জ্বলদর্চি

বাগদি চরিত ( ষটচত্বারিংশতি পর্ব ) /শ্রীজিৎ জানা

শিল্পী- আরাধ্যা জানা

বাগদি চরিত  (  ষটচত্বারিংশতি পর্ব ) 

শ্রীজিৎ জানা

বাকি রাতটুকু চোখে পাতায় এক করতে পারে না আরতি। দু'চোখ দিয়ে অঝোর ধারা বইতে থাকে। তক্তপোশে বালিশের উপর মাথা কুড়ে। নিজেই নিজের চুলের ঝুটি ধরে নাড়ায়। দু'গালে চটাস চটাস করে চাপড় কষায়। আর খেপি- হাউড়ির মতো একনাগাড়ে বকে যায়,
—ওরে বেদা ভগমান! ক্যানে তুই মোর এমন সব্বনাশ কোল্লি! আমি ত কুনু পাপ কাজ কোরিনি। কারো ত কুনু ক্ষতি কোরিনি। থাইলে ক্যানে তুই মোকে এই নংরা ঘাঁটালি! একটা গুরুিজন লোক হয়ে মোর সব্বনাশ কোত্তে এসছিল। অর সব্বনাশ হউ– সব্বনাশ! উ পোকা পড়ে পড়ে মোরু!
গো-সাপের মতো মাঝে মাঝে গর্জন করতে থাকে। বিছানার পাতনি,গায়ের কাপড় সব ছুঁড়ে ফেলে দেয় তক্তপোশের নিচে। ক্রমশ ক্লান্ত বিধ্বস্ত শরীর নিয়ে কখন যেন লুটিয়ে পড়ে বিছানায়।
বাইরে ধীরে ধীরে রাত ফর্সা হয়। ঘরের লাগোয়া আরতির হাঁস মুরগী আর ছাগল-ঘর। ভোরের আভাস পেতেই গলা উঁচিয়ে মোরগের দল ডেকে ওঠে।  পালা করে সেই ডাকের যেন প্রতিযোগিতা চলতে থাকে। হাঁসের দলও প্যাঁক-প্যাঁকানি ডাকে ঝুপসি হাঁসঘরটাকে মাতিয়ে তোলে।  ছাগলের পালেও সোরগোল পড়ে যায়। তার উপরে নাম না জানা কত পাখিদের কিচিরমিচির আম কাঁঠাল চালতা আর তেঁতুলের ডালে যেন নহবতের আসর বসিয়েছে। আরতির চোখ থেকে শেষ ভোরের ঘুম সহজে ছাড়তেই চায় না। কিন্তু শুয়ে থাকতেও মন চাইছে না একেবারে। এই বিছানাটাকে তার অসহ্য লাগছে। সারা বিছানায় যেন পাপ ছড়িয়ে আছে বলে তার মনে হয়। ঝটপটিয়ে নেমে পড়ে বিছানা থেকে। ওই ঝুঝুকা ভোরে ছুটে যায় পুকুর ঘাটে। টবাটব কটা ডুব দ্যায় জলে। ভিজা গায়ে উঠে এসে তুলসীথান আর ঘরদোরে গোবর জলের ছড়া দেয়। লাতা ঝাঁটা দিয়ে তুলসী থানে জল দিয়ে প্রণাম করে। খানিক বাদে বাদেই তার চোখ থেকে নোনাজল উপচে পড়ে। তুলসীথানকে যেতেও আজ যেন তার পা সরতে চায় না। মনে ভিতরে নিজেই কথা বলে নিবজের সাথে,
— আমি ত অশুচ হোয়ে গেছি। এই নংরা গা লিয়ে মায়ের থানে কুন মুখে যাব! মোর ত আরও পাপ হবে ভগমান! মোর হাতের জল কি আর লিবে মা! ই কি শাস্তি দিলে গ ভগমান। তবে তুমি ত সব জান, আরতির মনে কুনু পাপ নাই। 
🍂
লাল রঙের আভা ছড়িয়ে পুব দিকে ভিটার গায়ে হেলানো তালগাছের ওপারে দূরে সূর্য হেসে ওঠে। আরতি দুয়ারটায় ধপ করে বসে পড়ে। ভাবে,সকাল হলে সে বের হবে কোন মুখে! বুকের ভিতরটা ধড়ফড়িয়ে ওঠে। বাখুলের লোক দেখে নি তো লোকটাকে! ঢোকার সময় যদি নাও দেখে,বেরানোর সময় যদি দেখে! তাহলে একটু পরেই তো সারা গ্রামে ঢি ঢি পগে যাবে! আর যদি তাও না হয়, লোকটার মুখামুখি যদি পড়ে যায় সে। তখন কি কোরে মুখ দেখাবে। মনে মনে ঠিক করে অনেক বেলা করে সে ভিটা থেকে নামবে। এখনো সবাই ওঠেনিব পাড়া- বাখুলে। ছুটে গিয়ে হাঁসমুরগির ছাড়ের মুখটা আলগা করে দেয়। কপাট সরাতেই তুরিদ্দম দৌড় লাগায় হাঁসমুরগির দল। ছাগুলগুলোর মুখে কেটে রাখা কাঁঠাল পাতার একটা ডাল দিয়ে আসে। আজ আর তাদের মাঠে চরাতে যাবে না সে। মন তার কিছুতেই টানছে না মাঠে যেতে। খিদা তেষ্টা তার ভয়ে আর ভাবনায় মরে গ্যাছে বোধহয়। আবার ঘরের ভিতরে গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। ক্লান্ত শরীর একটু আরাম পেতে চায়। রাতজাগা চোখ একটু ঘুমাতে চায়। 
সেদিন রাতে খুদা ফিরে দেখে তাদের শোবার ঘরটার দরজা বন্ধ। তবে বন্ধ থাকরই তো কথা। সে তো বিকেলে বেরিয়েছিল। শিকড় তুলতে ডাঙিরবন যাচ্ছে বলে সাগরীকে বলে যায়। সাথে এও বলে,সময় থাকলে মেটাসরা যাবে একটা ডাকে। তাদের ভিটা-বাস্তু দেখতে। ফিরতে যদি রাত হয় তবে আরতি যেন খেয়েদেয়ে ঘুসিয়ে যায়। এইরকম রাত করে বাড়ি হামেশাই ফেরে খুদা৷ কোন কোন সময় ফেরেও না। পরের দিন দুপুর গড়িয়ে বিকেলে আসে। সাগরী এইসব নিয়ে কোন চিন্তা করে না। ওইদিন তাই অভ্যাসমতো ছ্যানাপ্যানা গুলানকে খাওয়াদাওয়া করিয়ে শুয়ে যায়। রাত করে বাড়ি ফিরলে লোখা মনসা মন্দিরের পাশে তার রুগী দেখার কুঁড়েঘরটায় শোয়। অনেকদিন থেকেই খুদ্ তাল খুঁজছিল আরতির কাছে যাওয়ার। ডাঙির বনে শিকড় তুলবার নাম করে ওইদিন আরতির ঘরে ঢোকে রাতে। খুদারও বুকে ভয় করছিল। কিন্তু কিছুতেই নিজেকে আগলে রাখতে পারছিল না। কদিন থেকেই মনের ভিতরটা ছটপটিয়ে উঠছিল। দিন দিন সাগরীও যেন সরে সরে থাকছিল তার কাছ থেকে।মনের নাগাল তার কোন দিনই পায়নি খুদা। কোন পুরুষের পক্ষে নারীর মনের তল খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। নারীও সহজে ছুঁতে পারেনা পুরুষের মনের তলদেশ। রইল পড়ে শরীর,সেও তো এক আশ্চর্য মায়াজাল। যতক্ষন তার উত্তাপ শরীরে আমোদ ছড়ায় ততক্ষণই আঁকড়ে ধরার আকুলতা। উত্তাপ মুছে গেলে অসহনীয় হয়ে ওঠে মাংসপিন্ড। শুধু এখানেই ওই বিস্ময় দেহের গুণপনা শেষ হয়ে যায় না। দেহের সঙ্গে দেহ মিশে গেলেও কোন চিহ্ন লেগে থাকে না। দেহধারী শুধু জানে। আর কেউ জানতে পারেনা শরীরে শরীর ছুঁইয়ে আনন্দ বিলাসের রহস্য। খুদা জানে না। জানতেও পারবে না কোনদিন। শুধু একটা বড় বিস্ময় তাকে ভিতরে ভিতরে তাড়িয়ে বেড়ায়, যার ভিতর এত খিদা ছিল,তার অরুচি ঠেকছে কেন আজকাল। তারপর আকার ইঙ্গিতে যখন সে বুঝতে পারে তখন ভিতরে ভিতরে মুষড়ে পড়ে। বয়স, পরিবারের মানসম্মান এসব নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে বাধা দেয়। আর শরীরী খিদা অন্যের চৌকাঠে হাত পেতে দাঁড়ায়। লাজলজ্জা ভুলে, সম্পর্কের মাপজোপ ভুলে নিজেকে বিসর্জন দিতে মরিয়া হয়ে ওঠে আদিমতম খিদার আগুনে। খুদার মনও তর্কবিতর্ক করেছে অনেকবার।
— ক্যানে মোর মনে ইরকম হয়ঠে! অকে দেখলেই ভিতরটা যেন শিরশির করে উঠেঠে! সম্পক্কে আমি অর ভাসুর হই,ইটা করাটা ত সোর ঠিক লয়। জানাজানি হলে মোর ত আর কিছুই থাকবেনি। লোকে বোলবে, যার ল্যাচার ওরকম,তাকে বিশ্বাস কোরুঠু মা মনসার ভক্ত বলে! যেদি পাড়া বাখুলের লোক এট্টু ছুঁত পেই যায়,থাইলে ত মোর একূএ উকুল দুকুল যাবে। তাবাদে সাগরী যেদি কুনুকর্মে টের পায় মোর চোদ্দগুষ্টি উদ্ধার কোদ্দিবে। মুড়া ঝাটায় বিষ উলে দিবে। কুন্তু দিলে দিউ। উ খচরাশালিকে আর কুনু লাই দুব নি। নিজে লেংটা লাচ কোরবে, স্বামীর শক- আহ্লাদ বুজবেনি আর বেশি পাঁয়তারা মারাবে!
এইসব ভাবনা খুদাকে কিছুটা সাহস দিলেও পরক্ষণেই নেতিয়ে যায় আরতির স্বভাবের কথা ভেবে।
—অকে লিয়ে ত আমি ভাবিঠি কুন্তু উ মেইয়াটা ত জানি উল্টা পকিতির। কুনু কিছুতেই যেন ছটপটানি বলে কিচ্ছু নাই। পেটের খিদা নাই,শরীরের খিদা নাই, টাকাপয়সারও খিদা নাই। দেখে ত অকে তেম্নি মনে হয়। নাকি সবই আছে ভিতরে চাপা। সুদু বেকায়দায় পড়ে নিজেকে লুকি রেখেচে বোধয়।
খুদা আরতিকে তার মনের খিদা পূরণে যতটা না পেতে চায়,তারচে বেশি পেতে চায় তার শরীরের খিদা পূরণে। খুদার ভয় আছে আবারও সাহসও যথেষ্ট। টাকাপয়সা আছে তার হাতে। অনেক লোকজনের সঙ্গে তার খাতিরও কম নয়। গুনীন বলে তাকে অনেকেই ভয় করে। সহজে তার সঙ্গে বিবাদে জড়াতে চায় না কেউ। খুদা আরেকটা বিষয়ে খুবই আশাবাদী, সে আরতিকে টোটকা করে ঠিক বশ করে ফেলবে। সেই ফন্দি নিয়ে দু'একবার অন্যকে ঢেসিয়ে কথাও বলতে চেয়েছে। কিন্তু আরতি কোনরকম সাড়া দেয়নি কোন কথায়। খুদার বশীকরণে আরতির গায়ে যেকোন প্রকারে মন্ত্রপুত শিকড় ছোঁয়াতে হবে। কিন্তু কীভাবে তা সম্ভব খুদা ঠিক করতে পারে না। আরতির কোন কাপড় চোপড়ও পাওযা দুষ্কর। লোখাকে সে একপ্রকার ভয় করে। সবরকম ভাবনা যখন কাজ করবে না বুঝে যায তখনই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে ভেবেছিল সে সহজে আরতির কাছে যাওযা যাবে না। তক্কে তক্কে ছিল খুিদা। সেইরাতে গিয়ে দেখে চারদিক খোলা। লোখারা নেই তা সে আগেই জানত। ঘুমে অচেতন আরতিকে দেখে খুদা আর স্থির থাকতে পারেনি। খিদার ছটপটানি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। গোগ্রাসে খেতে চায়। তারপরই হঠাৎ একঝটায় ঘোর কেটে যায় খুদার। আরতির জ্বলন্ত চোখে দিকে তাকিয়ে কেঁপে উঠে। ভেবেছিল ভয় দেখাবে। টাকার লোভও দেখাবে ভেবেছিল। কিন্তু আরতির মুখের বাখান শুনে আর রাগে ফুলে ওঠা দেখে সব গুলিয়ে যায়। শেষে পাড়া-বাখুলের নামে লাজলজ্জার কথা বলে আরতির ঘর থেকে সেই রাতে বেরিয়ে আসে 
কিন্তু আসা অব্দি তার মন অস্থির হয়ে থাকে। এদিক ওদিক ঘুরে আবভাব বুঝতে চায়।যদিও সে জানে, যখন বেরিয়ে আসে সেইসময় তাকে কেউ দেখেনি। দেখার কথা নয়। কারণ আরতির ঘরে ঢুকার আগে অনেক্ষণ পুকুরপাড়ে সে চারদিক লক্ষ্য করেছিল। তাছাড়া প্রথমেই তাকে কেউ যে সন্দেহ করতে পারবে না,সে ব্যাপারে খুদা নিশ্চিত। তবু মনের খুঁতখুঁতানি সহজে যাওয়ার নয়। এতসব চিন্তার মধ্যেও  চংবং করে চারদিকে তাকিয়ে আরতিকে খুঁজতে থাকেসে । কিন্তু তাকে নজরে পড়ে না খুদার। এমনকি তেমন কোন গতিক বুঝতেও পারে না। কতরকম ভালমন্দ চিন্তা তার মাথায় ঘুরপাক খায়।
— সত্যি যেদি বলে দেয় কাউকে মেইয়াটা! থাইলে অকেও শান্তিয়ে বাঁচতে দুবোনি। অকে বাণ মেরে শুকি দুব এগবারে। ঢ্যামনাশালি অই সাগরীটাই যত নষ্টের মূল। অর জন্নেই মোকে এই পথে যেতে হোলো।  আজগে আর এগবার জিয়ে কি বলে এসব! বোলবো,আর কুনুদিন এরকম কোরবোনি,তুমি সব চেপে দাও,কাউকে কিছু বোলোনি। তমাকে হাজার পাঁচেক টাকা দুব।
অপরাধী মন সহজে স্থির থাকে না। পরিত্রাণের রাস্তা খুঁজে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আবার জড়িয়ে যায় দুষ্কর্মের জালে। খুদা সারাদিন একমনে কোন কাজ করতেই পারে না। প্রত্যেক দিনের মকো তার কাছে কতরকম সমস্যা নিয় হাজির হয়েছে লোকজন। তাদের কথা কতকটা শুনছে,কতকটা শুনছে না। জড়িজাটকল দিতে ভুলভাল করে ফেলছে। সাগহরী পাশ থেকে বলে,
— তমার আজগে কি হইচে বল দিখি। দমে ভুলভাল করঠ। শরীলটা কি খারাব লাহেঠে? সবাইকে আজগে চলে যেতে বোলব?
— না, না, তুই থাম। হাজারটা জিনিস মাথায ঘুরেঠে। একটু অই জন্নে হড়বড় করে ফেলিঠি। চিন্তা কোরিসিনি,সব দিয়ে দিইঠি, ঠিক করে, দাঁড়া।
– আবার কিসের চিন্তা করঠ তুমি?
— সবই কি তোকে বোলতে হবে নাকি বল দিখি। পুরুষ মানুষের মাথায় কত চিন্তা তুই বুজু! তার উবরে মোর কাজটা কিসের সেটা ত জানু নাকি!
আরতি চুপ করে যায়। খুদাও আর কোন কথা না বলে মাদুলি বাঁধতে থাকে। তবে মনে মনে ঠিক করেই নেয়,সে আজকে যাবে।

বিকাল থেকেই বেরিযেছিল খুদা। বাজারে কিছুটা সময় কাটিয়ে ঘরের দিবকে পা বাড়ায়। পুকুড় পাড়টার কাছে এসে অনেকক্ষণ বসে থাকে করঞ্জ গাছটা আড়ে। তারপর সুযোেগ বুঝেই হনহনিয়ে লোখার ঘরের দিকে ভিটায় উঠে পড়ে। দেখে সেদিনের মতো আর দুয়ারের বেড়া খোলা নেই। আলো জ্বলছে। দুয়ারে বসে আছে আরতি। বসে বসে ছেঁড়া একটা কি যেন সেলাই করছে। খুদা পা টিপে টিপে আরেকটু সামনে গিযে দাঁড়ায়। হাল্কা করে গলা খাকারি দিতেই আরতি চমকে ওঠে। খুদাকে দেখতে পেয়েই ছুটে দুয়ারে উনানাশালে পগে থাকে বঁটিটা নিয়ে আসে। আর বলে,
— চোলায় আজগে লাউঠা,তোর নাম যেদি না লুকাতে পারি ত মোর নাম আরতি বাগদি লয়। আবার এসচু আজগে। তোর লোজ্জা করেনি।
— অত চিল্লাওঠ কেনে! লোজ্জা আছে বলেি একটা কথা বোলতে এসচি। এখিন থিকে বোলেই পালি যাব। কালকে যা হবার হইচে কিছু মনে কোরোনি। আর কুরুদিনও ইসব আর হবেনি। কাকেও বোলোনি কুনু কথা। তমাকে পাঁচ হাজার টাকা দুব। শিবার নামে ব্যাঙ্কে রেখে দিবে। ছেনাটার ভবিষ্যকে কাজে লাগবে।
— কি বোলুঠু! মোকে টাকা দিবি! কালকে যে পাপ করেচু তার পরাচিত্তি কোত্তে এসচু টাকা দিয়ে! তোর টাকায় মোর ছেনা মানুষ হবে! তুই ভাবলু কি করে! মোকে কিব বাজারি মেইয়া পেইচু। টাকা দিয়ে আরতির  মানসম্মান কিনবি! চোখের সামনে থিকে পালা বোলিঠি,নািলে এই বোঁঠির চটানে তোকে দুখাদি করে দুব এগবারে।
খুদা গতিক বুঝে সরে চলে আসে। আরতি হাতে বঁঠিটা ছুঁগে দিয়ে তালাইয়ের উপর ধপ করে বসে পগে। আবারও হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। ওদিকে খুদা আর দাঁড়ানো ভালো মনে করে না। ভিটা থেকে দ্রুত হেঁটে নেমে আসে। পুকুড়পাড় ধরে কিছুটা আসার পর হঠাৎ তার মনে হয় কাউকে যেন পুকুড়ের অন্যপাড় দিয়ে হেঁটে যেতে দেখল। অবিকল পেত্তোবার মতো গড়ন। খুদা থমকে দাঁড়িয়ে একটু আড়াল হয়ে লক্ষ্য করে। দেখে পেত্তোবার মতো ছায়ামূর্তিটা আরতির ঘরের দিকে যাচ্ছে। খুদা আবার পিছন ফিরে আরতির ঘরসুখো হয়। এবার আরও সাবধানে আরতির ঘরের ক্যাঁদাল ঘেষে দাঁড়ায়। মুখ বাড়িয়ে কারেন্টের আলোয় স্পষ্ট দেখতে পায়,সে যাকে ভেবেছিল,সেই–পেত্তোবা আর কান খাড়া করে শুনতে চায় কথা। পেতক্তোবা উঠানের কাছটায় দাঁড়িয়ে হাঁক পাড়ে,
— ও লোখাদ্দো, ঘরে আছু নাকি?
গলা শুনে আরতি ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। বলে,
— অরা ঘরে নাই। শ্বশুর ঘর হেছে। ক্যানে কি বোলবি?
—  না ইদিকে এসছিলম ত বোলি এগবার যাই।  তা হেগ বৌতি এখ্যুনি তমাদের ঘরকে কেউ এসছিল।
কথাটা শুনামাত্রই চমকে উঠে আরতি। কিন্তু সামলে নিয়ে বলে,
— কি জানি বাপু। আমি ত এক মেইয়ামানুষ বলে দয়রে চাবি দিয়ে শুয়ে পোড়চি ঘরে।
— ও! থাইলে কেউ নয় বোধয়। আসলে মোদের খুদাদ্দার মকো কাকে না কাে দেকলম বোধায় তমাদের ভিটা থিকে নেরমে যেকে। তা বাদ দাও চাবিচব্া দিয তুসি শুয়ে যাও এখন।
কোথায় কি শোয়া! আরতি ঘুম নিসিষে চোখ থেকে উঘে যায়। সে জানে পেত্তোবা ঠিক তার বউকে বলবে এই কথা। আর তার বউ ময়নাকে লাগাবেই। আরতি লোখাা আর ময়নার ব্যবহা দেখে বুঝে যায় যে পেত্তোবার বউ ময়নাকে ফুলিফাঁপিয়ে সব বলেছে। সেইজন্নেই এরকম ব্যবহা কারছে তার সঙ্গে লোখা।

সংগ্রহ করতে পারেন 👇

Post a Comment

0 Comments