জ্বলদর্চি

লোকমাতা রানি রাসমণি —৩৮ /সুমিত্রা ঘোষ

লোকমাতা রানি রাসমণি —৩৮

সুমিত্রা ঘোষ 

মায়ের মন্দির যতক্ষণ খোলা থাকে ততক্ষণই মায়ের পুজো দেওয়া যায়। শ্রীরামকৃষ্ণদেব বলতেন মা ভবতারিণী মন্দিরে কেবলমাত্র পাষাণ প্রতিমা হয়ে বিরাজ করেন না। মা দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে বিরাজ করেন জীবন্তরূপে, তাই তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ হয় নিয়ম মেনে। মঙ্গলারতির মাধ্যমে মাকে শয়ান থেকে জাগানো হয়। তারপর স্নান এবং প্রাতরাশ। প্রাতরাশে মা ফলাহার করেন। মধ্যাহ্নে মাকে অন্নভোগ নিবেদন করা হয়। অন্নভোগে থাকে ডাল, তরকারি, মাছ । প্রতিদিন মাকে একইরকম পদ দেওয়া হয় না। নতুন নতুন পদ মাকে নিবেদন করা হয়। শোনা যায় দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে বলিপ্রথা ছিল কিন্তু পরবর্তীকালে বলি প্রথা বন্ধ হয়ে যায়।
🍂
মা ভবতারিণী মন্দিরে পুজো দিতে গিয়ে দেখেছি কোন বিশৃঙ্খলা নেই। ভক্তরা শান্তিপূর্ণভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে মায়ের মন্দিরে প্রবেশ করে ঠাকুর মশায়ের হাতে পুজোর ডালা ধরিয়ে দেন, পুরোহিত মহাশয় পুজোর ডালা মায়ের চরণস্পর্শ  করিয়ে মায়ের ফুল-সিন্দুর সহযোগে ভক্তের হাতে ফিরিয়ে দেন। মাকে দর্শন পেলে মনপ্রাণ ভরে যায়। মন্দিরে ঢুকে মাকে হয়তো ক্ষণিকের জন্য দর্শন পাওয়া যায় কিন্তু সেই দর্শন ভক্তের মন শান্ত করে ভক্তকে নিরাপদে সঠিক আস্তানায় ফিরে যেতে সাহায্য করে। মন্দির কর্তৃপক্ষ সর্বদা খেয়াল রাখেন যাতে একজন দর্শনাথী বা ভক্ত কোন অসুবিধার সম্মুখীন না হয়। এই মন্দিরে পানীয় জলের সুব্যবস্থা, গাড়ি পার্কিং, সুলভে শৌচালয় ইত্যাদি সবকিছুর ব্যবস্থা আছে। মন্দির থেকে বেড়িয়ে একটু হেঁটে বাইরে খাবার দোকান আছে। গরম-গরম কচুরি মিষ্টি যতখুশি খাওয়া যায়। তারপর খুশিমনে বাড়ি ফেরা।

দক্ষিণেশ্বর  মন্দির পৃথিবীবিখ্যাত সর্বধর্মসমন্বয়ের পীঠস্থান। এখানে পান্ডার উৎপাত নেই। এখানে কেউ অর্থ চাইবে না। এই মন্দিরে বসে নিজের ইষ্ট দেবের নাম নিতে কোন বাধা নেই, কেউ কারুকে বিরক্ত করবে না। মন্দিরে প্রসাদগ্রহণের জন্য নটা থেকে সাড়ে নটার মধ্যে নাম নথিভুক্ত করতে হয়। প্রসাদ গ্রহণের  সময় দুপুর ১২.৩০, থেকে ১২.৪৫ সিনিট।

বর্তমানে রাজ্যসরকারের উদ্যোগে ভরতারিণী মন্দিরের অনেক সংস্কার করা হয়েছে যার ফলে ভক্তমণ্ডলী ও যাত্রীগণের অনেক সুবিধা  হয়েছে। মন্দিরের সঙ্গে  হতে চলেছে মেট্রোর সংযোগ। স্কাইওয়াক চালু হওয়ায় মানুষের মন্দিরে যাওয়া- আসা অনেক সহজ হয়ে গেছে। ওপর দিয়ে মানুষ যাবেন। আর নীচ দিয়ে গাড়ি  যাতেই যিনি আসুন না কেন নিদিষ্ট জায়গা থেকে উঠে যাবেন এস্কালেটারের মাধ্যমে ওপরে এবং সুনিদিষ্ট পথ ধরে সোজা মন্দিরের সিংহ দুয়ারের সম্মুখে পৌঁছে যাবেন। ভক্তমণ্ডলীর সুবিধার কথা ভেরেই ট্রাষ্টিবোর্ড- এর সেক্রেটারি এই ব্যবস্থা  নিয়েছেন।
রানি  রাসমণি অতি অল্পবয়সে মাড়বাড়ির বধূ হয়ে জানবাজারের জমিদার বাড়িতে প্রবেশ করেন । শ্বশুরবাড়ির প্রত্যেকের প্রতি তিনি যত্নবান ছিলেন। তাছাড়া প্রজাসাধারণের দিকে সদা সর্বদা নজর রাখতেন। প্রজাদের দুঃখ কষ্ট একদম সহ্য করতে পারতেন না। দরিদ্র-অনাহূত মেয়েদের নানাভাবে সাহায্য করতেন। কোন-কোন মেয়েকে রাজবাড়িতে এনে আশ্রয় দিয়েছেন, এজন্য বিরূপ মন্তব্যও সহ্য করেছেন। প্রতিভাময়ী রানি বড়লোকের বাড়ির বৌ হয়ে এসে স্বকীয়গুণে সকলকে আপন করেছিলেন। পরম কৃষ্ণভক্ত পরিবারের কন্যা এলেন পরম শিবভক্ত জানবাজারের জমিদার বাড়িতে। রানির জন্মের সময়টা ছিল বাংলা শতাব্দীর শেষ বছর ১২০০ সাল। ইংরাজী ১৭৯৩ সালে -১১ আশ্বিন বুধবার বাংলার এক গণ্ডগ্রামে অতি দরিদ্র কৃষকের ঘরে জন্ম নিলেন আমাদের সকলের রানি রাসমণি।

সংগ্রহ করতে পারেন 👇 

Post a Comment

0 Comments