জ্বলদর্চি

যেতে যেতে পথে ১১১/রোশেনারা খান

মিশন বালিকা বিদ্যালয়ে প্রদীপ প্রজ্বলন করে অনুষ্ঠানের সূচনা হল।

যেতে যেতে পথে

রোশেনারা খান

পর্ব ১১১

আজ ‘গভরমেন্ট জেনারেল ডিগ্রী কলেজ শালবনী’ কায়মা ভীমপুর  গেছলাম একটি সেমিনারে যোগ দিতে। অধ্যাপক মহম্মদ মৈনুদ্দিন সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন। নতুন কলেজ, বেশ সাজানো গুছনো। আজ আলোচনার বিষয় ‘নারীর অধিকার ও দায়িত্ব’। কলেজটি যেহেতু প্রান্তিক এলাকায়, ছাত্রছাত্রীরাও সেরকম পরিবারের। আমার বক্তব্য কেমন হয়েছে, সে বিষয়ে অধ্যক্ষ বললেন, ‘আগে যারা বক্তব্য রেখে গেছেন, সে বক্তব্য ওদের মাথার ওপর দিয়ে চলে গেছে। ওরা সংযোগ স্থাপন করতে পারেনি। আজ কিন্তু ওরা মন দিয়ে আপনার বক্তব্য শুনেছে, প্রশ্ন করেছে আপনাকে’।আরও বললেন, এই কলেজের বেশির ভাগ স্টুডেন্ট পিছিয়ে থাকা অনুন্নত এলাকার, অনুন্নত পরিবারের। দিনের বেশিরভাগ সময় এদের চাষের কাজ করে কাটে।

    আজ তালিমুল কোরান মাদ্রাসায় যোগাযোগ করেছিলাম। ছাত্রদের খাওয়াতে ১০,০০০/ টাকার মত খরচ হবে। তা হোক, ওদের খাওয়াব ভেবেছি যখন,তখন সেটা করবই। এতরকম কাজ নিয়ে ভাবতে হচ্ছে যে ভুল করে ফেলছি। জয়নাব(সেজভাই মনির বৌ) ও মুসকান  আমাদের মিঠিকে দেখতে এসেছিল। জয়নাব ফিরে গেছে, মুসকান আছে। রাতের  দিকে ডঃ আসাদুল এসেছিল, মিঠিকে দেখতে আর আমাদের সঙ্গে দেখা করতে। ওকে মুক্তার কাকার নাতনি আমাদের নামে আজে বাজে কথা বলেছে।ছি, এত নোংরা মনের মেয়ের সঙ্গে মুন্না কী করে জীবন কাটাবে?
শ্যামনগর শ্রীমা বালিকা বিদ্যালয়ের  সুবর্ণজয়ন্তী  অনুষ্ঠানের উদ্বোধনে।

      শাহবাজ দুদিন আসেনি, আজ ওকে রাতে খেতে বলেছি। আগামিকাল ওর জন্মদিন, তাই ওকে সারপ্রাইজ দেবার জন্য মুসকান আর তানি কেক আনিয়েছে, ফুল বেলুন দিয়ে বসার ঘর সাজিয়ে রেখেছে। রাতের খাওয়ার পর কেক কাটা হয়। ওরা কত রাত জেগেছিল,জানিনা।

 সোমা মণ্ডলের নাচের অনুষ্ঠানে গিয়ে অনেকের সঙ্গে দেখা হল।DICO বরুণ মণ্ডল, জয়ন্ত সাহা, জয়ন্ত মণ্ডল, তপতী পাবলিশারের মালিক ডঃ রিঙ্কু চক্রবর্তী, শিক্ষক, সুদীপ খাঁড়া ও আমাকে মঞ্চে বসিয়ে বরণ করে আমাদের কয়েকজনকে দিয়েই প্রদীপ প্রজ্বলন ও চারাগাছে জল সিঞ্চনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। বরুণ আর বসলেন না,যা ওয়ার বললেন, দিদি আমি এখন অফিসে থাকব, সম্ভব হলে একবার দেখা করে  যাবেন।

     বরুণের সঙ্গে নানান বিষয়ে অনেক কথা হল। ওর অফিস থেকে বের হয়েছি, সুকান্ত বাইক থেকে নেমে বলল, ওর শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অনুষ্ঠানে DICO কে গেস্টকার্ড দিতে এসেছে। আমাদের বাড়িতেও যাবে।

      আজ শাহবাজের জন্মদিন, ওরা রাতে কোলাঘাটে পাঞ্জাবি ধাবাতে খেতে যাবে, আমার যাওয়া হয়নি। ইচ্ছে করেনি। আমি আমার কাজ সময়ের সঙ্গে মেলাতে পারিনা। চোখের সামনে ভেসে ওঠে ধুলোমাটি, সর্দিমাখা মুখগুলি। এই মুখগুলি  উজ্জ্বল হয়ে ওঠে হাতে একটা বাপুজি কেক দিলে। বছরের বিশেষ কোনো দিনে এদের সঙ্গে একটুখানি খুশি ভাগ করে নিলে কী যে অনাবিল শান্তি মেলে, তা বলে কাউকে বোঝানো যাবে না।
কৃতি ছাত্রীর হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছি।

    আমার অবস্থা এখন এমন, যে কখন কোথা থেকে ডাক আসবে, তা নিজেও জানিনা, ডাক এলে তখুনি ছুটতে হবে। আজ তেমনটায়  ঘটল। দুপুরবেলা স্নানে যাব, হঠাতই চন্দন বসু ফোন করে অনুরোধ জানালেন, আমি যেন এখুনি একবার ‘টাউন বালিকা বিদ্যালয়’এ যাই। প্রধান শিক্ষিকা ওনাকে আমাকে জানানোর কথা আগেই বলে ছিলেন, কিন্তু উনি কাজের ঝামেলায় ভুলে গিয়ে ছিলেন। কি আর করা যাবে? টোটোতে পৌছালাম। শিক্ষিকাদের সঙ্গে পরিচয় হল। স্কুলের বেশিরভাগ ছাত্রী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের।তারা ভ্যাকসিন নিতে চাইছে না, আইরন ট্যাবলেট খাবে না। সেইজন্যই আজ অভিভাবক অভিভাবিকেদের স্কুলে ডাকা হয়েছে। আমাকে এঁদের বোঝাতে হল মেয়েদের আইরন ট্যাবলেট খাওয়ার কেন প্রয়োজন? ভ্যাক্সিন নিলে কি উপকার হবে? সেইসঙ্গে  বাল্যবিবাহের কুফল সম্বন্ধে বোঝানর চেষ্টা করলাম। বাবা মায়েরা মন  দিয়ে শুনলেন বলেই মনে হল।

     ভীষণ ব্যস্ততার মধ্যে দিন কাটছে। বাড়িতে একজন সদ্যপ্রসবা মা থাকলে কাজের শেষ থাকে না, রানীর  শ্বশুর শাশুড়ির বার বার মত পালটাচ্ছে মিঠির অনুষ্ঠান নিয়ে। ওদের কথার ওপর যে ভরসা করা যায় না, সেটা বিয়ে থেকেই দেখে আসছি। এইসব ঝামেলায় নিজের লেখাটা লিখতে পারছি না।

   তানি ব্যাঙ্গালুরু ফিরে গেছে। যে আয়াটিকে নার্সিংহোম থেকে বাড়ি নিয়ে আসা হয়েছিল। সে আজকে চলে গেল। খাওয়া বাদে ডেলি ৭০০/ টাকা নিত। যাওয়ার সময় বকশিশ ছাড়াও আমি একখানা নতুন সাড়ি দিলাম। কাল থেকে অন্য আয়া আসবে।

    খান সাহেবের চলে যাওয়ার দিন উপলক্ষ করে কোরান পড়ানো হচ্ছে। আবার মাদ্রাসার দুস্থ বাচ্চাদের খাওয়াব ঠিক করেছি। ওরা বলেছে ১০,০০০/ টাকা থেকে ১২,০০০/ টাকা খরচ হবে।আমি এই কাজটা ৩০ জানুয়ারি করব বলেছি।
তোড়িয়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্রী উৎপল  গুজে মহাশয় ম্যামেন্টো  তুলে দিচ্ছেন।

     আজ সুকান্তর ‘গীত মন্দিরের অনুষ্ঠান ‘রাগিণী ও রজনী’ তে গেছলাম। বরণ পর্বের পর আমি এবং ঝাড়গ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অমিয় পণ্ডা প্রদীপ  প্রজ্জলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করি। সুকান্তর গুরুজি ও তাঁর পুত্রের সেতার ও তবলার যুগলবন্দী এক কথায় অনবদ্য। সুকান্তর ছাত্রছাত্রীরের পরিবেশনাও মনমুগ্ধকর।অমিয় বাবু আমার বিষয়ে শুনে থাকলেও মুখোমুখি পালাপ হল আজ। আমাকে ওনার বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার মৌখিক আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখলেন। আরও বললেন, আজকের দিনটা আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

    আজ রানীর মেয়েকে নেড়া করে, নখ কেটে মা-মেয়েকে স্নান করিয়ে ২১শা পালন হল। ওর শ্বশুরবাড়ি থেকে ‘থাল’ এসেছিল, পোলাও, আস্ত মুরগির রোস্ট, মাছভাজা, আরও নানারকম খাবার ছিল  থালে। মেদিনীপুর মিশনগার্লস স্কুল থেকে নবনীতা আজ ফোন করেছিল। বলল, দিদি আমাদের স্কুলের প্রতিষ্ঠা দিবসে আপনাকে গেস্ট হিসেবে চাই।আপনি সম্মতি জানালে কার্ড ছাপাতে দেব।৮ ফেব্রুয়ারি আমাদের অনুষ্ঠান। আমি সম্মতি দিলাম।  

   ঘাটাল থেকে একজন ওঁদের অনুষ্ঠানের ‘দিদিগিরি’ সম্বন্ধে আমাকে  বোঝাছিলেন।। রানীর শ্বশুর বাড়ির লোকেরা শিক্ষিত হয়েও বড্ড বেশি তাবিজ কবজে বিশ্বাসী। বিশ্বাস করলে খোদার ওপর বিশ্বাস রাখো। সে বিশ্বাস থাকলে এসব তুক তাকে বিশ্বাস করে কী করে, বুঝিনা।যাইহোক  মিঠিকে নিয়েও ঝামেলায় আছি। রাখিকে(আয়া)আজ ছুটি দিয়ে দিলাম।  ও ঠিক বাচ্চা দেখাশোনা করতে পারছে না।

     ২৩ জানুয়ারি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন উপলক্ষে তোড়িয়া উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে আজ শহিদ ক্ষুদিরাম বসুর আবক্ষ মূর্তি উন্মোচনের জন্য আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলাম।মঞ্চ থেকে বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় সেই পবিত্র বেদীর সামনে। এখানে আরও মনিষীদের মূর্তি রয়েছে।আজ দুটি মূর্তির আবরণ উন্মোচন হবে। আমি ফিতে কেটে ক্ষুদিরাম বসুর মূর্তি আবরণ মুক্ত করলাম। নেতাজি সুভাসচন্দ্র বসুর মূর্তির আবরণ উন্মোচন করবেন যিনি, তিনি এখনো এসে পৌঁছাতে পারেন নি।       

      ফেরার পথে ক্ষুদিরামের জন্মস্থান মোহবনী গ্রামে গেলাম।দিনের আলো নিভু নিভু, গেট পার হয়ে পাম গাছের তোরণ দিয়ে এগিয়ে চললাম। বাঁ দিকে বাচ্চাদের খেলার পার্ক। বেশ কয়েকটি পাকাবাড়ি,  সুউচ্চ ক্ষুদিরামের মূর্তি, এছাড়া কোথাও কোনও তাঁর জন্মভিটের চিনহ খুঁজে পেলাম না।পাওয়ার কথাও না। একজন একটি পাঠাগার দেখিয়ে বললেন ওটাই ক্ষুদিরামের জন্মভিটে। কিশোর ক্ষুদিরামের মুখটি ভাবতে ভাবতে গাড়িতে উঠলাম। কী আগুন ছিল ওই কিশোরের বুকে!

     অনেক জায়গায় সরস্বতী পুজোর নিমন্ত্রণ থাকলেও। রেখাদিদের  ডাকে কল্যাণপীঠ গেছলাম। নন্দিনীও এসেছিল। অনেকের সঙ্গে দেখা হল।স্বপ্নাদি তাঁর কলেজ জীবনের, চাকরি জীবনের শুরুর দিকের অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন।

    আজ ঘাটাল যাওয়ার সঙ্গী হয়েছে চন্দ্রিমা। ‘কিডজহার্ট স্কুল’এ ও আজ আমন্ত্রণ চ্ছিল। তাই ভাবলাম যাওয়ার পথে ওখানটা ছুঁয়ে যাব। গেলাম, কিন্তু ওরা ছাড়ল না,বরণ করে বসাল।স্ন্যাক্সসহ চা দিল, প্যাকেটে লাঞ্চ দিল।

   ঘাটালে পৌঁছে দেখলাম মস্ত মঞ্চে গুণীজনদের সম্বর্ধনা দেওয়া হচ্ছে।এঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আমার পরিচিত। ঘাটালের SDO সুমন বিশ্বাস আগে ডেপুটি ম্যাসজিস্টেট ছিলেন।ওঁর সঙ্গে কথা হল। এরপর  আমাদের ৫ জন মহিলাকে নিয়ে শুরু হল দিদিগিরি। প্রথম হল স্থানিয় একটি মেয়ে। আমি এটাকে সিরিয়াসভাবে নিইনি। নিলে প্রথম হতে পারতাম। সুইচ টিপতে দেরি হয়ে গেছল। যাইহোক, সবাইকে গিফট ও মেমেন্টো দিয়েছিল।

    মিশন গার্লস স্কুলের এক শিক্ষিকা অনুষ্ঠানের কার্ড দিতে এসে বলল, আন্টি ছোটবেলায় দিদির সঙ্গে অনেকবার আপনাদের বাড়ি এসেছি। কথা বলে জানলাম, ও বাবলির স্কুলের বন্ধু অপরাজিতার বোন। অপরাজিতা এখন পুলিশ অফিসার।ফেসবুকে আমার ফ্রেন্ডলিস্টে আছে।

      বার বার মন পিছনে টানছে, যা ভুলে থাকতে চাইছি, তা বার বার মনে পড়ছে। মাদ্রাসার দুস্থ বাচ্চাদের খাওয়াব, মাদ্রাসা থেকে দুলহা হুজুর এসে ১০,০০০/ টাকা নিয়ে গেছেন।আজ ওরা কোরান খতম করবে।আজ আমার সম্রাট আমাকে ছেড়ে অনন্তলোকে পাড়ি দিয়েছিলেন।   আমাদের জীবন কবে কখন নিভে যাবে, কেউ জানিনা। তবুও বেঁচে থাকার জন্য কত না লড়াই, কত না মিথ্যাচার, কত না খুন-ডাকাতি করছে মানুষ।

       নাম্বার জোগাড় করে আজ মন্ত্রী শিউলি সাহা ফোন করে পেলাম না। পরে উনি রিং ব্যাক করলে নিজের পরিচয় দিয়ে  আফগানের কথা বললাম। ওর বিষয়ে উনি যা বললেন, তা আর লিখছি না। তবে আমার পরিচয় জেনে বললেন, ‘আপনি কেশপুরের বৌমা, কেশপুরের গর্ব। ওদের আপনাকে সম্বর্ধনা দেওয়া উচিৎ।
ঘাটালে "দিদি গিরি"তে  অংশগ্রহণকারীরা

      অনুষ্ঠানের শেষ নেই, ওদের অব্দার রাখের জন্য যেতেই হচ্ছে।  না গেলে অভিমান অভিযোগ জমে থাকে। আজ বিদ্যাসাগর স্মৃতি মন্দিরে  ‘আলেখ্যায়তন আর্ট এন্ড কালচারাল একাডেমি’র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান ছিল। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলাম। আগামিকাল শ্যামনগর যেতে হবে। ওখানকার ‘শ্রীমা বালিকা বিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে।

     শ্রীমা বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা কেয়া দিণ্ডা আমাকে, আলপনা দেবনাথকে ও ওই স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষিকা বুলাদিকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন। ওখানে আর যারা অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিজ্ঞানী অনির্বাণ। অনির্বাণ সস্ত্রীক উপস্থিত ছিলেন। এখানেও সমাদরের সঙ্গে নিয়ে গিয়ে বসানো হয়।অতিথিদের প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। আমাকে ও আল্পনাকে    প্রতিষ্ঠাতার মূর্তিতে মাল্যদান করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। অতিথিদের বসার ব্যবস্থা হয়েছিল মঞ্চের নীচে। আমাদের এক এক করে মঞ্চে ডেকে হাতে উপহার সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। তারপর বক্তব্য রাখি। ছাত্রীদের হাতে পুরস্কারও তুলেদি। ফেরার সময় বুলাদি ৫০ বছর পূর্বে যখন এই  স্কুলে প্রধান শিক্ষিকা হয়ে এসেছিলেন। তখন কতরকম সমস্যার মুখোমুখি  হতে হয়েছে, আমাদের শোনাচ্ছিলেন। মাটির বাড়ি, কোনো সৌচালয় নেই। গ্রামের একটি মেয়ে আর বাচ্চা নিয়ে থাকতেন। স্বামী এখানে থাকতেন না বলে গ্রামের কেউ কেউ অন্য রকম সন্দেহ করতেন। ৫০ বছর পূর্বে এই এলাকার সামাজিক অবস্থা, মানুষের মানসিকতা কেমন ছিল তা আমি ভাল করেই জানি। কারণ শিলাবতীর অপর পারেই তো আমার জন্মস্থান, মনে হচ্ছিল ঝাঁপ দিয়ে নদী পার হয়ে যদি একবার  দেখে আসতে পারতাম! কাছে, তবু কত দূরে।ছোট থেকেই তো কল্পনা বিলাসী ছিলাম। ছোটবেলায় যখন মেদিনীপুরে মামাবাড়ি আসতাম, দোতলার উত্তর দিকের জানালা দিয়ে দূরে তাকিয়ে অনেক গাছের মধ্যে একটা পেঁপেগাছের মাথা দেখে মনে মনে ভাবতাম, ওই তো ইনুসদাদির পেপেগাছ দেখা যাচ্ছে। ওর পাসেই তো আমাদের বাড়ি।

      আজ মেদিনীপুর মিশন গার্লস স্কুলের প্রতিষ্ঠা দিবসে গেছলাম। আর একজন অতিথি না আসাতে আমি একাই পতাকা উত্তোলন, প্রদীপ প্রজ্বলন করলাম। ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখলাম। ওদের হাতে পুরস্কার তুলে দিলাম। স্বরচিত কবিতাও শোনালাম। শিক্ষিকারা, বিশেষ করে প্রাক্তন শিক্ষিকারা কবিতার প্রশংসা করলেন।অল্পবয়সি শিক্ষিকারা               প্রথমে ভয়ে কাছে আসছিল না, পরে সবকটা যাকে বলে ‘ফ্যান’ হয়ে উঠল। ছবি তোলার হিড়িক পড়ে গেল।

     আজ রানীর শ্বশুরবাড়িতে খুব ধুমধাম করে মিঠির ওয়েলকাম পার্টি হল। আলো আর বেলুন দিয়ে  পুরো পাঁচতলা বাড়িটাকে সাজানো হয়েছে। নিমন্ত্রিত ও খাবার আয়োজন ছিল চোখে পড়ার মত। এসবের কী প্রয়োজন বুঝি না। এগুলো গরীব দুঃখীদের খাওয়ালে তারা কত খুশি হত। এখানেই ওদের মানসিকতার সঙ্গে আমার মেলে না। নিজেকে জাহির করা, লোক দেখানো ব্যাপার।

    গতকাল রোটারি ক্লাবের আই হাসপাতালে গেছলাম, আইড্রপ আর কয়েকটা টেস্ট লিখে দিয়েছেন, পরে গিয়ে অপারেশনের ডেটটা নিয়ে আসতে হবে।

     আজ আমার বকুলের জন্মদিন, পায়েস বানিয়েছিলাম, ওর পছন্দের ছানার পায়েস।সারাদিনটা ওকে নিয়েই কাটল। ওর ছোট বেলার কত কথা মনে পড়ে, ওর সাহেবি রীতিতে জন্মদিন পালন কোনো দিনই পছন্দ নয়। ওর পায়েস, লুচি আর অলুরদম সব থেকে পছন্দের খাবার।

    আজ একটা কাজ করে ভীষণ শান্তি পেলাম।খান সাহেবের ঘরখানা  উদ্ধার করতে পেরেছি।তার ঘরে নেমপ্লেট লাগানো হল। এইকাজে সাহাজ্য করেছে নাজিম(ভাগ্না), আর রানীর শ্বশুরমশাই। আপাতত মাটিতে পুঁতে দেওয়া হল, পরে সিমেন্টের ঢালাই দেওয়া হবে।

      গতকাল বকুলের জন্মদিন উপলক্ষ্যে আজ ফয়জলের স্কুলের বাচ্চাদের খাওয়ানো হয়েছে। আজ তরুণ কবিদের ব্যবস্থাপনায় মেদিনীপুর কলেজের বিবেকানন্দ হলে লিটেরারি মিট অনুষ্ঠিত হল।অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নাট্য ব্যক্তিত্ব বিমল বাবু। ওনার সঙ্গে কথা বলে ভাল লাগল।
সুকান্তর গীত মন্দিরের অনুষ্ঠানের উদ্বোধন

     মাতৃভাষা দিবসে এবার কোথাও যাব না ঠিক করেছিলাম। সবাইক আগেই বলে রেখেছিলাম,আমি যেতে পারব না, চোখ অপারেশন হবে। তবুও আজ একটা জায়গায় যেতে হয়েছিল। আজ বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্ক এর জন্মদিন। দুপুরে এখানের ব্রাঞ্চ থেকে সুকান্ত ফোন  করে, বিকেলে আমাকে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলে, গিয়েছিলাম। কিছুদিন আগে ব্যাঙ্কের একজন স্টাফ আমার একটি বই চাইলে, কয়েকদিন আগে দিয়ে এসেছিলাম। তিনি ম্যানেজারকে বইটি দেখিয়ে  আমার বিষয়ে বলেন, তাই আমাকে ডাকা হয়েছে। আমাকে দেখে বললেন,এমন একজন ব্যক্তিত্ব এই শহরে আমাদের নিজেদের মধ্যে  রয়েছেন, জানতামই না! ব্যাঙ্কের স্টাফ ছাড়াও  শেল্ফহেলফ গ্রুপের কিছু সদস্যও ছিলেন। প্রথমে আমাকে কিছু বলতে বলা হলে, আমি ওঁদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বললাম। আর্থ সামাজিক উন্ননে  গ্রামীণ ব্যঙ্কের ভূমিকা ইত্যাদি বিষয়ে বললাম। আমার বক্তব্য সবাই খুব এপ্রিসিয়েট করলেন। মহিলা স্টাফেরা বললেন, আপনার বক্তব্য মন ছুঁয়ে গেছে। একজন বললেন, ব্যাঙ্কের বিষয়ে আপনি যা বললেন, আমাকে বলতে বললে, একলাইন পারতাম না।

                        ক্রমশ

সংগ্রহ করতে পারেন 👇

Post a Comment

0 Comments