জ্বলদর্চি

পুস্পিত দিন--৪ /তনুশ্রী ভট্টাচার্য

পুস্পিত দিন--৪

তনুশ্রী ভট্টাচার্য

ভ্যালেন্টাইন ডে স্পেশ্যাল


ফরাসী প্রেমের সুগন্ধ।

অনার দ্য বালজাক। ফরাসী সাহিত্যিক মোপাসাঁর অগ্রজ। দান্তের ডিভাইন কমেডি র আদলে লিখলেন হিউম্যান কমেডি।দেবতার কথা নয়, মানুষের কথা। আখ্যানের পর আখ্যান।যেন আমাদের মহাভারত। উপন্যাসমালা। পরিকল্পনা ছিল একশ আটত্রিশটি  উপন্যাস  লিখবেন। লিখলেন একশোটি।চরিত্রের বৈচিত্র্যে শেক্সপীয়েরের সঙ্গেই তুলনীয়।ধনীর গৃহে বস্তিতে রাজপথে যেখানেই তাঁর চরিত্রকে উপস্থিত করেছেন সেখানেই তারা পরিবেশের সঙ্গে খাপ খেয়ে গেছে।জীবনের কথা, মরণের কথা,সাফল্যের কথা ব্যর্থতার কথা,সরলতার কথা, কুটিলতার কথা,প্রেম অপ্রেমের কথায় বালজাক ফরাসী সাহিত্যে আনলেন রিয়ালিজম ।
      প্রেমের কথাই যখন এলো তখন বালজাকের প্রেমের কথা ত জানতেই হবে এই প্রণয়পক্ষে।
      
      ছোটোবেলা থেকে মায়ের স্নেহ থেকে বঞ্চিত। বাবার হুঁশিয়ারী। লিখেই যদি জীবনধারণ করতে চাও তবে আগামী দুবছর সময়। ডেডলাইন।করে দেখাও। নয়তো মুছে ফেলো নিজেকে।
      বালজাক চ্যালেঞ্জ নিলেন।এবং জিতলেন। খুশি সবাই। বালজাক  নিজেও।পাশের বাড়িতে যাতায়াত শুরু হলো। ধোপদুরস্ত জামাকাপড়। ফরাসী সুগন্ধী গা থেকে ভুরভুর গন্ধ ছড়ায়। ওডিকোলন এর মায়া সুবাসে শান্ত মনখানি।
      সবাই ভাবল বাড়ির কিশোরীর সঙ্গেই মন দেওয়া নেওয়া চলছে।  কিশোরীর মা মাদাম দ্য বার্ণি বালজাকের উপন্যাস নিয়ে মতামত দেন। সংশোধন করতে বলেন। পান্ডুলিপি পাঠ করেন। প্রুফ দেখে দেন।  যাতায়াত । অন্তরে বাহিরে। ফরাসী বাড়ির প্রাচীরের গায়ে আঙুরলতা দোলে বসন্তে। শরতে ফলভারে অবনত। বালজাক সে বাড়ি যায় আর আসে। আসে আর যায়। সবাই ভাবে সে কিশোরী কত ভাগ্যবতী। সাহিত্যিকের সঙ্গে প্রেম। 
🍂
      
      গ্রামে গ্রামে সেই বার্তা রটি গেল ক্রমে। 
      
              প্রেম কিশোরীর সঙ্গে নয়। প্রেম কিশোরীর মায়ের সঙ্গে। হ্যাঁ। মাদাম দ্য বার্ণি র সঙ্গে। নয় সন্তানের জননী ।পঁয়তাল্লিশ বছরের প্রতিবেশী।  ছাব্বিশ বছরের  যুবক  বালজাকের মুখ থেকে যখন মাদ্যাম নিজে ও সে কথা শোনেন তিনিও আকাশ থেকেই পড়েছিলেন। প্রবোধ দিয়ে কোনো ফল হলো না। এক প্রচন্ড আদিম আকর্ষণে প্রৌঢ়া হৃদয়ের সব  দুর্বল প্রতিরোধ ভাসিয়ে দিলেন বালজাক।  মাতৃস্নেহে বঞ্চিত স্নেহবুভুক্ষু  বালজাক  মাদ্যামের মধ্যে   পেলেন  মা কে ,আর প্রিয়া কে ও। সমাজের ধ্বিকার তাঁদের ভালোবাসায় ফাটল ধরাতে পারে নি। তবে সময়ের অভিঘাতে ক্রমশ:ই প্রিয়ার রূপ হারাতে লাগলেন মাদ্যাম দ্য বার্ণিও। মাতৃরূপটি অক্ষুণ্ণ ছিল মাদামের শেষ দিনটি পর্যন্ত।
বালজাক বলেছেন মাদ্যাম দ্য বার্ণির ভালোবাসা না পেলে লেখক হিসাবে তাঁর প্রতিষ্ঠা পাওয়া হতোই না। একটি হৃদয় জয় করতে পেরে বিশ্বজয়ের গৌরব অনুভব করেছেন। 
              এই প্রেমের ফলস্বরূপ বালজাক ঊনবিংশ শতাব্দীতেও  অষ্টাদশী তরুণীকে পূর্ণ যৌবনের  প্রতীক  বলে স্বীকার করেননি।।
              ফরাসী প্রেমের সৌরভে মাতোয়ারা হলো বিশ্বসাহিত্য।  দৈনিক,সাপ্তাহিক বা পাক্ষিকের ব্র্যাকেটে নয় ,প্রেম আঙুরলতার মতোই দোলে অনায়াসে  ভারহীন মুক্তছন্দে ---অন্তত দুলেছিল বালজাকের জীবনে---+----
              
              আমার হৃদয় তোমার আপন হাতের দোলে
দোলাও দোলাও দোলাও আমার হৃদয়।

( চলবে  )

সংগ্রহ করতে পারেন 👇

Post a Comment

0 Comments