জ্বলদর্চি

কিছু পদ্যে আর কিছু গদ্যে প্রেমদিবস/গৌতম বাড়ই

কিছু পদ্যে আর কিছু গদ্যে প্রেমদিবস

গৌতম বাড়ই 


তোর কাছে আমি লম্বা হবো আমার বুকের ভেতর ঘুলঘুলি
ফি-বছর এই দিনটি এলেই নাচে বুলবুলি মনাঙিনায়
প্রেম বিলিয়ে ফকির হবোই
হাইওয়ের ওই লঙ ড্রাইভে 
ল্যাপটপেতে ওয়েব সিরিজ
সুখবিলোচ্ছে মিনিমাইজ
কাবাব স্বভাব বিরিয়ানি গোঁসা করেছে আলুরদম
দমদমেতে হাওয়াই উড়ান দুবাইতে স্বর্গসুখ
তোকেই আমি বধ করেছি অথবা আমি জাহান্নামে
পেরেম দেখিয়েছেন কেষ্টঠাকুর কদমগাছের রসাতলে

পেনাম পেন্নাম গুরুমশাই তুমি শিখিয়েছো রাধাপটানো
একজিহ্বায় সিটি মারা আর এক জিভে মনভোলানো
তবুও তো আমি দিব্যি আছি হরবখত খিস্তি মেরেই 
পকেটে আমার রেস্তো আছে আছেও এক রেস্তোরাঁ
প্রেমদিবসের বৃন্দাবনে একটু খানিক ঘুরনি দিয়ো
জয় হে ঠাকুর গোঁসাইখুড়ো আড়ি করেছি সরোসত্তির
জয় হোক প্রেমের, না হয় হোক ভুবনভরা প্রেমহীনতার---

এবার কিছু গদ্যে বলি :

আমাদের সেই দিনডা আছিল প্রেম প্রেমময় আদিখ্যেতার। বুঝলেন নি ভায়া! সারাদিন পেরেম আর অনন্ত পেরেম,এই পর্যন্ত বলে থেমে গেলেন গয়েরকাটার ঝিনুদাদা। লোকালয় বলতে চা- বাগানের সবুজ সাগরের মাঝে- মাঝে জনবস্তি। আর্মিরা গাড়ি নিয়ে যায়, বাজার করে, স্ফূর্তি মারে শিলিগুড়ি শহরে আবার ফিরে আসে। চা বাগানের শ্রমিক আর কিছু বাঙালি (সবই ওপার বাংলা থেকে আগত স্ট্রাগলার, উদ্বাস্তু)  , মারোয়ারি বেওসাদার। 
ঝিনুদাদাকে বলি - ও দাদা! তোমার সাথে কারও ঐ প্যায়ার মহব্বত ইন্টু- মিন্টু- সিন্টু ছিল?
দাদা বলে-  ছ্যাল বলতেছিস ক্যান? এখনও তো ওনার লগেই ডেইলি ডেইলি প্রেম!
- -- অ্যাঁ! সে কী?
- তুই তো বৌদিরে চিনস! 
- চিনি মানে বৌদির হাতে কত কিছু খেয়েছি বলো। তোমার সাথে তোমার বাড়ি গেলে কত যত্ন করে খাওয়ায়।
--- হ্যাঁ তাহলে শোন পুরানা পেরেম উপাখ্যান। তোর বৌদি, মানে টগর। গয়েরকাটার স্কুলে ক্লাস নাইনের ছাত্রী। আর আমি  দু- এক বছর ফেল কইরা- কইরা ক্লাস টেন। কলার উঠায় পেরেম করতাম। চারদিক ছি ছিচকার , নিজের  বাপের রদ্দা আর টগরের মায়ের পিটুনি। তোরা খাইছিস কখনো শাশুড়ির মার? টগরের বাপ ছিল আস্ত খচ্চর। রেলের চাকুরে। এইকথা আবার বৌদিরে চালাচালি করিস না। এই অত্যাচারে পালায় গ্যালাম দুইজনা। পালায় গিয়া এক আত্মীয়ের বাড়ি কলিকাতার কাছে। প্রথমেই টগরের কপালে দিলাম সিন্দুর পরায়। কালিবাড়িতে। তারপর কত কত কথা, আর কী বলব তোকে! কিছুটা তো জানিস। বর্তমানে এখন এই 'টগর টুম্পা বস্ত্রালয়ের' মালিক। তোদের এখনকার পোলাপানের এই পেরেম করবার হিম্মত আছে? সরস্বতী পুজো বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে প্রেম দিবস। আমাগো টাইমের আর এখনেরও। ওইসব পশ্চিমা দিবস টিবস টাইনা এনে লাভ কী! আসলে একটা কথা কই , এখনকার ছেলেমাইয়াগুলো তো পেরেম করা জানেই না। পেরেম কইরেছিলাম আমি , বিশু, ফটকেরা। দ্যাখ ডুয়ার্সের এইসব প্যায়ার এখনও পুরানা লোকেদের মুখে- মুখে ফেরে। 

পেন্নাম দাদাঠাকুর। গুরু তুমি। তোমার প্রেম আমাদের জীবনে আদর্শ হয়ে থাকুক। আমি চললাম প্রেম দেখতে সেবক পাহাড়ে। ওখানে নাকি সব জোড়ায় জোড়ায় এদিন আসে। তবুও কেন শুনি এখন প্রেম নেই, দিবস আছে? আকাশ এখনও সুনীল, তিস্তার স্রোত এখনও পাগলপারা, সবুজ পাহাড় দু- পাশে। তবুও ওদের মনে প্রেম জাগেনা, শুধু জোড় বেঁধে বেড়ায়। ধুর পাগলা! তা হয় না কি? জয় হোক প্রেম দিবসের। 

সমাপ্ত
সংগ্রহ করতে পারেন 👇

Post a Comment

0 Comments