে। অজস্র মানুষের পাশাপাশি আমরাও খানিকক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে বেরিয়ে এলাম।
এরপর গেলাম ‘ফিয়ারলেস গার্ল’ স্ট্যাচু দেখতে। ২০১৭ সালে ব্রোঞ্জের এই স্ট্যাচু বসানো হয়েছে। একটি নির্ভীক কিশোরী কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ব্যস্ত ম্যানহাটানের রাস্তায়। সমস্ত মহিলাদের, শিশুদের নিরাপত্তা বোঝাতেই এই স্ট্যাচু তৈরী হয়েছিল। এখন হাজার হাজার ট্যুরিস্ট একে দেখতে আসেন। ছবি তুললাম ফিয়ারলেস গার্লের গলা জড়িয়ে।
এর বেশ কাছেই পৃথিবী বিখ্যাত ওয়াল স্ট্রীট। সেখানেও ব্রোঞ্জের বিশাল ষাঁড়। আমরা যখন তার এক শিঙ ধরে ছবি তুলছি, অন্যদিকে অন্য লোক এসে দাঁড়িয়ে পড়েছে অন্য শিঙ ধরে ছবি তোলার জন্য। এও আরেক বিখ্যাত ট্যুরিস্ট স্পট।
এরপরে লাইন দিয়ে দাঁরিয়ে আছে অজস্র জায়গা, যেগুলো দেখে ফেলতেই হবে
যার মধ্যে আছে টাইম স্কোয়ার, সেন্ট্রাল পার্ক, এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং, ব্রডওয়ে এরকম আরো বেশ কিছু।
সাহির সেখ
ফিলোমেল পাবলিক স্কুল, প্রথম শ্রেণি
#পাঠপ্রতিক্রিয়া
#জ্বলদর্চি_ছোটোবেলা_১৬৫
#আলোচক_পুর্ণপ্রভা_ঘোষ
'জলদর্চি' ওয়েব পেজ। যখনই ফেসবুকে পোস্ট দেখি, প্রথমেই কভার এর ছবিতে আটকে যাই। তারপর সম্পাদকীয় পড়তে পড়তে পৌঁছে যাই ছোট্টবেলার আনন্দময় দিনগুলোতে। ভুলে যাই আমি এখন কে, আছি কোথায়! বেশ ভালো লাগায় ভরে ওঠে মন। ভারি পছন্দের সম্পাদকীয় লেখা।
কখনও যদি কোনো বন্ধু কিছু পড়তে বলে, পড়ি।
হাজার কাজের তাড়ায় তার বেশি এগোনো হয় না সবসময়! পরে পড়ব ভাবি, হয়ে ওঠে না!
আজ অন্য কাজ সরিয়ে রেখে বসলাম জোর করে ছোটোবেলা ১৬৫ তম পর্বটি নিয়ে।
সেই অনেকবছর আগের হারিয়ে যাওয়া আমি তড়বড় করে পড়ে ফেললাম শ্রীকান্ত অধিকারীর উপন্যাস 'লাচুঙের নেকড়ে'র 34তম পর্ব। বাপরে! একসময় টনক নড়ে, পিছিয়ে গিয়ে আরও কয়েকটি পর্ব না পড়ে থাকি কীভাবে! মনে পড়ে, এইতো সেদিন গ্রামের বাড়িতে, বড়দের বকুনি কিম্বা সূর্য ডুবু ডুবু আবছায়া অন্ধকারও চোখের কোণ থেকে বই সরিয়ে দিতে পারত না!
তারপর চন্দন চক্রবর্তীর 'ভ্যাবাচ্যাকা'তে ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে শ্যাডো প্র্যাকটিসের ফাঁকে ফুলুরির স্বাদ! আহা! এখনও জিবে জল এলে কি করি আমি! ছোট্টবেলার বয়সে পৌঁছে!
বাসবদত্তা কদমের কলম উৎসবের মরশুমে আমেরিকার বেশ মজাদার বেড়ানোর আনন্দ দিলেন। সেই কতদিন আগে তৈরি বিশাল মল, গাড়ি করে ঘুরতে হয়! দারুণ ব্যাপার!
এরপর রাণি মন্ডল ও শুভশ্রী সরকারের ছবি দেখলাম মন দিয়ে। বেশ ভালো। তারপরেই দোলনচাঁপা তেওয়ারী দের বিশেষ নিবন্ধ 'জলাভূমি সংরক্ষণ দিবস' এই লেখাটি পড়লাম মনযোগ সহকারে। কতকিছু যে জানতে পারলাম। তোমাদের খুব মজা! তাই না! এতদিন কেন পড়িনি এত ভালো ভালো লেখা! খুব বকুনি দিলাম নিজেকে।
স্মরণীয় দিবস
বিশ্ব বেতার দিবস
(১৩ই ফেব্রুয়ারি)
কলমে-দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে
বেতার, অর্থাৎ যার তার নেই বা তারবিহীন, অথচ এর মাধ্যমে সব কিছু শোনা যায়। যখন বেতার আবিষ্কার হয়, সেই সময়ে মানুষের কাছে একমাত্র বিনোদনের উপায় ছিল বেতার।
ষাট সত্তর দশকের আগে একমাত্র বেতারই ছিল যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম,যার মাধ্যমে অসংখ্য জনগণের কাছে একসাথে অনেক বার্তা পৌঁছে যায়। শহর গ্রাম এবং প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বাস করা মানুষদের যেখানে যোগাযোগ করার আর কোনো মাধ্যম ছিলনা, সেখানে বেতারই ছিল একমাত্র মাধ্যম।
১৩ ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ব বেতার দিবস অর্থাৎ এটি একটি আন্তর্জাতিক দিবস। ইউনেস্কো তার ৩৬ তম সম্মেলনের সময় ৩রা নভেম্বর ২০১১ সালে দিবসটি নির্ধারণ করে।
বিশ্ব বেতার দিবসের পটভূমি হিসেবে বলা যায় যে,২০শে সেপ্টেম্বর ২০১০ এ স্প্যানিশ রেডিও একাডেমির একটি অনুরোধের পর স্পেন প্রস্তাব করেছিল যে ইউনেস্কো নির্বাহী বোর্ড বিশ্ব বেতার দিবসের ঘোষণার একটি এজেন্ডা আইটেম অন্তর্ভুক্ত করবে। প্যাসিফিক ব্রডকাস্টিং ইউনিয়ন (A B U), আফ্রিকান ইউনিয়ন অফ বর্ডকাস্টিং(AUB), ক্যারাবিয়ান ব্রডকাস্টিং ইউনিয়ন(CBU), ইউরোপীয় ব্রডকাস্টিংইউনিয়ন(EBU),
BBC,URTI এবং Vatican Redio ইত্যাদি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।
বোর্ড ইউনেস্কোর সাধারণ সম্মেলনের কাছে সুপারিশ করেছিল যে, এটি তার ৩৬ তম অধিবেশনে বিশ্ব বেতার দিবস ঘোষণা করে এবং ১৩ই ফেব্রুয়ারি দিনটি 'বিশ্ব বেতার দিবস' হিসেবে তারা পালন করে, এছাড়াও এই দিনই ১৯৪৬ সালে জাতিসংঘের বেতার বার্ষিকী পালিত হয়।
২০১২ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ বিশ্ব বেতার দিবসের ঘোষণা কে অনুমোদন করে, যার ফলে জাতিসংঘের সমস্ত সংস্থা, কর্মসূচি, তহবিল ও তাদের অংশীদারদের দ্বারা ১৩ই ফেব্রুয়ারী বেতার দিবস হিসেবে একটি উদযাপনের দিন হয়ে ওঠে।
২০১২ সালে প্রথম বিশ্ব বেতার দিবসের সম্মানে লাইফ লাইন এনার্জি, ফ্রন্টলাইন এস.এম.এস. এসওএস রেডিও এবং এম্পাওয়ার হাউস লন্ডনে একটি সেমিনার আয়োজন করে। বিভিন্ন প্র্যাকটিশনের শিক্ষাবিদেরা এবং প্রদর্শনকারীরা স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল এন্ড আফ্রিকান স্টাডিজে যোগদান করেছে। বেতারের মাধ্যমিক সবচেয়ে দুর্বল এবং সবচেয়ে প্রত্যন্ত সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছানো যায়।
বেতার দিবস উদযাপিত হয়, ব্যক্তি মতামতের স্বাধীনতা, জনবিতর্ক ও শিক্ষার প্রসারে বেতারের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করার লক্ষ্যে। প্রতিবছর ইউনেস্কো সারা বিশ্বের সম্প্রচারক সংস্থা এবং সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় বেতার দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, এছাড়াও এই দিনে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে বেতারের গুরুত্ব সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়। আরো বলা যায় যে, বেতার এমন একটি মাধ্যম যখন যেখানে অন্য মাধ্যম গুলো কাজ করে না, সেখানে বেতার ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি দুর্যোগের সময়।
শেষে বেতার সম্পর্কে ভারতের কথা বলতেই হয়। ১৯৩৬ সালে ভারতের অফিশিয়াল ইম্পেরিয়াল বেতার শুরু হয়েছিল যা পরবর্তীকালে 'অল ইন্ডিয়া রেডিও' নামে পরিচিতি পায়। আজও বেতার উত্তরোত্তর তার প্রসার বৃদ্ধি করে চলছে। বেতার প্রসঙ্গে যার নাম উল্লেখ না করলেই নয়, তিনি হলেন বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু। তিনিই প্রথম বিজ্ঞানী যিনি বেতার এবং মাইক্রোওয়েভস এর অপটিক্সে কাজ করেছিলেন।
0 Comments