জ্বলদর্চি

পুস্পিত দিন-৭/তনুশ্রী ভট্টাচার্য

পুস্পিত দিন-৭
তনুশ্রী ভট্টাচার্য

(ভ্যালেন্টাইন ডে স্পেশ্যাল)

গতকালের পর


প্রথম পরিচয় হয়েছিল সাহিত্যের আকর্ষণে। ক্রমশ্:ই তা আদিমজ  হয়ে উঠল। এক উন্মত্ততা। গোপনের প্রেম কবে আর গোপন থেকেছে ? সমাজে জানাজানি হতে লাগল।ওরা চাইল ইতালী যাবে। পরিচিতের গন্ডি ছাড়িয়ে  মিলন মধুর হবে।মেয়েটি অনেক আগেই পৌঁছে গেল। দস্তয়েভস্কির জুয়া  জিতে রোজগারের নেশা ছিল। ইতালী ঢোকার আগে জুয়াড়ী লেখক জিতলেন প্রচুর টাকা। খুশিমনে খরচা করবেন আ্যাপোলিনারিয়ার জন্য। জুয়াড়ীদের মধ্যে প্রবাদ আছে জুয়ায় জিতলে প্রেমের খেলায় হারতে হয়।

কেমন করে যে এই প্রবাদ দস্তয়েভস্কির জীবনে সত্যি হয়ে গেল আজ এই প্রণয়পক্ষে র ঝলমলে নির্ভার নববসন্তের প্রথম ফাগুনী দিনে ভাবলেও শিরশিরানি অনুভব হবে পাঠক মাত্রেরই। 

অনেক টাকা নিয়ে পৌঁছলেন লেখক। চব্বিশ বছরের তরুণীর সামনে। উত্তেজনায় মৃগী রোগের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে নিজেকে সংযত করেছেন তিনি। রীতিমতো অনুশীলন করে। শান্তমনে সে মেয়ে  সামনে এসে দাঁড়ালো। উত্তেজনা নেই,আগ্রহ নেই।সহজকন্ঠে বলল ,,তোমার অনেক দেরী হয়ে গেছে। আমি ডাক্তার সালভাদোরকে সব সমর্পণ করেছি। সে সুপুরুষ  যৌবনোচ্ছ্বল। অল্পদিনের পরিচয় হলেও নিবিড় হয়েছি তার সঙ্গে। তুমি ফিরে যাও।
🍂
হোটেলের ঘরে এসে কাঁদলেন দস্তয়েভস্কি। আয়নায় নিজের চেহারা দেখে  বুঝলেন এই দীর্ণ শীর্ণ চেহারায় কোনো মেয়ে তাকে কাছে পেতে চাইতেই পারে না। একসময় মারিয়া ও চেয়েছিল বীর্যবান পুরুষ। আর আজ ও এ মেয়ে ও সমর্পণ করল  পৌরুষদীপ্ত যুবকের কাছে। 
তবে এটাও ঠিক মারিয়া ভুল বুঝে ফিরে এসেছিল। শরীরী প্রেমের একঘেয়েমী ই যে সব নয় এ উপলব্ধি মারিয়ার হয়েছিল। তাই সে ফিরেছিল।
কিন্তু আ্যাপোলিনারিয়া? সে ত বিদুষী। সে নিশ্চয়ই তার জীবন নিয়ে কোনো ভুল পদক্ষেপ করেনি। এই সব ভাবনায় দিন যায় রাত যায়। লেখক নিজের সৃষ্টিতে ডুবে যান। একের পর এক সৃষ্টি হৈ হৈ করে বাজারে কাটে। 
কিন্তু সব জল্পনা মিথ্যে প্রমাণ করে সে বিদুষী ফিরে এলো  একদিন পুরোনো প্রেমের কাছে।  না,দস্তয়েভস্কি তাকে ফেরালেন না। সঙ্গী হলেন তার। তবে নীরব। সে মেয়ে ও নীরব। উত্তেজনাবিহীন। শুধু সঙ্গে থাকতে চায়। লেখকের সঙ্গে থাকার পপুলারিটি ই চায় কি শুধু?হয়তো হ্যা হয়তো না। কখনো কখনো ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত তৈরী হয় কিন্তু তা বুদবুদের মতোই মিলিয়ে যায় শীঘ্রই। একদিন তুমুল ঝগড়া। দোষারোপ করতে লাগল সে মেয়ে। লেখক তার পূর্ব স্ত্রী কে বেশী ভালোবাসে ,,এই অজুহাতে। মারিয়া এখন মৃত্যূর অপেক্ষায়। তাও সে ও আজ দোষী আ্যাপোলিনারিয়ার চোখে।  
দুই রমণী।  তবু রমণীয় নয় দস্তয়েভস্কির জীবন। 
হয় না ।হয় না।  জীবন আর ভালোবাসা, প্রেম আর সংসার --এক সরলরেখায় কবে আর চলেছে? চলে নি। চলে নি । চলে নি বলেই তো মারিয়া ও আজ লেখক কে আসামী ঠাওরায়। তার জন্যই নাকি সে বীর্যবান পুরুষ কে  ছেড়ে এসেছে। কে কোথায় কাকে দোষ দেবে আজ একটা মাত্র  ঝলমলে দিনে কি  তা বোঝা যায়?
এত কি শক্তি আছে ভ্যালেন্টাইন ডে র?
কে জানে এর উত্তর ?

মারিয়া চিরতরে তারাদের দেশে চলে গেল। আ্যপোলিনারিয়া ও ধীরে ধীরে কোথায় যেন হারিয়ে গেল। দস্তয়েভস্কি আজ রিক্ত, শূণ্য। কিন্তু সব কি হারায়? কিছু ত থাকে!! থাকেই। দস্তয়েভস্কির সাহিত্যে সে বিদুষী আছে, আছে মারিয়া ও। দুনিয়া,নাতাসিয়া,আখমাকোভা,ক্যাটরিনা,পলিনা,প্রভৃতি নারীচরিত্রে সে বিদুষী অমর।এইসব প্রেম কালজয়ী। বিশ্বসাহিত্য সমৃদ্ধ।

প্রেম অলৌকিক!!! মানতেই হয়। 

সেইরকম অলৌকিক ভাবেই আ্যপোলিনারিয়া হঠাৎ  এসে দাঁড়ালো এক গভীর নিশীথে। লেখকের ঘরে।  কালো কাপড়ে ঢাকা তার মুখ।লেখা থেকে চোখ তুলে তাকালেন লেখক। কে ?কে? বিষাদমাখা চোখ দুটি বেরিয়ে এলো। আবরণ সরালেন রমণী। আবার প্রশ্ন কে ? কে আপনি? 
নিরুত্তর রমণী ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। বাইরের লোহার গেট ঠেলে বেরিয়ে যাবার মুহূর্তে দস্তয়েভস্কির মনে বিদ্যুতের ঝিলিক খেলে গেলো!!!আ্যপোলিনারিয়া!!!!!!!!!!

ততক্ষণে সে নীরন্ধ্র অন্ধকারে হারিয়ে গেছে!!!!!!!!

 (শেষ)

সংগ্রহ করতে পারেন 👇

Post a Comment

0 Comments