তনুশ্রী ভট্টাচার্য
( ভ্যালেন্টাইন ডে স্পেশ্যাল )
প্রণয়পক্ষের আলিঙ্গনদিবসে
আলিঙ্গন দিন। সত্যিই কি দিন লাগে? মনের আলিঙ্গন নিয়ত না হলে নিছক দৈহিক আলিঙ্গনে আর যাই হোক প্রণয়াকাঙ্খা মেটে না। প্রণয়পক্ষে অনেক আলিঙ্গনের গল্পই মনে আসে। বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে লেখক জীবনের প্রেম তো নেহাত কম নয়!
সর্বকালের শ্রেষ্ঠ রাশিয়ান ঔপন্যাসিক থিওডর দস্তয়েভস্কি র কথাই বলি যদি। একটি নিখাদ আলিঙ্গন পাবার বিপুল তরঙ্গায়িত অভীপ্সা মনের মধ্যে পুষেছেন। পেয়েছেন কি? সে উত্তর লুকিয়ে আছে তাঁর উপন্যাসে ----The Insulted and Humiliated,,Crime and Punishment,The Gambler,The Idiot,The Eternal Husband ---সমস্ত উপন্যাসে জীবনের কথা যন্ত্রনার কথা। প্রেম ও প্রেমহীনতার কথা।
প্রেম এসেছিল দস্তয়েভস্কির জীবনে। বেশ কয়েকবার। কিন্তু তার স্নিগ্ধ ছায়ায় তিনি দুদন্ড জিরোতে পারেন নি। পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে কুশল বিনিময় ও করতে পারেন নি। তবু একসঙ্গে থেকেছেন। কাছে যাওয়ার আকুতি নিয়ে ।আবার ব্যাকুল হৃদয়ে ফিরে ও গেছেন।
মারিয়ার সঙ্গে পরিচয়ের পর নিবিড় ঘনিষ্ঠতা চেয়েছিলেন। কিন্তু দু:খী মারিয়া নিজের স্বামীর ব্যর্থতা সত্ত্বেও সহজে ধরা দিতেন না। সহানুভুতির চাদরে মুড়ে সে প্রেমে ছিল করুণা সংবেদন আর সাংস্কৃতিক সাহচর্য।লেখক চুপ করে বসে থাকেন মারিয়ার সামনে। ভালোবাসার বোধ তৈরী হয় দুটি মনে। হঠাৎ বন্ধ হল সে সুযোগ। মারিয়া শহর ছাড়ল। দস্তয়েভস্কি প্রমাদ গুণলেন।শুরুতেই বিদায় ঘন্টা!বেশ কিছুদিন পর মারিয়ার চিঠি পেলেন। সেখানে যতটা আলিঙ্গনের আহ্বান তার থেকে তার বৈধব্যের একক জীবনের ব্যায়ভার বহন করার আবেদন। দস্তয়েভস্কি তখন লেখক হিসাবে মারকাটারি কোনো উপার্জনের অধিকারী নন। এদিকওদিক থেকে টাকা জোগাড় করে পৌঁছলেন। সঙ্গে তীব্র আলিঙ্গন লিপ্সা।
কিন্তু প্রেমের কোন খাত কখন শুকায়, কখন সে খাত বদল করে তা মানুষ আর কবে জানতে পেরেছে? দস্তয়েভস্কি ও জানতে পারেন নি।
গিয়ে দেখলেন মারিয়া এই বয়স্ক কে ভুলে চব্বিশ বছরের তাজা যুবককে ঠাঁই দিয়েছে। নিজের জীবনে। তিরিশ বছরের মারিয়া কাঁদল। দস্তয়েভস্কি পাথর হলেন। অভিযোগ নেই, অনুযোগ নেই। ধূলিসাৎ স্বপ্ন নিয়ে মুখ ঘোরালেন বাড়ির দিকে।
তাঁর নি:শব্দ চলে আসার দিকে মারিয়া তাকিয়ে রইল শুধু।মনে মনে হয়তো শ্রদ্ধাবোধ তৈরী হচ্ছিল এই প্রত্যাখ্যাত মানুষটার জন্যে।
🍂
আরও পড়ুন 👇
অনেকগুলো বসন্ত চলে গেছে। মারিয়া বুঝতে পারল ঐ চব্বিশের যুবক আসঙ্গলিপ্সাতেই বাঁধা পড়েছে। নেই মনন সমৃদ্ধ ভালোবাসা। হাঁফিয়ে উঠল সে। মনস্থ করল দস্তয়েভস্কির কাছে হাত পাতবে।
লেখক হিসাবে তার এখন সুনাম সর্বত্র।
চিঠিতে জানাল সে লেখককে বিয়ে করতে প্রস্তুত।
লেখক এই দিনটা র অপেক্ষায় ছিলেন। বিয়ের দিন ধার্য করলেন দস্তয়েভস্কি নিজে।
কিন্তু হায় !বিয়ের রাতে উত্তেজনায় আর পূর্ব স্নায়ূ তন্ত্রের রোগের কারণে দস্তয়েভস্কি মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন। ফুলশয্যা রয়ে গেল অধরা মাধুরী।মারিয়ার নিরলস সেবায় সেরে উঠলেন দস্তয়েভস্কি।
লেখা বেরোচ্ছে। সুনাম বাড়ছে। Notes from the House of the Dead বিপুল সাড়া ফেলল। লেখকের বন্দীজীবনের গল্প । জারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ছিল দস্তয়েভস্কির ওপরে। ছিল মৃত্যুদন্ড। ও। রেহাই পেয়েছিলেন।পরে।
পরিচিতি বাড়ে। পরিচয় ঘনিষ্ট হয়। হয় ঘনিষ্ঠতর।এক বাইশ বছরের ছাত্রী এগিয়ে এলো। আ্যাপোলিনারিয়া।ঝকঝকে তরুণী।লেখকের প্রতি শ্রদ্ধায় অবনত। আর এই শ্রদ্ধাকেই ভালোবাসা বলে ভুল করল।দুজনেই।
(চলবে)
0 Comments