জ্বলদর্চি

যেতে যেতে পথে -১১২/রোশেনারা খান

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে।

যেতে যেতে পথে

রোশেনারা খান

পর্ব ১১২

আজ সন্ধ্যায় অধ্যাপক চিত্ত পাণ্ডার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকারের জন্য অরবিট  রেস্টুরেন্টে গেছলাম।কিছু কথা হল। ওনাকে আমার একখান বই দিলাম।২০২২ এ  বিদ্যাসাগর পুরস্কার প্রদানের সম্য় ওনার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল।

     শীতকালে ইদানীং শীতের দেখা খুব কম সময়ের জন্য পাওয়া যায়। শীতের খাবার হারিয়ে যাচ্ছে। কতকাল টাটকা খেজুরের রস খাইনি। খেজুরের গুড়ে ভেজাল। শাক-সব্জিতে স্বাদ নেই, সব হাইব্রিড।স্বাদ নেই মাছে।সব্জি মাছ সবকিছুতে বিষ রাসায়নিকসার ও হরমোন প্রয়োগের ফলে এসব ঘটছে। ক্ষেতে বিষ প্রয়োগের ১ সপ্তাহ পরে সবজি বাজারজাত করার কথা বলা হলেও মানা হয় না।ফলে আমাদের শরীরে একটু একটু করে বিষ জমা হচ্ছে। বাড়ছে দুরারোগ্য ব্যাধি।

     আজ আমার পেয়ে হারানোর মাস শেষ হল। এই ফেব্রুয়ারি মাসে সমালোচক আজারুদ্দিন খানের ছোট ছেলের স্ত্রী ও মেয়ের এক্সিডেন্টে মৃত্যু হয়েছিল।দুনিয়ার নিয়মটায়ই বুঝি এইরকম, পাওয়া আর হারানো। আজ ভীষণ সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ছে, বাবার সংসারে সচ্ছলতা ছিল না, বরং অভাবের দিকেই পাল্লা ভারি ছিল। তবুও যখন আমরা তিনবোন এক সময়ে বাপের বাড়িতে উপস্থিত হতাম, কী খুশিতে দিনগুলো কাটত। সবাই মিলে রান্না করা, পিঠে বানানো, দল বেঁধে পুকুরে কিম্বা নদীতে স্নান করতে যাওয়া, খাওয়া, এসবের  মাঝেই গল্প করা, এভাবেই কখন যে দিন ফুরিয়ে রাত নামত খেয়াল থাকত না। শীতের ভোররাতে বজলু খোকাকে সঙ্গে নিয়ে বড়দা জিরেন কাটের খেজুর রস পেড়ে আনত, সে রস যত মিষ্টি, তত ঠাণ্ডা। এই ঠাণ্ডায় নদী পার  হয়ে সিনেমা দেখতে যাওয়া। একবার হয়েছে কি, আমার বকুল তখন ৮/৯ মাসের, সবাই মিলে সিনেমা যাওয়া হবে, কিন্তু বকুলকে নিয়ে কী ভাবে যাব? ভাবলাম মায়ের কাছে রেখ্বে যাব। মা শুনে বললেন, তোর বাচ্চাকে রাখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়, কাঁদতে শুরু করলে থামানো যাবে না। আমার  যাওয়া হলনা। রাগে আমি বাচ্চা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভাঙতে রাগ উধাও। কিছুতেই আর রাগ আসছে না। অর্থ সম্পদ কখনো আমাকে ভাবায় না। আমি জানি বেঁচে তাক্তে হলে অর্থের প্রয়োজন, কিন্তু এসব কখনো শান্তি দিতে পারে না।  

      তনভির কণ্ঠস্বর এর জন্য লেখা রেডি করতে বলেছে।এবার আমাকে বিদ্যাসাগর পুরস্কারপ্রাপ্তির বিষয়ে লিখতে বলেছে।আর সময়ে কুলিয়ে উঠতে পারছি না।মার্চের ১২ তারিখে বই উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে যাবনা ঠিক করেছি। কমলেশ যাবে বলেছিল। সে যখন যাবে না, আমিই বা কেন যাব? বহুদিন পর রাজাবাজার গেছলাম কুটুসের জন্য কলমি শাক কিনতে। ও গাজর বা অন্য ফল খাবে না। কিছু সবজি ও মাছ কিনে এনেছি। আজ ADM এর অফিস থেকে what’s aap এ একটি আমন্ত্রণ পত্র পাঠিয়েছে।
আমার বিজ্ঞাপনের নাতি নাতনী।

     কাল ৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ওই দিনই দোলযাত্রা, আজ থেকেই রংমাখা শুরু হয়ে গেছে। ছুটি থাকার কারণে কাল কোথাও নারী দিবস পালন হচ্ছে না।দুপুরে ঋত্বিক ফোন করে জানতে চাইল, আগামিকাল দুপুরে আমি ব্যস্ত থাকব কিনা। তারপর বলল পালপাড়া কলেজে অনলাইনে নারীদিবসের ওপর সেমিনার হবে, আমি যদি অংশগ্রহণ করতে রাজি থাকি, তাহলে ওরা যোগাযোগ করবে। যেহেতু এটা UGC থেকে করাচ্ছে তাই কিছু সাম্মানিক দেবে।কলেজের তরফ থেকে অধ্যাপিকা শ্রীমতী কথা বলে জানালেন, মুসলিম মেয়েদের সমস্যা নিয়ে   ৩০ মিনিট বলতে হবে। দুপুর ১২ টা থেকে ২ টো পর্যন্ত অনুষ্ঠানটি চলবে। আমার ব্যাঙ্ক  ডিটেলসও নিলেন।

      আজ ৮ মার্চ, গতকাল বলে দিয়েছিলাম আমাকে যেন আগে বলতে দেওয়া হয়।কারণ সন্ধ্যায় আর একটি প্রোগ্রাম আছে খড়গপুরে। সেমিনারে চারজন বক্তার মধ্যে আমি ছাড়াও আছেন যশোধরা রায়চৌধুরী, অধ্যাপিকা অনিন্দিতা। প্রথমেই আমি বললাম, তারপর যশোধরা বলতে শুরু করল। আমার পূর্ব পরিচিত। ও বক্তব্য রাখার সময় বারবার আমার নাম উল্লেখ করল।

     সন্ধ্যায় খড়গপুর গেলাম রিপোর্টাস ক্লাবের আমন্ত্রনে। এরা প্রত্যেক বছর বিতর্কের একটি বিষয় রাখে। এবারের বিষয় নারী নির্যাতনের ওপর ছিল। বিতর্ক ভালই জমেছিল। উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতো। ওনার হাত দিয়ে আমাদের কয়েকজনকে বর্ষসেরা অনন্য সম্মান দেওয়া হল।

   কয়েকদিনা আগেই ADM অফিস থেকে ফোন এসেছিল। ৯ মার্চ কেশপুরে  সমাজকল্যাণ দপ্তরের উদ্যোগে ও কেশপুর ব্লকের সহায়তায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের বিষয়ে এক বিশাল কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমাকেও অতিথি হিসেবে পেতে চান।আজ সেই ৯ মার্চ। সোশ্যাল ওয়েল ফেয়ার অফিসার সৌমনা ব্যানারজি সকালে ফোন করে বলল, ‘দিদি আমাকে এখুনি বের হতে হবে,আপনি  এত সকালে গিয়ে কী করবেন? আমি বরং পৌঁছে গাড়িটা পাঠিয়ে দেব’।কেশপুর অডিটোরিয়ামে মূল অনুষ্ঠান হচ্ছে। বিশাল পদযাত্রার জন্য গাড়ি অন্য পথে ঘুরিয়ে নিতে হল। অডিটোরিয়ামের সামনে এত ভিড় যে বুঝতে পারছিনা কোথা দিয়ে ভিতরে যাব? ফোন করতে DM অফিসের স্টাফ পীযূষ বাবু এসে আমাকে নিয়ে গিয়ে মঞ্চে বসালেন। উত্তরীয় ও চারা গাছ দিয়ে বরণ করল। মন্ত্রী শিউলি সাহা   এসে দেখা করলেন।DM, ADM, BDO ও অন্যান্য অফিসাররা এসেছেন। কিছু রাজনৈতিক নেতাও রয়েছেন, আর রয়েছে প্রচুর ছাত্রী। অডিটোরিয়ামে তিল ধারণের জায়গা নেই। DM খুরশিদ আলি কাদরির সঙ্গে আলাপ হল, বাঙলাটা ভালই বলতে পারেন ।আমাকে ওনার অফিসে যাওয়ার জন্য বললেন। ADM  কেম্পা হুনাইয়া পাশে বসিয়ে নিজের থেকেই ওনার দৃষ্টিশক্তি হারানোর কথা বললেন। আমাকে বার বার ওনার কোয়ার্টারে যাওয়ার জন্যও বললেন।

    অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করছিলেন অখিলবন্ধু। একে একে আমারা সবাই বক্তব্য রাখলাম। তারপর পুরস্কার বিতরণ শুরু হল। আমরা সবাই ছাত্রীদের হাতে পুরস্কার তুলে দিলাম। পরিচিত কয়েকজন দেখা করে গেলেন। আমাদের লাঞ্চের জন্য নিয়ে যাওয়া হল। অখিলবন্ধু সেখানে ওর এবারের ২১ শে এব্রুয়ারির সংখ্যাটি আমার হাতে তুলে দেয়, ছবিও তোলায়। লাঞ্চের পর বাড়ি ফিরে আসি।

      প্র্যতেকদিন বাইরে বের হতে হচ্ছে। আজ ব্রাইট প্রেসের মালিকর হোসনাবাদে একটি রেস্টুরেন্ট উদ্বোধন ছিল। নিমন্ত্রণ করার সময়ই গাড়ি পাঠাবেন বলেছিলেন, পাঠিয়েছিলেনও। পৌঁছে দেখলাম শহরের প্রচুর নামিদামি মানুষ উপস্থিত হয়েছেন। রেস্টুরেন্টটির ডেকোরেশন এক কথায় দারুণ। খাবারের কোয়ালিটি খুবই  ভাল।

     আমাদের কণ্ঠস্বর পত্রিকার জন্য লেখাটা আজ মেল করতে পারলাম। অনেকটা হাল্কা লাগছে। আজ আরও একটি কাজ করেছি, পুকুরের অংশটা ছোট দেওরের ছেলেকে রেজিস্ট্রি করে দিয়ে দিয়েছি। ছোট চাইলে বড় হয়ে কী করে না বলি? জমি তো শুধু আমার নামেই আছে, দুই দেওর জবরদখল করে রেখেছে।

     ছবির চোখে আজ লেজার হওয়ার কথা ছিল। ওকে ‘আই কেয়ার’এ বসিয়ে  মেদিনীপুর নার্সিংহোমে গেলাম রানীর জা সুরভীর বাচ্চাদের দেখতে। জমজ বলে কিনা জানিনা, বাচ্চাদুটি খুবই দুর্বল। মেশিন খারাপ থাকায় ছবির চোখে লেজার হল না। ওকে বাড়ি পাঠিয়ে আমি ব্যাঙ্কে গেলাম। টাকা তুলে সাহা অলংকার থেকে গহনা দুটি নিয়ে বাড়ি ফিরে ভিডিও কলে বাবলি ও জারাকে দেখালাম।ওদের  পছন্দ হয়েছে।

       সকাল ৯ টারদিকে অচেনা নাম্বার থেকে  মিস কলড দেখে রিং ব্যাক করলাম। ও প্রান্ত থেকে উত্তর এল, আমি বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শান্তনু বেরা বলছি, ২৪ মার্চের প্রোগ্রামের বিষয়ে আপনার বাড়ি একবার যেতে চাই। ১১ টার দিকে আসতে বললাম। আমাকে আমন্ত্রণ পত্র ইমেলে করেছে। তবুও রেজিস্টার জয়ন্ত নন্দী আমার বাড়িতে এসে জানাতে বলেছেন। শান্তনুর সঙ্গে টুকটাক কথা হল ।আমার সঙ্গে ছবি তুলতে চাইলে, রানী তুলে দিল।

      নারীদিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আজ বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছলাম। অন্নপূর্ণাদিও আমন্ত্রিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছিল মানবীবিদ্যা চর্চা কেন্দ্র। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রেজিস্টার জয়ন্ত  নন্দী, অনুষ্ঠানের আয়োজক ইংলিশের HOD জলি দাস, ইন্দ্রনীল আচার্য, অধ্যাপিকা মনাঞ্জলি প্রমুখ। অন্নপূর্ণাদির দীর্ঘ বক্তব্যের পর আমি বললাম, অল্প সময় বললেও  আমার বক্ত্যবে নতুনত্ব ছিল, যা সব্বাই ভীষণভাবে অ্যাপ্রিসিয়েট করেন।ছাত্রছাত্রীরা সেলফি তোলায় মেতে ওঠে। কয়েকজন ছাত্রছাত্রী প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য ফোন নাম্বার নেয়।কে যেন বলছিলেন এক ভদ্রলোক এখানে এসেছেন আমাকে নিমন্ত্রণ জানাতে।অনুষ্ঠান শেষে তিনি একটি কার্ড দিয়ে ২৮ মার্চ অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন।। পরদিন ইন্দ্রনীল ফোন করে বলেন, গতকাল মিটিংএর তাড়া থাকায় কথাটা বলা হয়নি, আপনার ‘বাঙালি মুসলিম সমাজ ও নারী’ বইটির ইংলিশে অনুবাদ হওয়া দরকার। মানবী বিদ্যা চর্চার কাজে লাগবে। আপনি যদি HOD জলি দাসের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলেন, ভাল হয়। আমি ওনার কথা মত জলির সঙ্গে কথা বলি, জলি এক কথায় রাজি হয়ে বলেন, সাধু প্রস্তাব, সামনের মিটিঙে বিষয়টা উত্থাপন করার চেষ্টা করব।
🍂
       সেদিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরে আমন্ত্রণ পত্রটি পড়ে, আমাকে আমন্ত্রণের কারণ খুঁজে পেলাম না। সর্বভারতীয় এই সংগঠনের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। যাইহোক পালপাড়াতে একটি বিজ্ঞাপনের শুটিং ছিল হাঁটু ব্যথার ওষুধের, সুসজ্জিত ফ্ল্যাটে শুটিং হল। আমার   চরত্রটি শাশুড়ি ও ঠাকুমার। যিনি হাঁটু ব্যথার কারণে নাতি নাতনিদের সঙ্গে খেলতে পারছিলান না,বৌমা বিশেষ একটি কোম্পানির ওষুধ খাওয়ালে শাশুড়ি ম্যাজিকের মত সুস্থ হয়ে ওঠেন। শহর ছাড়িয়ে  নদীর কাছে এত সুন্দর  বাড়ি হয়েছে দেখে আশ্চর্য হলাম। শুটিং শেষ হতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। ওদেরই একজন আমাকে ছোট বাজারে পৌঁছে দিয়ে গেল। তার পর আমাকে ওদের নিজস্ব রীতি মেনে মঞ্চে নিয়ে গিয়ে বসাল। বেশ কয়েকজন মাতাজি এসে বসলেন।কাউকেই চিনি না। কিছুক্ষণ পর পৌরপিতা সৌমেন খান এসে আমার পাশে বসলেন। আমি বেশি সময় থাকত্ে পারব না, প্রথমেই জানিয়ে দিয়েছি।  সঞ্চালক বাংলা ও হিন্দি দুই ভাষাতেই কথা বলছেন।উনি মেদিনীপুর শহরের মানুষ নন। আমার বিষয়ে জানতে চাইলে  পৌরপিতা সৌমেন খান গড়গড় করে সব বলে গেলেন। আমাকে নারীশক্তির বিষয়ে বলতে হব, বললামও তাই। মঞ্চে থাকা মাতাজিরা বললেন, খুব ভাল লাগল। আপনাকে আবার আসতে হবে। আমি মঞ্চ  থেকে নামতেই সামনের চেয়ারে বসা শ্রোতারা উঠে দাড়িয়ে বলেন। খুব ভাল বলেছেন। এক বয়স্ক ভদ্রলোক বললেন, কেশপুরে আপনার বক্তব্য শুনেছিলাম, আজ আবার শুনলাম। সেদিনও আপনার যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য ভাল লেগেছিল, আজও লাগল। ওরা আমাকে মঞ্চের সাইড দিয়ে গেটের কাছে নিয়ে এসে উপহার সামগ্রীসহ টোটোতে তুলে দিয়ে গেলেন।একটা নতুন অভিজ্ঞতা হল। পরে জেনেছিলাম, রেজিস্টার জয়ন্তবাবু আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর কথা বলেছিলেন। তাই সেদিন ওঝাবাবু আমাকে ইউনিভার্সিটিতে কার্ড দিতে গেছলেন।

     রমজান মাস চলছে। ক্রিচ্ছসাধনের প্রয়োজন ছিল, কিন্তু অতিরিক্ত ওষুধ  খেতে হয় বলে সম্ভব হয় নি। আজ বড় মসজিদে আরেফুলদাকে দিয়ে ইফতারি পাঠালাম।সকালেই বেরিয়ে ফল ও শরবত দেবার জন্য ঢাকনা দেওয়া একটা বালতি কিনে এনেছিলাম। রানী বাড়িতে পকোড়া ছোলা ইত্যাদি ভেজেছিল।যতটা সম্ভব ভাল এবং বেশি দেওয়ার চেষ্টা করেছি। যারা মসজিদে ইফতার করতে আসেন, তাঁরা সঙ্গে করে ইফতারি নিয়ে আসেন। বিভিন্ন বাড়ি থেকে যে ইফতারি আসে তা একসঙ্গে মিশিয়ে বিতরণ করা হয়।

      আজ ১ এপ্রিল, আমাদের জারা সোনার জন্মদিন।  ওর সুস্থ জীবন কামনা করি, ও যেন মানুষের মত মানুষ হয়। ১৬ তে পা রাখল জারা, ও এখন একাদশ শ্রেণির ছাত্রী।২০২৪ শে ফ্যাইনাল পরীক্ষা দেবে।

    বাসবীর সম্পাদিত ‘ঋতু সমাপন” এখনও পাইনি। ওকে ফোন করতে বলল, আমি প্রকাশককে বলে বলে ক্লান্ত হয়ে গেছি। ফোন নাম্বার দিচ্ছি, তুমি একবার ফোন কর’।আমি ফোন করলাম, ‘কারিগর’ এর প্রকাশককে ফোন করলাম কিন্তু রিসিভ করলেন না।পরে দেখলাম সুইচ অফ। রাগে একটা মেসেজ করলাম, দেখেছিলেন কিনা জানি না, একসময় রিং ব্যাক করে বললেন, আমি নাটক দেখছিলাম, তাই সুইচ অফ করে দিয়েছিলাম। ওনার সঙ্গে অনেক কথা হল। আমার বই করার আগ্রহ দেখালেন। আমার আত্মজীবনীটি বই করতে চান, একথাও জানালেন। ‘ঋতু আবসান’ বইটি  কয়েকদিনের পাঠিয়ে দেবেন বললেন।
ব্রাইট স্টার রেসটুরেনটের উদ্বোধনে  মালিক, আমি ও ইয়াসিনদা

     আজ আমার চোখে মাইক্রো সার্জারি হল, দুদিন আগে ওষুধ খাওয়া শুরু করেছিলাস, দুপুরে বাড়ি ফিরেছি। আজও প্রকাশকের সঙ্গে কথা হল, উনি আমার আত্মকাহিনীর কয়েকটি পর্ব পাঠাতে বললেন।

      অনেকেই ফোন করে খবর নিচ্ছেন। খোকন, মৌ, ফোনে খোঁজ নিয়েছে। আজ সৌনক এসেছিল।সুদীপ, সুতপা স্বপ্না ফয়জল এসেছিল, ফোন করেছেন অনেকে। এই ভালবাসাটুকুই আমার কাছে অনেক পাওয়া।অনেকেই বলেছিলেন শীতে করাতে, আমি সময়ই করে উঠতে পারিনি।

      আজ হঠাৎ সুদর্শন ফোন করে যা শোনালো, আমি তো শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলাম,  বিশ্বাসের মুল্য এইভাবে দেবে, কেউ ভাবেনি! তবে মেয়েটিও ধোয়া তুলসীপাতা নয়, তারও দোষ আছে। প্রথমেই সে কেন সুদর্শনকে জানায়নি?

     এবার গত ডিসেম্বর মাস থেকে আম গাছে মুকুল ধরা শুরু হয়েছিল, এবার প্রচুর আম ধরেছে। আধখানা কাঁঠাল গাছে ৯ খানা কাঁঠাল ধরেছে দেখেই সুখ, খাই না। আম খাওয়ার মানুষই নেই। এসব কথা ভাবলে ভীষণ কান্না পায়।মায়ের মন ভাল করার  জন্য মেয়ে জামাই ওদের কাছে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু  আমি তো জানি, পার্থিব কোনকিছুই আমার মন ভাল করতে পারবে না।

    অসিত দাসের সঙ্গে আজ কথা হল, ভিসার জন্য ১৬,০০০/ টাকা চাইছে। শুনে বাবলি বলল, ‘ওঁর কাছে তো  ১ লাখের থেকে বেশি টাকা পাওয়া যাবে।  তাছাড়া এখন টিকিটের দাম অনেক কম’। আমার এসব তর্ক ভাল লাগেনা। আমাদের টাকা ফেরত দিয়ে দিলে এত ঝামেলায় পড়তে হতনা। দেখা যাক, কী হয়।

     আজ অসিত দাস, ১৬০০০ / টাকা কেন? কিসে? লাগবে, তার হিসেব পাঠিয়েছেন। আমি মনিকে বললাম অসিত দাসকে টাকাটা পাঠিয়ে দেবার জন্য।  দীপ আজ ওনাকে ফোন করে  কোন ফ্লাইটে, কোন ডেটে, কোন টাইমের টিকিট চায়,জানিয়ে দিয়েছে। দীপ ফ্যামিলির সঙ্গে দেখা করে আমাকে নিয়ে যাবে।ওই  ডেটে, ওই ফ্লাইটে ওর ফেরার টিকিট। ওই সময় মিঠির মুখেভাতও হবে। রাতে বাবলির সঙ্গে কথা বলে আমার ফেরার টিকিট হল ১৭ সেপ্টেম্বর।আমার পক্ষে ওদেশে একা থাকা অসম্ভব। জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত জারার স্কুল ছুটি থাকবে। তাই  দুমাসের বেশি থাকার ঝুঁকি নিচ্ছি না।                                                                                        (ক্রমশ)
সংগ্রহ করতে পারেন 👇

Post a Comment

0 Comments