জ্বলদর্চি

যেতে যেতে পথে -১১০/রোশেনারা খান

মেদিনীপুর মহিলা কলেজে বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যুদিন পালন।

যেতে যেতে পথে

রোশেনারা খান

 পর্ব ১১০

আজ  ব্যাঙ্কে যাওয়ার জন্য ক্ষুদিরাম মোড়ে একটা টোটোকে হাত দেখাতে  দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, আমি কোথায় যাব। আগে থেকেই টোটোতে সাদা ড্রেসপরা আক ভদ্রমহিলা বসেছিলেন। দেখেই বুঝেছি উনি একজন আইনজীবী, কোর্টে যাচ্ছেন। নিজেই কথা শুরু করলেন এবং ওই কয়েক মিনিটের মধ্যে আমরা পরে যোগাযোগের জন্য ফোন নাম্বার দেওয়া নেওয়াও করলাম।

     হঠাৎই আজ আফরোজার দিদি খাদিজাবানু ফোন  বললেন, আমি এখন মেদিনীপুর উইমেন্স কলেজের অধ্যক্ষার রুমে বসে আছি। উনি আপনার কথা বলে আমাকে নাম্বারটা ধরিয়ে দিলেন। আমি ৯ ডিসেম্বর কলেজে বেগম রোকেয়ার জন্মদিন পালন করার কথা বলতে এসেছি। আরও বললেন এখানে এসে নাকি ওনার বিরাট লাভ হয়েছে। আমার  নাম শুনে থাকলেও আলাপ করার সুযোগ হয়েছিল না, আজ হয়েছে।  আরও কথা হল। ওই ফোনেই অধ্যক্ষ জয়শ্রী লাহা  বললেন, দিদি,  ওইদিন আপনাকে আসতে হবে বক্তা হিসেবে। আমি অফিশিয়ালি চিঠি পাঠাব। খাদিজা বানু সন্ধ্যায় আবার ফোন করেছিলেন। পুরনো অভিজ্ঞতা ধরে রেখে কী হবে?

        আজ ৬ ডিসেম্বর, ১৯৯২ সালে আজকের দিনে বিশ্বহিন্দু পরিষদ ও তার সহযোগী সংগঠন ১৬০০ শতাব্দীর বাবরি মসজিদ ধ্বংস করেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে হওয়া দাঙ্গায় ২০০০ এর ওপর মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
বেগম রোকেয়ার শুভ জন্মদিনে।

      সর্বশ্রীর সঙ্গে আজ ‘পিংলা থানা মহাবিদ্যালয়’ গেছলাম।,  ‘মানবাধিকার ও নারী’ এই বিষয়ে বক্তব্য রাখার জন্য। কলেজের অধ্যক্ষ ডঃ সুকুমার চন্দ্র মহাশয়ের সঙ্গে আলাপ করে ভাল লাগল।আরও অনেকের সঙ্গে আলাপ হল ।তারমধ্যে  এক অধ্যাপিকা ডঃকেয়া মণ্ডলের  আদি বাড়ি আমাদের গ্রামের সীমানায় যে শিলাবতী নদী বয়ে চলেছে, তার পরপারের গ্রাম লখাটাপলে। আমি প্রায় সব সময় বলি ‘আমার  বক্তব্য সবার খুব ভাল লেগেছে’।কিন্তু আমি কী করতে পারি? সবাই যদি ভাল বলেন। একটা প্রচলিত কথা আছে, ‘কখনো ভারে কাটে,  কখনো ধারে কাটে’। আমার কোনো ভার নেই, তাই ধারেই কাটতে  হয়। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি, অন্যরা তো প্রশংসা করলেনই, অধ্যক্ষ সুকুমার বাবু বললেন, ‘আমার অনেক কাজ ছিল। ভেবেছিলাম একটু পরেই উঠে পড়ব, কিন্তু সেটা হয়নি। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনে গেলাম’। একটি ছাত্র সর্বশ্রীকে আমার বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছে, ম্যডাম কোন কলেজে পড়ান?  

     পিংলা কলেজে এসে আমার বহুদিনের একটা সাধ পূর্ণ হল। সেটা হল পট শিল্পীদের ঘরসংসার দেখা। সর্বশ্রী সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে সমস্ত কিছু দেখিয়েছে। কতরকমের পট, মিউজিয়াম আরও অনেক কিছু দেখলাম। সারাটা দিন বেশ কাটল। শুক্রবার, মানে ৯ ডিসেম্বর  উইমেন্স কলেজে যেতে হবে। ফারুক চিঠি দিয়ে গেছে, আর বলে গেছে ১১ টা ৩০ শে গাড়ি আসবে।
সময়বাংলা চ্যানেলের জন্মদিনে।

    আজ কয়েকজনকে দুপুরে খেতে বলেছি। তাই সকাল থেকে রান্নার জোগাড়ে লাগতে হয়েছে। এত জনের পোলাও গ্যাসে হবে না, তাই ছাদে বালির ওপর ইট পেতে কাঠের আগুনে পোলাও হল। রান্নাঘরে গ্যাসে মাংস রান্না করলাম। যাদের খেতে বলেছি, তারা কেউ বসে খাবে না, বাড়ি নিয়ে যাবে। প্রতি শুক্রবার একজনকে ভাত দেওয়া হয়, সেও নিজে না খেয়ে বাড়ি নিয়ে যায় অসুস্থ স্বামীকে খাওয়াবে বলে। তবুও স্বামীর কাছে চড়- থাপ্পড়, গালি গালাজ খেতে হয়। যাইহোক ছবি খাবারটা দিয়ে দিতে পারবে। তাই সব গুছিয়ে রেখে স্নান খাওয়া সেরে তৈরি হলাম। ১২ টা ৩০ শে ফারুক আর কলেজের পক্ষ থেকে নির্মাল্য নিতে এসেছিল। গাড়ি থেকে নামতেই  অধ্যক্ষা আগিয়ে এসে বললেন,  ‘দিদি আসুন, এত ব্যস্ততার মধ্যে সময় দিয়েছেন, সেটা আমাদের পরম   সৌভাগ্য’।এই সময় চায়ের অভ্যাস নেই, তাই সবিনয়ে চা ফিরিয়ে দিয়ে  গাড়িতেই নতুন অডিটোরিয়ামে গেলাম। খুব সুন্দর হয়েছে অডিটোরিয়ামটি। কলেজের নতুন গেটটিও  বেশ জবরদস্ত হয়েছে। বেগম রোকেয়ার ছবিতে মাল্যদান করলাম, অধ্যক্ষা উত্তরীয় পরিয়ে হাতে ম্যামেন্টো তুলে দিলেন। তবে আমার বক্তব্য ভাল হয়নি বলে আমার মনে হচ্ছে। যদিও  অধ্যক্ষা বললেন যথেষ্ট ভাল বলেছেন। রিনাদিও(পাল)বক্তব্য শুনতে এসেছিলেন। অধ্যক্ষা অনুরোধে কিছু মুসলিম ছাত্রীদের নিয়ে একটি রুমে বসলাম। যেহেতু পড়াশোনা ও স্বনির্ভরতার ক্ষেত্রে ওদের জীবনে বাধা বেশি, সে বিষয়ে ওদের সচেতন করার জন্য কিছু কথা বললাম ,বাধা আসে পরিবার থেকে, বাবা মা মেদের জন্য বিয়ের কথা আগে ভাবেন। সেই বাবা মাকে কী ভাবে বোঝাবে সে বিষয়েও কিছু পরামর্শ দিলাম।

      সিপাইবাজারেই বাজার করি। রাজাবাজার কম আসি, আজ এসেছি রানীর পছন্দের শাক আর মাছ কিনতে। গ্রামের দিকে বলতে শুনেছি গর্ভাবস্থায় কোনো কিছু খাওয়ার ইচ্ছে অপূর্ণ থাকলে বাচ্চার লালা ঝরে। এটা কোনো যুক্তিই নয়, মেয়েটা খেতে চেয়েছে, তাই কিনতে আসা।বাবলি আসার দিনও খান থেকে বাজার করে নিয়ে যায়। এসে গেলে ওরা নিজেরায় বাজার করে।

    দুপুরে একটি অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসে, রিসিভ করতে একটি পুরুষকণ্ঠ ভেসে আসে, আমি DM এর অফিস থেকে ADM বলছি।আপনার দুটি ভাল ছবি ১ ঘণ্টার মধ্যে আমার অফিসে পাঠিয়ে দিন। মহিলা কমিশনের অফিসে পাঠাতে হবে। জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী সের জন্য’? বললেন, ‘মহিলা কমিশনের ক্যালেন্ডারের জন্য। আপনার ছবি ও বা্যোডাটা DM ম্যাডাম পাঠিয়ে ছিলেন, সে ছবি ওঁদের পছন্দ হয়নি। তাই আবার ছবি পাঠাতে বলেছেন’।  আমি সবটা বুঝতে পারলাম না। ছবি পৌঁছে দেওয়ার মত আমার তো কেউ নেই। তাই নিজেই সাগর স্টুডিওতে দু’কপি ছবি প্রিন্ট করে কালেক্টরিতে ঢুকে ওনাকে ফোন করে জানলাম, ওনার অফিসটা কোথায়। পুরনো বিল্ডিঙে গিয়ে ওনার সঙ্গে দেখা করলাম। উনি সানগ্লাস পরে ছিলেন। আমাকে  বললেন, আপনি ম্যাডামকে  বায়োডাটা পাঠিয়েছিলেন? বললাম, ‘না,আমি  এ বিষয়ে কিছুই জানি না’। একটি মেয়ে ছবি স্ক্যান করে তখুনি পাঠিয়ে দিলেন। দেখলাম ছবিসহ আমার বিষয়ে লেখা কিছু তথ্য  টেবিলে রাখা আছে। ADM অন্যান্য স্টাফদের বললেন, ‘উনি মাটির কাছাকাছি থাকেন, ‘মাটির  মানুষদের জন্য কাজ করেন। আমার থেকে  অধ্যাপিকা অন্নপূর্ণা মুখোপাধ্যায়ের নাম্বার নিয়ে তাঁকেও ফোন করে ছবি চাইলেন। অনেক কষ্টে ADM এর নাম উদ্ধার করতে পারলাম, ক্যাম্পা হুনাইয়া।
কলাগ্রাম পঞ্চায়েতের ক্যাম্পে আধিকারিক সৌমনা ব্যানার্জি ও আমি।

     সময় বাংলা লোক্যাল চ্যানেলের কর্ণধার জয়ন্ত মণ্ডল কুইকোটা                    সত্যজিৎ নগরে তাঁর বাড়িতে নতুন স্টুডিওর আজ উদ্বোধন করলেন। সেই উপলক্ষ্যে আজ ওনার বাড়িতে আমাদের অনেকের নিমন্ত্রণ ছিল। অনেকের সঙ্গে দেখা হল। খুব সুন্দর কাটল সন্ধ্যাটা।

    ইদানীং সারদা কল্যাণ ভাণ্ডার খুব একটা যাওয়া হয় না। তার কারণ শুধু কোভিড নয়, এই সংস্থা বর্তমানে সারদা মঠের মাতাজিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তাই আগের মত আকর্ষণ বোধ করি না।তবে আজ গেছলাম লেকচার শুনতে, বিষয় ‘জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে মেদিনীপুর জেলার বিস্মৃত মহিলাদের কথা’। বক্তা এই বিষয়ে গবেষণা করছেন, সেই থিসিসের কিছু অংশ পড়ে  শোনালেন। খুব যে নতুন কিছু শোনালেন, তা কিন্তু নয়।

     ছবি বাড়ি গেছে, একাই আছি। কোনও অসুবিধা হচ্ছে না। আজরাকে ডেকে নিতে বলেছিল, শীতের রাতে আমি কাউকে বিড়াম্বনায়  ফেলতে চাইনা। কিছু কাজ এই ফাঁকে সেরে ফেলার চেষ্টা করছি।   একটা নতুন লেখায় হাত দিয়েছি। বিকেলে ক্ষুদিরাম মোড় থেকে উল কিনলাম আর সাহা অলংকার ভবন থেকে একজোড়া সোনার দুধবালা কিনলাম। ছেলে মেয়ে যাই হোক না কেন, সোনা দিয়েই মুখ দেখব। একন কাউকে কিছু বলবও না। একটা সোয়েটার ও টুপি বুনে  ফেলতে হবে।

      আজ ADM এর অফিস থেকে পীযূষ ফোন করেছিলেন। ২৭ ডিসেম্বর কেশপুরের কলাগ্রাম পঞ্চায়েত বাল্য বিবাহের ওপর একটি ক্যাম্পের আয়োজন করেছে। ADM চাইছেন, আপনি অতিথি হিসেবে  উপস্থিত থাকুন। আমার যেতে অসুবিধা নেই, চিন্তা রানীকে নিয়ে। কখন কী হবে বলা  মুসকিল।২৭ ডিসেম্বর ওর চেকআপের ডেট আছে। সকালে সুচিক্ষণকে ইরানি মহিলাদের হিজাব পোড়ানোর ওপর একটি লেখা মেল করেছি। উনি আমার কাছে আফগান মহিলাদের বর্তমান অবস্থা নিয়ে একটি লেখা চাইছিলেন। আজকাল এই মুহূর্তে ইরানি মহিলাদের নিয়ে কোনো লেখা প্রকাশ করছে না। কারণ সেটা বিশেষ একটি  রাজনৈতিক দলের পক্ষে যাবে।তবে উনি লেখাটা পড়তে চেয়েছেন।

     বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের জন্য কলাগ্রাম পঞ্চায়েত এক অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করছে। আজকের ক্যাম্পে অভিভাবক, ক্যাটারার, মোল্লা-পুরুত, রাধুনি-বাবর্চি,  ডেকরেটার ও অন্যান্য যারা বিয়্বের কাজে যুক্ত থাকেন তাঁদেরও উপস্থিত করা হয়েছে।
🍂
   সৌমনা ওর অফিস থেকে চিঠি পাঠিয়েছিল। আজ সৌমনা আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে। পীযূষবাবু আরও কয়েকজন এসেছেন। কেশপুরের  BDO এসেছেন, স্বাস্থ্য বিভাগ থেকেও একজন এসেছেন। আমার ভাললাগল, আমি মোল্লা মুফতিদের দায়িত্ব, ভুমিকা নিয়ে বললেও ওনারা চুপ করে শুনলেন।

      আজ রানীরে দেখেই ডাক্তার তখুনি নার্সিংহোমে ভর্তি করতে বলেন। নর্মাল ডেলিভারির জন্য অপেক্ষা করা যাবে না। বাড়ি ফেরার  পথে খবরটা পেলাম। বাড়ি পৌঁছে জামাকাপড় ছেড়ে স্পন্দন নার্সিংহোমে ছুটলাম। ওর শ্বশুরমশাই  আর ওদের ম্যানেজার আছেন, সাহবাজ, ওর  মা কেউ আসেননি।আমি পৌঁছানোর পর রানীকে OT তে নিয়ে গেল, কিছু পরেই নার্স বেবিকে নিয়ে এসে দেখাল। ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে, মাথা ভর্তি কালো চুল। ওদের বেডে দেওয়ার পরেও  ওখানেই ছিলাম। সেই সময় সুচিক্ষনের ফোন পেলাম। বললেন ‘ইরানি মহিলাদের হিজাব পোড়ানো নিয়ে আপনার লেখাটি ভীষণ ভাল হয়েছে। আমি লেখাটি  ছাপার বিষয়ে সম্পাদকের সঙ্গে একবার কথা বলব।

      আমার পরিচিত শালবনি কলেজের অধ্যাপক মইনুদ্দিন আজ ফোন করে বললেন, আন্টি, আমাদের কলেজে ৭ দিন ব্যাপী প্রোগ্রাম  চলছে, একদিন এসে আমাদের ছাত্রছাত্রীদের কিছু বলতে যদি আপত্তি না থাকে তাহলে মাননীয় অধ্যক্ষ আপনার সঙ্গে কথা বলবেন। ৪ জানুয়ারি যাওয়ার ডেট হল, মইনুদ্দিন আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবে।

     আমার আপত্তি থাকা স্বত্বেও শেষপর্যন্ত ঠিক হল রানী বাচ্চা নিয়ে আমাদের বাড়িতেই উঠবে। ওর শ্বশুর শাশুড়ি কোনও দায়িত্ব নিতে  চাইছেন না। ওরা বলছে, ওদের বাড়িতে রোদ নেই। আর আমার এখানে থাকলেও মা ও বেবির যা যা লাগবে, সব ওরা পাঠিয়ে দেবে।  তবে বলা আর করা দুয়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকে। কিন্তু আমরা তো ওনাদের মত দায় এড়াতে পারি না।    

   আজ ২০২২ এর শেষ দিন। ভালমন্দ অনেক কিছুই পার হয় এলাম। এই বছরের তিনটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল, আমার মেয়ে জামাইয়ের এদেশে আসতে পারা, আমার বিদ্যাসাগর পুরস্কার প্রাপ্তি ও রানীর রাজকুমারীর জন্ম।

     আজ ইংরেজি নববর্ষ, তবে আমার কাছে আর পাঁচটা দিনের থেকে আলাদা কিছু নয়। ‘যেতে যেতে পথে’র পরবর্তী পর্বগুলি লেখার জন্য ২০১২ সালের ডাইরি বের করে পাতা ওলটাতেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম। সবকিছু ভেঙ্গে চুরমার করে দিতে ইচ্ছে করছে, খোদা বলে  সত্যিই কি কেউ আছেন? সন্দেহ হয়। তিনি নাকি পরম করুণাময়,   যদি থেকেও থাকেন, তবে তাঁর মত নিষ্ঠুর মানুষও হয় না।
পিংলা থানা কলেজের প্রিন্সিপাল ডঃ সুকুমার চন্দ্র মহাশয় নয়ার পট তুলে দিচ্ছেন আমার হাতে।

      মইনুদ্দিন আজ ফোন করে জানতে চাইল, ৪ ডিসেম্বর আদিবাসীরা নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় বন্ধ ডেকেছে, তাই কালকের প্রোগ্রামটি যদি শুক্রবার হয়, আমার কোনো আপত্তি বা অসুবিধা হবে কি না। জানিয়ে দিলাম, আমার অসুবিধা নেই।

       তিনদিন ধরে কুয়াশা, রোদের দেখা নেই। বাচ্চা ও মায়ের অসুবিধা তো হচ্ছেই, আমার নিজেরই খুব খারাপ লাগছে। মন খারাপে ডুবে যাচ্ছি।আত্মকাহিনীর কয়েকটা পর্ব এগিয়ে রাখতে হবে, ফেব্রুয়ারিতে  চোখের অপারেশন করাতে হলে এই কাজটাই সবার আগে করতে হবে। আবার যদি ইংল্যান্ড  যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে হয়, তাহলে আগে চোখ        ঠিক করে নিতে হবে। এদিকে আজ শ্যামনগর স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা কেয়া দিণ্ডা ফোন করে জানালেন, ওঁদের স্কুলের প্রোগ্রামটি পিছিয়ে  ফেব্রুয়ারির ৬ করা হয়েছে। আমার অসুবিধা আছে কিনা জানতে চায়লে বললাম ওইদিন আমি ফ্রি আছি।

      আজ অধ্যাপক মইনুদ্দিন নিমন্ত্রণ পত্র দিয়ে গেছে। সন্ধ্যাবেলা  ‘শ্রীকৃষ্ণ আকাদেমি’ থেকে সুমন পাত্র অনেকগুলো সার্টিফিকেট দিয়ে গেছে  সই করার জন্য। আগামিকালের প্রোগ্রামে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজেতা ছাত্র ছাত্রীদের এগুলি দেওয়া হবে। আগামিকাল ওদের প্রোগ্রাম আছে, যেতে হবে।।

     এই সব ব্যস্ততার মধ্যেই আমাদের নতুন অতিথি মিঠিসোনার  জন্য একখানা উলের ফ্রক বুনে আজ শেষ করলাম। খুব সুন্দর হয়েছে, তবে এই শীতে গায়ে হবেনা। বিকেলে শ্রীকৃষ্ণ একাডেমির বার্ষিক অনুষ্ঠানে গেছলাম, ফারুক ওখানে উপস্থিত ছিল। আমাদের দিয়েই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হল। খুব সুন্দর করে মঞ্চ সাজিয়েছে। মেদিনীপুর কলেজের বিবেকানন্দ হলে অনুষ্ঠান হচ্ছে। বেশিক্ষণ থাকা সম্ভব ছিলনা। ফারুক আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিল। আসার সময় ও যা বলল, শুনে হতবাক হয়ে গেলাম। আগামিকাল রবিবার টেট পরীক্ষা আছে। সেই পরীক্ষায় বসার জন্য ওর পরিচিত একটি ছেলে ট্রেনে করে গড়বেতা থেকে মেদিনীপুর আসছিল। ট্রেনে বজরং দলের কয়েকজন ছেলে  ওকে নানাভাবে উত্যক্ত করতে থাকে। ছেলেটি প্রতিবাদ করলে ওক প্রচণ্ড   মারধোর করে, কামরায় অল্প সংখ্যক যাত্রী ছিলেন, তাঁরা ভয়ে কেউ  প্রতিবাদ করেনি। ছেলেটি কোনো রকমে মেদিনীপুর স্টেশনে নেমে ওকে ফোন করেছে। ও এখন সেখানেই যাবে।কী যে হচ্ছে, বুঝতে পারছি না।এরা ‘বাঙ্গালি খেদাও’ এর মত ‘মুসলিম খেদাও’ এর শপথ নিয়েছে। আমাদের রাজ্য এ দিক দিয়ে অনেক ভাল। অন্য রাজ্য থেকে এদের যে সব নিষ্ঠুর কাণ্ড কারখানার খবর পাই তাতে মনে প্রশ্ন জাগে, এরা মানুস? কখনো ফ্রিজে গো-মাংস রাখার মিথ্যে অভিযোগে মুসলিম হত্যা করছে,কখনো  বাঙালি মুসলিম পরিযায়ী শ্রমিককে জ্যান্ত জ্বালিয়ে দিয়ে সেই ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে উল্লাস করছে। এমন হাজারও ঘটিয়ে চলেছে বিজেপি ও তার সহযোগী দলগুলি।

   ফারুক এই শহরে ও জেলায় খুবই পরিচিত নাম। কেশপুর থানার এক গ্রামের ছেলে, মেদিনীপুরে পড়তে এসে বিভিন্ন ধরণের সামাজিক কাজে অংশ নিতে শুরু করে। বিশেষ করে কোভিডের পিরিয়ডে ওকে প্রাণের ঝুকি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা গেছে।  যে কাজের জন্য ফারুক মানুষের কাছে  বেশি প্রিয় এবং পরিচিত, তাহল রক্তদান। ওর বাইরেও অনেক রকম কাজ করে।

                              ক্রমশ

সংগ্রহ করতে পারেন 👇

Post a Comment

0 Comments